আদম যদি সিদ্ধই হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে তার পক্ষে পাপ করা সম্ভব ছিল?
আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য
আদম যদি সিদ্ধই হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে তার পক্ষে পাপ করা সম্ভব ছিল?
আদমের পক্ষে পাপ করা সম্ভব ছিল কারণ ঈশ্বর তাকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। এই উপহারটি, আদম যে সিদ্ধ ছিল, সেই বিষয়টার সঙ্গে কোনোভাবেই সংঘাত সৃষ্টি করে না। বাস্তবে, একমাত্র ঈশ্বরই সম্পূর্ণ অর্থে সিদ্ধ। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৩, ৪; গীতসংহিতা ১৮:৩০; মার্ক ১০:১৮) যে-কোনো ব্যক্তি বা যে-কোনো কিছুতে সিদ্ধতা সীমিত। একটা বস্তুকে তখনই সিদ্ধ বা নিখুঁত বলা যায়, যখন সেটা যে-উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, তা সম্পাদন করে থাকে।
তাহলে, কোন উদ্দেশ্যে ঈশ্বর আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন? ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল আদমের মাধ্যমে স্বাধীন ইচ্ছাসম্পন্ন বুদ্ধিবিশিষ্ট মানবজাতি উৎপন্ন করা। ঈশ্বর ও তাঁর পথের প্রতি যারা প্রেম গড়ে তুলতে চায়, তারা তাঁর আইনগুলোর বাধ্য থাকার মাধ্যমে তা দেখাবে। অতএব, বাধ্যতা মানুষের চিন্তাশক্তির মধ্যে প্রোগ্রাম করে দেওয়া হয়নি কিন্তু এটা স্বেচ্ছায় হৃদয় থেকে উদ্ভূত হবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩; ৩০:১৯, ২০) তাই, আদমের যদি অবাধ্যতা বাছাই করার ক্ষমতা না থাকত, তাহলে সে হয়তো একজন অসম্পূর্ণ—অসিদ্ধ—ব্যক্তি হতো। আদম যেভাবে তার স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করেছিল, সেই সম্পর্কে বাইবেলের বিবরণ দেখায় যে, সে ‘সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ’ সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে তার স্ত্রীকে অনুসরণ করেছিল।—আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:১-৬.
তাহলে, ঈশ্বর কি আদমকে নৈতিক দুর্বলতা দিয়েই সৃষ্টি করেছিলেন, যার ফলে তার বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার বা প্রলোভন প্রতিরোধ করার ক্ষমতার ঘাটতি ছিল? আদমের অবাধ্যতার পূর্বে, যিহোবা ঈশ্বর প্রথম মানব দম্পতিসহ তাঁর সমস্ত পার্থিব সৃষ্টিকে পরীক্ষা করেছিলেন এবং নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, সমস্তকিছুই “অতি উত্তম” ছিল। (আদিপুস্তক ১:৩১) তাই, আদম যখন পাপ করেছিল, তখন তার সৃষ্টিকর্তাকে তার মধ্যে গঠনগত কিছু ত্রুটি সংশোধন করার প্রয়োজন ছিল না বরং তিনি উপযুক্তভাবেই আদমকে দোষী করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৭-১৯) সমস্তকিছুর ঊর্ধ্বে, ঈশ্বরের প্রতি ও সঠিক নীতির প্রতি প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ঈশ্বরের বাধ্য হতে আদম ব্যর্থ হয়েছিল।
এ ছাড়া বিবেচনা করুন যে, পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু নিজেও আদমের মতোই একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিশু আদমের অন্যান্য বংশধরের বিপরীতে, পবিত্র আত্মার সাহায্যে গর্ভে এসেছিলেন আর তাই তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে কোনো দুর্বলতা লাভ করেননি, যা তাঁকে প্রলোভন প্রতিরোধ করতে অসমর্থ করবে। (লূক ১:৩০, ৩১; ২:২১; ৩:২৩, ৩৮) সবচেয়ে কঠিন চাপ আসা সত্ত্বেও, যিশু স্বেচ্ছায় তাঁর পিতার প্রতি অনুগত ছিলেন। আদম, নিজের স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ী চলেছিল বলে, যিহোবার আজ্ঞার প্রতি বাধ্য হতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সে নিজেই দায়ী ছিল।
তাহলে, কেন আদম ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া বেছে নিয়েছিল? সে কি ভেবেছিল যে, কোনো উপায়ে সে তার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে? না, কারণ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, “আদম প্রবঞ্চিত হইলেন না।” (১ তীমথিয় ২:১৪) কিন্তু, আদম তার স্ত্রীকেই খুশি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যে-ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেছিল। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বাধ্য থাকার ইচ্ছার চেয়ে তার স্ত্রীকে খুশি করার ইচ্ছাটাই প্রবল ছিল। নিশ্চিতভাবেই, আদমকে যখন নিষিদ্ধ ফলটা দেওয়া হয়েছিল, তখন আদমের একটু থেমে চিন্তা করা উচিত ছিল যে, সে অবাধ্য হলে তা ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব ফেলবে। ঈশ্বরের প্রতি এক গভীর, অটুট ভালোবাসা না থাকায়, আদম চাপের মুখে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, যার মধ্যে তার স্ত্রীর কাছ থেকে আসা চাপও ছিল।
আদমের সন্তান জন্ম হওয়ার আগেই সে পাপ করেছিল, তাই তার সমস্ত বংশধর অসিদ্ধ হিসেবে জন্ম নিয়েছিল। তবে, আদমের মতো আমাদেরও স্বাধীন ইচ্ছার উপহারটি রয়েছে। আমরা যেন উপলব্ধি সহকারে যিহোবার মঙ্গলভাব নিয়ে ধ্যান করা এবং ঈশ্বরের প্রতি এক অটুট ভালোবাসা গড়ে তোলা বেছে নিই, যিনি আমাদের বাধ্যতা ও উপাসনা পাওয়ার যোগ্য।—গীতসংহিতা ৬৩:৬; মথি ২২:৩৬, ৩৭. (w০৮ ১০/১)