সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা আপনাদের বিবাহবন্ধনকে দৃঢ় ও সুরক্ষা করুন

যিহোবা আপনাদের বিবাহবন্ধনকে দৃঢ় ও সুরক্ষা করুন

“যদি সদাপ্রভু নগর রক্ষা না করেন, রক্ষক বৃথাই জাগরণ করে।” —গীত. ১২৭:১খ.

১, ২. (ক) কেন ২৪,০০০ ইস্রায়েলীয় তাদের চমৎকার পুরস্কার হারিয়েছিল? (খ) কেন এই বিবরণ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ইস্রায়েল জাতি প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার অল্পসময় আগে, হাজার হাজার ইস্রায়েলীয় পুরুষ “মোয়াবের কন্যাদের সহিত ব্যভিচার” করেছিল। ফল স্বরূপ, ২৪,০০০ ইস্রায়েলীয় মারা গিয়েছিল। তারা তাদের উত্তরাধিকার লাভ করার জন্য দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষায় ছিল আর তা লাভ করার দোরগোড়ায় ছিল! কিন্তু দুঃখজনক বিষয়টা হল, অনৈতিকতার প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করার কারণে তারা এক চমৎকার পুরস্কার হারিয়েছিল।—গণনা. ২৫:১-৫, ৯.

এই দুঃখজনক উদাহরণ “আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে।” (১ করি. ১০:৬-১১) আমরা ‘শেষ কালের’ একেবারে শেষ মুহূর্তে এবং নতুন জগতের দোরগোড়ায় বাস করছি। (২ তীম. ৩:১; ২ পিতর ৩:১৩) তবে দুঃখের বিষয়টা হল, কিছু যিহোবার সাক্ষি তাদের নৈতিক মানকে দুর্বল হতে দিয়েছেন এবং অনৈতিক আচরণ করার প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেছেন। তারা এখন তাদের কাজের দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করছেন এবং যদি অনুতপ্ত না হন, তাহলে তারা এমনকী পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগও হারাবেন।

৩. কেন বিবাহিত দম্পতিদের যিহোবার কাছ থেকে নির্দেশনা ও সুরক্ষা প্রয়োজন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

বিয়েকে রক্ষা করে চলার জন্য স্বামী-স্ত্রীদের যিহোবার কাছ থেকে নির্দেশনা ও সুরক্ষা প্রয়োজন কারণ এই জগৎ যৌন অনৈতিকতায় মগ্ন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১২৭:১.) এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে এক দম্পতি তাদের বিয়েকে সুরক্ষা করতে পারেন। তা করার জন্য, তাদের নিজ নিজ হৃদয় রক্ষা করতে হবে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে হবে, নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে হবে, উত্তম ভাববিনিময় করতে হবে এবং পরস্পরকে বিয়ের প্রাপ্য দিতে হবে।

আপনাদের হৃদয়কে রক্ষা করুন

৪. কেন কিছু খ্রিস্টান অনৈতিক আচরণে রত হওয়ার জন্য প্রলোভিত হয়েছেন?

কীভাবে একজন খ্রিস্টান অনৈতিকতার প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করে ফেলতে পারেন? প্রায়ই তা চোখের মাধ্যমে শুরু হয়। যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” (মথি ৫:২৭, ২৮; ২ পিতর ২:১৪) অনৈতিক আচরণে রত হয়েছেন এমন অনেকে পর্নোগ্রাফি দেখার, কামোদ্দীপক সাহিত্যাদি পড়ার অথবা ইন্টারনেটে জঘন্য বিষয়বস্তু দেখার মাধ্যমে তাদের নৈতিক মানকে দুর্বল হতে দিয়েছেন। অন্যেরা এমন সিনেমা, মঞ্চনাটক অথবা টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখেছেন, যেগুলোতে খোলাখুলিভাবে যৌন ক্রিয়াকলাপ দেখানো হয়। কেউ কেউ এমন ড্যান্স-বার অথবা ম্যাসাজ পার্লারে গিয়েছেন, যেখানে নোংরা কাজ করা হয়।

৫. কেন আমাদের অসিদ্ধ হৃদয়কে রক্ষা করতে হবে?

কেউ কেউ প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেছেন কারণ তারা নিজেদের বিবাহসাথি ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে মনোযোগ পেতে চেয়েছেন। আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে লোকেদের আত্মসংযম খুবই কম আর তারা সমস্ত ধরনের অনৈতিক বিষয় থেকে আনন্দ পেয়ে থাকে। এ ছাড়া, আমাদের হৃদয় যেহেতু প্রতারক ও বেপরোয়া, তাই আমরা হয়তো খুব সহজেই আমাদের স্বামী অথবা স্ত্রী ছাড়াও অন্য কারো প্রতি রোমান্টিক অনুভূতি গড়ে তুলতে পারি। (পড়ুন, যিরমিয় ১৭:৯, ১০.) যিশু বলেছিলেন: “অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন . . . আইসে।”—মথি ১৫:১৯.

৬, ৭. (ক) আমাদের হৃদয়ে মন্দ আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠলে কী হতে পারে? (খ) কীভাবে আমরা যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করা এড়িয়ে চলতে পারি?

একবার হৃদয়ে মন্দ আকাঙ্ক্ষা গড়ে ওঠার পর, পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন এমন দু-জন ব্যক্তি হয়তো সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, যেগুলো নিয়ে শুধুমাত্র নিজের স্বামী অথবা স্ত্রীর সঙ্গেই আলোচনা করা উচিত। শীঘ্রই, তারা একত্রে থাকার আরও বেশি অজুহাত খুঁজে বেড়ান। তারা একে অন্যের সঙ্গে ঘন ঘন দেখা করেন আর এমন ভান করেন, যেন হঠাৎ করেই তাদের দেখা হয়ে গিয়েছে। পরস্পরের প্রতি তাদের অনুভূতি যখন আরও তীব্র হতে থাকে, তখন যা সঠিক তা করা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তাদের সম্পর্ক যত গভীর হয়, তা শেষ করাও তত কঠিন হয়ে পড়ে, যদিও তারা জানেন, তারা যেটা করছেন, সেটা অন্যায়।—হিতো. ৭:২১, ২২.

তারা সেই সময়ে যিহোবার নৈতিক মান পুরোপুরি ভুলে যান, যখন তাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষা ও কথাবার্তা একটা সময়ে গিয়ে পরস্পরের হাত ধরা, চুম্বন করা, আদর করে হাত বোলানো, যৌনকামনা সহকারে পরস্পরকে স্পর্শ করায় পরিণত হয়। দুঃখের বিষয়টা হল, তারা এমন কাজ করছেন, যা শুধুমাত্র তাদের নিজ নিজ বিবাহসাথির সঙ্গে করা উচিত। তারা নিজ নিজ কামনা দ্বারা “আকর্ষিত ও প্ররোচিত” হন। অবশেষে, তাদের আকাঙ্ক্ষা যখন প্রবল হয়, তখন তারা ব্যভিচার করে ফেলেন। (যাকোব ১:১৪, ১৫) এটা দুঃখজনক কারণ তারা দু-জনেই যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করা এড়িয়ে চলতে পারতেন, যদি তারা বিবাহবন্ধনের প্রতি তাদের সম্মানকে দৃঢ় করার জন্য যিহোবাকে সুযোগ দিতেন। কীভাবে একজন ব্যক্তি এই ধরনের সম্মান গড়ে তুলতে পারেন?

ক্রমাগত ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

৮. যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কীভাবে অনৈতিকতা থেকে আমাদের সুরক্ষা করতে পারে?

গীতসংহিতা ৯৭:১০ পদ পড়ুন। যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদেরকে অনৈতিকতা থেকে সুরক্ষা করতে পারে। আমরা যখন তাঁর চমৎকার গুণাবলি সম্বন্ধে শিখি, তখন আমরা ‘প্রিয় বৎসদের ন্যায় ঈশ্বরের অনুকারী হইবার আর প্রেমে চলিবার’ জন্য চেষ্টা করি। ফল স্বরূপ, আমরা ‘বেশ্যাগমন’ বা যৌন অনৈতিকতা ও ‘সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতা’ প্রত্যাখ্যান করার শক্তি লাভ করব। (ইফি. ৫:১-৪) “ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন,” এই বিষয়টা যে-সমস্ত স্বামী-স্ত্রী জানেন, তারা একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন।—ইব্রীয় ১৩:৪.

৯. (ক) যোষেফকে তার প্রভুর স্ত্রী প্রলোভন দেখানো সত্ত্বেও, তিনি কেন বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিলেন? (খ) যোষেফের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

কিছু খ্রিস্টান কাজের সময়ের পর অবিশ্বাসী সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে তাদের নৈতিক মানকে দুর্বল হতে দিয়েছেন। অন্যেরা কাজে থাকার সময়ে প্রলোভনের শিকার হয়েছেন। যোষেফ নামে একজন যুবকের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছিল। কাজে থাকার সময় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার প্রভুর স্ত্রী তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। দিনের পর দিন সেই স্ত্রী যোষেফকে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য প্রলোভিত করতে চেষ্টা করেছিলেন। অবশেষে, ‘সে যোষেফের বস্ত্র ধরিয়া বলিয়াছিল, আমার সহিত শয়ন কর।’ কিন্তু, যোষেফ তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কেন যোষেফ বিশ্বস্ত থাকার ব্যাপারে দৃঢ় থাকতে পেরেছিলেন? কারণ তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। যদিও যোষেফকে তার চাকরি হারাতে হয়েছিল এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। (আদি. ৩৯:১-১২; ৪১:৩৮-৪৩) আমরা কর্মস্থলে অথবা অন্য যেকোনো জায়গায় থাকি না কেন, প্রলোভন জাগিয়ে তোলে এমন যেকোনো পরিস্থিতি আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে।

নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করুন

১০. একটা বিয়েকে সুরক্ষা করার ক্ষেত্রে নতুন ব্যক্তিত্ব কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

১০ নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব, যা “সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে,” তা একটা দম্পতিকে যৌন অনৈতিকতায় রত হওয়া থেকে সুরক্ষা করতে পারে। (ইফি. ৪:২৪) আমরা যখন নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করি, তখন আমরা “বেশ্যাগমন” বা যৌন অনৈতিকতা, ‘অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভের’ বিরুদ্ধে আমাদের অঙ্গ সকলকে “মৃত্যুসাৎ” করি। (পড়ুন, কলসীয় ৩:৫, ৬.) এখানে “মৃত্যুসাৎ” করার অর্থ হল, অনৈতিক আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের যা-কিছু করা প্রয়োজন, তা করতে হবে। আমরা এমন যেকোনো কিছু এড়িয়ে চলব, যা আমাদের মধ্যে অনুপযুক্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে পারে। (ইয়োব ৩১:১) আমরা যখন ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তখন আমরা “যাহা মন্দ, তাহা” ঘৃণা করতে এবং ‘যাহা ভাল, তাহা’ দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে শিখি।—রোমীয় ১২:২, ৯.

১১. কীভাবে নতুন ব্যক্তিত্ব একটা বিয়েকে দৃঢ় করে?

১১ আমরা যখন নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করি, তখন আমরা যিহোবার গুণাবলি অনুকরণ করি। (কল. ৩:১০) একজন স্বামী ও একজন স্ত্রী যদি “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা” দেখান, তাহলে তাদের বিয়ে দৃঢ় হবে এবং যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করবেন। (কল. ৩:১২) এ ছাড়া, তারা যদি ‘খ্রীষ্টের শান্তিকে তাহাদের হৃদয়ে কর্ত্তৃত্ব করিতে’ দেন, তাহলে তারা আরও বেশি একতা উপভোগ করবেন। (কল. ৩:১৫) কোনো দম্পতি যদি “স্নেহশীল” হন, তাহলে তারা মনোযোগ ও সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে একে অন্যকে ‘শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করবেন।’—রোমীয় ১২:১০.

১২. এক সুখী বিবাহিত জীবনের জন্য কোন গুণাবলি গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

১২ এক দম্পতিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন গুণাবলি তাদেরকে এক সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করেছে। সিড নামে সেই স্বামী বলেন: “প্রেম হচ্ছে প্রধান গুণ, যেটার ওপর আমরা সবসময় কাজ করার চেষ্টা করেছি। আর আমরা মৃদুতা গুণটাকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।” তার স্ত্রী সনিয়া একমত হন এবং বলেন: “দয়া নিঃসন্দেহে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক গুণ। আর আমরা নম্রতা দেখানোরও চেষ্টা করেছি, যদিও তা সবসময় সহজ ছিল না।”

উত্তম ভাববিনিময় করুন

১৩. এক দৃঢ় বিয়ের জন্য কী প্রয়োজন এবং কেন?

১৩ একটা যে-উপায়ে আমরা আমাদের বিয়েকে দৃঢ় রাখতে পারি তা হল, আমাদের বিবাহসাথির সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলে। দুঃখের বিষয়টা হল, কিছু স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সঙ্গে অসম্মান দেখিয়ে কথা বলেন, যা তারা অপরিচিত ব্যক্তি অথবা এমনকী তাদের পোষা প্রাণীর প্রতিও দেখান না! বিয়ের মধ্যে “কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা” থাকলে, সেগুলো একটা দম্পতির সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়। (ইফি. ৪:৩১) সমালোচনাপূর্ণ এবং আঘাত দেওয়ার মতো মনোভাব একটা বিয়েকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই, পরস্পরের সঙ্গে মধুরস্বভাব ও করুণা দেখিয়ে কথা বলার মাধ্যমে দম্পতিদের তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করতে হবে।—ইফি. ৪:৩২.

১৪. আমাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত?

১৪ বাইবেল জানায়, “নীরব থাকিবার কাল” আছে। (উপ. ৩:৭) অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে, আমরা বিবাহসাথির সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারি, কারণ এক সুখী বিবাহে ভাববিনিময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানির একজন স্ত্রী বলেন: “এইরকম পরিস্থিতিতে, নীরবতা আপনার সাথিকে আঘাত দিতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “যদিও চাপের মধ্যে শান্ত থাকা সবসময় সহজ নয়, কিন্তু অন্যের ওপর নিজের রাগ ঝেড়ে ফেলাও দয়ার কাজ হবে না। তাহলে আপনি হয়তো কোনো কিছু চিন্তা না করেই এমন কিছু বলে ফেলতে বা করে ফেলতে পারেন, যা আপনার বিবাহসাথিকে আঘাত দিতে পারে এবং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে।” স্বামী-স্ত্রীরা চিৎকারচ্যাঁচামেচি করে অথবা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে তাদের সমস্যা সমাধান করে না। এর পরিবর্তে, দম্পতিরা যখন তর্কবিতর্ক করার পর্যায়ে না গিয়ে দ্রুত তাদের মতবিরোধের মীমাংসা করে, তখন তারা তাদের বিয়েকে দৃঢ় করে।

১৫. কীভাবে উত্তম ভাববিনিময় একটা বিয়েকে দৃঢ় করতে পারে?

১৫ আপনারা যখন পরস্পরের সঙ্গে নিজেদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি জানানোর জন্য সময় করে নেন, তখন আপনারা আপনাদের বিয়েকে দৃঢ় করতে পারেন। আপনি একটা কথা যেভাবে বলেন তা, আপনি যা বলেন, সেটার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, এমনকী কঠিন পরিস্থিতিতেও, শব্দ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবং গলার স্বরে দয়া দেখানোর জন্য যথাসাধ্য করুন। তাহলে, আপনার স্বামী অথবা স্ত্রীর পক্ষে আপনার কথা শোনা আরও সহজ হবে। (পড়ুন, কলসীয় ৪:৬.) কোনো দম্পতি যখন উৎসাহজনক ও গঠনমূলক বাক্য ব্যবহার করে, তখন তারা উত্তম ভাববিনিময়ের মাধ্যমে তাদের বিয়েকে দৃঢ় করে।—ইফি. ৪:২৯.

উত্তম ভাববিনিময়ের মাধ্যমে একজন স্বামী ও একজন স্ত্রী তাদের বিয়েকে দৃঢ় করতে পারেন (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

বিয়ের প্রাপ্য দিন

১৬, ১৭. কেন বিবাহ সাথিদের পরস্পরের আবেগগত ও যৌন চাহিদার প্রতি বিবেচনা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ?

১৬ এ ছাড়া, দম্পতিরা যখন তাদের সাথির প্রয়োজনকে নিজেদের প্রয়োজনের আগে রাখে, তখন তারা এক দৃঢ় বিবাহবন্ধন গড়ে তুলতে পারে। (ফিলি. ২:৩, ৪) স্বামীদের ও সেইসঙ্গে স্ত্রীদেরও পরস্পরের আবেগগত ও যৌন চাহিদার প্রতি বিবেচনা দেখাতে হবে।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:৩, ৪.

১৭ কিন্তু দুঃখজনক বিষয়টা হল, কিছু বিবাহসাথি স্নেহ দেখায় না এবং একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয় না। আর কিছু পুরুষ মনে করেন, তারা যদি স্ত্রীর সঙ্গে কোমলতা দেখান, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে তারা দুর্বল। কিন্তু বাইবেল জানায়: ‘হে স্বামিগণ, স্ত্রীদের সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক’ বা বিবেচনা দেখিয়ে “বাস কর।” (১ পিতর ৩:৭) একজন স্বামীকে এটা বুঝতে হবে, বিয়ের প্রাপ্য দেওয়ার সঙ্গে শুধু যৌনমিলন জড়িত নয়। তাকে সবসময় প্রেম ও স্নেহ দেখাতে হবে। তাহলে, তার স্ত্রী সম্ভবত যৌন সম্পর্কের বিষয়টা উপভোগ করবেন। যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই প্রেম ও স্নেহ দেখান, তখন পরস্পরের আবেগগত ও শারীরিক চাহিদা পরিতৃপ্ত করা আরও সহজ হয়।

১৮. কীভাবে স্বামী-স্ত্রীরা তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করতে পারে?

১৮ আমাদের বিবাহসাথির প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ার পিছনে কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। তবে কেন একজন স্বামী অথবা স্ত্রী অন্য কারো কাছ থেকে ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতা খোঁজেন, সেটার পিছনে একটা কারণ হচ্ছে, কোমল আচরণ না দেখানো। (হিতো. ৫:১৮; উপ. ৯:৯) এই কারণে বাইবেল বিবাহিত দম্পতিদের পরামর্শ দেয়: “তোমরা এক জন অন্যকে বঞ্চিত করিও না; কেবল . . . উভয়ে একপরামর্শ হইয়া কিছু কাল পৃথক্‌ থাকিতে পার।” কেন? “যেন শয়তান তোমাদের অসংযমতা প্রযুক্ত তোমাদিগকে পরীক্ষায় না ফেলে।” (১ করি. ৭:৫) কোনো দম্পতি যদি ‘অসংযম’ হয়ে পড়ার মাধ্যমে শয়তানকে সুযোগ দেন আর এর ফলে কোনো সাথি ব্যভিচার করে ফেলেন, তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক হবে! বিয়ের প্রাপ্য দেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যেক সাথি নিজের “স্বার্থ” নয় “বরং পরের মঙ্গল” চেষ্টা করেন। তারা সেটা কেবল কর্তব্যের খাতিরেই নয় বরং একে অন্যকে ভালোবাসে বলেই করেন। প্রেমপূর্ণ ও কোমল অন্তরঙ্গ অভিব্যক্তি তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করে।—১ করি. ১০:২৪.

আপনাদের বিয়েকে ক্রমাগত দৃঢ় করুন

১৯. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে এবং কেন?

১৯ আমরা এখন নতুন জগতের দোরগোড়ায় রয়েছি! মোয়াবের তলভূমিতে ২৪,০০০ ইস্রায়েলীয়ের মতো, এখন মন্দ আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করা ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসবে। সেই সময়ে যা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করার পর বাইবেল এভাবে সাবধান করে: “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।” (১ করি. ১০:১২) আমাদের বিয়েকে দৃঢ় করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই যিহোবার প্রতি ও আমাদের সাথির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে। (মথি ১৯:৫, ৬) বর্তমানে, আমাদের আরও বেশি ‘যত্ন করিতে হইবে, যেন তাঁহার কাছে আমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়!’—২ পিতর ৩:১৩, ১৪.