সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি দুষ্টতাকে ঘৃণা করেন?

আপনি কি দুষ্টতাকে ঘৃণা করেন?

আপনি কি দুষ্টতাকে ঘৃণা করেন?

“তুমি [যিশু] . . . দুষ্টতাকে ঘৃণা করিয়াছ।”—ইব্রীয় ১:৯.

১. প্রেম সম্বন্ধে যিশু কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?

 প্রেমের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) যিশু তাঁর অনুসারীদের আদেশ দিয়েছিলেন যেন তারা পরস্পরের প্রতি আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখায়। সেই প্রেম হবে তাদের শনাক্তিকরণ চিহ্ন। যিশু তাদেরকে এই পরামর্শও দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও।”—মথি ৫:৪৪.

২. খ্রিস্টের অনুসারীদের কীসের প্রতি ঘৃণা গড়ে তোলা উচিত?

কিন্তু, তাঁর শিষ্যদের প্রেম সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া ছাড়াও যিশু তাদেরকে কী ঘৃণা করতে হবে, সেই সম্বন্ধেও শিক্ষা দিয়েছিলেন। যিশুর বিষয়ে উল্লেখ করে এই কথা বলা হয়েছিল: “তুমি ধার্ম্মিকতাকে প্রেম ও দুষ্টতাকে ঘৃণা করিয়াছ।” (ইব্রীয় ১:৯; গীত. ৪৫:৭) এটা দেখায় যে, আমাদের কেবলমাত্র ধার্মিকতার প্রতি ভালোবাসাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পাপ অথবা দুষ্টতার প্রতি ঘৃণাও গড়ে তুলতে হবে। এই বিষয়টা লক্ষণীয় যে, প্রেরিত যোহন নির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন: “যে কেহ পাপাচরণ করে, সে ব্যবস্থালঙ্ঘনও করে [দুষ্টতাও করে চলে], আর ব্যবস্থালঙ্ঘনই [দুষ্টতা করে চলাই] পাপ।”—১ যোহন ৩:৪.

৩. দুষ্টতার প্রতি ঘৃণার ব্যাপারে জীবনের কোন ক্ষেত্রগুলো সম্বন্ধে আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করব?

তাই, খ্রিস্টান হিসেবে নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি কি দুষ্টতাকে ঘৃণা করি?’ আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, জীবনের এই চারটে ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা মন্দতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে পারি: (১) মদ্য-জাতীয় পানীয়ের অপব্যবহারের প্রতি আমাদের মনোভাব, (২) জাদুবিদ্যার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, (৩) অনৈতিকতার প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং (৪) যারা দুষ্টতাকে ভালোবাসে, তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।

মদের দাস হয়ে উঠবেন না

৪. মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করার বিষয়ে সাবধানবাণী দেওয়ার সময় কেন যিশু নির্দ্বিধায় কথা বলতে পেরেছিলেন?

যিশু মাঝে মাঝে দ্রাক্ষারস পান করেছিলেন, এটাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রদত্ত এক দান হিসেবে স্বীকার করেছিলেন। (গীত. ১০৪:১৪, ১৫) কিন্তু, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করার মাধ্যমে তিনি কখনো এই দানের অপব্যবহার করেননি। (হিতো. ২৩:২৯-৩৩) তাই, এই ধরনের অভ্যাসের বিরুদ্ধে পরামর্শ দেওয়ার সময় তিনি নির্দ্বিধায় কথা বলতে পেরেছিলেন। (পড়ুন, লূক ২১:৩৪.) মদ্য-জাতীয় পানীয়ের অপব্যবহার অন্যান্য পাপের দিকে পরিচালিত করতে পারে। তাই, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “দ্রাক্ষারসে মত্ত হইও না, তাহাতে নষ্টামি আছে; কিন্তু আত্মাতে পরিপূর্ণ হও।” (ইফি. ৫:১৮, ১৯) এ ছাড়া, তিনি মণ্ডলীর বয়স্ক বোনদেরও উপদেশ দিয়েছিলেন যেন তারা “বহুমদ্যের দাসী” না হয়।—তীত ২:৩.

৫. যারা মদ্য-জাতীয় পানীয় পান করা বেছে নেয়, তারা নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারে?

আপনি যদি মদ্য-জাতীয় পানীয় পান করা বেছে নেন, তাহলে আপনারও নিজেকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের প্রতি আমারও কি যিশুর মতো মনোভাব রয়েছে? এই বিষয়ে আমাকে যদি অন্যদের পরামর্শ দিতে হয়, তাহলে আমি কি নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি? আমি কি উদ্‌বিগ্নতা থেকে রেহাই পাওয়ার অথবা চাপ থেকে স্বস্তি লাভ করার জন্য মদ্যপান করি? প্রতি সপ্তাহে আমি কতটুকু মদ্যপান করি? কেউ যখন আমাকে বলে যে, আমি হয়তো মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করছি, তখন আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? আমি কি প্রতিবাদ করি অথবা এমনকী বিরক্ত হয়ে যাই?’ আমরা যদি বহুমদ্যের দাস হয়ে উঠি, তাহলে তা সঠিকভাবে যুক্তি করার এবং বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আমাদের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খ্রিস্টের অনুসারীরা তাদের পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতাকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা করে।—হিতো. ৩:২১, ২২.

জাদুবিদ্যা এড়িয়ে চলুন

৬, ৭. (ক) যিশু কীভাবে শয়তান ও তার মন্দদূতদের সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন? (খ) কেন জাদুবিদ্যা বর্তমানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে?

পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু দৃঢ়তার সঙ্গে শয়তান ও মন্দদূতদের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি তাঁর নীতিনিষ্ঠার ওপর শয়তানের সরাসরি আক্রমণকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (লূক ৪:১-১৩) এ ছাড়া, তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা এবং কাজগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সূক্ষ্ম কৌশলগুলো শনাক্ত এবং প্রতিরোধ করেছিলেন। (মথি ১৬:২১-২৩) যিশু ভূতগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে ভূত বা মন্দদূতদের নিষ্ঠুর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন।—মার্ক ৫:২, ৮, ১২-১৫; ৯:২০, ২৫-২৭.

যিশু ১৯১৪ সালে স্বর্গে রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি স্বর্গকে শয়তান ও মন্দদূতদের কলুষিত প্রভাব থেকে মুক্ত করেন। এর ফলে, শয়তান—আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে—‘সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মাইবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (প্রকা. ১২:৯, ১০) তাই, এই বিষয়ে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয় যে, জাদুবিদ্যার প্রতি আকর্ষণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য আমরা কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারি?

৮. আমোদপ্রমোদ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকের কোন আত্মপরীক্ষা করা উচিত?

প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিপদগুলো সম্বন্ধে বাইবেল স্পষ্টভাবে সতর্ক করে। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২.) বর্তমানে, শয়তান ও মন্দদূতেরা লোকেদের চিন্তাভাবনাকে এমন চলচ্চিত্র, বইপুস্তক এবং ইলেকট্রনিকস গেমসের দ্বারা প্রভাবিত করে, যেগুলো জাদুবিদ্যাকে তুলে ধরে। তাই, আমোদপ্রমোদ বাছাই করার সময় আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘বিগত মাসগুলোতে আমি কি আমোদপ্রমোদের জন্য এমন চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালা, ইলেকট্রনিকস গেমস্‌, বইপুস্তক অথবা কমিক্‌স বেছে নিয়েছি, যেগুলোর মধ্যে ভূতুড়ে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে? আমি কি জাদুবিদ্যার প্রভাবগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার গুরুত্ব বুঝতে পারি নাকি আমি এর বিপদগুলোকে হালকাভাবে দেখি? এমনকী আমি কি বিবেচনা করে দেখেছি যে, আমি যে-আমোদপ্রমোদ বাছাই করি, সেগুলো সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করতে পারেন? আমি যদি আমার জীবনে শয়তানের এই ধরনের প্রভাবগুলোকে সুযোগ দিই, তাহলে যিহোবা এবং তাঁর ধার্মিক নীতিগুলোর প্রতি আমার যে-ভালোবাসা রয়েছে, তা কি আমাকে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করতে এবং সেই প্রভাবগুলো প্রত্যাখ্যান করতে অনুপ্রাণিত করবে?’—প্রেরিত ১৯:১৯, ২০.

অনৈতিকতা সম্বন্ধে যিশুর সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিন

৯. কীভাবে একজন ব্যক্তি দুষ্টতার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলে?

যিশু যৌন নৈতিকতা সম্বন্ধে যিহোবার মান তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা কি পাঠ কর নাই যে, সৃষ্টিকর্ত্তা আদিতে পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন, ‘এই কারণ মনুষ্য পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সে দুই জন একাঙ্গ হইবে’? সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৪-৬) যিশু জানতেন যে, আমরা চোখ দিয়ে যা দেখি, তা আমাদের হৃদয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে তিনি বলেছিলেন: “তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, ‘তুমি ব্যভিচার করিও না’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” (মথি ৫:২৭, ২৮) যারা যিশুর এই সাবধানবাণী উপেক্ষা করে, তারা আসলে দুষ্টতার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলছে।

১০. এমন একটা অভিজ্ঞতার কথা বলুন, যা দেখায় যে, একজন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত হতে পারেন।

১০ শয়তান পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে যৌন অনৈতিকতাকে তুলে ধরে। বর্তমান বিধিব্যবস্থা এই ধরনের বিষয়গুলোতে ছেয়ে আছে। যারা পর্নোগ্রাফি দেখে, তাদের পক্ষে তাদের মন থেকে অনৈতিক দৃশ্যগুলো মুছে ফেলা কঠিন হয়ে থাকে। তারা এমনকী পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। একজন খ্রিস্টানের বেলায় কী হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। তিনি বলেন: “আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পর্নোগ্রাফি দেখতাম। আমি এক কল্পনার জগৎ গড়ে তুলেছিলাম, যেটাকে আমার সেই জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে হয়েছিল, যেখানে আমি যিহোবাকে সেবা করতাম। আমি জানতাম যে, এই অভ্যাস সঠিক নয় কিন্তু আমি নিজেকে এইরকম বলেছিলাম যে, ঈশ্বরের প্রতি আমার সেবা এখনও গ্রহণযোগ্য।” কী এই ভাইয়ের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তিত করেছিল? তিনি বলেন: “যদিও এটা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল, তবুও আমি আমার সমস্যাটা নিয়ে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” অবশেষে এই ভাই এই মন্দ অভ্যাস থেকে মুক্ত হতে পেরেছিলেন। “আমার জীবনকে এই পাপ থেকে মুক্ত করার পর,” তিনি স্বীকার করেন, “আমি অবশেষে অনুভব করতে পেরেছিলাম যে, সত্যিই আমার এক শুদ্ধ বিবেক রয়েছে।” যারা দুষ্টতাকে ঘৃণা করে, তাদেরকে অবশ্যই পর্নোগ্রাফিকে ঘৃণা করা শিখতে হবে।

১১, ১২. গানবাজনা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা দুষ্টতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে পারি?

১১ গানবাজনা ও সেইসঙ্গে গানের কথা প্রথমে আমাদের আবেগের ওপর আর এভাবে আমাদের রূপক হৃদয়ের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। গানবাজনা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত এক দান আর তা দীর্ঘদিন ধরে সত্য উপাসনায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। (যাত্রা. ১৫:২০, ২১; ইফি. ৫:১৯) কিন্তু, শয়তানের দুষ্ট জগৎ এমন গানবাজনাকে উপস্থাপন করে, যা অনৈতিকতাকে তুলে ধরে। (১ যোহন ৫:১৯) আপনি যে-গানবাজনা শোনেন, সেটা আপনাকে কলুষিত করছে কি করছে না, তা আপনি কীভাবে বলতে পারেন?

১২ আপনি নিজেকে এই প্রশ্ন করে শুরু করতে পারেন: ‘আমি যে-গানগুলো শুনি, সেগুলো কি নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন ও ঈশ্বরনিন্দাকে তুলে ধরে? আমাকে যদি নির্দিষ্ট কিছু গানের কথা কাউকে পড়ে শোনাতে হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি কি এইরকম ধারণা লাভ করবে যে, আমি দুষ্টতাকে ঘৃণা করি নাকি সেই কথাগুলো ইঙ্গিত দেবে যে, আমার হৃদয় কলুষিত?’ আমরা কেবল মুখে মুখে দুষ্টতাকে ঘৃণা করতে আবার একইসঙ্গে গানের মাধ্যমে সেগুলো তুলে ধরতে পারি না। “যাহা যাহা মুখ হইতে বাহির হয়, তাহা অন্তঃকরণ হইতে আইসে,” যিশু বলেছিলেন, “আর তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে। কেননা অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চোর্য্য, মিথ্যাসাক্ষ্য, নিন্দা আইসে।”—মথি ১৫:১৮, ১৯; তুলনা করুন, যাকোব ৩:১০, ১১.

দুষ্টতাকে ভালোবাসে এমন ব্যক্তিদের প্রতি যিশুর মতো দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলুন

১৩. যারা পাপ কাজ করেই চলেছিল, তাদেরকে যিশু কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন?

১৩ যিশু বলেছিলেন যে, তিনি পাপী অথবা দুষ্টদের ডাকতে এসেছেন, যেন তারা মন ফেরায়। (লূক ৫:৩০-৩২) কিন্তু, তিনি সেই ব্যক্তিদের কীভাবে দেখেছিলেন, যারা পাপ কাজ করেই চলেছিল? যিশু এই ধরনের ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিরুদ্ধে জোরালো সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। (মথি ২৩:১৫, ২৩-২৬) এ ছাড়া, তিনি স্পষ্টভাবে এও বলেছিলেন: “যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পাইবে। সেই দিন [যখন ঈশ্বর বিচার নিয়ে আসবেন] অনেকে আমাকে বলিবে, হে প্রভু, হে প্রভু, আপনার নামেই আমরা কি ভাববাণী বলি নাই? আপনার নামেই কি ভূত ছাড়াই নাই? আপনার নামেই কি অনেক পরাক্রম-কার্য্য করি নাই?” কিন্তু, যারা অনুতাপহীনভাবে দুষ্ট কাজ করেই চলে, তাদেরকে তিনি এই কথা বলে প্রত্যাখ্যান করবেন: “আমার নিকট হইতে দূর হও।” (মথি ৭:২১-২৩) কেন তাদের এইরকম বিচার করা হবে? কারণ এই ব্যক্তিরা ঈশ্বরকে অসম্মান করে এবং তাদের দুষ্টতাপূর্ণ কাজের দ্বারা অন্যদের ক্ষতি করে।

১৪. কেন অনুতাপহীন পাপীদের মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়?

১৪ ঈশ্বরের বাক্য আদেশ দেয় যে, অনুতাপহীন পাপীদের যেন মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৫:৯-১৩.) অন্ততপক্ষে, তিনটে কারণে এটা করা প্রয়োজন: (১) যিহোবার নামকে অপবাদ থেকে মুক্ত রাখার জন্য, (২) মণ্ডলীকে কলুষতা থেকে সুরক্ষা করার জন্য এবং (৩) সম্ভব হলে পাপীকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করার জন্য।

১৫. আমরা যদি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে চাই, তাহলে নিজেদেরকে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৫ যারা দুষ্টতাপূর্ণ কাজ করেই চলে, তাদের প্রতি আমরা কি যিশুর মতো একইরকম দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি? আমাদের এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে: ‘আমি কি নিয়মিতভাবে এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করা বেছে নিই, যাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে অথবা যিনি নিজে থেকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছেন? সেই ব্যক্তি যদি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হয়ে থাকেন, যিনি এখন আর একই বাড়িতে থাকেন না, তাহলে?’ এই ধরনের এক পরিস্থিতি ধার্মিকতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্যের এক বাস্তব পরীক্ষা হতে পারে। *

১৬, ১৭. একজন খ্রিস্টান মা কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন আর কী তাকে অনুতাপহীন অন্যায়কারীদের সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থাকে সমর্থন করতে সাহায্য করেছিল?

১৬ একজন বোনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন, যার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের একসময় যিহোবার প্রতি ভালোবাসা ছিল। কিন্তু, পরে সে অনুতাপহীনভাবে দুষ্টতার পথে চলা বেছে নিয়েছিল। তাই, তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। আমাদের সেই বোন যিহোবাকে ভালোবাসতেন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি তার ছেলেকেও ভালোবাসতেন আর তাই ছেলের সঙ্গে মেলামেশা এড়িয়ে চলার বিষয়ে শাস্ত্রীয় আদেশ পালন করা তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন বলে মনে হয়েছিল।

১৭ আপনি সেই বোনকে কী পরামর্শ দিতেন? একজন প্রাচীন তাকে এই বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, তিনি যে-কষ্ট অনুভব করেন, তা যিহোবা বোঝেন। ভাই তাকে যিহোবার সেই কষ্ট সম্বন্ধে চিন্তা করতে বলেছিলেন, যা নিশ্চিতভাবেই তিনি সেই সময় অনুভব করেছিলেন, যখন তাঁর কিছু দূতপুত্র বিদ্রোহ করেছিল। সেই প্রাচীন তার সঙ্গে যুক্তি করেছিলেন, এমনকী যদিও যিহোবা জানেন যে, এই ধরনের এক পরিস্থিতি কতটা কষ্টদায়ক হতে পারে, তবুও তিনি চান যেন অনুতাপহীন পাপীদের সমাজচ্যুত করা হয়। সেই অনুস্মারক বোনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং তিনি সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থাকে অনুগতভাবে সমর্থন করেছিলেন। * এই ধরনের আনুগত্য যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে।—হিতো. ২৭:১১.

১৮, ১৯. (ক) দুষ্ট কাজ করেই চলে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া কীসের প্রতি আমাদের ঘৃণার প্রমাণ দেয়? (খ) আমরা যখন ঈশ্বর ও তাঁর ব্যবস্থার প্রতি অনুগত থাকি, তখন কোন ফলাফল আসতে পারে?

১৮ আপনিও যদি একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তাহলে দয়া করে মনে রাখবেন যে, যিহোবা আপনার কষ্ট বোঝেন। সমাজচ্যুত অথবা নিজে থেকে মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছেন এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি দেখাচ্ছেন যে, আপনি সেই মনোভাব ও কাজগুলো ঘৃণা করেন, যেগুলো এই পরিণতির দিকে পরিচালিত করেছে। কিন্তু, আপনি এটাও দেখাচ্ছেন যে, আপনি অন্যায়কারীকে ভালোবাসেন আর সেই কারণে আপনি তার জন্য সর্বোত্তমটা চান। যিহোবার প্রতি আপনার আনুগত্য শাসনপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুতপ্ত হওয়ার ও যিহোবার কাছে ফিরে আসার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করবে।

১৯ একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তি, যাকে পরে পুনর্বহাল করা হয়েছে, তিনি লিখেছিলেন: “আমি এটা দেখে আনন্দিত যে, তাঁর লোকেদের প্রতি ভালোবাসার কারণে যিহোবা এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন যেন তাঁর সংগঠনকে শুদ্ধ রাখা হয়। বাইরের লোকেদের কাছে যেটাকে কঠোর বলে মনে হয়, তা প্রয়োজনীয় ও একইসঙ্গে সত্যিই প্রেমময় এক কাজ।” আপনি কি মনে করেন যে, এই ব্যক্তি সমাজচ্যুত থাকাকালীন যদি মণ্ডলীর সদস্যরা ও সেইসঙ্গে তার পরিবার তার সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখত, তাহলে তিনি কি এইরকম এক উপসংহারে আসার ব্যাপারে সাহায্য লাভ করতেন? সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আনুগত্য প্রমাণ দেয় যে, আমরা ধার্মিকতা ভালোবাসি এবং আচরণের মান নির্ধারণ করার জন্য যিহোবার অধিকারকে স্বীকার করি।

‘দুষ্টতাকে ঘৃণা করুন’

২০, ২১. কেন দুষ্টতাকে ঘৃণা করা গুরুত্বপূর্ণ?

২০ “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক,” প্রেরিত পিতর সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কেন? কারণ “তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮) সেই ব্যক্তি কি আপনি হবেন? তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কতটা ভালোভাবে দুষ্টতাকে ঘৃণা করতে শিখেছেন, সেটার ওপর।

২১ যা মন্দ, সেটার প্রতি ঘৃণা গড়ে তোলা সহজ নয়। আমরা পাপে জন্মগ্রহণ করেছি এবং আমরা এমন একটা জগতে বাস করছি, যা মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোকে জাগিয়ে তোলে। (১ যোহন ২:১৫-১৭) কিন্তু, যিশু খ্রিস্টকে অনুকরণ করার এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে গভীর করার মাধ্যমে আমরা দুষ্টতার প্রতি ঘৃণা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সফল হতে পারি। আসুন আমরা ‘দুষ্টতাকে ঘৃণা করিবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, পূর্ণরূপে এই আস্থা রাখি যে, যিহোবা ‘আপন সাধুবর্গকে রক্ষা করেন, দুষ্টগণের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।’—গীত. ৯৭:১০.

[পাদটীকাগুলো]

^ এই বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোচনার জন্য ১৯৮১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৬-৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ এ ছাড়া, ২০০৭ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৭-২০ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কী আমাদেরকে মদ্য-জাতীয় পানীয়ের প্রতি আমাদের মনোভাবকে পরীক্ষা করতে সাহায্য করবে?

• জাদুবিদ্যার বিরুদ্ধে আমরা কোন সুরক্ষামূলক পদক্ষেপগুলো নিতে পারি?

• কেন পর্নোগ্রাফি বিপদজনক?

• যখন কোনো প্রিয়জনকে সমাজচ্যুত করা হয়, তখন আমরা কীভাবে দুষ্টতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

মদ্য-জাতীয় পানীয় পান করা বেছে নেওয়ার সময় আপনার কী বিবেচনা করা উচিত?

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে শয়তানের প্রভাব সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

পর্নোগ্রাফি দেখে থাকেন এমন একজন ব্যক্তি কোন বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলেন?