“তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন”
ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন
“তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন”
এই বিশাল নিখিলবিশ্বের তুলনায় মানুষ বাস্তবিকই নগণ্য। আপনি হয়তো ভেবেছেন যে, ‘নগণ্য মানুষের পক্ষে কি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিকট সম্পর্কে আসা সম্ভব?’ তা একমাত্র তখনই সম্ভব হতে পারে যদি ঈশ্বর, যাঁর নাম যিহোবা তিনি চান যে, আমরা তাঁর নিকটবর্তী হই। তিনি কি তা চান? প্রেরিত ১৭:২৪-২৭ পদে যেমন লিপিবদ্ধ রয়েছে, আথীনীর শিক্ষিত লোকেদের প্রতি প্রেরিত পৌলের দৃঢ়প্রত্যয়জনক কথাগুলোতে সান্ত্বনাজনক উত্তরটি পাওয়া যেতে পারে। যিহোবা সম্বন্ধে পৌল যে-চারটে বিষয় উল্লেখ করেন, সেগুলো লক্ষ করুন।
প্রথমত, পৌল বলেন যে, “ঈশ্বর জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” (২৪ পদ) সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য, যা জীবনকে এত উপভোগ্য করে তোলে, তা প্রমাণ দেয় যে, আমাদের নির্মাতা আমাদের জন্য চিন্তা করেন ও আমাদের ভালবাসেন। (রোমীয় ১:২০) এইরকম ভাবা অযৌক্তিক হবে যে, এই ধরনের একজন ঈশ্বর তাঁর প্রেমের পাত্রদের থেকে দূরে থাকতে চাইবেন।
দ্বিতীয়ত, যিহোবা “সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন।” (২৫ পদ) যিহোবা হলেন জীবনের রক্ষক। (গীতসংহিতা ৩৬:৯) বাতাস, জল ও খাদ্য, যেগুলো জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক, সেগুলো হল আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওয়া দান বা উপহার। (যাকোব ১:১৭) এইরকম মনে করা কি যুক্তিযুক্ত যে, আমাদের উদার ঈশ্বর নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন আর তা করার দ্বারা তিনি কে এবং কীভাবে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া যায়, তা জানার উপহার থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন?
তৃতীয়ত, ঈশ্বর “এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন।” (২৬ পদ) যিহোবা “পক্ষপাতিত্ব করেন না” এবং যেকোনো ধরনের ভেদাভেদের ধারণা থেকে তিনি একেবারে মুক্ত। (প্রেরিত ১০:৩৪, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) তাহলে, কীভাবে তিনি অন্যরকম হতে পারেন? তিনি “এক ব্যক্তি” আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন, যার থেকে সমস্ত জাতি ও বংশ উদ্ভূত হয়েছে। ঈশ্বরের “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়।” (১ তীমথিয় ২:৪) তাই আমাদের গায়ের রং যা-ই হোক না, আমরা যে-জাতির অথবা সাম্প্রদায়িক পটভূমিরই হই না কেন, তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ আমাদের সামনে খোলা রয়েছে।
সবশেষে, পৌল সবচেয়ে আশ্বাসজনক এক সত্য প্রকাশ করেন: যিহোবা “আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (২৭ পদ) যদিও যিহোবা উচ্চে অবস্থান করেন, তবুও যারা আন্তরিকভাবে তাঁর নিকটবর্তী হতে চায়, তিনি সবসময়ই তাদের কাছে সহজগম্য হন। তাঁর বাক্য আমাদেরকে আশ্বাস দেয় যে, তিনি দূরে নন বরং, “সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৮.
পৌলের কথাগুলো থেকে এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, ঈশ্বর চান আমরা যেন তাঁর নিকটবর্তী হই। কিন্তু, পৌল ব্যাখ্যা করেন যে, যারা তাঁর ‘অন্বেষণ করিতে’ এবং ‘হাঁতড়াইতে’ ইচ্ছুক, কেবল তাদেরকেই তিনি এই ধরনের নিকট সম্পর্কে আসতে অনুমোদন করেন। (২৭ পদ) বাইবেল অনুবাদকদের জন্য একটি তথ্যগ্রন্থ বলে যে, “দুটো ক্রিয়াপদই, হয় অর্জনসাধ্য এক সম্ভাবনাকে . . . নতুবা অর্জনসাধ্য এক আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে।” উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: এক অন্ধকার অথচ পরিচিত ঘরে আপনি হয়তো লাইট জ্বালানোর সুইচ অথবা দরজা খুঁজে পাওয়ার জন্য হাঁতড়ে বেড়ান, তবে আপনি জানেন যে আপনি তা খুঁজে পাবেন। তাই, আমরাও যদি আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের অন্বেষণ করি ও হাঁতড়ে হাঁতড়ে তাঁর উদ্দেশ পাওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের প্রচেষ্টা পুরস্কৃত হবে। পৌল আমাদেরকে আশ্বাস দেন যে, আমরা ‘তাঁহার উদ্দেশ পাইব।’—২৭ পদ।
আপনি কি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে আকুল আকাঙ্ক্ষী? আপনি যদি বিশ্বাস সহকারে ‘ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতে’ এবং ‘হাঁতড়াইতে’ শুরু করেন, তাহলে আপনি হতাশ হবেন না। যিহোবাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন নয় কারণ “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (w০৮ ৭/১)