সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘কে ঈশ্বরের মন জানিয়াছে?’

‘কে ঈশ্বরের মন জানিয়াছে?’

‘কে ঈশ্বরের মন জানিয়াছে?’

“কে প্রভুর [ঈশ্বরের] মন জানিয়াছে যে, তাঁহাকে উপদেশ দিতে পারে? কিন্তু খ্রীষ্টের মন আমাদের আছে।”—১ করি. ২:১৬.

১, ২. (ক) অনেক লোক কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়? (খ) আমাদের নিজেদের ও সেইসঙ্গে যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখতে হবে?

 অন্য কোনো ব্যক্তির চিন্তাভাবনা বোঝা কি আপনার কাছে কখনো কঠিন বলে মনে হয়েছে? হতে পারে, সম্প্রতি আপনি বিয়ে করেছেন এবং আপনার এইরকম মনে হয় যে, আপনার সাথির চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণরূপে বোঝার কোন উপায় নেই। বস্তুতপক্ষে, পুরুষ ও নারীদের চিন্তাভাবনা আর এমনকী কথা বলার ধরনও আলাদা। আবার, কিছু সংস্কৃতিতে পুরুষ ও নারীরা আসলে একই ভাষার ভিন্ন ভিন্ন বাচনভঙ্গিতে কথা বলে! অধিকন্তু, সংস্কৃতি ও ভাষাগত ভিন্নতার কারণে চিন্তাভাবনা এবং আচরণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। কিন্তু, অন্যদেরকে আপনি যত বেশি জানবেন, ততই আপনি তাদের চিন্তাভাবনা বুঝতে শুরু করবেন।

তাই, আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয় যে, আমাদের চিন্তাভাবনা যিহোবার সংকল্প বা চিন্তাভাবনার চেয়ে অনেক আলাদা। তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের এই কথা বলেছিলেন: “আমার সঙ্কল্প সকল ও তোমাদের সঙ্কল্প সকল এক নয়, এবং তোমাদের পথ সকল ও আমার পথ সকল এক নয়।” এরপর, বিষয়টা উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরে যিহোবা আরও বলেছিলেন: “কারণ ভূতল হইতে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ।”—যিশা. ৫৫:৮, ৯.

৩. দুটো উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি?

তাহলে এর অর্থ কী এই যে, আমাদের এমনকী যিহোবার চিন্তাভাবনা বোঝার চেষ্টা করাও উচিত নয়? না। যদিও আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনা কখনো পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারি না, কিন্তু তারপরও বাইবেল আমাদেরকে যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। একটা যে-উপায়ে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারি, তা হল তাঁর বাক্য বাইবেলে লিপিবদ্ধ তাঁর কাজকর্মের প্রতি বিবেচনা দেখানোর এবং মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে। (গীত. ২৮:৫) আরেকটা উপায় হল “খ্রীষ্টের মন” জানার মাধ্যমে, যিনি “অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি।” (১ করি. ২:১৬; কল. ১:১৫) বাইবেলের বিবরণগুলো অধ্যয়ন করার ও সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় করে নেওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবার গুণাবলি এবং তাঁর চিন্তাভাবনা বোঝা শুরু করতে পারি।

ভুল প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন

৪, ৫. (ক) কোন ভুল প্রবণতা আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে? ব্যাখ্যা করুন। (খ) ইস্রায়েলীয়রা কোন ভুল চিন্তাভাবনা পোষণ করেছিল?

যিহোবার কাজকর্ম নিয়ে ধ্যান করার সময় আমাদের মানুষের মানদণ্ড অনুযায়ী ঈশ্বরের বিচার করার প্রবণতা এড়িয়ে চলতে হবে। এই প্রবণতা সম্বন্ধে গীতসংহিতা ৫০:২১ পদে লিপিবদ্ধ যিহোবার এই কথাগুলোতে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: “তুমি মনে করিয়াছ, আমি তোমারই মতন।” এই কথাগুলো ১৭৫ বছরেরও বেশি সময় আগে বলা একজন বাইবেল পণ্ডিতের কথার মতো: “মানুষের প্রবণতা হচ্ছে নিজেদের মান অনুযায়ী ঈশ্বরের বিচার করা আর এইরকম মনে করা যে, ঈশ্বরও সেই একই আইনগুলো দ্বারা সীমাবদ্ধ, যেগুলো তারা নিজেরা পালন করুক বলে চায়।”

আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে, যেন আমরা যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিজেদের মানদণ্ড ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হতে না দিই। কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ শাস্ত্র অধ্যয়ন করার সময়, যিহোবার কিছু পদক্ষেপ হয়তো আমাদের সীমিত, অসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সঠিক বলে মনে না-ও হতে পারে। প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা একই ধরনের চিন্তাভাবনা পোষণ করেছিল এবং তাদের সঙ্গে যিহোবার আচরণ সম্বন্ধে এক ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল। লক্ষ করুন যে, যিহোবা তাদেরকে কী বলেছিলেন: “তোমরা বলিতেছ, ‘প্রভুর পথ সরল নয়’। হে ইস্রায়েল-কুল, এক বার শুন; আমার পথ কি সরল নয়? তোমাদের পথ কি অসরল নয়?”—যিহি. ১৮:২৫.

৬. ইয়োব কোন শিক্ষা লাভ করেছিলেন আর কীভাবে আমরা তার অভিজ্ঞতা থেকে উপকার লাভ করতে পারি?

আমাদের নিজেদের মানদণ্ড অনুযায়ী যিহোবার বিচার করার ফাঁদ এড়িয়ে চলার একটা চাবিকাঠি হল এই বিষয়টা স্বীকার করা যে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সীমিত এবং মাঝে মাঝে গুরুতরভাবে ভুল হয়ে থাকে। ইয়োবকে এই বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে হয়েছিল। তার কষ্টের সময়ে ইয়োব হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিলেন। তিনি আরও বড়ো বড়ো বিচার্য বিষয়ে তার দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করেছিলেন। ৭০টারও বেশি প্রশ্ন, যেগুলোর কোনোটার উত্তরই ইয়োব দিতে পারেননি, সেগুলো জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে যিহোবা ইয়োবের বোধগম্যতার সীমাবদ্ধতার ওপর জোর দিয়েছিলেন। ইয়োব নম্রভাবে সাড়া দিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি রদবদল করেছিলেন।—পড়ুন, ইয়োব ৪২:১-৬.

“খ্রীষ্টের মন” লাভ করা

৭. আমরা যদি যিশুর কাজকর্ম নিয়ে পরীক্ষা করি, তাহলে কেন আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনা বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য লাভ করব?

যিশু তাঁর সমস্ত কথায় ও কাজে তাঁর পিতাকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছিলেন। (যোহন ১৪:৯) তাই, যিশুর কাজকর্ম নিয়ে পরীক্ষা করা আমাদেরকে যিহোবার চিন্তাভাবনা বুঝতে সাহায্য করে। (রোমীয় ১৫:৫; ফিলি. ২:৫) অতএব, আসুন আমরা সুসমাচারের দুটো বিবরণ পরীক্ষা করে দেখি।

৮, ৯. যোহন ৬:১-৫ পদে লিপিবদ্ধ বিবরণ অনুযায়ী, কোন পরিস্থিতিতে যিশু ফিলিপকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আর কেন যিশু তা করেছিলেন?

এই দৃশ্যটা কল্পনা করুন। সময়টা হল সা.কা. ৩২ সালের নিস্তারপর্বের ঠিক আগে। যিশুর প্রেরিতরা সবেমাত্র গালীলজুড়ে এক উল্লেখযোগ্য প্রচার অভিযান থেকে ফিরে এসেছে। যেহেতু তারা এই কাজগুলো করার ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, তাই যিশু তাদেরকে নিয়ে গালীল সমুদ্রের উত্তর-পূর্ব উপকূলের এক নির্জন স্থানে গিয়েছিলেন। কিন্তু, হাজার হাজার লোক তাদেরকে অনুসরণ করে সেখানে গিয়েছিল। বহু সংখ্যক লোককে আরোগ্য করার এবং তাদেরকে অনেক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার পর, একটা জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কীভাবে এইরকম এক বিচ্ছিন্ন এলাকায় এই লোকেরা খাবার পেতে পারে? প্রয়োজন বুঝতে পেরে, যিশু সেই এলাকার লোক ফিলিপকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “উহাদের আহারার্থে আমরা কোথায় রুটী কিনিতে পাইব?”—যোহন ৬:১-৫.

কেন যিশু ফিলিপকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন? কী করতে হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু কি উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন? না। তাঁর চিন্তার বিষয়টা আসলে কী ছিল? সেখানে উপস্থিত প্রেরিত যোহন ব্যাখ্যা করেছিলেন: “এ কথা [যিশু] তাঁহার পরীক্ষার নিমিত্ত বলিলেন? কেননা কি করিবেন, তাহা তিনি আপনি জানিতেন।” (যোহন ৬:৬) যিশু এখানে তাঁর শিষ্যদের আধ্যাত্মিক উন্নতি পরীক্ষা করেছিলেন। এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে তিনি তাদেরকে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিলেন এবং তিনি কী করতে পারেন, সেই বিষয়ে তাদের বিশ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, তারা এই সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আসলে কতটা সীমিত, তা প্রকাশ করেছিল। (পড়ুন, যোহন ৬:৭-৯.) এরপর যিশু এই বিষয়টা দেখাতে যাচ্ছিলেন যে, তিনি এমন কিছু করতে পারেন, যা তারা এমনকী কল্পনাও করতে পারেনি। তিনি অলৌকিকভাবে সেই হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাইয়েছিলেন।—যোহন ৬:১০-১৩.

১০-১২. (ক) হয়তো কোন কারণে যিশু সঙ্গেসঙ্গেই সেই গ্রিক স্ত্রীলোকের অনুরোধ রাখেননি? ব্যাখ্যা করুন। (খ) আমরা এখন কী বিবেচনা করব?

১০ এই বিবরণ আমাদেরকে আরেকটা ঘটনায় যিশুর চিন্তাভাবনা বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এই বিস্তর লোককে খাওয়ানোর অল্পসময় পর, যিশু ও তাঁর প্রেরিতরা উত্তর দিকে, ইস্রায়েলের বাইরে সোর ও সীদোন অঞ্চলের দিকে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের সঙ্গে একজন গ্রিক স্ত্রীলোকের দেখা হয়েছিল, যিনি তার মেয়েকে আরোগ্য করার জন্য যিশুর কাছে মিনতি করেছিলেন। প্রথমে, যিশু সেই স্ত্রীলোককে উপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু, সেই স্ত্রীলোক যখন পীড়াপীড়ি করেই যাচ্ছিলেন, তখন যিশু তাকে বলেছিলেন: “প্রথমে সন্তানেরা তৃপ্ত হউক, কেননা সন্তানদের খাদ্য লইয়া কুকুরদের [“কুকুরশাবকদের,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়।”—মার্ক ৭:২৪-২৭.

১১ কেন যিশু প্রথমে সেই স্ত্রীলোককে সাহায্য করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন? সেই স্ত্রীলোক কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, তা দেখার জন্য যিশু কি ফিলিপের মতো তাকেও পরীক্ষা করছিলেন আর তার বিশ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ দিচ্ছিলেন? তাঁর গলার স্বর—যদিও তা লিখিত পাঠ্যাংশে প্রকাশ করা হয়নি—সেই স্ত্রীলোককে নিরুৎসাহিত করেনি। যিশু যে “কুকুরশাবকদের” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, তা সেই তুলনাকে আরও কোমল করে তুলেছিল। তাই, তিনি সম্ভবত এমন একজন বাবার মতো আচরণ করছিলেন, যিনি সন্তানের অনুরোধ রাখবেন বলে মনস্থ করেন কিন্তু সেই বিষয়ে সন্তানের আন্তরিকতা পরীক্ষা করার জন্য সঙ্গেসঙ্গেই তার উদ্দেশ্য প্রকাশ করেন না। যা-ই হোক না কেন, সেই স্ত্রীলোক একবার তার বিশ্বাস প্রকাশ করার পর, যিশু ইচ্ছুক মনে তার অনুরোধ রেখেছিলেন।—পড়ুন, মার্ক ৭:২৮-৩০.

১২ সুসমাচারের এই দুটো বিবরণ “খ্রীষ্টের মন” সম্বন্ধে আমাদেরকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। আসুন আমরা এখন দেখি যে, কীভাবে এই বিবরণগুলো আমাদেরকে স্বয়ং যিহোবার মন সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

মোশির সঙ্গে যিহোবার আচরণ

১৩. কীভাবে যিশুর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা আমাদেরকে সাহায্য করে?

১৩ যিশুর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা আমাদেরকে শাস্ত্রের সেই বাক্যাংশগুলো বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করে, যেগুলো বোঝা হয়তো কঠিন বলে মনে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা উপাসনা করার জন্য একটা সোনার বাছুর তৈরি করার পর মোশির উদ্দেশে বলা যিহোবার কথাগুলো বিবেচনা করুন। ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমি সেই লোকদিগকে দেখিলাম; দেখ, তাহারা শক্তগ্রীব জাতি। এখন তুমি ক্ষান্ত হও, তাহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হউক, আমি তাহাদিগকে সংহার করি, আর তোমা হইতে এক বড় জাতি উৎপন্ন করি।”—যাত্রা. ৩২:৯, ১০.

১৪. যিহোবার কথা শুনে মোশি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১৪ সেই বিবরণ আরও বলে: “মোশি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে বিনয় করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, তোমার প্রজাদিগকে তুমি মহাপরাক্রম ও বলবান্‌ হস্ত দ্বারা মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছ, তাহাদের বিরুদ্ধে তোমার ক্রোধ কেন প্রজ্বলিত হইবে? মিস্রীয়েরা কেন বলিবে, অনিষ্টের নিমিত্তে, পর্ব্বতময় অঞ্চলে তাহাদিগকে নষ্ট করিতে ও ভূতল হইতে লোপ করিতে, তিনি তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন? তুমি নিজ প্রচণ্ড ক্রোধ সংবরণ কর, ও আপন প্রজাদের অনিষ্টকরণ বিষয়ে ক্ষান্ত হও। তুমি নিজ দাস অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে স্মরণ কর, যাহাদের কাছে তুমি নিজ নামের দিব্য করিয়া বলিয়াছিলে, আমি আকাশের তারাগণের ন্যায় তোমার বংশবৃদ্ধি করিব, এবং এই যে সমস্ত দেশের কথা কহিলাম, ইহা, তোমাদের বংশকে দিব, তাহারা চিরকালের জন্য ইহা অধিকার করিবে। তখন সদাপ্রভু আপন প্রজাদের যে অনিষ্ট করিবার কথা বলিয়াছিলেন, তাহা হইতে ক্ষান্ত হইলেন।”—যাত্রা. ৩২:১১-১৪. *

১৫, ১৬. (ক) যিহোবা যা বলেছিলেন, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে মোশির জন্য কোন সুযোগ খুলে গিয়েছিল? (খ) যিহোবা কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

১৫ মোশির কি আসলেই যিহোবার চিন্তাভাবনাকে সংশোধন করার প্রয়োজন ছিল? কখনোই না! যদিও যিহোবা প্রকাশ করেছিলেন যে, তিনি কী করতে ইচ্ছুক কিন্তু সেটা তাঁর চূড়ান্ত বিচার ছিল না। বস্তুতপক্ষে, এখানে যিহোবা মোশিকে পরীক্ষা করছিলেন, ঠিক যেমন যিশু পরে ফিলিপ ও সেই গ্রিক স্ত্রীলোককে করেছিলেন। মোশিকে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার এক সুযোগ প্রদান করা হয়েছিল। * যিহোবা মোশিকে ইস্রায়েল ও তাঁর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন আর যিহোবা মোশির সেই ভূমিকায় তাঁর নিয়োগের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। মোশি কি হতাশার কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন? ইস্রায়েলকে ভুলে গিয়ে মোশির নিজের বংশধরদের থেকে এক পরাক্রমী জাতি উৎপন্ন করার জন্য যিহোবাকে উৎসাহিত করতে মোশি কি সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছিলেন?

১৬ যিহোবার ন্যায়বিচারের প্রতি মোশির প্রতিক্রিয়া তার বিশ্বাস ও নির্ভরতাকে প্রকাশ করেছিল। তার প্রতিক্রিয়া স্বার্থপর আগ্রহ নয় বরং যিহোবার নামের জন্য তার চিন্তা প্রদর্শন করেছিল। তিনি চাননি যে, সেই নাম কলঙ্কিত হোক। এভাবে মোশি দেখিয়েছিলেন যে, এই বিষয়ে তিনি ‘ঈশ্বরের মন’ বুঝতে পেরেছিলেন। (১ করি. ২:১৬) এর ফলাফল কী হয়েছিল? যেহেতু যিহোবা দৃঢ়তার সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেননি, তাই অনুপ্রাণিত বিবরণ বলে যে, তিনি “ক্ষান্ত হইলেন।” যিহোবা পুরো জাতির ওপর যে-দুর্দশা আনতে চেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছিলেন, তিনি তা আনেননি।

অব্রাহামের সঙ্গে যিহোবার আচরণ

১৭. অব্রাহামের চিন্তার বিষয়টা নিয়ে কথা বলার সময় কীভাবে যিহোবা প্রচুর ধৈর্য দেখিয়েছিলেন?

১৭ যিহোবা কীভাবে তাঁর দাসদের বিশ্বাস ও নির্ভরতা প্রকাশ করার সুযোগ দেন, সেটার আরেকটা উদাহরণ হল, সদোমের বিষয়ে অব্রাহামের অনুরোধ। সেই বিবরণে, যিহোবা অব্রাহামকে পর পর আট বার প্রশ্ন করতে দিয়ে প্রচুর ধৈর্য প্রকাশ করেছিলেন। একটা পর্যায়ে, অব্রাহাম এই আন্তরিক আবেদন করেছিলেন: “দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিকের বিনাশ করা, এই প্রকার কর্ম্ম আপনা হইতে দূরে থাকুক; ধার্ম্মিককে দুষ্টের সমান করা আপনা হইতে দূরে থাকুক। সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?”—আদি. ১৮:২২-৩৩.

১৮. অব্রাহামের সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৮ এই বিবরণ থেকে যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি? সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যিহোবার কি অব্রাহামের সঙ্গে যুক্তি করার প্রয়োজন ছিল? না। অবশ্য, যিহোবা তাঁর সিদ্ধান্তের কারণগুলো একেবারে শুরুতেই বলে দিতে পারতেন। কিন্তু, এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে যিহোবা অব্রাহামকে সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার এবং তাঁর চিন্তাভাবনা বোঝার জন্য সময় দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, এটা অব্রাহামকে যিহোবার সমবেদনা ও ন্যায়বিচারের গভীরতা সম্বন্ধে বোঝার সুযোগ দিয়েছিল। হ্যাঁ, যিহোবা অব্রাহামের সঙ্গে একজন বন্ধুর মতো আচরণ করেছিলেন।—যিশা. ৪১:৮; যাকোব ২:২৩.

আমাদের জন্য শিক্ষা

১৯. কীভাবে আমরা ইয়োবকে অনুকরণ করতে পারি?

১৯ ‘ঈশ্বরের মন’ সম্বন্ধে আমরা কী শিখেছি? ঈশ্বরের বাক্যকে সুযোগ দিতে হবে, যেন এটি যিহোবার মন সম্বন্ধে আমাদের সঠিক বোধগম্যতা প্রদান করে। আমাদের কখনোই যিহোবার ওপর আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো আরোপ করা এবং নিজেদের মানদণ্ড ও চিন্তাভাবনা অনুযায়ী তাঁর বিচার করা উচিত নয়। ইয়োব বলেছিলেন: “[ঈশ্বর] আমার ন্যায় মনুষ্য নহেন যে, তাঁহাকে উত্তর দিই, যে, তাঁহার সহিত একই বিচারস্থানে যাইতে পারি।” (ইয়োব ৯:৩২) ইয়োবের মতো আমরা যখন যিহোবার মন বুঝতে শুরু করি, তখন আমরাও বিস্ময়ে এই কথা না বলে থাকতে পারি না: “দেখ, এই সকল তাঁহার মার্গের প্রান্ত; তাঁহার বিষয়ে কাকলীমাত্র শুনা যায়; কিন্তু তাঁহার পরাক্রমের গর্জ্জন কে বুঝিতে পারে?”—ইয়োব ২৬:১৪.

২০. আমরা যদি শাস্ত্র থেকে এমন কোনো বাক্যাংশ পড়ি, যা আমাদের পক্ষে বোঝা কঠিন, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

২০ শাস্ত্র পড়ার সময় আমরা যদি এমন কোনো বাক্যাংশ পড়ি, যা বোঝা কঠিন আর বিশেষভাবে সেটা যদি যিহোবার চিন্তাভাবনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কী করা উচিত? বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করার পরও যদি আমাদের কাছে উত্তরটা স্পষ্ট না হয়, তাহলে আমরা সেটাকে যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতা সম্বন্ধীয় এক পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। মনে রাখবেন, মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট কিছু বিবৃতি আমাদেরকে যিহোবার গুণাবলির ওপর আমাদের বিশ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ প্রদান করে। আসুন আমরা নম্রভাবে এই বিষয়টা স্বীকার করে নিই যে, তাঁর মতো করে আমরা সমস্তকিছু বুঝতে পারি না। (উপ. ১১:৫) এভাবে আমরা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোর সঙ্গে একমত হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হব: “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়! কেননা প্রভুর [ঈশ্বরের] মন কে জানিয়াছে? ‘তাঁহার মন্ত্রীই বা কে হইয়াছে?’ অথবা কে অগ্রে তাঁহাকে কিছু দান করিয়াছে যে, এজন্য তাহার প্রত্যুপকার করিতে হইবে? যেহেতুক সকলই তাঁহা হইতে ও তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত। যুগে যুগে তাঁহারই গৌরব হউক। আমেন।”—রোমীয় ১১:৩৩-৩৬.

[পাদটীকাগুলো]

^ গণনাপুস্তক ১৪:১১-২০ পদেও একইরকম একটি বিবরণ রয়েছে।

^ কিছু পণ্ডিত ব্যক্তির মতানুসারে, যাত্রাপুস্তক ৩২:১০ পদে “তুমি ক্ষান্ত হও” হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় বাক্যাংশটিকে এক আমন্ত্রণ, এক প্রস্তাব বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, যা মোশিকে যিহোবা ও সেই জাতির মধ্যে মধ্যস্থতা করার বা ‘ভঙ্গস্থানে দাঁড়াইবার’ সুযোগ দেবে। (গীত. ১০৬:২৩; যিহি. ২২:৩০) যা-ই হোক না কেন, স্পষ্টতই মোশি যিহোবার কাছে খোলাখুলিভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেছিলেন।

আপনার কি মনে আছে?

• কী আমাদেরকে নিজেদের মানদণ্ড অনুযায়ী যিহোবাকে বিচার করার প্রবণতা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে?

• কীভাবে যিশুর কাজকর্ম সম্বন্ধে বোঝা আমাদেরকে যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

• মোশি ও অব্রাহামের সঙ্গে যিহোবার কথোপকথন থেকে আপনি কোন শিক্ষাগুলো লাভ করেছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মোশি ও অব্রাহামের সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে তাঁর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আমরা কী শিখি?