রং আপনার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?
আপনি যখন আপনার চারিদিকে তাকান, তখন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আপনার চোখ ও মস্তিষ্ক একসঙ্গে কাজ করে থাকে। যেমন, আপনি যখন আপনার কাছাকাছি কোনো একটা ফল দেখতে পান, তখন সিদ্ধান্ত নেন, আপনি সেটা খাবেন কি না। আবার, আপনি যখন আকাশের দিকে তাকান, তখন বুঝতে পারেন, আজকে বৃষ্টি হবে না। আর এখন আপনি যে-শব্দগুলো পড়ছেন, সেগুলোর দিকে যখন তাকাচ্ছেন, তখন আপনি এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করছেন। আসলে, রং আপনার ওপর প্রভাব ফেলছে। সত্যিই কি তাই?
আপনি যে-ফলটা দেখেছেন, সেটার রং আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে যে, ফলটা পেকেছে কি না আর আপনি তা খেতে চান কি না। আকাশের ও মেঘের রং আপনাকে আবহাওয়ার অবস্থা জানতে সাহায্য করে। এই প্রবন্ধ পড়ার সময়, আপনার চোখ বর্ণমালা ও পৃষ্ঠার রঙের মধ্যেকার পার্থক্যের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে মানিয়ে নেয়। হ্যাঁ, আপনি হয়তো এটা লক্ষই করেননি যে, তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য আপনি অনবরত রঙের সাহায্য নিয়ে থাকেন। তবে রং আপনার আবেগের ওপরও প্রভাব ফেলে।
আবেগের ওপর রঙের প্রভাব
আপনি যখন কোনো দোকানের সারি সারি শেল্ফের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যান, তখন সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন পণ্যের প্যাকেট দেখতে পান। এগুলো আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। আপনি বুঝতে পারেন বা না-ই পারেন, বিজ্ঞাপনদাতারা সতর্কতার সঙ্গে এমন সব রং আর রঙের সমাহার বাছাই করে থাকে, যাতে সেটা আপনার সুনির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী, লিঙ্গভেদে এবং আপনার বয়সি লোকেদের কাছে আকর্ষণীয় হয়। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার (যে-ব্যক্তি ঘরের ভিতরের সাজসজ্জার কাজ করে থাকেন), পোশাকের ডিজাইনার এবং চিত্রশিল্পীরাও জানে যে, রং আবেগকে নাড়া দিতে পারে।
লোকেরা হয়তো স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রথার কারণে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন রঙের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, এশিয়ার কিছু লোকের কাছে লাল রং সৌভাগ্য ও আনন্দোৎসবের প্রতীক, কিন্তু আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে লাল রং হচ্ছে শোকের চিহ্ন। তবে, মানুষ যে-পরিবেশেই বড়ো হোক না কেন, নির্দিষ্ট কিছু রং সব মানুষের আবেগকে একইভাবে নাড়া দিয়ে থাকে। আসুন আমরা তিনটে রং সম্বন্ধে চিন্তা করি এবং দেখি যে, এগুলো আপনার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে।
লাল রং অনেক দূর থেকে সহজেই চোখে পড়ে। লাল রংকে প্রায়ই কর্মশক্তি, যুদ্ধ এবং বিপদের প্রতীক বলে মনে করা হয়। আমাদের আবেগের ওপর এই রঙের জোরালো প্রভাব রয়েছে এবং এটা মানবদেহের বিভিন্ন কাজ যেমন, বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়াতে পারে ও রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে।
মূল ভাষার বাইবেলে “লাল” হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দটা এমন একটা শব্দ থেকে এসেছে, যেটার অর্থ হচ্ছে “রক্ত।” বাইবেলে বেগুনিয়া ও সিন্দূর বর্ণ বস্ত্র পরিহিতা এক নিষ্ঠুর বেশ্যার লক্ষণীয় চিত্র বর্ণনা করার জন্য টকটকে লাল রং বা সিন্দূর বর্ণ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। সেই বেশ্যা “সিন্দূরবর্ণ পশুর উপরে বসিয়া আছে; সেই পশু ধর্ম্মনিন্দার নামে পরিপূর্ণ।”—প্রকাশিত বাক্য ১৭:১-৬.
সবুজ রং, লাল রঙের বিপরীত প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তোলে কারণ সবুজ রং বিপাকক্রিয়াকে ধীর করে দেয় ও ধীরস্থির ভাব উৎপন্ন করে। সবুজ রং হচ্ছে একটা স্নিগ্ধ রং আর এই রংকে প্রায়ই প্রশান্তির প্রতীক বলে মনে করা হয়। আমরা যখন সবুজ বাগান ও পাহাড়ি এলাকা দেখি, তখন আমাদের মনে অনেক শান্তি লাগে। সৃষ্টির বিষয়ে আদিপুস্তকের বিবরণ জানায় যে, ঈশ্বর মানবজাতির জন্য সবুজ ঘাস ও গাছপালা উৎপন্ন করেছিলেন।—আদিপুস্তক ১:১১, ১২, ৩০.
সাদা রংকে প্রায়ই আলো, নিরাপত্তা ও শুচিতার প্রতীক বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া, এই রং সততা, নির্দোষ অবস্থা ও পবিত্রতার মতো গুণের সঙ্গেও জড়িত। বাইবেলে অনেক বার সাদা রঙের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন দর্শনে, মানুষ এবং স্বর্গদূতদের শুক্ল বর্ণ বা সাদা রঙের বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় দেখানো হয়েছে আর এটা ধার্মিকতা ও ঈশ্বরের দৃষ্টিতে শুচি থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। (যোহন ২০:১২; প্রকাশিত বাক্য ৩:৪; ৭:৯, ১৩, ১৪) সাদা রঙের ঘোড়ার ওপর শ্বেত বা সাদা ও শুচি মসিনা বস্ত্র পরিহিত আরোহী, ধার্মিকতার পক্ষে যুদ্ধকে চিত্রিত করে। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৪) ঈশ্বর যে আমাদের পাপ ক্ষমা করতে ইচ্ছুক, সেই বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার জন্য তিনি সাদা রং ব্যবহার করেছেন: “তোমাদের পাপ সকল সিন্দূরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হইলেও মেষলোমের ন্যায় হইবে।”—যিশাইয় ১:১৮.
রং—মনে রাখার এক হাতিয়ার
রং যে মানুষের আবেগকে নাড়া দেয়, তা ঈশ্বর বোঝেন। এই বিষয়টা তুলে ধরার জন্য বাইবেলের বর্ণনায় রঙের ব্যবহার রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বইয়ে মানুষের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্যাভাব ও মহামারির কারণে অস্বাভাবিক মৃত্যু। আমরা যাতে এই বিষয়টা মনে রাখতে পারি, সেইজন্য একটা চমৎকার দর্শনে বিভিন্ন ঘোড়ার ওপর আরোহীদের দেখা যায়। তবে এগুলো সাধারণ ঘোড়া নয়, নির্ধারিত রঙের ঘোড়া।
প্রথমে, একটা ধবধবে সাদা রঙের ঘোড়া দেখা যায়, যেটা খ্রিস্ট যিশুর ধার্মিকতার পক্ষে যুদ্ধকে চিত্রিত করে। এরপর, আমরা একটা লোহিত বর্ণ বা লাল রঙের ঘোড়া দেখতে পাই, যেটা বিভিন্ন জাতির মধ্যে যুদ্ধকে চিত্রিত করে। এটার পিছন পিছন কৃষ্ণ বর্ণ বা কুচকুচে কালো রঙের ঘোড়া আসে, যেটা দুর্ভিক্ষকে চিত্রিত করে। তারপর আমরা দেখতে পাই “এক পাণ্ডুবর্ণ অশ্ব” বা ফ্যাকাশে রঙের ঘোড়া “এবং যে তাহার উপরে বসিয়া আছে, তাহার নাম মৃত্যু।” (প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৮) প্রত্যেকটা ঘোড়ার রং আমাদের আবেগকে এমনভাবে নাড়া দেয়, যা সেই ঘোড়ার প্রতীকের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে আমরা খুব সহজেই ঘোড়াগুলোর রং এবং সেগুলো আমাদের দিন সম্বন্ধে যা শিক্ষা দেয়, তা মনে রাখতে পারি।
কোনো বর্ণনাকে বাস্তব চিত্রের মতো ফুটিয়ে তোলার জন্য রং ব্যবহারের অনেক উদাহরণ বাইবেলের মধ্যে রয়েছে। হ্যাঁ, আলো, রং ও মানুষের চোখের সৃষ্টিকর্তা শিক্ষাদানের এক হাতিয়ার হিসেবে সুনিপুণভাবে রং ব্যবহার করেছেন। এর ফলে পাঠকরা মনের মধ্যে এমন চিত্র অঙ্কন করতে পারে, যা তারা সহজে বুঝতে ও মনে রাখতে পারে। রং আমাদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। রং আমাদের আবেগের ওপর প্রভাব ফেলে। রং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে সাহায্য করে। রং হচ্ছে আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এক প্রেমপূর্ণ উপহার, যাতে আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি। ▪ (w13-E 10/01)