কেন আমরা বৃদ্ধ হই ও মারা যাই?
অধ্যায় ৬
কেন আমরা বৃদ্ধ হই ও মারা যাই?
১. মানুষের জীবন সম্পর্কে কী ব্যাখ্যা করতে বৈজ্ঞানিকেরা ব্যর্থ হয়েছেন?
বৈজ্ঞানিকেরা জানেন না কেন মানুষ বৃদ্ধ হয় ও মারা যায়। মনে হয় আমাদের দেহের কোষগুলির ক্রমাগত নবীকৃত হওয়া ও আমাদের অনন্তকাল বেঁচে থাকা উচিত। এই বইটি হাইয়োজুন সোশিকিগকু (প্রামাণ্য দেহকোষবিদ্যা) বলে: “এটি এক মহা রহস্য যে কিভাবে কোষগুলির বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে এক ব্যক্তির বার্ধক্য এবং মৃত্যু জড়িত রয়েছে।” বহু বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস করেন যে “প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের” কারণে জীবনের এক শেষ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন তারা ঠিক?
২. জীবনের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির কারণে কেউ কেউ কী করেছেন?
২ মানুষ সর্বদাই দীর্ঘায়ুর জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে এসেছে ও এমনকি অমরত্ব লাভ করারও চেষ্টা করেছে। সা.শ.পূ. চতুর্থ শতাব্দী থেকে, অমরত্ব সম্ভব এই কল্পনানুসারে প্রস্তুত ঔষধগুলি চৈনিক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এসেছে। পরবর্তীকালের কিছু চৈনিক সম্রাট অনন্ত পরমায়ুদাতা বলে পরিচিত এই ঔষধগুলি—পারদ থেকে তৈরি—খেয়েছিলেন ও মারা গিয়েছিলেন! সারা পৃথিবীতে, মানুষ বিশ্বাস করে যে মৃত্যুতেই তাদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায় না। বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান এবং অন্যান্য সকলেরই মৃত্যুর পরে এক জীবনের উজ্জ্বল আশা রয়েছে। খ্রীষ্টজগতে, অনেকেই স্বর্গীয় সুখের এক মরণোত্তর জীবনের কল্পনা করে থাকে।
৩. (ক) কেন মানুষ অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা করে? (খ) মৃত্যু সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে?
৩ মৃত্যুর পরে সুখের কল্পনা অনন্ত জীবনের জন্য এক আকুল আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে। অনন্তকালের ধারণা যা ঈশ্বর আমাদের মধ্যে রোপণ করেছি লেন সে সম্পর্কে বাইবেল বলে, “আবার তাহাদের হৃদয়মধ্যে চিরকাল রাখিয়াছেন।” (উপদেশক ৩:১১) তিনি প্রথম মানবদের সৃষ্টি করেছিলেন এই সম্ভাবনা দিয়ে যে তারা পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারবে। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) কেন, তাহলে, মানুষ মারা যায়? জগতে মৃত্যু কিভাবে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল? ঈশ্বর যে জ্ঞান প্রদান করেন তা এই প্রশ্নগুলির উপরে আলোকপাত করে।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.
এক ক্ষতিকারক গুপ্ত অভিসন্ধি
৪. মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী অপরাধীটিকে যীশু কিভাবে শনাক্ত করেছেন?
৪ কোন অপরাধী তার সাক্ষ্যপ্রমাণ ঢেকে রাখবার চেষ্টা করে। এটিই সত্য হয়েছে একজনের ক্ষেদুত্র যে দায়ী এক অপরাধের জন্য, যার ফল হয়েছে শত শত কোটি মানুষের মৃত্যু। মানব মৃত্যুকে রহস্যাবৃত করে রাখতে সে বিষয়গুলিকে কৌশলে পরিচালিত করেছে। যীশু খ্রীষ্ট এই অপরাধীকে শনাক্ত করেছিলেন যখন তিনি যারা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করছিল তাদের বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের পিতা দিয়াবলের, এবং তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; সে আদি হইতেই নরঘাতক, সত্যে থাকে নাই, কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই।”—যোহন ৮:৩১, ৪০, ৪৪.
৫. (ক) যে শয়তান দিয়াবল হয়েছিল তার আদি উৎস কী ছিল? (খ) “শয়তান” এবং “দিয়াবল” এই শব্দগুলির অর্থ কী?
৫ হ্যাঁ, দিয়াবল হল এক বিদ্বেষপরায়ণ “নরঘাতক।” বাইবেল প্রকাশ করে যে, সে এক প্রকৃত ব্যক্তি, শুধুমাত্র কারও হৃদয়ের অশুভ প্রবৃত্তি নয়। (মথি ৪:১-১১) এক ধার্মিক স্বর্গদূতরূপে সৃষ্টি করা হলেও, “সে . . . সত্যে থাকে নাই।” কত উপযুক্ত এটি যে তার নামকরণ শয়তান দিয়াবল! (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) তাকে বলা হয় “শয়তান,” অথবা “বিপক্ষ,” কারণ সে যিহোবার বিরোধিতা ও প্রতিরোধ করেছিল। এই অপরাধীকে আরও বলা হয় “দিয়াবল,” অর্থ “অপবাদক,” কারণ সে ঈশ্বরকে নিন্দা করে তাঁর মিথ্যা পরিচয় দিয়েছিল।
৬. শয়তান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল কেন?
৬ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে কী শয়তানকে পরিচালিত করেছিল? লোভ। লোভাতুর হয়ে সে সেই উপাসনা আকাঙ্ক্ষা করেছিল যা যিহোবা মানুষের কাছ থেকে পেতেন। যা উপযুক্তরূপে একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই পাওয়ার যোগ্য, সেই উপাসনা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে দিয়াবল ত্যাগ করেনি। (যিহিষ্কেল ২৮:১২-১৯ পদ তুলনা করুন।) পরিবর্তে, সেই স্বর্গদূতটি যে শয়তান হয়েছিল, সে এই লোভী আকাঙ্ক্ষাকে বাড়তে দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তা উর্বর হয়ে পাপের জন্ম দিয়েছিল।—যাকোব ১:১৪, ১৫.
৭. (ক) মানুষের মৃত্যুর কারণ কী? (খ) পাপ কী?
৭ আমরা সেই দোষীকে শনাক্ত করেছি যার অপরাধমূলক কাজ মানুষের জন্য মৃত্যু নিয়ে এসেছে। কিন্তু মানুষের মৃত্যুর বিশেষ কারণটি কী? বাইবেল বলে: “মৃত্যুর হুল পাপ।” (১ করিন্থীয় ১৫:৫৬) আর পাপ কী? এই শব্দটিকে বুঝতে, আসুন আমরা বাইবেলের আদি ভাষাগুলিতে এর যা অর্থ ছিল তা বিবেচনা করি। ইব্রীয় এবং গ্রীক ক্রিয়াপদগুলি যা সাধারণত অনুবাদ করা হয় “পাপ করা” তার অর্থ “লক্ষ্যভ্রষ্ট,” কোন বস্তুর নাগাল না পাওয়া অথবা কোন লক্ষ্যে না পৌঁছানোর অর্থে। কোন্ লক্ষ্যে আমরা কেউই পৌঁছাতে পারি না? ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্যতার লক্ষ্য। তাহলে, কিভাবে, জগতে পাপের প্রবর্তন করা হয়েছিল?
সেই অভিসন্ধি কিভাবে সম্পাদন করা হয়েছিল
৮. মানুষের উপাসনা লাভ করতে শয়তান কিভাবে চেষ্টা করেছিল?
৮ শয়তান সতর্কতার সঙ্গে এক অভিসন্ধির পরিকল্পনা করে যা সে ভেবেছিল সমস্ত মানুষকে তার শাসন করায় এবং তাদের উপাসনা পেতে পরিচালিত করবে। প্রথম মানব দম্পতি, আদম ও হবাকে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করতে প্ররোচিত করার সিদ্ধান্ত সে নিয়েছিল। যিহোবা আমাদের প্রথম পিতামাতাকে সেই জ্ঞান দিয়েছিলেন যা তাদের অনন্ত জীবনে পরিচালিত করতে পারত। তারা জানত যে তাদের সৃষ্টিকর্তা উত্তম, কারণ তিনি তাদের সুন্দর এদন উদ্যানে রেখেছিলেন। আদম বিশেষভাবে তার স্বর্গীয় পিতার মঙ্গলভাবকে উপলব্ধি করেছিল, যখন ঈশ্বর তাকে এক সুন্দরী এবং সাহায্যকারী স্ত্রী দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৯; ২:৭-৯, ১৮-২৩) প্রথম মানব দম্পতির চিরকালীন জীবন নির্ভর করেছিল ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতার উপরে।
৯. প্রথম মানবকে ঈশ্বর কী আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং এটি কেন ন্যায়সম্মত ছিল?
৯ ঈশ্বর আদমকে আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যেদিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) সৃষ্টিকর্তা হিসাবে, যিহোবা ঈশ্বরের অধিকার ছিল নৈতিক মানসমূহ স্থাপন করার এবং নিরূপণ করে দেওয়ার যে তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের জন্য কী ভাল ও কী মন্দ। তাঁর আদেশ ন্যায়সম্মত ছিল কারণ আদম ও হবা উদ্যানের অন্যান্য সকল বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করতে পারত। গর্বিতভাবে নিজেরাই নৈতিক মান স্থাপনের পরিবর্তে এই নিয়মের প্রতি বাধ্য হওয়ার দ্বারা তারা যিহোবার ন্যায়সম্মত শাসনক্ষমতার প্রতি তাদের উপলব্ধিবোধ দেখাতে পারত।
১০. (ক) তার পক্ষে তাদের আকর্ষণ করার জন্য শয়তান কিভাবে মানুষের সম্মুখীন হয়েছিল? (খ) যিহোবার প্রতি কোন্ উদ্দেশ্যসমূহের অভিযোগ শয়তান করেছিল? (গ) ঈশ্বরের উপরে শয়তানের আক্রমণ সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?
১০ দিয়াবল প্রথম মানবদের ঈশ্বর থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করেছিল। তার পক্ষ নিতে তাদের প্রলোভিত করতে, শয়তান মিথ্যা বলেছিল। একটি সর্পকে ব্যবহার করে, যেমন কোন মায়াস্বর উৎপন্নকারী এক পুতুলকে ব্যবহার করে, দিয়াবল হবাকে জিজ্ঞাসা করেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” যখন হবা ঈশ্বরের আদেশ উদুল্লখ করেছিল, শয়তান ঘোষণা করেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না।” তারপর যিহোবার উদ্দেশ্যসমূহকে মন্দ বলে অভিযোগ দেখিয়ে সে এই বলেছিল: “ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ৩:১-৫) এইভাবে দিয়াবল ইঙ্গিত দিয়েছিল যে ঈশ্বর উত্তম কিছু দিতে চাইছিলেন না। কী অপবাদমূলক আক্রমণ সত্যনিষ্ঠ, প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা, যিহোবার উপরে!
১১. আদম ও হবা কিভাবে শয়তানের সহযোগী হয়েছিল?
১১ হবা পুনরায় বৃক্ষটির প্রতি দেখেছিল আর এখন এর ফল বিশেষভাবে লোভনীয় বলে মনে হয়েছিল। তাই সে সেই ফলটি পাড়ে ও খায়। পরে, তার স্বামী ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্যতার এই পাপজনক কাজে তার সাথে যোগ দেয়। (আদিপুস্তক ৩:৬) যদিও হবা প্রবঞ্চিত হয়েছিল, কিন্তু সে ও আদম উভয়েই মানুষকে শাসন করতে শয়তানের পরিকল্পনার সাথে সহযোগিতা করেছিল। বাস্তবপক্ষে, তারা তার সহযোগী হয়েছিল।—রোমীয় ৬:১৬; ১ তীমথিয় ২:১৪.
১২. ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহ থেকে কী ফল হয়েছিল?
১২ আদম ও হবাকে তাদের কাজের ফলভোগ করতে হয়েছিল। বিশেষ জ্ঞান সহ, তারা ঈশ্বরের সদৃশ হয়নি। পরিবর্তে, তারা লজ্জিত হয়েছিল ও নিজেদের লুকিয়ে ফেলেছিল। যিহোবা আদমকে প্রতিফল দেন ও এই দণ্ড ঘোষণা করেছিলেন: “তুমি ঘর্ম্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে; তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৯) “যে দিন” আমাদের প্রথম পিতামাতা সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল খেয়েছিল, সেইদিন তারা ঈশ্বরের দণ্ডাদেশ পেয়েছিল এবং তাঁর দৃষ্টিতে মারা গিয়েছিল। তারপর তারা পরমদেশ থেকে বহিষ্কৃত হয় ও পার্থিব মৃত্যুর দিকে নিম্নগামী হতে শুরু করেছিল।
কিভাবে পাপ ও মৃত্যু ছড়িয়ে পড়ে
১৩. সমগ্র মানবজাতির উপরে পাপ কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল?
১৩ আপাতদৃষ্টিতে মানুষের শ্রদ্ধা পেতে তার চক্রান্তে শয়তান সফল হয়েছিল। তবুও, সে তার উপাসকদের বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। যখন প্রথম মানব দম্পতির মধ্যে পাপ কাজ করতে শুরু করেছিল, তারা আর তাদের বংশধরদের মধ্যে সিদ্ধতা সঞ্চারিত করতে পারেনি। পাথরের উপরে খোদিত কোন লিপির ন্যায়, আমাদের প্রথম পিতামাতার বংশ-নিয়ন্ত্রক উপাদানের (জিনের) মধ্যে পাপ গভীরভাবে খোদিত হয়ে গিয়েছিল। তাই, তারা শুধুমাত্র অসিদ্ধ বংশধরদের জন্ম দিতে পেরেছিল। যেহেতু আদম ও হবা পাপ করার পরেই তাদের সমস্ত সন্তানের জন্ম হয়, তাদের বংশধরেরা পাপ ও মৃত্যু উত্তরাধিকারসূদুত্র পেয়েছিল।—গীতসংহিতা ৫১:৫; রোমীয় ৫:১২.
১৪. (ক) যারা তাদের পাপকে অস্বীকার করে আমরা তাদের কার সঙ্গে তুলনা করতে পারি? (খ) ইস্রায়েলীয়দের তাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে কিভাবে সচেতন করে দেওয়া হয়েছিল?
১৪ কিন্তু, বর্তমানে, অনেকেই বিশ্বাস করে না যে তারা পাপী। জগতের কিছু অংশে, উত্তরাধিকারসূদুত্র পাওয়া পাপের ধারণা সাধারণভাবে অজ্ঞাত। কিন্তু তা প্রমাণ করে না যে পাপ অস্তিত্বে নেই। অপরিচ্ছন্ন-মুখসহ কোন ছেলে হয়ত দাবি করতে পারে যে সে পরিচ্ছন্ন আর তাকে হয়ত স্বীকার করানো যেতে পারে একমাত্র যখন সে কোন আয়নায় তা দেখে। প্রাচীন ইস্রায়েল জাতি এরকম একটি ছেলের মত ছিল যখন তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা তাঁর ভাববাদী মোশির মাধ্যমে পেয়েছিল। ব্যবস্থা পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে পাপ অস্তিত্বে ছিল। “বরং পাপ কি, তাহা আমি জানিতাম না, কেবল ব্যবস্থা দ্বারা জানিয়াছি,” প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন। (রোমীয় ৭:৭-১২) আয়নায় দেখছে সেই ছেলেটির মত, ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রতি তাকিয়ে, ইস্রায়েলীয়েরা দেখতে পারত যে যিহোবার দৃষ্টিতে তারা অপরিচ্ছন্ন ছিল।
১৫. ঈশ্বরের বাক্যের আয়নার ভিতরে তাকিয়ে কী প্রকাশিত হয়?
১৫ ঈশ্বরের বাক্যের আয়নার মধ্যে তাকিয়ে এবং এর মানসমূহ লক্ষ্য করে, আমরা দেখতে পাই যে আমরা অসিদ্ধ। (যাকোব ১:২৩-২৫) উদাহরণস্বরূপ, বিবেচনা করুন ঈশ্বর এবং তাদের প্রতিবাসীকে প্রেম করা সম্পর্কে যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের কী বলেছিলেন, যা লিপিবদ্ধ আছে মথি ২২:৩৭-৪০ পদে। প্রায়ই কতবার মানুষ এই ক্ষেত্রগুলিতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়! ঈশ্বর অথবা তাদের প্রতিবাসীদের প্রতি প্রেম দেখাতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই এমনকি এতটুকু বিবেক দংশনও অনুভব করে না।—লূক ১০:২৯-৩৭.
শয়তানের কলাকৌশলগুলি থেকে সাবধান থাকুন!
১৬. শয়তানের কলাকৌশলগুলির এক শিকার হওয়াকে এড়িয়ে চলতে আমরা কী করতে পারি এবং এটি কঠিন কেন?
১৬ শয়তান আমাদের দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করাবার সুযোগ খোঁজে। (১ যোহন ৩:৮) তার কলাকৌশলগুলির শিকার হওয়াকে এড়িয়ে চলার কী কোন পথ আছে? হ্যাঁ, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন যেন ইচ্ছাকৃত পাপের প্রতি প্রবণতাগুলির বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করি। এটি সহজ নয় কারণ আমাদের পাপ করার সহজাত প্রবণতা অতি প্রবল। (ইফিষীয় ২:৩) পৌলকে এক প্রকৃত সংগ্রাম করতে হয়েছিল। কেন? কারণ পাপ তার মধ্যে বাস করত। যদি আমরা ঈশ্বরের অনুমোদন চাই, আমাদের ভিতরের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলির বিরুদ্ধে আমাদেরও অবশ্যই যুদ্ধ করতে হবে।—রোমীয় ৭:১৪-২৪; ২ করিন্থীয় ৫:১০.
১৭. কী আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আরও কঠিন করে তোলে?
১৭ ঈশ্বরের নিয়মগুলি লঙ্ঘনে আমাদের প্রলুব্ধ করতে যেহেতু শয়তান ক্রমাগত সুযোগ খুঁজে চলেছে, তাই পাপের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ সহজ নয়। (১ পিতর ৫:৮) সহ-খ্রীষ্টানদের প্রতি উদ্বিগ্নতা দেখিয়ে, পৌল বলেছিলেন: “আশঙ্কা হইতেছে, পাছে সর্প যেমন আপন ধূর্ত্ততায় হবাকে প্রতারণা করিয়াছিল, তেমনি তোমাদের মন খ্রীষ্টের প্রতি সরলতা ও শুদ্ধতা হইতে ভ্রষ্ট হয়।” (২ করিন্থীয় ১১:৩) বর্তমানে শয়তান একই কলাকৌশলগুলি ব্যবহার করে। যিহোবার মঙ্গলভাব এবং ঈশ্বরের আজ্ঞাসকল পালনের উপকারিতা সম্বন্ধে সন্দেহের বীজ বপন করতে সে চেষ্টা করে। দিয়াবল বংশানুক্রমে পাওয়া আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলির সুযোগ নিতে এবং গর্ব, লোভ, ঘৃণা ও কুসংস্কারের এক পথে আমাদের ধাবিত করিয়ে দিতে চেষ্টা করে।
১৮. পাপকে প্রসারিত করতে শয়তান জগৎকে কিভাবে ব্যবহার করে?
১৮ একটি কৌশল যা দিয়াবল আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তা হল এই জগৎ, যা তার শক্তির কবলিত। (১ যোহন ৫:১৯) যদি আমরা সতর্ক না থাকি, আমাদের চারিপাশের জগতের দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অসৎ ব্যক্তিরা আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করবে এক পাপপূর্ণ পথে চলতে যা ঈশ্বরের নৈতিক মানসকল লঙ্ঘন করে। (১ পিতর ৪:৩-৫) অনেকেই ঈশ্বরের নিয়মাবলি অগ্রাহ্য করে ও এমনকি তাদের বিবেক দংশনকেও একপাশে সরিয়ে রাখে, ক্রমে যা একেবারে সংবেদহীন হয়ে পড়ে। (রোমীয় ২:১৪, ১৫; ১ তীমথিয় ৪:১, ২) কেউ কেউ ক্রমশ এমন পথ অবলম্বন করে যা এমনকি তাদের অসিদ্ধ বিবেকও পূর্বে অনুসরণ করতে অনুমোদন করত না।—রোমীয় ১:২৪-৩২; ইফিষীয় ৪:১৭-১৯.
১৯. নৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন এক জীবনযাপন করাই শুধু যথেষ্ট নয় কেন?
১৯ নৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করা এই জগতে এক কৃতিত্বের বিষয়। কিন্তু, আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে, আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। আরও আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাঁর প্রতি এক দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। (ইব্রীয় ১১:৬) “যে কেহ সৎকর্ম্ম করিতে জানে, অথচ না করে, তাহার পাপ হয়,” শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন। (যাকোব ৪:১৭) হ্যাঁ, ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বর ও তাঁর আজ্ঞাসকল অগ্রাহ্য করা হল এক ধরনের পাপ।
২০. যা সঠিক তা করা থেকে আপনাকে বিরত করতে শয়তান কিভাবে চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু কী আপনাকে সাহায্য করবে এই চাপগুলিকে প্রতিরোধ করতে?
২০ আপনার বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান লাভের পথে খুব সম্ভবত শয়তান বিরোধিতা আনতে প্ররোচনা দেবে। আন্তরিকভাবে আশা করা হচ্ছে যে এইধরনের চাপগুলি থাকলেও যা সঠিক তা করা অভ্যাস থেকে আপনি নিজেকে বিরত হতে দেবেন না। (যোহন ১৬:২) যদিও তাঁর পরিচর্যাকালে অনেক শাসক যীশুর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, কিন্তু তারা তাঁকে স্বীকার করেনি কারণ তাদের সমাজচ্যুত হওয়ার ভয় ছিল। (যোহন ১২:৪২, ৪৩) যে কেউ ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের অন্বেষণ করে শয়তান তাকে নির্মমভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, যিহোবা যে অপূর্ব বিষয়গুলি সম্পন্ন করেছেন তা সর্বদাই আপনার স্মরণ করা এবং উপলব্ধি করা উচিত। এমনকি একই উপলব্ধিবোধ লাভ করতে আপনি হয়ত বিরোধীদেরও সাহায্য করতে পারেন।
২১. আমরা কিভাবে এই জগৎ ও আমাদের নিজেদের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলিকে জয় করতে পারি?
২১ যতদিন পর্যন্ত আমরা অসিদ্ধ রয়েছি, আমরা পাপ করব। (১ যোহন ১:৮) তবুও, এই যুদ্ধ করতে আমাদের সাহায্য রয়েছে। হ্যাঁ, সেই পাপাত্মা, শয়তান দিয়াবলের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব। (রোমীয় ৫:২১) পৃথিবীতে যীশুর পরিচর্যাকালের শেষে, তিনি এই কথাগুলির দ্বারা তাঁর অনুগামীদের উৎসাহ দিয়েছিলেন: “জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।” (যোহন ১৬:৩৩) এমনকি অসিদ্ধ মানুষের পক্ষেও, ঈশ্বরের সাহায্যে জগৎকে জয় করা সম্ভব। যারা তাকে প্রতিরোধ করে এবং ‘ঈশ্বরের কাছে নিজেদের বশীভূত করে’ তাদের উপরে শয়তানের কোন ক্ষমতা থাকে না। (যাকোব ৪:৭; ১ যোহন ৫:১৮) যেমন আমরা দেখব, পাপ এবং মৃত্যুর দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসার এক পথ ঈশ্বর প্রদান করেছেন।
আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন
শয়তান দিয়াবল কে?
কেন মানুষ বৃদ্ধ হয় ও মারা যায়?
পাপ কী?
ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত পাপ করতে শয়তান মানুষকে কিভাবে আকর্ষণ করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৫৪ পৃষ্ঠার চিত্র]