খ্রিস্ট —ঈশ্বরেরই পরাক্রম স্বরূপ
‘খ্রীষ্ট ঈশ্বরেরই পরাক্রম স্বরূপ।’—১ করি. ১:২৪.
১. কেন পৌল এটা বলেছিলেন, “খ্রীষ্ট ঈশ্বরেরই পরাক্রম”?
যিহোবা যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে অসাধারণ উপায়ে তাঁর পরাক্রম বা শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। যিশু পৃথিবীতে থাকার সময় অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। এই অলৌকিক কাজগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটার বিবরণ আমরা বাইবেল থেকে পড়তে পারি আর এই ঘটনাগুলো আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। (মথি ৯:৩৫; লূক ৯:১১) হ্যাঁ, যিহোবা যিশুকে অসাধারণ শক্তি দিয়েছিলেন আর তাই প্রেরিত পৌল এটা বলতে পেরেছিলেন: “খ্রীষ্ট ঈশ্বরেরই পরাক্রম।” (১ করি. ১:২৪) কিন্তু, যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করতে পারি?
২. যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
২ প্রেরিত পিতর বলেছিলেন, যিশু “অদ্ভুত লক্ষণ” বা অলৌকিক কাজ করেছেন। (প্রেরিত ২:২২) এই অলৌকিক কাজগুলো আমাদের কী শিক্ষা দেয়? এগুলো আমাদেরকে যিশু হাজার বছরের রাজত্বের সময় যা যা করবেন, সেই বিষয়ে শিক্ষা দেয়। সেই সময়ে, তিনি আরও বড়ো বড়ো অলৌকিক কাজ করবেন, যেগুলো থেকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ উপকার লাভ করবে। এ ছাড়া, তাঁর অলৌকিক কাজগুলো থেকে আমরা তাঁর এবং তাঁর পিতার গুণাবলি সম্বন্ধে অনেক কিছু বুঝতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা যিশুর তিনটে অলৌকিক কাজ সম্বন্ধে আলোচনা করব এবং সেগুলো কীভাবে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনে উপকার নিয়ে আসে, তা শিখব।
এক অলৌকিক কাজ, যা উদারতা সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়
৩. (ক) কেন যিশু তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ করেছিলেন? (খ) কীভাবে যিশু কান্না নগরে উদার মনোভাব দেখিয়েছিলেন?
৩ যিশু কান্না নগরের একটা বিয়েবাড়িতে তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত সকল অতিথির জন্য যথেষ্ট দ্রাক্ষারস ছিল না। যদিও আমরা এর কারণ জানি না, তবে এই কারণে নবদম্পতি নিশ্চয়ই অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে পারতেন। কারণ সঠিকভাবে আতিথেয়তা দেখানোর দায়িত্ব তাদেরই ছিল। সেখানে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে একজন ছিলেন যিশুর মা মরিয়ম। মরিয়ম সেই পরিস্থিতিতে যিশুকে সাহায্য করতে বলেছিলেন। মরিয়ম নিশ্চয়ই তাঁর পুত্রের বিষয়ে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে ধ্যান করেছিলেন আর তিনি জানতেন, তাঁকে “পরাৎপরের পুত্র” বলা হবে। (লূক ১:৩০-৩২; ২:৫২) যিশুর অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে, তা বিশ্বাস করতেন বলেই কি মরিয়ম যিশুকে সাহায্য করতে বলেছিলেন? আসলে, এই ঘটনা থেকে যে-বিষয়টা স্পষ্ট তা হল, মরিয়ম ও যিশু দু-জনেই সেই দম্পতিকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাই যিশু অলৌকিকভাবে প্রায় ৩৮০ লিটার (১০০ গ্যালন) জলকে ‘উত্তম দ্রাক্ষারসে’ পরিণত করেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ২:৩, ৬-১১.) যিশু কি এই অলৌকিক কাজ করতে বাধ্য ছিলেন? না। তা সত্ত্বেও, তিনি এই কাজ করেছিলেন কারণ তিনি লোকেদের জন্য চিন্তা করতেন আর এর মাধ্যমে তিনি তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন, যিনি একজন উদার ব্যক্তি।
৪, ৫. (ক) যিশুর প্রথম অলৌকিক কাজ আমাদের কী শিক্ষা দেয়? (খ) কান্না নগরে করা অলৌকিক কাজ, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
৪ যিশু অলৌকিকভাবে প্রচুর উত্তম দ্রাক্ষারস জুগিয়েছিলেন আর তা একটা বিরাট দলকে পরিতৃপ্ত করার মতো যথেষ্ট ছিল। এই অলৌকিক কাজ আমাদের যা শিক্ষা দেয়, তা কি আপনি বুঝতে পারছেন? যিহোবা এবং যিশু কৃপণস্বভাবের নন, বরং তাঁরা খুবই উদার। এই অলৌকিক কাজ আমাদের আশ্বাস দেয়, তাঁরা লোকেদের অনুভূতি সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করেন। এ ছাড়া, এই কাজ এটাও প্রকাশ করে, নতুন জগতে আমরা পৃথিবীর যেখানেই বাস করি না কেন, যিহোবা প্রচুর পরিমাণে খাদ্য জোগানোর জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করবেন।—পড়ুন, যিশাইয় ২৫:৬.
৫ একটু ভেবে দেখুন! শীঘ্রই যিহোবা আমাদের এমন সমস্ত কিছু জুগিয়ে দেবেন, যেগুলো আমাদের সত্যিই প্রয়োজন। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটা সুন্দর বাড়ি আর সেইসঙ্গে উত্তম খাদ্য থাকবে। যিহোবা পরমদেশ পৃথিবীতে আমাদের জন্য উদারভাবে যে-সমস্ত অপূর্ব বিষয় জুগিয়ে দেবেন, সেগুলো নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমরা অনেক কৃতজ্ঞ হই।
৬. যিশু তাঁর শক্তি সবসময় কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন আর আমরা কীভাবে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?
৬ যিশু কখনো নিজের স্বার্থের জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করেননি। দিয়াবল যখন যিশুকে প্রলোভিত করার জন্য পাথরকে রুটিতে পরিণত করতে বলেছিল, তখন কী ঘটেছিল, তা চিন্তা করে দেখুন। যিশু নিজের উপকারের জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (মথি ৪:২-৪) কিন্তু, যিশু অন্যদের সাহায্য করার জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক ছিলেন। কীভাবে আমরা তাঁর নিঃস্বার্থ মনোভাব অনুকরণ করতে পারি? যিশু আমাদের বলেছিলেন, “দেও” বা দান কর। (লূক ৬:৩৮) আমরা অন্যদেরকে এক বেলার খাবারের জন্য আমাদের ঘরে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে তা করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা সভার পরে কাউকে সাহায্য করার জন্য সময় ব্যয় করতে পারি, হতে পারে কোনো ভাই বক্তৃতা প্র্যাকটিস করার সময়, তা শুনতে পারি। অথবা আমরা হয়তো প্রচার করার সময় অন্যদের ব্যাবহারিক সাহায্য ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারি। আমাদের পক্ষে যখনই সম্ভব, উৎসুকভাবে অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা যিশুর উদারতা অনুকরণ করতে পারি।
“সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল”
৭. শয়তানের জগতে কোন সমস্যাটা সবসময় থাকবে?
৭ দারিদ্র্য কোনো নতুন সমস্যা নয়। যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, “দেশমধ্যে দরিদ্রের অভাব হইবে না।” (দ্বিতীয়. ১৫:১১) এর শত শত বছর পর, যিশু বলেছিলেন: “দরিদ্রেরা তোমাদের কাছে সর্ব্বদাই আছে।” (মথি ২৬:১১) যিশু কি এটা বুঝিয়েছিলেন, পৃথিবীতে সবসময়ই দরিদ্র লোক থাকবে? না, এর পরিবর্তে তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমরা যতদিন শয়তানের জগতে বাস করব, ততদিন দারিদ্র্য সমস্যাটা থাকবে। আমরা যখন নতুন জগতে বাস করব, তখন পরিস্থিতি কতই-না আলাদা হবে! সেই সময়ে কোনো দরিদ্র লোক থাকবে না। সকলের কাছে প্রচুর খাদ্য থাকবে আর তারা পরিতৃপ্ত হবে!
৮, ৯. (ক) কেন যিশু হাজার হাজার লোককে খাইয়েছিলেন? (খ) এই অলৌকিক কাজ সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?
৮ গীতরচক যিহোবাকে বলেছিলেন: “তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” (গীত. ১৪৫:১৬) পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু নিখুঁতভাবে তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন আর সবসময় অন্যদের প্রয়োজনের প্রতি চিন্তা দেখিয়েছিলেন। তিনি এই কাজ শুধুমাত্র নিজের শক্তি জাহির করার জন্য করেননি। যিশু সত্যি সত্যিই লোকেদের জন্য চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। আসুন, আমরা মথি ১৪:১৪-২১ পদ আলোচনা করি। (পড়ুন।) বিভিন্ন নগর থেকে আসা লোকেদের বিরাট একটা দল পায়ে হেঁটে যিশুকে অনুসরণ করেছিল। (মথি ১৪:১৩) সন্ধ্যা সময় শিষ্যরা এই ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন, লোকেরা হয়তো দুর্বল ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছে। তাই, তারা যিশুকে অনুরোধ করেছিলেন, যেন যিশু লোকেদের বিদায় করে দেন আর লোকেরা গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার কিনতে পারে। যিশু তখন কী করেছিলেন?
৯ যিশু পাঁচটা রুটি ও দুটো মাছ দিয়ে প্রায় ৫,০০০ পুরুষ আর সেইসঙ্গে আরও অনেক মহিলা এবং শিশুকে খাইয়েছিলেন। কেন যিশু এই অলৌকিক কাজ করেছিলেন? কারণ তিনি সত্যিকার অর্থেই লোকেদের ভালোবাসতেন এবং তাদের জন্য চিন্তা করতেন। আর যিশু নিশ্চয়ই প্রচুর খাবার জুগিয়েছিলেন, কারণ সেই লোকেরা ‘আহার করিয়া তৃপ্ত হইয়াছিল।’ তারা যে-খাবার খেয়েছিল, তা তাদেরকে দীর্ঘযাত্রা করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জুগিয়েছিল। (লূক ৯:১০-১৭) আর সকলে পরিতৃপ্ত হওয়ার পর, শিষ্যরা গুঁড়াগাঁড়া সংগ্রহ করে ১২ ঝুড়ি পূর্ণ করেছিলেন।
১০. ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের কী হবে?
১০ লোভী ও দুর্নীতিপরায়ণ শাসকদের কারণে বর্তমানে কোটি কোটি লোক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। এমনকী আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যেও কারো কারো কাছে যথেষ্ট খাবার নেই। কিন্তু খুব শীঘ্র, যিহোবার প্রতি বাধ্য লোকেরা এমন এক জগতে বাস করবে, যেখানে দুর্নীতি অথবা দারিদ্র্য থাকবে না। যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আর প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা যাতে পরিতৃপ্ত হয় সেই বিষয়টা নিশ্চিত করার শক্তি এবং আকাঙ্ক্ষা দুটোই তাঁর রয়েছে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, খুব শীঘ্র তিনি এই কষ্টের শেষ নিয়ে আসবেন!—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭২:১৬.
১১. খ্রিস্ট যে শীঘ্র পুরো পৃথিবীর উপর তাঁর শক্তি ব্যবহার করবেন, সেই বিষয়ে আপনি কেন নিশ্চিত হতে পারেন আর এই বিষয়টা আপনাকে কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?
১১ যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি কেবলমাত্র সাড়ে তিন বছর ধরে একটা ছোটো এলাকায় বিভিন্ন অলৌকিক কাজ করেছিলেন। (মথি ১৫:২৪) তবে হাজার বছরের রাজত্বের সময়, রাজা হিসেবে তিনি সমস্ত মানুষকে সাহায্য করবেন। (গীত. ) যিশুর অলৌকিক কাজ আমাদের আশ্বাস দেয়, তিনি তাঁর শক্তি আমাদের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করতে চান। যদিও আমাদের অলৌকিক কাজ করার শক্তি নেই, কিন্তু আমরা কী করতে পারি? আমরা অপূর্ব ভবিষ্যতের বিষয়ে বাইবেলের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে অন্যদের জানানোর জন্য আমাদের সময় ও কর্মশক্তি ব্যবহার করতে পারি। যিহোবার সাক্ষি হিসেবে এটাই আমাদের দায়িত্ব। ( ৭২:৮রোমীয় ১:১৪, ১৫) খ্রিস্ট শীঘ্র যা যা করবেন, সেই বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে আমরা অন্যদের কাছে তা বলার জন্য অনুপ্রাণিত হব।—গীত. ৪৫:১; ৪৯:৩.
যিহোবা এবং যিশুর প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে
১২. কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি, যিশু পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্বন্ধে পুরোপুরি বুঝতে পারেন?
১২ ঈশ্বর যখন পৃথিবী ও এর অন্তর্ভুক্ত সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছিলেন, তখন যিশু “তাঁহার কাছে কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ ইজি-টু-রিড ভারশন]” হিসেবে ছিলেন। (হিতো. ৮:২২, ৩০, ৩১; কল. ১:১৫-১৭) তাই, যিশু পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্বন্ধে পুরোপুরি বুঝতে পারেন। তিনি জানেন, প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে কীভাবে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
১৩, ১৪. যিশু যেভাবে প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, সেটার একটা উদাহরণ দিন।
১৩ যিশু পৃথিবীতে থাকার সময় প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন, তাঁর ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু যেভাবে একটা ভারী ঝড়কে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, সেই বিষয়টা চিন্তা করে দেখুন। (পড়ুন, মার্ক ৪:৩৭-৩৯.) একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন, মার্ক বইয়ে যে-গ্রিক শব্দকে “ভারী ঝড়” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা একটা হারিকেনকে বোঝায়। এটা এমন এক ঝড়কে নির্দেশ করে, যে-ঝড়ের সময় আকাশজুড়ে ঘন কালো মেঘ থাকে, প্রবল দমকা বাতাস বয়ে চলে আর সেইসঙ্গে বজ্রপাত ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আর যখন ঝড় শান্ত হয়, তখন দেখা যায়, সব কিছু তছনছ হয়ে গিয়েছে।
১৪ পরিস্থিতিটা একটু কল্পনা করে দেখুন: একের পর এক ঢেউ নৌকায় আঘাত করছে আর এর ফলে নৌকায় বার বার জল ঢুকে পড়ছে। ঝড়ের আওয়াজ এবং নৌকা প্রচণ্ডভাবে দুলতে থাকা সত্ত্বেও, যিশু ক্লান্তির কারণে ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু শিষ্যরা ভয় পেয়ে যান আর তাই তারা যিশুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এই কথা বলেন: “আমরা মারা পড়িলাম।” (মথি ৮:২৫) যিশু তখন কী করেন? তিনি উঠে বাতাস ও সমুদ্রকে বলেন, “নীরব হও, স্থির হও।” (মার্ক ৪:৩৯) তখন সেই ভয়ংকর ঝড় থেমে যায় আর ‘মহাশান্তি হয়।’ প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে যিশুর ক্ষমতার কী এক বিস্ময়কর উদাহরণ!
১৫. যিহোবা যে প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তা তিনি কীভাবে দেখিয়েছেন?
১৫ খ্রিস্টের শক্তি যিহোবার কাছ থেকেই আসে। তাই আমরা বুঝতে পারি, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জলপ্লাবনের আগে যিহোবা বলেছিলেন: ‘সাত দিনের পর আমি পৃথিবীতে চল্লিশ দিবারাত্র বৃষ্টি বর্ষাইব।’ (আদি. ৭:৪) এ ছাড়া, যাত্রাপুস্তক ১৪:২১ পদে আমরা পড়ি: “সদাপ্রভু . . . প্রবল পূর্ব্বীয় বায়ু দ্বারা সমুদ্রকে সরাইয়া দিলেন।” আর যোনা ১:৪ পদ থেকে আমরা জানতে পারি: “সদাপ্রভু সমুদ্রে প্রচণ্ড বায়ু পাঠাইয়া দিলেন, সমুদ্রে ভারী ঝড় উঠিল, এমন কি, জাহাজ ভাঙ্গিয়া যাইবার উপক্রম হইল।” এই বিষয়টা জানা উৎসাহজনক যে, নতুন জগতে যিহোবা সবসময় প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন।
১৬. কেন এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা এবং যিশুর প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে?
১৬ এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা এবং যিশুর প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই, খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময় পৃথিবীর সকলে নিরাপদে থাকবে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন টাইফুন, সুনামি, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত অথবা ভূমিকম্পের কারণে কেউ আহত কিংবা নিহত হবে না। আমরা কোনো দুর্যোগের কারণে আতঙ্কিত হব না কারণ ঈশ্বর লোকেদের সুরক্ষা করবেন! (প্রকা. ২১:৩, ৪) আমরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারি, হাজার বছর রাজত্বের সময় যিশু প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।
ঈশ্বর ও খ্রিস্টকে এখন অনুকরণ করুন
১৭. আমরা এখন কোন একটা উপায়ে ঈশ্বর ও খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে পারি?
১৭ অবশ্য, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে পারি না। শুধুমাত্র যিহোবা এবং যিশু তা করতে পারেন। তবে এমন কিছু রয়েছে, যা আমরা করতে পারি। আমরা হিতোপদেশ ৩:২৭ পদের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি। (পড়ুন।) আমাদের ভাই-বোনেরা যখন কষ্টভোগ করে, তখন আমরা তাদের দৈহিকভাবে, আবেগগতভাবে ও আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করতে পারি এবং তাদের সান্ত্বনা দিতে পারি। (হিতো. ১৭:১৭) উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর তাদের সাহায্য করতে পারি। একটা হারিকেনের আঘাতে একজন বিধবা বোনের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “যিহোবার সংগঠনে থাকতে পেরে আমি অনেক কৃতজ্ঞ, কারণ এখানে আমি শুধু দৈহিক সাহায্যই পাইনি কিন্তু সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক সাহায্যও পেয়েছি।” আরেকজন অবিবাহিত বোনের বাড়ি একটা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আর তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ভাইয়েরা তার বাড়ি মেরামত করতে সাহায্য করার পর তিনি বলেছিলেন: “আমি আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না!” তিনি আরও বলেছিলেন: “যিহোবা, তোমাকে ধন্যবাদ!” আমাদের ভাই-বোনেরা অন্যদের প্রয়োজনের বিষয়ে প্রকৃতই চিন্তা প্রকাশ করে থাকে আর তাই আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা যিহোবা এবং যিশু খ্রিস্টের প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞ, কারণ তাঁরা সত্যিই আমাদের জন্য চিন্তা করেন।
১৮. যিশু যে-কারণে অলৌকিক কাজ করেছিলেন, সেটার কোন দিকটা আপনার কাছে আগ্রহজনক?
১৮ যিশু পরিচর্যার সময়ে প্রমাণ দিয়েছিলেন, তিনি ‘ঈশ্বরেরই পরাক্রম স্বরূপ।’ কিন্তু, তিনি কখনো অন্যদের অভিভূত করার জন্য কিংবা নিজের স্বার্থে তাঁর শক্তি ব্যবহার করেননি। আসলে, যিশু লোকেদের প্রকৃতই ভালোবাসতেন বলে অলৌকিক কাজ করার জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করেছিলেন। পরের প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়ে আরও বেশি শিখব।