সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন লোকেরা খারাপ কাজগুলো করে থাকে?

কেন লোকেরা খারাপ কাজগুলো করে থাকে?

কেন লোকেরা খারাপ কাজগুলো করে থাকে?

খুব কম লোকই এই বিষয়ে তর্ক করবে যে: আমরা সকলেই অসিদ্ধ আর তাই ভুলত্রুটি এবং এমন কাজগুলো করে থাকি যেগুলোর জন্য আমরা পরে অনুশোচনা করি। যদিও তা ঠিক, তবুও যে-গুরুতর এবং তুচ্ছ খারাপ কাজগুলো আমরা হয় ব্যক্তিগতভাবে অথবা প্রচার মাধ্যমের দ্বারা প্রায় প্রতিদিন দেখে থাকি বা শুনে থাকি, এটাই কি সেটার কারণ?

মানব অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, লোকেরা সাধারণত স্বীকার করে থাকে যে, এমন কিছু নৈতিক সীমারেখা রয়েছে, যেগুলোকে কখনোই অতিক্রম করা উচিত নয় এবং মানুষেরা মন্দ কাজগুলো থেকে দূরে থাকতে সক্ষম। এ ছাড়া, অধিকাংশ লোকই সহজে একমত হবে যে, নিজের অজান্তে মিথ্যা বলা ও সরাসরি অপবাদ দেওয়া, দুর্ঘটনাক্রমে আহত করা ও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবুও, প্রায়ই প্রতিবেশী এলাকাতে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ ব্যক্তিরা শিহরণজনক কাজগুলো করে থাকে। কেন লোকেরা খারাপ কাজগুলো করে থাকে?

বাইবেল এই বিষয়ে আলোকপাত করে। খারাপ বলে জানা সত্ত্বেও, কেন লোকেরা সেভাবে কাজ করে এটি সঠিকভাবে সেটার মূল কারণগুলোকে শনাক্ত করে। এটি যা বলে তা বিবেচনা করুন।

▪ “উপদ্রব জ্ঞানবানকে ক্ষিপ্ত করে।”উপদেশক ৭:৭.

বাইবেল স্বীকার করে যে, কখনো কখনো লোকেরা পরিস্থিতির কারণে সেই কাজগুলো করার চাপ বোধ করে যেগুলো তারা সাধারণভাবে করত না। এমনকী কেউ কেউ দুঃখকষ্ট ও অবিচারের সমাধান হিসেবে যা মনে করে, সেটা আনার প্রচেষ্টায় অপরাধমূলক কাজগুলো করে থাকে। “অনেক ক্ষেত্রে,” শহুরে সন্ত্রাসবাদ (ইংরেজি) নামক বইটি বলে, “আপাতদৃষ্টিতে অপরিবর্তনীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শক্তির প্রতি সত্যিকারের হতাশাই একজন সন্ত্রাসবাদীকে প্ররোচিত করে থাকে।”

▪ “ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল।”১ তীমথিয় ৬:১০.

কেউ কেউ বলে যে, এমনকী ভালো লোকেরাও সৌজন্য এবং নৈতিকতা সম্বন্ধীয় নিয়মগুলোকে লঙ্ঘন করবে যদি তাদেরকে যথেষ্ট অর্থ প্রদান করা হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কেউ কেউ যারা আপাতদৃষ্টিতে বন্ধুত্বপরায়ণ এবং সদয়, যখন অর্থ লাভ বা লোকসানের সম্ভাবনা থাকে, তখন তাদের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয় বলে মনে হয়, যা তাদেরকে বিরক্তিকর এবং বিরূপ চরিত্রে পরিণত করে। সেই সমস্ত অপরাধের কথা চিন্তা করুন, যেগুলোর মূলে রয়েছে লোভ আর সেগুলো হল ব্ল্যাকমেল, জোর করে অর্থ আদায় করা, জালিয়াতি, অপহরণ এবং এমনকী হত্যা।

▪ “দুষ্কর্ম্মের দণ্ডাজ্ঞা ত্বরায় সিদ্ধ হয় না, এই কারণ মনুষ্যসন্তানদের অন্তঃকরণ দুষ্কর্ম্ম করিতে সম্পূর্ণরূপে রত হয়।”উপদেশক ৮:১১.

এই শাস্ত্রপদটি এটা চিন্তা করার সেই মানব প্রবণতাকে নির্দেশ করে যে, যখন কোনো আইন বলবৎ থাকে না, তখন একজন ব্যক্তি যেকোনো কিছু করেই রেহাই পেয়ে যেতে পারেন। এটা সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য যারা গতি সীমার ঊর্ধ্বে গাড়ি চালায়, পরীক্ষায় নকল করে, সরকারি তহবিল থেকে চুরি করে এবং তার চেয়েও খারাপ কাজগুলো করে থাকে। যখন আইন সবসময় বলবৎ থাকে না অথবা যখন ধরা পড়ার ভয় থাকে না, তখন যে-লোকেরা সাধারণত আইন মেনে চলে, তারাও হয়তো সেই কাজ করার সাহস পায় যা তারা হয়তো করত না। “অপরাধীরা যতটা সহজে শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যায়,” যুক্তিতর্ক এবং বাস্তবগুলো (ইংরেজি) নামক পত্রিকাটি বলে, “তা থেকে মনে হয় যে, সেটা সাধারণ নাগরিকদেরকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর অপরাধগুলো করতে প্ররোচিত করে।”

▪ “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।”যাকোব ১:১৪, ১৫.

সমস্ত মানুষই ভুল চিন্তাভাবনা করতে পারে। ভুল কাজ করার জন্য প্রতিদিন আমরা অসংখ্য পরামর্শ ও প্রলোভনের দ্বারা জর্জরিত হই। বাইবেলের সময়ে খ্রিস্টানদের বলা হয়েছিল: “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই।” (১ করিন্থীয় ১০:১৩) এমনকী তারপরও, ফলাফল নির্ভর করে একজন ব্যক্তির বাছাইয়ের অর্থাৎ খারাপ চিন্তাকে তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করার অথবা সেটাকে পোষণ করার ও বৃদ্ধি পেতে দেওয়ার ওপর। যাকোবের অনুপ্রাণিত চিঠি থেকে উল্লেখিত ওপরোক্ত শাস্ত্রপদটি সতর্ক করে যে, একজন ব্যক্তি যদি মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে “সগর্ভা” হতে দেওয়ার সুযোগ দেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে সেটার পরিণতি হবে খারাপ কাজ।

▪ “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।”হিতোপদেশ ১৩:২০.

আমাদের সঙ্গীসাথিরা আমাদের ওপর বিরাট প্রভাব—ভালো বা মন্দ—ফেলতে পারে। অনেক সময়ই লোকেরা সঙ্গীসাথিদের চাপ অথবা খারাপ বন্ধুবান্ধবের কারণে সেই কাজগুলো করে থাকে, যেটার পরিণতি হল ধ্বংসাত্মক। বাইবেলের ভাষায়, ‘হীনবুদ্ধি’ বলতে যাদের বুদ্ধির অভাব রয়েছে তাদেরকে বোঝায় না, বরং যারা ঈশ্বরের বাক্যের বিজ্ঞ পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে তাদেরকে বোঝায়। যুবক বা বৃদ্ধ যা-ই হই না কেন, আমরা যদি বিজ্ঞতার সঙ্গে অর্থাৎ বাইবেলের উত্তম মানগুলোর দ্বারা আমাদের বন্ধুবান্ধব এবং সঙ্গীসাথিদের বাছাই না করি, তাহলে আমরা আশা করতে পারি যে, আমরা “ভগ্ন” হব।

এগুলো এবং বাইবেলের আরও অন্যান্য পদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে যে, কেন লোকেরা—সম্ভবত সাধারণ লোকেরা—খারাপ, এমনকী শিহরণজনক কাজগুলো করে থাকে। যে-চালিকাশক্তি লোকেদেরকে ভয়াবহ কাজগুলো করতে পরিচালিত করে তা বোঝা যদিও সাহায্যকারী, তবুও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কি কোনো আশা রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে, কারণ বাইবেল শুধু এটাই ব্যাখ্যা করে না যে, কেন লোকেরা মন্দ কাজগুলো করে থাকে, কিন্তু সেইসঙ্গে এই ধরনের কাজগুলো যে আর করা হবে না সেই সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রতিজ্ঞাও করে। এই প্রতিজ্ঞাগুলো কী? এই জগতের সমস্ত খারাপ কাজ কি সত্যিই শেষ হবে? পরবর্তী প্রবন্ধটি এর উত্তর প্রদান করে। (w১০-E ০৯/০১)