খ্রিস্টীয় শিক্ষাগুলো সমাজের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?
খ্রিস্টীয় শিক্ষাগুলো সমাজের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?
প্রকৃত খ্রিস্টানরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে না। কিন্তু, কীভাবে খ্রিস্টানরা দেখাতে পারে যে, যে-সমাজে তারা বাস করে, সেই সমাজের উন্নতির ব্যাপারে তারা আগ্রহী? একটা উপায় হল যে, যিশুর এই আদেশ পালন করার দ্বারা: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.
‘শিষ্য করা’ সম্বন্ধে যিশুর আদেশ পালন করার এবং পৃথিবীর লবণ ও দীপ্তি হওয়ার বিষয়ে তাঁর নির্দেশনা মেনে চলার মধ্যে এক যোগসূত্র রয়েছে। (মথি ৫:১৩, ১৪) সেই যোগসূত্রটা কী? আর সেই কাজ লোকেদের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?
খ্রিস্টের বার্তা—সংরক্ষণ করছে ও জ্ঞানালোকিত করছে
লবণ হল এক সংরক্ষণকারী উপাদান; এটা পচনকে প্রতিরোধ করতে পারে। একইভাবে, যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে সমস্ত জাতির লোকেদের কাছে যে-বার্তা নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেটার সংরক্ষণ করার এক ক্ষমতা রয়েছে। যারা যিশুর শিক্ষাগুলোকে গ্রহণ করে ও কাজে লাগায়, তারা আজকে ব্যাপকভাবে বিরাজমান নৈতিক অবক্ষয় থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে। কীভাবে? তারা শেখে যে, কীভাবে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বিভিন্ন অভ্যাস, যেমন ধূমপান করাকে পরিহার করা যায় আর সেইসঙ্গে তারা এই ধরনের গুণাবলি গড়ে তোলে, যেমন, প্রেম, শান্তি, দীর্ঘ-সহিষ্ণুতা, মাধুর্য বা দয়া এবং মঙ্গলভাব। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এই গুণাবলি তাদেরকে সমাজের এক সম্পদ করে তোলে। যে-খ্রিস্টানেরা তাদের প্রতিবেশীদের কাছে সংরক্ষণ করার এই বার্তা জানায়, তারা তাদের সমাজে এক মূল্যবান অবদান রাখে।
দীপ্তি, এই বাক্যালঙ্কারটি সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঠিক যেমন চাঁদ সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে, তেমনি খ্রিস্টের অনুসারীরা যিহোবা ঈশ্বরের “দীপ্তি” প্রতিফলিত করে। তারা প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার এবং উত্তম কাজ করার দ্বারা যিহোবার এই দীপ্তিকে প্রতিফলিত করে।—১ পিতর ২:১২.
এ ছাড়া, দীপ্তি হওয়া ও একজন শিষ্য হওয়ার মধ্যে যে-সাদৃশ্য রয়েছে, সেটার ওপর যিশু এই বলে আরও জোর দিয়েছিলেন: “লোকে প্রদীপ জ্বালিয়া কাঠার নীচে রাখে না, কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে, তাহাতে তাহা গৃহস্থিত সকল লোককে আলো দেয়। তদ্রূপ তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক।” দীপাধারের ওপরে রাখা একটা জ্বলন্ত প্রদীপকে, সেটার চারপাশে থাকা সব লোক স্পষ্টভাবে দেখতে পায়। একইভাবে, সত্য খ্রিস্টানদের দ্বারা সম্পাদিত প্রচার ও অন্যান্য উত্তম কাজ যেন তাদের চারপাশে বসবাসরত ব্যক্তিরা স্পষ্টভাবে দেখতে পায়। কেন? কারণ যিশু বলেছিলেন যে, যারা সেই উত্তম কাজগুলো দেখে তারা খ্রিস্টানদের নয় কিন্তু ঈশ্বরের গৌরব করে।—মথি ৫:১৪-১৬.
এক সমষ্টিগত দায়িত্ব
যিশু যখন বলেছিলেন, “তোমরা জগতের দীপ্তি” এবং “তোমাদের দীপ্তি . . . উজ্জ্বল হউক,” তখন তিনি তাঁর সমস্ত শিষ্যকে নির্দেশ করছিলেন। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু ব্যক্তির দ্বারা যিশুর দেওয়া এই কাজ সম্পাদিত হতে পারে না। এর পরিবর্তে, সমস্ত বিশ্বাসী হল “দীপ্তি।” দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫-টারও বেশি জায়গায় বসবাসকারী সত্তর লক্ষ যিহোবার সাক্ষি মনে করে যে, যে-বার্তা তাঁর অনুসারীরা ঘোষণা করুক বলে খ্রিস্ট চান, সেই বার্তা জানানোর জন্য তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হল তাদের সমষ্টিগত দায়িত্ব।
যিহোবার সাক্ষিদের বার্তার মূল বিষয় কী? যিশু যখন প্রচার করার কার্যভার দিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে সামাজিক অথবা রাজনৈতিক সংস্কার, গির্জা ও রাষ্ট্রের মিলন কিংবা অন্য কোনো জাগতিক মতবাদ সম্বন্ধে প্রচার করতে নির্দেশ দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে।” (মথি ২৪:১৪) তাই, যিশুর নির্দেশনার বাধ্য হয়ে আজকে সত্য খ্রিস্টানরা তাদের প্রতিবেশীদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য—একমাত্র সরকার যা শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ এবং এক ধার্মিক নতুন জগৎ নিয়ে আসতে সমর্থ—সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়ে চলে।
বস্তুত, সুসমাচারের বিবরণগুলোতে যিশুর পরিচর্যা সম্বন্ধে দুটো মুখ্য বিষয় রয়েছে, যেগুলো আজকে সত্য খ্রিস্টানদের কাজকর্মের ওপর প্রভাব ফেলে। পরবর্তী প্রবন্ধটিতে দুটো বিষয়ই বিবেচনা করা হবে। (w১২-E ০৫/০১)
[১৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
খ্রিস্টীয় বার্তা কীভাবে লবণের মতো?
[১৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
খ্রিস্টীয় বার্তা কীভাবে অন্ধকার স্থানে রাখা একটা প্রদীপের মতো?