সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি খ্রিস্টীয় সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তোলায় অংশ নেন?

আপনি কি খ্রিস্টীয় সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তোলায় অংশ নেন?

আপনি কি খ্রিস্টীয় সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তোলায় অংশ নেন?

“তোমরা যখন সমবেত হও, তখন . . . সকলই গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত হউক।”—১ করি. ১৪:২৬.

১. প্রথম করিন্থীয় ১৪ অধ্যায় অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় সভাগুলোর একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য কী?

 ‘সভাটা অত্যন্ত গঠনমূলক ছিল!’ কিংডম হলের কোনো সভায় যোগদান করার পর আপনিও কি একইরকম অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন? কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি তা করেছিলেন! মণ্ডলীর সভাগুলো সত্যিই উৎসাহের এক উৎস, তবে এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। কারণ ঠিক প্রাথমিক খ্রিস্টানদের সভাগুলোর মতো বর্তমানেও আমাদের সভাগুলোর একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে, যোগদানকারী সকলকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করা। লক্ষ করুন যে, প্রেরিত পৌল করিন্থীয়দের উদ্দেশে লেখা তার প্রথম চিঠিতে খ্রিস্টানদের সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ওপর জোর দিয়েছিলেন। ১৪ অধ্যায়জুড়ে তিনি বার বার বলেছেন যে, মণ্ডলীর সভাগুলোতে উপস্থাপিত প্রতিটা বিষয়ের একই উদ্দেশ্য থাকা উচিত আর তা হল, ‘মণ্ডলীকে গাঁথিয়া তোলা।’পড়ুন ১ করিন্থীয় ১৪:৩, ১২, ২৬. *

২. (ক) গঠনমূলক সভাগুলো কীসের ফল? (খ) আমরা কোন প্রশ্ন বিবেচনা করব?

আমরা উপলব্ধি করি যে, গঠনমূলক সভাগুলো প্রথমত ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবের ফল। তাই, আমরা প্রতিটা সভা ঈশ্বরের কাছে এক আন্তরিক প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু করি, যেখানে আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে যাচ্ঞা করা হয়, যেন তিনি তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাদের সমাবেশের ওপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন। তা সত্ত্বেও আমরা জানি যে, মণ্ডলীর সকল সদস্য সভার কার্যক্রমগুলোকে যথাসম্ভব গঠনমূলক করে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। তাহলে, কিছু পদক্ষেপ কী, যেগুলো আমরা আমাদের কিংডম হলে পরিচালিত সাপ্তাহিক সভাগুলো যেন সর্বদা আধ্যাত্মিক সতেজতা ও উৎসাহের উৎস হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে নিতে পারি?

৩. খ্রিস্টীয় সভাগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তরটা পাওয়ার জন্য আমরা আমাদের সভার কিছু দিক বিবেচনা করব, যেগুলো সেই ব্যক্তিদের মনে রাখা উচিত, যারা সেগুলো পরিচালনা করেন। আমরা এও বিবেচনা করব যে, কীভাবে পুরো মণ্ডলী যোগদানকারী সকলের জন্য সভাগুলোকে উৎসাহজনক করে তোলায় অবদান রাখতে পারে। এই বিষয়টা আমাদের কাছে অত্যন্ত আগ্রহজনক কারণ আমাদের সভাগুলো হল পবিত্র সমাবেশ। সত্যিই, সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়া এবং অংশগ্রহণ করা, যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনার গুরুত্বপূর্ণ দিক।—গীত. ২৬:১২; ১১১:১; যিশা. ৬৬:২২, ২৩.

বাইবেল অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুতকৃত এক সভা

৪, ৫. প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের উদ্দেশ্য কী?

আমরা সকলেই আমাদের সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন থেকে পূর্ণরূপে উপকার লাভ করতে চাই। তাই, সেই সভার মূল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য আসুন আমরা কিছু রদবদলের বিষয় পুনর্বিবেচনা করি, যেগুলো প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় এবং অধ্যয়ন প্রবন্ধগুলোতে করা হয়েছে।

প্রহরীদুর্গ পত্রিকার প্রথম অধ্যয়ন সংস্করণ অর্থাৎ ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি সংখ্যা থেকে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় এক উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আপনি কি তা লক্ষ করেছিলেন? আপনার হাতে যে-পত্রিকাটি রয়েছে, সেটার প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটা ভালো করে লক্ষ করুন। সেখানে দুর্গের নীচে আপনি এক খোলা বাইবেল দেখতে পাবেন। নতুন করে যুক্ত এই বিষয়টা তুলে ধরে যে, কেন আমরা প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন করে থাকি। সেটা হচ্ছে এই পত্রিকার সাহায্যে বাইবেল অধ্যয়ন করা। হ্যাঁ, আমাদের সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে ঈশ্বরের বাক্য “অর্থ করিয়া” দেওয়া হয় আর প্রাচীনকালের নহিমিয়ের দিনের মতো “পাঠ বুঝাইয়া” দেওয়া হয়।—নহি. ৮:৮; যিশা. ৫৪:১৩.

৬. (ক) প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে কোন রদবদল করা হয়েছে? (খ) “পড়ুন” শাস্ত্রপদগুলোর ক্ষেত্রে কী মনে রাখা উচিত?

যেহেতু বাইবেল হল আমাদের প্রধান পাঠ্যপুস্তক, তাই প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে একটা রদবদল করা হয়েছিল। অধ্যয়ন প্রবন্ধগুলোতে বেশ কয়েকটা উল্লেখিত শাস্ত্রপদের পাশে “পড়ুন” শব্দটি রয়েছে। আমাদের সকলকে নিজেদের বাইবেল ব্যবহার করে, সভায় এই শাস্ত্রপদগুলো পাঠ করার সময় সেগুলো দেখার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। (প্রেরিত ১৭:১১) কেন? আমরা যখন নিজেদের বাইবেল থেকে ঈশ্বরের পরামর্শ দেখি, তখন সেটা আমাদের ওপর আরও গভীর ছাপ ফেলে। (ইব্রীয় ৪:১২) তাই, সেই শাস্ত্রপদগুলো জোরে জোরে পড়ার আগে, যিনি সভা পরিচালনা করছেন, তিনি উপস্থিত সকলকে পর্যাপ্ত সময় দেবেন, যেন তারা সেই শাস্ত্রপদগুলো দেখতে এবং পড়ার সময় সেগুলো অনুসরণ করতে পারে।

আমাদের বিশ্বাসকে প্রকাশ করার সময় এখন আরও বেশি

৭. প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের সময় আমাদের কোন সুযোগ রয়েছে?

প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন প্রবন্ধগুলোর আরও একটা রদবদল হল সেগুলোর পরিধি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেগুলোকে আরও ছোটো করা হয়েছে। তাই, প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের সময় অনুচ্ছেদগুলো পড়ার জন্য আরও কম সময় ব্যবহার করা হয় আর অন্যদিকে মন্তব্য দেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় পাওয়া যায়। মণ্ডলীতে এখন আরও বেশি লোকের জনসমক্ষে তাদের বিশ্বাসের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে আর তা ছাপানো কোনো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, কোনো শাস্ত্রপদের প্রয়োগ দেখিয়ে, বাইবেলের নীতিগুলো অনুসরণ করার প্রজ্ঞা তুলে ধরে এমন সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা বলে অথবা অন্যান্য উপায়ে। এ ছাড়া, চিত্র নিয়ে আলোচনা করার জন্যও কিছু সময় ব্যয় করা উচিত।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২২:২২; ৩৫:১৮; ৪০:৯.

৮, ৯. প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন পরিচালকের ভূমিকা কী?

কিন্তু, বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করার জন্য সেই বাড়তি সময় একমাত্র তখনই পাওয়া যাবে, যদি অংশগ্রহণকারীরা সংক্ষেপে মন্তব্য করে এবং যিনি সভা পরিচালনা করছেন, তিনি প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের সময় ঘন ঘন মন্তব্য না করেন। তাহলে, কোন বিষয়টা একজন পরিচালককে নিজের মন্তব্য ও মণ্ডলীর সদস্যদের দেওয়া মন্তব্যের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে, যার ফলে সভা সকলের জন্য গঠনমূলক হয়?

উত্তরটা পাওয়ার জন্য একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। ভালোভাবে পরিচালিত একটা প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন হল একটা ফুলের তোড়ার মতো, যা দেখতে মনোরম। ঠিক যেমন একটা বড়ো তোড়া বিভিন্ন ফুল দিয়ে গঠিত হয়, তেমনই একটা প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন বিভিন্ন মন্তব্য দ্বারা গঠিত হয়। আর ঠিক যেমন একটা তোড়ার মধ্যেকার বিভিন্ন ফুল আকার ও রঙের দিক দিয়ে ভিন্ন থাকে, তেমনই সভার সময় দেওয়া মন্তব্যগুলোর পরিধি এবং তুলে ধরার উপায় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আর পরিচালকের ভূমিকা সম্বন্ধে কী বলা যায়? মাঝে মাঝে বলা তার মন্তব্য কয়েকটা সবুজ পাতার মতো, যেগুলো সযত্নে একটা তোড়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এগুলো প্রধান নয়; বরং এগুলো কাঠামো তৈরিতে এবং সম্পূর্ণ তোড়াকে সমন্বিত করতে অবদান রাখে। একইভাবে, যিনি পরিচালনা করেন, তার মনে রাখতে হবে যে, তার মন্তব্যগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত নয় বরং সেগুলো যেন মণ্ডলীতে দেওয়া প্রশংসার অভিব্যক্তিগুলোর প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করে। হ্যাঁ, যখন মণ্ডলীর দেওয়া বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য এবং উপযুক্ত সময়ে পরিচালকের দেওয়া অল্পকিছু মন্তব্য দক্ষতার সঙ্গে একত্রিত করা হয়, তখন সেগুলো এমন শব্দের এক চমৎকার তোড়া গঠন করে, যা উপস্থিত সকলকে আনন্দিত করে।

‘আইস, আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি উৎসর্গ করি’

১০. প্রাথমিক খ্রিস্টানরা মণ্ডলীর সভাগুলোকে কীভাবে দেখত?

১০ প্রথম করিন্থীয় ১৪:২৬-৩৩ পদে প্রাপ্ত খ্রিস্টীয় সভাগুলোর বিষয়ে পৌলের বর্ণনা আমাদের এই বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে যে, কীভাবে প্রথম শতাব্দীতে এই সমাবেশগুলো পরিচালনা করা হতো। এই পদগুলো সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন বাইবেল পণ্ডিত লেখেন যে, (উপাসনার উদ্দেশে) প্রাথমিক খ্রিস্টীয় সভাগুলোর প্রকৃতই এক উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, “সেখানে আসা প্রায় প্রত্যেক জনই এইরকম মনে করত যে, তার সেখানে কিছু করার বিশেষ সুযোগ এবং বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেখানে একজন পুরুষ শুধু নিষ্ক্রিয় শ্রোতা হিসেবে আসতেন না; তিনি কেবল পেতেই নয় কিন্তু কিছু দিতেও আসতেন।” বাস্তবিকই, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা মণ্ডলীর সভাগুলোকে তাদের বিশ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ হিসেবে দেখত।—রোমীয় ১০:১০.

১১. (ক) কোন বিষয়গুলো সভাগুলোকে গঠনমূলক করার ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখে? (খ) কোন পরামর্শগুলো প্রয়োগ করা সভাগুলোতে আমাদের মন্তব্যগুলোর গুণগত মানকে উন্নত করতে পারে? (পাদটীকা দেখুন।)

১১ সভাগুলোতে আমাদের বিশ্বাস প্রকাশ করা “মণ্ডলীকে গাঁথিয়া তুলিবার” ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখে। নিশ্চিতভাবেই, আপনি এই বিষয়ে একমত হবেন যে, যত বছর ধরেই আমরা সভাগুলোতে যোগ দিয়ে থাকি না কেন, আমাদের ভাই ও বোনদের দেওয়া মন্তব্যগুলো শোনা এখনও প্রকৃত আনন্দ নিয়ে আসে। একজন বয়স্ক, বিশ্বস্ত সহবিশ্বাসীর আন্তরিক উত্তর শুনে আমরা রোমাঞ্চিত হই; একজন যত্নবান প্রাচীনের অন্তর্দৃষ্টিমূলক মন্তব্য শুনে আমরা উৎসাহিত হই; আর যখন একটা ছোটো ছেলে বা মেয়ে যিহোবার প্রতি অকৃত্রিম প্রেম প্রকাশ করে এমন স্বতঃস্ফূর্ত মন্তব্য দেয়, তখন আমরা না হেসে পারি না। স্পষ্টতই, মন্তব্য করার মাধ্যমে আমরা সকলে খ্রিস্টীয় সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তোলায় অংশ নিই। *

১২. (ক) মোশি ও যিরমিয়ের উদাহরণ থেকে কী শেখা যেতে পারে? (খ) মন্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থনা কোন ভূমিকা পালন করে?

১২ তবে, যারা কিছুটা ভয় পায়, তাদের জন্য মন্তব্য করা সত্যিই এক কঠিন ব্যাপার। আপনার বেলায় যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এটা মনে রাখা হয়তো উপকারী যে, আপনার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক নয়। বস্তুতপক্ষে, এমনকী মোশি এবং যিরমিয়ের মতো ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরাও জনসমক্ষে কথা বলার ব্যাপারে তাদের সামর্থ্য নিয়ে আস্থার অভাব প্রকাশ করেছিল। (যাত্রা. ৪:১০; যির. ১:৬) তা সত্ত্বেও, যিহোবা যেমন প্রাচীনকালের সেই দাসদেরকে জনসমক্ষে তাঁর প্রশংসা করতে সাহায্য করেছিলেন, তেমনই ঈশ্বর আপনাকেও স্তববলি বা প্রশংসা করতে সাহায্য করবেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৫.) কীভাবে আপনি মন্তব্য দেওয়ার ভয় কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যিহোবার সাহায্য লাভ করতে পারেন? প্রথমত, সভার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন। এরপর, কিংডম হলে যাওয়ার আগে, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং নির্দিষ্টভাবে তাঁর কাছে মিনতি করুন, যেন তিনি আপনাকে একটা মন্তব্য করার জন্য সাহস প্রদান করেন। (ফিলি. ৪:৬) আপনি এমন কিছুর জন্য অনুরোধ করছেন, যা “তাঁহার ইচ্ছানুসারে,” তাই এই ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা আপনার প্রার্থনার উত্তর দেবেন।—১ যোহন ৫:১৪; হিতো. ১৫:২৯.

যে-সভাগুলো ‘গাঁথিয়া তুলিবার, আশ্বাস ও সান্ত্বনা’ প্রদান করার উদ্দেশ্যে

১৩. (ক) উপস্থিত ব্যক্তিদের ওপর আমাদের সভাগুলোর কোন প্রভাব ফেলা উচিত? (খ) কোন প্রশ্নটা প্রাচীনদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ?

১৩ পৌল বলেছিলেন যে, মণ্ডলীর সভাগুলোর একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল, উপস্থিত সকলকে ‘গাঁথিয়া তোলা, আশ্বাস ও সান্ত্বনা’ প্রদান করা। * (১ করি. ১৪:৩) কীভাবে খ্রিস্টান প্রাচীনরা বর্তমানে এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারে যে, তাদের সভার অংশগুলো সত্যিই তাদের ভাই ও বোনদেরকে উৎসাহিত এবং সান্ত্বনা প্রদান করেছে? উত্তরটা পাওয়ার জন্য আসুন আমরা একটা সভা সম্বন্ধে আলোচনা করি, যেটা যিশু তাঁর পুনরুত্থানের পর পরই পরিচালনা করেছিলেন।

১৪. (ক) যিশু যে-সভার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটার আগে কোন ঘটনাগুলো ঘটেছিল? (খ) যখন “যীশু নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন,” তখন কেন প্রেরিতরা স্বস্তি লাভ করেছিল?

১৪ প্রথমে, সেই ঘটনাগুলো লক্ষ করুন, যেগুলো এই সভার আগে ঘটেছিল। যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঠিক আগে, প্রেরিতরা “তাঁহাকে ছাড়িয়া পলাইয়া গেলেন” আর ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী তারা “ছিন্নভিন্ন হইয়া প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে” চলে গিয়েছিল। (মার্ক ১৪:৫০; যোহন ১৬:৩২) এরপর, তাঁর পুনরুত্থানের পর, যিশু তাঁর হতাশাগ্রস্ত প্রেরিতদের এক বিশেষ সভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। * এতে সাড়া দিয়ে “একাদশ শিষ্য গালীলে যীশুর নিরূপিত পর্ব্বতে গমন করিলেন।” তারা যখন উপস্থিত হয়েছিল, তখন “যীশু নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন।” (মথি ২৮:১০, ১৬, ১৮) কল্পনা করুন যে, যিশু যখন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তখন প্রেরিতরা নিশ্চয়ই কত স্বস্তিই না পেয়েছিল! যিশু কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন?

১৫. (ক) যিশু কোন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছিলেন কিন্তু তিনি কোন বিষয়ে আলোচনা করেননি? (খ) সেই সভা প্রেরিতদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?

১৫ যিশু একটা ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে সভা শুরু করেছিলেন: “সমস্ত কর্ত্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে।” এরপর তিনি তাদেরকে একটা কার্যভার দিয়েছিলেন: ‘অতএব তোমরা গিয়া শিষ্য কর।’ পরিশেষে, তিনি তাদেরকে এক প্রেমপূর্ণ আশ্বাস দিয়েছিলেন: ‘আমিই প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।’ (মথি ২৮:১৮-২০) কিন্তু, আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, যিশু কী করেননি? তিনি তাঁর প্রেরিতদেরকে তিরস্কার করেননি; কিংবা তিনি তাদের বিশ্বাসের ক্ষণস্থায়ী দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে তাদের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা তাদের দোষী মনোভাবকে আরও দোষী করে তোলার জন্য সেই সভা ব্যবহার করেননি। এর পরিবর্তে, যিশু তাদেরকে এক গুরু দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর নিজের ও তাঁর পিতার প্রেম সম্বন্ধে তাদেরকে পুনরায় আশ্বাস দিয়েছিলেন। যিশুর এইরকম পদক্ষেপ প্রেরিতদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল? তারা এতটাই গেঁথে উঠেছিল, আশ্বাস লাভ করেছিল এবং সান্ত্বনা পেয়েছিল যে, সেই সভার কিছু সময় পর, তারা আবারও ‘উপদেশ দিয়াছিল এবং সুসমাচার প্রচার’ করেছিল।—প্রেরিত ৫:৪২.

১৬. কীভাবে খ্রিস্টান প্রাচীনরা বর্তমানে সেই সভাগুলো পরিচালনা করার জন্য যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করে, যেগুলো সতেজতার এক উৎস?

১৬ যিশুকে অনুকরণ করে প্রাচীনরা বর্তমানে সভাগুলোকে সহবিশ্বাসীদের এই আশ্বাস প্রদান করার সুযোগ হিসেবে দেখে থাকে যে, তাঁর লোকেদের প্রতি যিহোবার অব্যর্থ প্রেম রয়েছে। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) তাই, সভায় তাদের অংশগুলোতে, প্রাচীনরা তাদের ভাইদের শক্তির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে, তাদের দুর্বলতাগুলোর ওপর নয়। তারা তাদের ভাইদের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। বরং, তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে যে, তারা তাদের সহবিশ্বাসীদের এমন ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে দেখে থাকে, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং যা সঠিক, তা-ই করতে চায়। (১ থিষল. ৪:১, ৯-১২) অবশ্য, প্রাচীনদের হয়তো মাঝে মাঝে পুরো মণ্ডলীকে সংশোধনমূলক পরামর্শ দিতে হয় কিন্তু যদি কেবল কয়েক জনকে পুনর্সমন্বয় করতে হয়, তাহলে এই ধরনের পরামর্শ সাধারণত এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরকে একান্তে দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। (গালা. ৬:১; ২ তীম. ২:২৪-২৬) পুরো মণ্ডলীর উদ্দেশে বলার সময় যখন উপযুক্ত, তখন প্রাচীনরা প্রশংসা করে থাকে। (যিশা. ৩২:২) তারা এমনভাবে কথা বলার চেষ্টা করে যে, সভার শেষে উপস্থিত সকলে সতেজ হয় এবং শক্তি লাভ করে।—মথি ১১:২৮; প্রেরিত ১৫:৩২.

এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল

১৭. (ক) আমাদের সভাগুলো যেন এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়, তা কেন আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ? (খ) সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তোলার জন্য আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী করতে পারেন? (“নিজের ও অন্যদের জন্য সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তোলার দশটা উপায়” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

১৭ শয়তানের জগৎ যেহেতু আগের চেয়ে আরও বেশি চাপপূর্ণ হচ্ছে, তাই আমাদের এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের খ্রিস্টীয় সমাবেশগুলো হল, এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল—সকলের জন্য উৎসাহের এক উৎস। (১ থিষল. ৫:১১) একজন বোন, যিনি কয়েক বছর আগে তার স্বামীর সঙ্গে এক চরম পরীক্ষা মোকাবিলা করেছিলেন, তিনি স্মরণ করে বলেন: “কিংডম হলে থাকা, যিহোবার যত্নাধীন হস্তের নীচে থাকার মতোই ছিল। যে-কয়েক ঘন্টা আমরা সেখানে আমাদের খ্রিস্টান ভাই ও বোনদের মাঝে থাকতাম, সেই কয়েক ঘন্টা আমাদের মনে হতো যে আমরা আমাদের ভার যিহোবার ওপর অর্পণ করেছি আর আমরা অনেক মনের শান্তি লাভ করতাম।” (গীত. ৫৫:২২) যারা আমাদের সভাগুলোতে যোগ দেয়, তারা সকলে যেন একইরকমভাবে উৎসাহ ও সান্ত্বনা লাভ করে। এমনটাই যেন হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আসুন আমরা খ্রিস্টীয় সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তুলতে ক্রমাগত আমাদের অংশটুকু করে চলি।

[পাদটীকাগুলো]

^ এই বিষয়টা ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল যে, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় সভাগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য লোপ পাবে। উদাহরণস্বরূপ, এখন আমরা আর ‘বিশেষ বিশেষ ভাষা’ বা “ভাববাণী” বলি না। (১ করি. ১৩:৮; ১৪:৫) তা সত্ত্বেও, পৌলের নির্দেশনাগুলো বর্তমানে কীভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলো পরিচালনা করা উচিত, সেই সম্বন্ধে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

^ সভাগুলোতে আমাদের মন্তব্যগুলোর গুণগত মানকে কীভাবে উন্নত করা যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শের জন্য ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৯-২২ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ “আশ্বাস” এবং “সান্ত্বনার” মধ্যে পার্থক্য সম্বন্ধে ভাইনস্‌ এক্সপোজিটরি ডিকশনারি অভ্‌ ওল্ড অ্যান্ড নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডস্‌ ব্যাখ্যা করে যে, যে-গ্রিক শব্দটিকে ‘সান্ত্বনা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা “[আশ্বাসের] চেয়ে আরও বেশি মাত্রায় কোমলতাকে” নির্দেশ করে।—তুলনা করুন, যোহন ১১:১৯.

^ এটা হয়তো সেই ঘটনা, যেটার বিষয়ে পৌল পরবর্তী সময়ে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন যে, যিশু “একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন।”—১ করি. ১৫:৬.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• খ্রিস্টীয় সভাগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

• সভাতে করা মন্তব্যগুলো কেন “মণ্ডলীকে গাঁথিয়া তুলিবার” ক্ষেত্রে অবদান রাখে?

• যিশু তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে যে-সভা পরিচালনা করেছিলেন, সেটা থেকে কী শেখা যেতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২২, ২৩ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

নিজের ও অন্যদের জন্য সভাগুলোকে গঠনমূলক করে তোলার দশটা উপায়

আগে থেকে প্রস্তুতি নিন। কিংডম হলে যে-বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে, সেগুলো যদি আপনি আগে থেকেই অধ্যয়ন করেন, তাহলে সভাতে আপনি পূর্ণরূপে মনোযোগ দিতে পারবেন এবং এটা আপনার ওপর গভীর ছাপ ফেলবে।

নিয়মিতভাবে যোগদান করুন। যেহেতু উপস্থিতি সংখ্যা ভালো হলে তা উপস্থিত সকলের জন্য উৎসাহজনক, তাই আপনার উপস্থিতি অনেক প্রভাব ফেলে।

ঠিক সময়ে পৌঁছান। আপনি যদি কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে আসনে বসেন, তাহলে আপনি শুরুর গান ও প্রার্থনায় যোগ দিতে পারবেন, যেগুলো যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনার একটা অংশ।

সুসজ্জিত হয়ে আসুন। আপনার বাইবেল এবং সভার সময় ব্যবহার করা হবে এমন প্রকাশনা(গুলো) নিয়ে আসুন, যাতে আপনি সেগুলো দেখতে পারেন এবং যে-বিষয়গুলো আলোচনা করা হচ্ছে, সেগুলো ভালো করে বুঝতে পারেন।

বিক্ষেপগুলো এড়িয়ে চলুন। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনিক মেসেজগুলো সভা চলাকালীন নয় বরং পরে পড়ুন। এভাবে, আপনি আপনার ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে সঠিক স্থানে রাখতে পারবেন।

অংশগ্রহণ করুন। যখন বেশি লোক মন্তব্য করে, তখন বেশি লোক উৎসাহিত হয় এবং বিশ্বাসের বিভিন্ন অভিব্যক্তি দ্বারা গেঁথে ওঠে।

আপনার মন্তব্যগুলো সংক্ষিপ্ত রাখুন। এটা যতটা সম্ভব বেশি লোককে মন্তব্য করার সুযোগ করে দেয়।

কার্যভার সম্পন্ন করুন। ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এর ছাত্রছাত্রী হিসেবে অথবা পরিচর্যা সভা-র অংশগ্রহণকারী হিসেবে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন, আগে থেকে মহড়া করুন এবং আপনার কার্যভার বাতিল না করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করুন।

অংশগ্রহণকারীদের প্রশংসা করুন। যাদের সভাতে কোনো অংশ থাকে অথবা যারা মন্তব্য দেয়, তাদেরকে বলুন যে, তাদের প্রচেষ্টাকে কতটা উপলব্ধি করা হয়।

মেলামেশা করুন। সভার আগে ও পরে উষ্ণ সম্ভাষণ এবং গঠনমূলক কথাবার্তা, উপস্থিত থাকার ফলে যে-প্রশান্তি ও উপকার লাভ করা যায়, তাতে অনেক অবদান রাখে।