সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

একজন প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?

উল্লেখিত আলোচনাটা হল এক সাধারণ কথোপকথন, যা একজন যিহোবার সাক্ষি এবং একজন প্রতিবেশীর মধ্যে হতে পারে। কল্পনা করুন, অ্যানি নামে একজন সাক্ষি, সোফিয়া নামে একজন ব্যক্তির বাড়িতে এসেছেন।

আমাদের কষ্ট পেতে দেখে ঈশ্বরের কেমন লাগে?

অ্যানি: দিদি, আপনার সাথে আবার দেখা করতে পেরে ভালো লাগল। আপনি ভালো আছেন?

সোফিয়া: হ্যাঁ, আমি ভালো আছি। আর আপনি?

অ্যানি: হ্যাঁ, আমিও ভালো আছি। গতবার আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, আমাদেরকে কষ্ট পেতে দেখে ঈশ্বরের কেমন লাগে। a তখন আপনি বলেছিলেন যে, আপনি এই প্রশ্নটা নিয়ে প্রায়ই চিন্তা করেন, বিশেষ করে যখন থেকে আপনার মা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। দিদি, আপনার মা এখন কেমন আছেন?

সোফিয়া: আছে দিদি, ভালো-খারাপ মিলিয়ে। আজকে মায়ের অবস্থা একটু ভালো।

অ্যানি: শুনে খুশি হলাম। আপনার মাকে এই অবস্থায় দেখে আপনার নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট লাগে।

সোফিয়া: হ্যাঁ দিদি। মাঝে মাঝে আমি ভাবি, আর কতদিন মাকে এভাবে কষ্ট পেতে হবে।

অ্যানি: আপনার কষ্ট আমি বুঝতে পারছি। দিদি, আপনার মনে আছে এই ব্যাপারে গতবার আমি একটা প্রশ্ন রেখে গিয়েছিলাম: এই সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর করার ক্ষমতা তো ঈশ্বরের রয়েছে, তা হলে কেন তিনি তা থাকতে দিয়েছেন?

সোফিয়া: হ্যাঁ, আমার মনে আছে।

অ্যানি: উত্তরটা জানার আগে, চলুন আমরা গতবার যা আলোচনা করেছিলাম, সেটা একটু মনে করি।

সোফিয়া: ঠিক আছে।

অ্যানি: গতবার আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম যে, বাইবেলের সময়েও একজন বিশ্বস্ত লোক ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিলেন যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকে দিয়েছেন। কিন্তু ঈশ্বর তাকে এরজন্য বকাঝকা করেননি বা তাকে এটাও বলেননি যে, তার আরও বিশ্বাসের প্রয়োজন।

সোফিয়া: এটা আমি আগে জানতাম না।

অ্যানি: আমরা এও দেখেছিলাম যে, আমাদের কষ্ট পেতে দেখে ঈশ্বরেরও কষ্ট লাগে। আমরা বাইবেল থেকে দেখেছিলাম, ঈশ্বরের লোকেরা যখন দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি তাদের ‘সকল দুঃখে দুঃখিত হন।’ b তাহলে, তিনি আমাদেরকে কষ্ট পেতে দেখেও কষ্ট পান, তাই না?

সোফিয়া: হ্যাঁ, ঠিক তাই।

অ্যানি: আর আমরা এটাও শিখেছিলাম যে, যেহেতু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তাই এই সমস্ত দুঃখকষ্ট শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।

সোফিয়া: আর এখানেই আমার প্রশ্ন। ঈশ্বরের তো সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর করার শক্তি আছে; তাহলে কেন তিনি সেগুলো থাকতে দিচ্ছেন?

শয়তান যিহোবার নামে মিথ্যা বলেছিল

অ্যানি: আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটা জানার জন্য, আসুন আমরা বাইবেলের আদিপুস্তক থেকে একটা ঘটনা পড়ি। আপনি নিশ্চয়ই আদম-হবার ঘটনাটা পড়েছেন।

সোফিয়া: হ্যাঁ, আমি সানডে স্কুলে এই বিষয়ে শিখেছিলাম। ঈশ্বর আদম ও হবাকে একটা গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তারা অবাধ্য হয়ে সেই গাছের ফলই খেয়েছিল।

অ্যানি: ঠিক বলেছেন। তবে আদম-হবা অবাধ্য হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, আসুন আমরা বাইবেল থেকে সেটা দেখি। সেই ঘটনাটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিচ্ছেন। আপনি কি আদিপুস্তক ৩ অধ্যায় ১ থেকে ৫ পদ একটু পড়ে দিবেন?

সোফিয়া: ঠিক আছে, পড়ছি: “সদাপ্রভু ঈশ্বরের নির্ম্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্প সর্ব্বাপেক্ষা খল ছিল। সে ঐ নারীকে কহিল, ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না? নারী সর্পকে কহিলেন, আমরা এই উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি; কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে, তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা তাহা ভোজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে। তখন সর্প নারীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।”

অ্যানি: ধন্যবাদ। আসুন, এই পদগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করি। এখানে, একটা সাপ হবার সঙ্গে কথা বলছে। বাইবেলের অন্য আরেকটা পদ থেকে আমরা এটা জানতে পারি যে, আসলে শয়তান দিয়াবলই সেই সাপ ব্যবহার করে হবার সঙ্গে কথা বলেছিল। c শয়তান হবাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, একটা গাছের ব্যাপারে ঈশ্বর কী বলেছিলেন। সেটার উত্তরে হবা কী বলেছিলেন? সেই গাছের ফল খেলে তাদের কী হবে?

সোফিয়া: তারা মারা যাবে।

অ্যানি: ঠিক বলেছেন। কিন্তু শয়তান কী বলেছিল, তা লক্ষ্য করুন। সে বলেছিল: “কোনক্রমে মরিবে না।” শয়তান আসলে কী বলতে চেয়েছিল? সে বলতে চেয়েছিল, যিহোবা হলেন মিথ্যাবাদী!

সোফিয়া: এই অংশটা আমি আগে কখনো খেয়াল করিনি।

অ্যানি: এখন প্রশ্ন হল, কে সত্য কথা বলছে, শয়তান না কি যিহোবা? বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল। আপনি কি বুঝতে পারছেন, কেন?

সোফিয়া: না, আমি তো বুঝতে পারছি না।

অ্যানি: আচ্ছা, তাহলে একটা উদাহরণ বলি। ধরুন, আমি আপনার কাছে এসে বললাম, আপনার চেয়ে আমার শক্তি বেশি। এখন কার শক্তি বেশি সেটা আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন?

সোফিয়া: একটা পরীক্ষা করলেই হয়ে যাবে।

অ্যানি: একদম ঠিক। হয়তো আমরা পাঞ্জা লড়াই করব অথবা একটা ভারী জিনিস নিয়ে দেখব কে সেটা তুলতে পারে। আসলে কার শক্তি বেশি সেটা খুব সহজেই প্রমাণ করা যায়, তাই না?

সোফিয়া: ঠিক।

অ্যানি: কিন্তু, ধরুন আমি আপনাকে শক্তির বিষয়ে না বলে বললাম, আপনার চেয়ে আমি বেশি সৎ। এটা কী একমুহূর্তেই প্রমাণ করা যাবে?

সোফিয়া: মনে হয় যাবে না।

অ্যানি: আসলে কার শক্তি বেশি সেটা একটা পরীক্ষার মাধ্যমে অল্প সময়েই প্রমাণ করা যায়। কিন্তু সততা কোনো সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় না, তাই না?

সোফিয়া: হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন।

অ্যানি: তবে আমাদের মধ্যে কে বেশি সৎ তা প্রমাণ করার একটা উপায় রয়েছে আর সেটা হল, সময় পার হতে দেওয়া। সময়ের সাথে সাথে অন্যরা আমাদের কাজ দেখে বুঝতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কে বেশি সৎ। আপনি বুঝতে পারছেন?

সোফিয়া: হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি।

অ্যানি: এখন আসুন, আমরা আদিপুস্তকের ঘটনায় ফিরে আসি। শয়তান কি এমনটা বলেছিল যে, সে ঈশ্বরের চেয়ে বেশি শক্তিশালী?

সোফিয়া: না, সে সেটা বলেনি।

অ্যানি: যদি সে তা বলত, তা হলে ঈশ্বর সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণ করতেন যে, আসলে কে বেশি শক্তিশালী। এর বিপরীতে, শয়তান ঈশ্বরের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সে তার কথার মাধ্যমে হবাকে যা বোঝাতে চেয়েছিল তা হল, ‘ঈশ্বর তোমাকে মিথ্যা কথা বলছেন আর আমি তোমাকে সত্য কথা বলছি।’

সোফিয়া: পরে ঈশ্বর কী করেছেন?

অ্যানি: ঈশ্বর সময় পার হতে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন, শয়তানের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এটাই হল সবচেয়ে ভালো উপায়। সময়ের সাথে সাথে এটা প্রমাণ হয়ে যাবে যে, কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা বলছে।

শয়তানের তোলা আরেকটা প্রশ্ন

সোফিয়া: কিন্তু হবার মৃত্যুতেই কি এটা প্রমাণ হয়ে যায়নি যে, ঈশ্বর সত্য বলেছিলেন আর শয়তান মিথ্যা বলেছিল?

অ্যানি: আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু এখানেই এর শেষ নয়। শয়তান আরও একটা প্রশ্ন তুলেছিল। এখানে ৫ পদে দেখুন, শয়তান হবাকে আরও কী বলেছিল?

সোফিয়া: শয়তান বলেছিল, যদি হবা সেই ফল খায়, তা হলে তার চোখ খুলে যাবে।

অ্যানি: হ্যাঁ, সে বলেছিল, তোমরা ঈশ্বরের “সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে,” অর্থাৎ তারা ভালো-মন্দ বোঝার ব্যাপারে ঈশ্বরের সমান হয়ে যাবে। আপনি কি বুঝতে পারছেন, শয়তান আসলে কী দাবি করছিল?

সোফিয়া: না, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

অ্যানি: শয়তান দাবি করছিল যে, ঈশ্বর তাদেরকে ভালো কিছু থেকে বঞ্চিত করছেন। সে বলতে চেয়েছিল, সুখী হওয়ার জন্য ঈশ্বরের শাসনের অধীনে থাকার প্রয়োজন নেই। আর তার এই দাবি শুধুমাত্র হবার জন্যই নয়, বরং পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য প্রযোজ্য ছিল।

সোফিয়া: এটা আমি আগে কখনো শুনিনি।

অ্যানি: আর এক্ষেত্রেও যিহোবা জানতেন যে, শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, তাকেই কিছু সময়ের জন্য এই পৃথিবী শাসন করতে দেওয়া। এখন আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আসলে শয়তান শাসন করছে বলেই পৃথিবীতে এতো দুঃখকষ্ট রয়েছে। d তবে আমাদের জন্য দুটো ভালো খবরও আছে।

সোফিয়া: সেগুলো কী, দিদি?

অ্যানি: প্রথম ভালো খবরটা হল, যিহোবা আমাদের দুঃখকষ্টের ব্যাপারে উদাসীন নন। তিনি আমাদের সমস্ত কষ্ট জানেন এবং আমাদের সাহায্য করতে চান। যিহোবা যে আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্ট জানেন, তা আমরা রাজা দায়ূদের লেখা কথাগুলো থেকে বুঝতে পারি। দায়ূদ তার জীবনে অনেক কষ্ট ভোগ করেছিলেন। কিন্তু লক্ষ করুন যে, গীতসংহিতা ৩১:৭ পদে দায়ূদ যিহোবা সম্বন্ধে কী বলতে পেরেছিলেন। আপনি কি একটু পড়ে দিবেন?

সোফিয়া: ঠিক আছে। এটা বলে: “আমি তোমার দয়াতে উল্লাস ও আনন্দ করিব, কেননা তুমি আমার দুঃখ দেখিয়াছ, তুমি দুর্দ্দশাকালে আমার প্রাণের তত্ত্ব লইয়াছ।”

অ্যানি: এই শাস্ত্রপদ থেকে আমরা বুঝতে পারি, দায়ূদ জানতেন যে, তার কষ্টগুলো সম্বন্ধে যিহোবা পুরোপুরিভাবে অবগত আছেন। আর সেটা দায়ূদকে সান্ত্বনা দিয়েছিল। ঈশ্বর আপনার কষ্টের ব্যাপারেও উদাসীন নন। তিনি আপনার প্রতিটা কষ্ট সম্বন্ধে জানেন, এমনকী আপনার মনের ভিতরে থাকা কষ্ট সম্বন্ধেও ভালোভাবে জানেন। এটা জেনে আপনার কেমন লাগে? আপনিও কি সান্ত্বনা পান না?

সোফিয়া: হ্যাঁ, এটা তো সান্ত্বনার কথা।

অ্যানি: আর দ্বিতীয় ভালো খবরটা হল, ঈশ্বর আমাদের দুঃখকষ্ট চিরকাল ধরে থাকতে দেবেন না। বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি যে, ঈশ্বর খুব শীঘ্রই এই পৃথিবী থেকে শয়তানের শাসন সরিয়ে দিবেন আর পৃথিবীতে থাকা সমস্ত দুঃখকষ্টও মুছে দিবেন। এর মানে হল, আপনি এবং আপনার মা এখন যে-কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলোও আর থাকবে না। কিন্তু কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, ঈশ্বর সমস্ত দুঃখকষ্ট অবশ্যই দূর করবেন? e পরের বার আপনার সঙ্গে আমি এই বিষয়ে আলোচনা করতে আসব, ঠিক আছে?

সোফিয়া: হ্যাঁ, ঠিক আছে।

আপনার মনে কি এমন কোনো প্রশ্ন রয়েছে, যেটার উত্তর আপনি বাইবেল থেকে জানতে চান? কিংবা যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বাস বা তাদের ধর্মীয় কার্যকলাপ সম্বন্ধে কি আপনার কোনো প্রশ্ন রয়েছে? যদি থাকে, তা হলে দয়া করে কোনো যিহোবার সাক্ষিকে সেই বিষয়ে জিজ্ঞেস করুন। তিনি আপনাকে সেই প্রশ্নের উত্তর জানাতে পেরে খুশি হবেন।

a ২০১৩ সালের ১ জুলাই (ইংরেজি) প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “একজন প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা—ঈশ্বর কি আমাদের দুঃখকষ্ট সম্বন্ধে চিন্তা করেন?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন। পত্রিকাটা www.isa4310.com ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে।

b যিশাইয় ৬৩:৯ দেখুন।

e আরও তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ৯ অধ্যায় দেখুন। এটা www.isa4310.com ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে।