সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের প্রেমের সবচেয়ে বড় প্রমাণ

ঈশ্বরের প্রেমের সবচেয়ে বড় প্রমাণ

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

ঈশ্বরের প্রেমের সবচেয়ে বড় প্রমাণ

আদিপুস্তক ২২:১-১৮

 অব্রাহাম ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন। এই বিশ্বস্ত কুলপতি তার বৃদ্ধ বয়সের ছেলে ইস্‌হাককেও ভালোবাসতেন। কিন্তু, ইস্‌হাকের বয়স যখন সম্ভবত ২৫ বছর, তখন অব্রাহাম এমন এক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা একজন বাবার সহজাত প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে ছিল—ঈশ্বর তাকে তার ছেলেকে বলি দিতে বলেছিলেন। কিন্তু, এই কাহিনির শেষে ইস্‌হাকের মৃত্যু হয়নি। অব্রাহাম তার ছেলেকে বলি দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে ঈশ্বর একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। আদিপুস্তক ২২:১-১৮ পদে লিপিবদ্ধ বাইবেলের বিবরণ, আমাদের প্রতি ঈশ্বরের মহৎ প্রেমের এক ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক আভাস প্রদান করে।

“ঈশ্বর অব্রাহামের পরীক্ষা করিলেন,” ১ পদ বলে। অব্রাহাম একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু এই ঘটনার দ্বারা তার বিশ্বাস এমনভাবে পরীক্ষিত হবে, যা আগে কখনো হয়নি। ঈশ্বর বলেছিলেন: “তুমি আপন পুত্ত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্ত্রকে, যাহাকে তুমি ভাল বাস, সেই ইস্‌হাককে লইয়া . . . তথাকার যে এক পর্ব্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব, তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর।” (২ পদ) মনে রাখবেন যে, ঈশ্বর তাঁর দাসদের প্রতি তাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটতে দেন না। তাই, এই পরীক্ষা অব্রাহামের ওপর তাঁর আস্থাকে প্রদর্শন করেছিল।—১ করিন্থীয় ১০:১৩.

অব্রাহাম সঙ্গেসঙ্গে বাধ্য হয়ে সাড়া দিয়েছিলেন। আমরা পড়ি: “অব্রাহাম প্রত্যূষে উঠিয়া গর্দ্দভ সাজাইয়া দুই জন দাস ও আপন পুত্ত্র ইস্‌হাককে সঙ্গে লইলেন, হোমের নিমিত্তে কাষ্ঠ কাটিলেন, আর উঠিয়া . . . গমন করিলেন।” (৩ পদ) অব্রাহাম স্পষ্টতই এই পরীক্ষার বৃত্তান্ত নিজের মনের মধ্যেই রেখেছিলেন।

পরবর্তী তিন দিনের যাত্রা, বিষয়টার ওপর গভীরভাবে ধ্যান করার জন্য সময় প্রদান করেছিল। কিন্তু, অব্রাহামের সংকল্প একটুও দুর্বল হয়নি। তার বলা কথাগুলো তার বিশ্বাসকে প্রকাশ করেছিল। দূরে সেই নির্ধারিত পর্বত দেখার পর, তিনি তার দাসদের বলেছিলেন: “তোমরা এই স্থানে . . . থাক; আমি ও যুবক, আমরা ঐ স্থানে গিয়া প্রণিপাত করি, পরে তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব।” ইস্‌হাক যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, উৎসর্গের জন্য মেষ কোথায়, তখন অব্রাহাম বলেছিলেন: “ঈশ্বর আপনি . . . মেষশাবক যোগাইবেন।” (৫, ৮ পদ) অব্রাহাম তার ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসার প্রত্যাশা করেছিলেন। কেন? কারণ “তিনি মনে স্থির করিয়াছিলেন, ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও [ইস্‌হাককে] উত্থাপন করিতে সমর্থ।”—ইব্রীয় ১১:১৯.

পর্বতের ওপর অব্রাহাম যখন “আপন পুত্ত্রকে বধ করণার্থে খড়গ” নিয়েছিলেন, তখন একজন স্বর্গদূত তাকে থামিয়েছিলেন। এরপর ঈশ্বর ঝোপের মধ্যে আটকে থাকা একটা মেষ জুগিয়েছিলেন, যেটাকে অব্রাহাম “আপন পুত্ত্রের পরিবর্ত্তে” উৎসর্গ করতে পারতেন। (১০-১৩ পদ) ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, ইস্‌হাককে যেন সত্যিই উৎসর্গ করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ১১:১৭) “ঈশ্বরের কাছে,” একজন পণ্ডিত ব্যক্তি ব্যাখ্যা করেন, “সেই ইচ্ছুক মনোভাবই কাজ করার সমতুল্য বলে গণ্য হয়েছিল।”

অব্রাহামের ওপর যিহোবার আস্থা যথার্থ প্রমাণিত হয়েছিল। আর যিহোবার ওপর অব্রাহামের আস্থা পুরস্কৃত হয়েছিল, কারণ ঈশ্বর অব্রাহামের সঙ্গে তাঁর সেই চুক্তি সম্বন্ধে আবারও উল্লেখ করেছিলেন এবং আরও বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছিলেন, যে-চুক্তি সমস্ত মানবজাতির জন্য আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসার বিষয় প্রতিজ্ঞা করেছিল।—১৫-১৮ পদ।

পরিশেষে, ঈশ্বর অব্রাহামকে সেই বলিদান করা থেকে বিরত করেছিলেন, যা প্রদান করা থেকে স্বয়ং ঈশ্বর বিরত হননি। ইস্‌হাককে উৎসর্গ করার জন্য অব্রাহামের ইচ্ছুক মনোভাব, আমাদের পাপের জন্য ঈশ্বরের তাঁর একজাত পুত্র যিশুকে উৎসর্গ করার পূর্বাভাস ছিল। (যোহন ৩:১৬) খ্রিস্টের বলিদান হচ্ছে আমাদের জন্য যিহোবার প্রেমের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। যেহেতু, ঈশ্বর আমাদের জন্য এমন এক বলিদান করেছেন, তাই আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমি কোন বলিদান বা আত্মত্যাগ করতে ইচ্ছুক?’ (w০৯ ২/১)