দৌরাত্ম্যের শিকার ব্যক্তিরা অধিকার ফিরে পেয়েছিল
দৌরাত্ম্যের শিকার ব্যক্তিরা অধিকার ফিরে পেয়েছিল
দুহাজার সাত সালের মে মাসের তিন তারিখে, ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে অবস্থিত ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত জর্জিয়া প্রজাতন্ত্রের যিহোবার সাক্ষিদের পক্ষে এক সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রদান করে। আদালত জানতে পারে যে, সেখানকার সাক্ষিরা অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছে এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এ ছাড়া, যারা এই অপরাধমূলক কাজকে উসকে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় আদালত জর্জিয়ার সাবেক সরকারকেও তীব্রভাবে তিরস্কার করেছে। কোন বিষয়টা এই ধরনের সিদ্ধান্তে আসতে পরিচালিত করেছিল?
১৯৯৯ সালের ১৭ অক্টোবর, রাজধানী টিবলিসিতে যিহোবার সাক্ষিদের গ্ল্যাডানি মণ্ডলীর প্রায় ১২০ জন সদস্য শান্তিপূর্ণভাবে উপাসনা করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। হঠাৎ করে, ভাসিলি উম্কালাভিশভিলি নামে একজন বহিষ্কৃত অর্থোডক্স যাজকের নেতৃত্বে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা জোর করে সভাস্থলে ঢুকে পড়েছিল। সেই জনতা কাঠের মুগুর এবং লোহার ক্রুশ হাতে নিয়ে উপস্থিত ব্যক্তিদের ওপর হিংস্র আক্রমণ চালিয়েছিল, অনেককে আহত করেছিল, কেউ কেউ অত্যন্ত গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল। এই আক্রমণের কারণে একজন মহিলার চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অন্তত ১৬ জন ব্যক্তির চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছিল। কয়েক জন সাক্ষি যখন সাহায্যের জন্য পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল, তখন তাদের পুলিশ প্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, যিনি বলেছিলেন যে, তিনি সেখানে উপস্থিত থাকলে সাক্ষিদের আরও অত্যাচার করতেন! উচ্ছৃঙ্খল জনতার মধ্যে একজন সদস্য এই ঘটনাটা ভিডিও করেছিলেন, যা পরে জাতীয় টেলিভিশন স্টেশনগুলোতে সম্প্রচার করা হয়েছিল আর তা স্পষ্টতই দেখিয়েছিল যে, আক্রমণকারী কারা ছিল। *
দৌরাত্ম্যের শিকার সাক্ষিরা এই অপরাধের বিষয় অভিযোগ করেছিল কিন্তু আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। পুলিশের একজন তদন্তকারীকে বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে, যেহেতু তিনি অর্থোডক্স গির্জারই একজন সদস্য, তাই তিনি এই মামলাটাকে নিরপেক্ষভাবে দেখতে পারবেন না। বেসামরিক কর্তৃপক্ষরা যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে গাফিলতি করায় ধর্মীয় চরমপন্থীরা এই ধরনের প্রায় শতাধিক আক্রমণ চালাতে উৎসাহিত হয়েছিল।
তাই, ২০০১ সালের ২৯ জুন, যিহোবার সাক্ষিরা ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে একটা লিখিত আবেদনপত্র পেশ করেছিল। * আদালত ২০০৭ সালের ৩ মে এই মামলার চূড়ান্ত রায় দিয়েছিল, যার মধ্যে আদালত এই আক্রমণের এক স্পষ্ট বর্ণনা প্রদান করে এবং যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় জর্জিয়ার সরকারি কর্তৃপক্ষদের অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে। আদালত বলেছিল: আক্রমণের বিষয়ে “কর্তৃপক্ষের . . . তথ্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার এক দায়িত্ব ছিল।” “এই ধরনের কাজগুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা,” আদালত রায় দিয়েছিল, “আইনগত নীতিগুলোর প্রতি এবং আইনের শাসন বজায় রাখার যে-দায়িত্ব রাষ্ট্রের রয়েছে, তার প্রতি জনগণের আস্থা কেবল দুর্বলই করে দেবে।”
আদালত এই উপসংহার করেছিল: “যেহেতু আবেদনকারীদের ওপর ১৯৯৯ সালের ১৭ অক্টোবরের আক্রমণ, যিহোবার সাক্ষিদের ওপর প্রথম সবচেয়ে ব্যাপক মাত্রার আক্রমণ ছিল, তাই কর্তৃপক্ষের অবহেলা সারা জর্জিয়া জুড়ে সেই একই আক্রমণকারী দলের মাধ্যমে ধর্মীয় দৌরাত্ম্য ছড়িয়ে দেওয়ার দ্বার খুলে দিয়েছিল।”
পরবর্তী সময়ে, দৌরাত্ম্যমূলক আক্রমণের শিকার ব্যক্তিরা তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছিল এবং জর্জিয়ার সরকারকে গ্ল্যাডানি মণ্ডলীর সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং আইনসংক্রান্ত খরচ পরিশোধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। জর্জিয়ার যিহোবার সাক্ষিরা খুশি যে, দৌরাত্ম্য এবং নিষ্ঠুরতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে কিন্তু একই সময়ে তারা আনন্দিত যে, আদালতের রায় উপাসনা করার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মিলিত হওয়ার অধিকারকে নিশ্চিত করেছে। এই কারণে তারা তাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ, যাঁর নির্দেশনা এবং সুরক্ষা তারা এই সময়গুলোতে উপলব্ধি করেছে।—গীতসংহিতা ২৩:৪. (w০৮ ৩/১)
[পাদটীকাগুলো]
^ বিস্তারিত জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি (ইংরেজি) সচেতন থাক! পত্রিকার ১৮-২৪ পৃষ্ঠা দেখুন।
^ ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত হচ্ছে ইউরোপীয় পরিষদের একটা সংগঠন আর এটা মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার্থে করা ইউরোপীয় চুক্তি লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে আইন জারি করে। জর্জিয়া ১৯৯৯ সালের ২০ মে, মানবাধিকারের এই চুক্তিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল আর এভাবে এটার অন্তর্ভুক্ত চাহিদাগুলোকে সমর্থন করার শপথ নিয়েছিল।