মথি লিখিত সুসমাচার ১৩:১-৫৮

  • রাজ্য সম্বন্ধে দৃষ্টান্ত (১-৫২)

    • বীজ বপনকারী (১-৯)

    • যে-কারণে যিশু দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেন (১০-১৭)

    • বীজ বপনকারীর দৃষ্টান্তটা বুঝিয়ে বলা হয় (১৮-২৩)

    • গম ও আগাছা (২৪-৩০)

    • সরষেদানা ও খামির (৩১-৩৩)

    • দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করে (৩৪, ৩৫)

    • গম ও আগাছার দৃষ্টান্তটা বুঝিয়ে বলা হয় (৩৬-৪৩)

    • লুকোনো ধন এবং উন্নতমানের মুক্তো (৪৪-৪৬)

    • টানাজাল (৪৭-৫০)

    • নতুন ও পুরোনো ধন (৫১, ৫২)

  • যিশুকে তাঁর নিজের এলাকায় প্রত্যাখ্যান করা হয় (৫৩-৫৮)

১৩  সেই দিন যিশু সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে সাগরের তীরে গিয়ে বসলেন। ২  তখন তাঁর কাছে এত লোকের ভিড় হল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন আর লোকেরা তীরে দাঁড়িয়ে রইল। ৩  এরপর তিনি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদের অনেক বিষয় বলতে লাগলেন: “দেখো! একজন বীজ বপনকারী বীজ বুনতে গেল। ৪  বোনার সময় কিছু বীজ পথের পাশে পড়ল এবং পাখিরা এসে সেগুলো খেয়ে ফেলল। ৫  আবার কিছু বীজ এমন পাথুরে জায়গায় পড়ল, যেখানে বেশি মাটি ছিল না আর বেশি মাটি না থাকাতে বীজ তাড়াতাড়ি অঙ্কুরিত হল। ৬  কিন্তু, সূর্যের তাপ প্রচণ্ড বেড়ে গেলে, সেগুলো ঝলসে গেল এবং মূল গভীরে না যাওয়াতে শুকিয়ে মরে গেল। ৭  আবার কিছু বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল আর কাঁটাবন বেড়ে উঠে চারাগুলোকে চেপে রাখল। ৮  কিন্তু, কিছু বীজ উত্তম জমিতে পড়ল। আর সেগুলোতে ফল ধরতে শুরু করল, কোনোটাতে ১০০ গুণ, কোনোটাতে ৬০ গুণ, আবার কোনোটাতে ৩০ গুণ। ৯  যার কান আছে, সে শুনুক।” ১০  পরে শিষ্যেরা তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন: “আপনি কেন লোকদের সঙ্গে দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে কথা বলেন?” ১১  উত্তরে তিনি তাদের বললেন: “স্বর্গরাজ্যের পবিত্র রহস্য বোঝার ক্ষমতা তোমাদের দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি। ১২  কারণ যার আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে এবং তার উপচে পড়বে; কিন্তু যার নেই, তার যা আছে, সেটাও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। ১৩  এইজন্য আমি তাদের সঙ্গে দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে কথা বলি; কারণ তারা দেখে ঠিকই, কিন্তু কী দেখছে, তা বুঝতে পারে না এবং তারা শোনে ঠিকই, কিন্তু কী শুনছে, তা বুঝতে পারে না আর তারা সেটার অর্থও বুঝতে পারে না। ১৪  আর তাদের ক্ষেত্রে যিশাইয়ের এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে, যেখানে বলা আছে: ‘তোমরা শুনবে ঠিকই, কিন্তু কোনোভাবেই এর অর্থ বুঝতে পারবে না আর তাকাবে ঠিকই, কিন্তু কোনোভাবেই দেখতে পারবে না। ১৫  কারণ এই লোকদের হৃদয় অসাড় হয়ে পড়েছে। তারা শোনে ঠিকই, কিন্তু পালন করে না। তারা তাদের চোখ ও কান বন্ধ করে রেখেছে, যাতে তারা কোনো কিছু দেখতে এবং কোনো কিছু শুনতে না পায়। ফলে তারা বুঝতে পারে না, তাদের কাছ থেকে কী চাওয়া হয়। এই কারণে তারা আমার কাছে ফিরেও আসে না আর আমিও তাদের সুস্থ করি না।’ ১৬  “কিন্তু, সুখী তোমরা, কারণ তোমাদের চোখ দেখতে পায় এবং তোমাদের কান শুনতে পায়। ১৭  আমি তোমাদের সত্যি বলছি, অনেক ভাববাদী এবং ধার্মিক ব্যক্তি, তোমরা যা দেখছ, তা দেখতে চেয়েও দেখতে পাননি আর তোমরা যা শুনছ, তা শুনতে চেয়েও শুনতে পাননি। ১৮  “এখন বীজ বপনকারীর দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা শোনো। ১৯  যে-বীজ পথের পাশে বোনা হয়েছিল, তা হল সেই ব্যক্তি, যে রাজ্যের বাক্য শোনে কিন্তু এটার অর্থ বুঝতে পারে না, পরে শয়তান* এসে তার হৃদয়ে যা বোনা হয়েছিল, তা নিয়ে যায়। ২০  আর যে-বীজ পাথুরে জায়গায় বোনা হয়েছিল, তা হল সেই ব্যক্তি, যে রাজ্যের বাক্য শোনার সঙ্গেসঙ্গে আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করে। ২১  তবে, মূল তার হৃদয়ের গভীরে না যাওয়াতে, সে কিছু সময়ের জন্য তা ধরে রাখে, কিন্তু পরে যখন সেই বাক্যের কারণে ক্লেশ কিংবা তাড়না আসে, তখন সে সঙ্গেসঙ্গে বিশ্বাস হারায়।* ২২  যে-বীজ কাঁটাবনে বোনা হয়েছিল, তা হল সেই ব্যক্তি, যে বাক্য শোনে কিন্তু এই বিধিব্যবস্থার* উদ্‌বিগ্নতা এবং ধন­সম্পদের মায়াশক্তি* সেই বাক্য চেপে রাখে আর সে কোনো ফল উৎপন্ন করে না। ২৩  ­যে-বীজ উত্তম জমিতে বোনা হয়েছিল, তা হল সেই ব্যক্তি, যে বাক্য শোনে এবং সেটার অর্থ বুঝতে পারে আর সত্যিই ফল উৎপন্ন করে, কেউ ১০০ গুণ, কেউ ৬০ গুণ এবং কেউ ৩০ গুণ।” ২৪  এরপর তিনি তাদের কাছে আরেকটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন: “স্বর্গরাজ্য হল এইরকম: একজন ব্যক্তি তার জমিতে উত্তম বীজ বুনলেন। ২৫  কিন্তু, লোকেরা যখন ঘুমিয়ে ছিল, তখন তার শত্রু এসে সেই গমের মধ্যে আগাছা বুনে চলে গেল। ২৬  পরে যখন বৃন্ত থেকে শিষ বের হল, তখন আগাছাও দেখা গেল। ২৭  তা দেখে দাসেরা এসে জমির মালিককে জিজ্ঞেস করল: ‘প্রভু, আপনি কি আপনার জমিতে উত্তম বীজ বোনেননি? তা হলে, আগাছা কোথা থেকে এল?’ ২৮  তিনি তাদের বললেন, ‘কোনো শত্রু এটা করেছে।’ তখন দাসেরা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে আপনি কি চান, আমরা গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করি?’ ২৯  তিনি বললেন, ‘না, থাক। কি জানি, তোমরা হয়তো আগাছা সংগ্রহ করার সময় গমও উপড়ে ফেলবে। ৩০  শস্য কাটার সময় পর্যন্ত উভয়কে একসঙ্গে বাড়তে দাও আর শস্য কাটার মরসুমে আমি ছেদকদের বলব: প্রথমে আগাছা সংগ্রহ করো এবং সেগুলো পোড়ানোর জন্য আঁটি আঁটি করে বেঁধে রাখো; তারপর গম আমার গোলা ঘরে সংগ্রহ করো।’” ৩১  এরপর তিনি তাদের কাছে আরেকটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন: “স্বর্গরাজ্য একটা সরষেদানার মতো, যা একজন ব্যক্তি নিয়ে তার জমিতে বুনল। ৩২  এটা আসলে সমস্ত বীজের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র, কিন্তু সেই বীজ থেকে চারা বের হয়ে যখন সেটা বেড়ে ওঠে, তখন তা সমস্ত শাকসবজির গাছের চেয়ে বড়ো হয়ে একটা বৃক্ষে পরিণত হয় আর আকাশের পাখিরা এসে সেটার শাখায় আশ্রয় নেয়।” ৩৩  তিনি তাদের আরেকটা দৃষ্টান্ত বললেন: “স্বর্গরাজ্য এমন খামিরের* মতো, যা একজন মহিলা নিয়ে দশ কিলোগ্রাম ময়দার মধ্যে মেশাল আর এতে সমস্ত ময়দা ফেঁপে উঠল।” ৩৪  এই সমস্ত কিছু যিশু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে লোকদের বললেন। আসলে, দৃষ্টান্ত ব্যবহার না করে তিনি তাদের কিছুই বলতেন না, ৩৫  যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে বলা এই কথা পরিপূর্ণ হয়: “আমি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথা বলব; শুরু* থেকে যা গুপ্ত ছিল, আমি তা প্রকাশ করব।” ৩৬  এরপর তিনি লোকদের বিদায় দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলেন। আর তাঁর শিষ্যেরা এসে তাঁকে বললেন: “জমির মধ্যে আগাছার দৃষ্টান্তটা আমাদের বুঝিয়ে বলুন।” ৩৭  তখন তিনি তাদের বললেন: “যিনি উত্তম বীজ বোনেন, তিনি হলেন মনুষ্যপুত্র;* ৩৮  জমি হল জগৎ। উত্তম বীজ হল রাজ্যের সন্তানেরা, অন্যদিকে আগাছা হল শয়তানের* সন্তানেরা ৩৯  আর যে-শত্রু তা বুনেছিল, সে হল দিয়াবল। শস্য কাটার মরসুম হল এই বিধিব্যবস্থার* শেষ সময় আর ছেদকেরা হল স্বর্গদূতেরা। ৪০  অতএব, আগাছা সংগ্রহ করে যেমন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, এই বিধিব্যবস্থার* শেষ সময়েও তা-ই করা হবে। ৪১  মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠাবেন আর তারা তাঁর রাজ্য থেকে সেইসমস্ত ব্যক্তিকে সংগ্রহ করে আলাদা করবে, যারা অন্যদের পাপ করতে* পরিচালিত করে এবং যারা মন্দ কাজ করে চলে। ৪২  আর এরপর স্বর্গদূতেরা তাদের অগ্নিকুণ্ডে ছুঁড়ে ফেলবেন। সেখানে তারা কাঁদবে এবং দাঁত কিড়মিড় করবে। ৪৩  তখন ধার্মিক ব্যক্তিরা তাদের পিতার রাজ্যে সূর্যের মতো উজ্জ্বল হয়ে আলো ছড়াবে। যার কান আছে, সে শুনুক। ৪৪  “স্বর্গরাজ্য জমির মধ্যে লুকোনো ধনের মতো, যা খুঁজে পেয়ে একজন ব্যক্তি আবার তা লুকিয়ে রাখল; আর সে আনন্দিত হয়ে চলে গেল এবং তার সমস্ত কিছু বিক্রি করে সেই জমি কিনে নিল। ৪৫  “আবার স্বর্গরাজ্য এমন একজন বণিকের মতো, যে উন্নতমানের মুক্তো খুঁজছিল। ৪৬  পরে মহামূল্য একটা মুক্তো খুঁজে পেয়ে সে গিয়ে সঙ্গেসঙ্গে তার সমস্ত কিছু বিক্রি করে সেই মুক্তো কিনে নিল। ৪৭  “আবার স্বর্গরাজ্য এমন এক টানাজালের মতো, যা সমুদ্রে ফেলা হল আর তাতে সমস্ত ধরনের মাছ ধরা পড়ল। ৪৮  জালটা পূর্ণ হওয়ার পর জেলেরা সেটা তীরে টেনে তোলে এবং বসে উত্তম মাছগুলো পাত্রে সংগ্রহ করে এবং খাওয়ার অযোগ্য এমন মাছগুলো ফেলে দেয়। ৪৯  এই বিধিব্যবস্থার* শেষ সময়ে ঠিক এইরকমটাই ঘটবে। স্বর্গদূতেরা এসে ধার্মিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে দুষ্ট ব্যক্তিদের আলাদা করবেন। ৫০  আর এরপর স্বর্গদূতেরা তাদের অগ্নিকুণ্ডে ছুঁড়ে ফেলবেন। সেখানে তারা কাঁদবে এবং দাঁত কিড়মিড় করবে। ৫১  “তোমরা কি এইসমস্ত কিছুর অর্থ বুঝতে পেরেছ?” তারা তাঁকে বললেন: “হ্যাঁ।” ৫২  তখন তিনি তাদের বললেন: “যেহেতু তোমরা অর্থ বুঝতে পারছ, তাই স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছে এমন প্রত্যেক শিক্ষক এমন বাড়ির মালিকের মতো, যিনি তার ধনের ভাণ্ডার থেকে নতুন ও পুরোনো, উভয় জিনিস বের করে আনেন।” ৫৩  এই দৃষ্টান্তগুলো বলার পর, যিশু সেখান থেকে চলে গেলেন। ৫৪  এরপর, তিনি নিজের এলাকায় এসে সমাজগৃহে শিক্ষা দিতে লাগলেন আর লোকেরা তাঁর কথা শুনে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে বলল: “কোথা থেকে সে এত প্রজ্ঞা অর্জন করল? আর কেই-বা তাকে এইসমস্ত অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা দিল? ৫৫  এ কি সেই ছুতোর মিস্ত্রির ছেলে নয়? এর মায়ের নাম কি মরিয়ম এবং ভাইদের নাম কি যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা নয়? ৫৬  আর এর বোনেরাও কি এখানে আমাদের সঙ্গে বাস করে না? তা হলে কোথা থেকে সে এসব শিখল?” ৫৭  তাই, তারা তাঁকে বিশ্বাস করতে চাইল না।* কিন্তু, যিশু তাদের বললেন: “লোকেরা সবসময় একজন ভাববাদীকে সম্মান করে। কেবল নিজের এলাকায় এবং নিজের বাড়িতেই তিনি সম্মান পান না।” ৫৮  আর তিনি তাদের বিশ্বাসের অভাব দেখে সেখানে বেশি অলৌকিক কাজ করলেন না।

পাদটীকাগুলো

আক্ষ., “সেই দুষ্ট ব্যক্তি।”
বা “সঙ্গেসঙ্গে হোঁচট খায়।”
বা “যুগের।” শব্দকোষ দেখুন।
অর্থাৎ ধনসম্পদের প্রতারণামূলক ক্ষমতা।
অর্থাৎ ইস্ট অথবা ইস্ট-জাতীয় দ্রব্য। শব্দকোষ দেখুন।
এটা আদম ও হবার সন্তানদের নির্দেশ করে।
যিশু নিজের সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন। শব্দকোষ দেখুন।
আক্ষ., “সেই দুষ্ট ব্যক্তির।”
বা “যুগের।” শব্দকোষ দেখুন।
বা “যুগের।” শব্দকোষ দেখুন।
বা “অন্যদের হোঁচট খেতে।”
বা “যুগের।” শব্দকোষ দেখুন।
বা “তারা তাঁর কারণে হোঁচট খেল।”