‘আত্মা ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল অনুসন্ধান করেন’
‘আত্মা ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল অনুসন্ধান করেন’
“আত্মা সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন।” —১ করি. ২:১০.
১. প্রথম করিন্থীয় ২:১০ পদে পৌল পবিত্র আত্মার কোন ভূমিকা সম্বন্ধে তুলে ধরেছেন আর কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?
যিহোবার পবিত্র আত্মা কাজ করে বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! শাস্ত্র আত্মা সম্বন্ধে বলে যে, এটা হল এক সহায়, এক দান, এক সাক্ষ্যদানকারী এবং আমাদের পক্ষে অনুরোধকারী। (যোহন ১৪:১৬; প্রেরিত ২:৩৮; রোমীয় ৮:১৬, ২৬, ২৭) প্রেরিত পৌল আরেকটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন, যা পবিত্র আত্মা পালন করে: “আত্মা সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন।” (১ করি. ২:১০) বাস্তবিকই, যিহোবা গভীর আধ্যাত্মিক সত্যগুলো প্রকাশ করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেন। এই সাহায্য ছাড়া, যিহোবার উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে আমরা কতখানি বোধগম্যতাই বা লাভ করতে পারতাম? (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ২:৯-১২.) কিন্তু, বেশ কয়েকটা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়: কীভাবে আত্মা ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ অনুসন্ধান করে? কাদের মাধ্যমে যিহোবা সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে এই বিষয়গুলো প্রকাশ করেছিলেন? কীভাবে এবং কাদের মাধ্যমে আত্মা আমাদের দিনে এই গভীর বিষয় সকল অনুসন্ধান করে?
২. কোন দুটো উপায়ে আত্মা কাজ করবে?
২ যিশু দুটো উপায় সম্বন্ধে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যে-উপায়গুলোতে আত্মা কাজ করবে। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সে সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন।” (যোহন ১৪:২৬) এভাবে পবিত্র আত্মা একজন শিক্ষক ও স্মরণকারী হিসেবে কাজ করবে। একজন শিক্ষক হিসেবে এটা খ্রিস্টানদেরকে সেই বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করবে, যেগুলো তারা আগে বুঝতে পারেনি। আর একজন স্মরণকারী হিসেবে এটা তাদেরকে সেই বিষয়গুলো স্মরণ এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে সাহায্য করবে, যেগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
প্রথম শতাব্দীতে
৩. যিশুর কোন কথাগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হবে?
৩ যিশু নিজে তাঁর শিষ্যদের এমন অনেক সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেগুলো তাদের কাছে নতুন ছিল। কিন্তু, তখনও তাদের অনেক কিছু শেখা বাকি ছিল। যিশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সে সকল সহ্য করিতে পার না। পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন।” (যোহন ১৬:১২, ১৩) এভাবে যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে গভীর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হবে।
৪. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, কীভাবে পবিত্র আত্মা একজন শিক্ষক ও একজন স্মরণকারী হিসেবে কাজ করেছিল?
৪ সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, “সত্যের আত্মা” যিরূশালেমে সমবেত প্রায় ১২০ জন খ্রিস্টানের ওপর সেচিত হয়েছিল। এটার প্রমাণ দেখা ও শোনা গিয়েছিল। (প্রেরিত ১:৪, ৫, ১৫; ২:১-৪) শিষ্যরা বিভিন্ন ভাষায় “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা” বলেছিল। (প্রেরিত ২:৫-১১) সেই সময়টা নতুন কিছু প্রকাশের সময় ছিল। ভাববাদী যোয়েল পবিত্র আত্মার এই সেচনের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (যোয়েল ২:২৮-৩২) প্রত্যক্ষদর্শীরা এমন এক উপায়ে এই পরিপূর্ণতার সাক্ষি হয়েছিল, যে-বিষয়ে তারা কেউই আশা করেনি আর প্রেরিত পিতর এই ঘটনাটা ব্যাখ্যা করায় নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ২:১৪-১৮.) এভাবে পবিত্র আত্মা পিতরের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট করার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছিল যে, শিষ্যরা যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, তা সেই প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা স্বরূপ ছিল। এ ছাড়া, পবিত্র আত্মা স্মরণকারী হিসেবেও কাজ করেছিল কারণ পিতর কেবল যোয়েলের কথাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে দায়ূদের দুটো গীতও উদ্ধৃতি করেছিলেন। (গীত. ১৬:৮-১১; ১১০:১; প্রেরিত ২:২৫-২৮, ৩৪, ৩৫) সমবেত সকলে যা দেখেছিল ও শুনেছিল, সেগুলো সত্যিই ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল ছিল।
৫, ৬. (ক) সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর, নতুন চুক্তি সম্বন্ধে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া প্রয়োজন ছিল? (খ) কাদের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়েছিল এবং কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল?
৫ তারপরও, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছে অনেক বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সেই নতুন চুক্তির বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল, যেটা পঞ্চাশত্তমীর দিনে কার্যকর হয়েছিল। সেই নতুন চুক্তি কি যিহুদি ও ধর্মান্তরিত যিহুদিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল? পরজাতীয়রাও কি এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য হতে এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হতে পারত? (প্রেরিত ১০:৪৫) পরজাতীয় পুরুষদের কি প্রথমে ত্বক্চ্ছেদ করতে এবং মোশির ব্যবস্থার প্রতি বশীভূত হতে হবে? (প্রেরিত ১৫:১, ৫) এগুলো ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যিহোবার আত্মার গভীর বিষয় সকল অনুসন্ধান করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, কাদের মাধ্যমে এটা কাজ করবে?
৬ দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়েরাই এই প্রত্যেকটা বিষয় উত্থাপন করেছিল, যেগুলোর উত্তর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। পিতর, পৌল ও বার্ণবা পরিচালকগোষ্ঠীর সভাতে যোগদান করেছিল এবং বর্ণনা করেছিল যে, কীভাবে যিহোবা অচ্ছিন্নত্বক্ পরজাতীয়দের প্রতি তাঁর মনোযোগ দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৭-১২) ইব্রীয় শাস্ত্রে বর্ণিত কথার আলোকে এই প্রমাণ ও সেইসঙ্গে পবিত্র আত্মার সাহায্যে পরিচালকগোষ্ঠী একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এরপর তারা চিঠির মাধ্যমে মণ্ডলীগুলোকে সেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।—পড়ুন, প্রেরিত ১৫:২৫-৩০; ১৬:৪, ৫; ইফি. ৩:৫, ৬.
৭. কীসের মাধ্যমে গভীর সত্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল?
৭ যোহন, পিতর, যাকোব এবং পৌলের অনুপ্রাণিত লেখাগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য অনেক বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছিল। কিন্তু, খ্রিস্টান শাস্ত্র লেখা শেষ হওয়ার পর, একটা সময়ে গিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার এবং অলৌকিকভাবে জ্ঞান প্রকাশ করার দান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। (১ করি. ১৩:৮) তাহলে, আত্মা কি একজন শিক্ষক ও স্মরণকারী হিসেবে কাজ করে যাবে? এটা কি খ্রিস্টানদেরকে ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল অনুসন্ধান করতে ক্রমাগত সাহায্য করবে? ভবিষ্যদ্বাণী ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, এটা তা করবে।
শেষকালে
৮, ৯. কারা শেষকালে আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি সহকারে “দেদীপ্যমান” হবে?
৮ শেষকাল সম্বন্ধে বলতে গিয়ে, একজন স্বর্গদূত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “যাহারা বুদ্ধিমান্, তাহারা বিতানের দীপ্তির ন্যায়, এবং যাহারা অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি ফিরায়, তাহারা তারাগণের ন্যায় অনন্তকাল দেদীপ্যমান হইবে। . . . এবং জ্ঞানের [“সত্যিকারের জ্ঞানের,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] বৃদ্ধি হইবে।” (দানি. ১২:৩, ৪) কারা বুদ্ধি বা অন্তর্দৃষ্টি লাভ করবে এবং কারা দেদীপ্যমান হবে? যিশু গম ও শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্তে একটা সূত্র দিয়েছেন। “যুগান্ত” সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “তখন ধার্ম্মিকেরা আপনাদের পিতার রাজ্যে সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে।” (মথি ১৩:৩৯, ৪৩) যিশু তাঁর ব্যাখ্যায় ‘ধার্ম্মিকদিগকে’ “রাজ্যের সন্তানগণ” অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রিস্টান হিসেবে শনাক্ত করেছেন।—মথি ১৩:৩৮.
৯ সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানই কি “দেদীপ্যমান” হবে? এক অর্থে হ্যাঁ, কারণ সমস্ত খ্রিস্টান প্রচার, শিষ্য তৈরির কাজে এবং সভাগুলোতে পরস্পরকে গেঁথে তোলায় অংশ নেবে। এই ক্ষেত্রে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা উদাহরণ স্থাপন করবে। (সখ. ৮:২৩) কিন্তু, এটা ছাড়াও শেষকালে গভীর বিষয় সকল প্রকাশিত হবে। দানিয়েল যে-ভবিষ্যদ্বাণী লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তা সেই সময় পর্যন্ত “মুদ্রাঙ্কিত” ছিল। (দানি. ১২:৯) কীভাবে এবং কাদের মাধ্যমে আত্মা গভীর বিষয় সকল অনুসন্ধান করবে?
১০. (ক) কাদের মাধ্যমে আত্মা শেষকালে গভীর সত্যগুলো প্রকাশ করে? (খ) যিহোবার মহান আত্মিক মন্দির সম্বন্ধীয় সত্যগুলো কীভাবে স্পষ্ট করা হয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করুন।
১০ আমাদের দিনে যখন আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো স্পষ্ট করার সময় আসে, তখন পবিত্র আত্মা বিশ্ব প্রধান কার্যালয়ের ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের সেই গভীর সত্যগুলো বুঝতে সাহায্য করে, যেগুলো আগে বোঝা যায়নি। (মথি ২৪:৪৫; ১ করি. ২:১৩) পরিচালকগোষ্ঠী সমষ্টিগতভাবে সমন্বয়কৃত ব্যাখ্যাগুলো বিবেচনা করে। (প্রেরিত ১৫:৬) তারা যা শেখে, তা সকলের উপকারের জন্য প্রকাশ করে। (মথি ১০:২৭) সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বিষয় স্পষ্ট করার প্রয়োজন হতে পারে আর সেগুলোও সততার সঙ্গে ব্যাখ্যা করা হয়।—“আত্মা যেভাবে আত্মিক মন্দির সম্বন্ধীয় অর্থ প্রকাশ করেছে” নামক বাক্স দেখুন।
বর্তমানে আত্মার ভূমিকা থেকে উপকার লাভ করা
১১. কীভাবে বর্তমানে সমস্ত খ্রিস্টান, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল প্রকাশ করার ক্ষেত্রে পবিত্র আত্মার ভূমিকা থেকে উপকার লাভ করে?
১১ সমস্ত বিশ্বস্ত খ্রিস্টান, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল প্রকাশ করার ক্ষেত্রে পবিত্র আত্মার ভূমিকা থেকে উপকার লাভ করে। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতো আজকে আমরাও অধ্যয়ন করি এবং পরে সেই তথ্য স্মরণ করে কাজে লাগাই, যা পবিত্র আত্মা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে। (লূক ১২:১১, ১২) যে-গভীর আধ্যাত্মিক সত্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো বোঝার জন্য আমাদের ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই। (প্রেরিত ৪:১৩) ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল বোঝার জন্য কীভাবে আমরা উন্নতি করতে পারি? কিছু পরামর্শ বিবেচনা করুন।
১২. কখন আমাদের পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত?
১২ পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করুন। শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু বিবেচনা করার ঠিক আগে, আমাদেরকে পরিচালনা দেওয়ার জন্য প্রথমে পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত। এটা এমনকী সেই সময়েও সত্য, যখন আমরা একা থাকি কিংবা আমাদের হাতে কম সময় থাকে। এই ধরনের নম্র মিনতি নিশ্চিতভাবেই আমাদের স্বর্গীয় পিতার হৃদয়কে আনন্দিত করবে। যিশু যেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যিহোবা আমাদের আন্তরিক অনুরোধের উত্তরে উদারভাবে তাঁর পবিত্র আত্মা জোগাবেন।—লূক ১১:১৩.
১৩, ১৪. সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল বোঝার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করে?
১৩ সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিন। আমরা দাস শ্রেণীর মাধ্যমে “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” লাভ করি। এই “দাস” শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু সরবরাহ করার এবং অধ্যয়ন ও সভাগুলোর জন্য কার্যক্রমের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে এর কার্যভার পালন করে। “ভ্রাতৃসমাজকে” নির্দিষ্ট তথ্য বিবেচনা করতে বলার পিছনে যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। (১ পিতর ২:১৭; কল. ৪:১৬; যিহূদা ৩) আমরা পবিত্র আত্মার নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি, যখন আমরা জোগানো পরামর্শগুলো মেনে চলার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি।—প্রকা. ২:২৯.
১৪ খ্রিস্টীয় সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, আমাদের উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো দেখা এবং প্রতিটি শাস্ত্রপদ কীভাবে বিবেচ্য বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। এই অভ্যাস বাইবেল সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে ধীরে ধীরে আরও গভীর করবে। (প্রেরিত ১৭:১১, ১২) শাস্ত্রপদগুলো দেখা, পবিত্র আত্মার সহায়তায় শাস্ত্রপদের মূল বিষয়বস্তু মনে রাখতে সাহায্য করতে পারে। অধিকন্তু, আমরা যখন বাইবেল থেকে কোনো পদ দেখি, তখন সেটা আমাদেরকে শাস্ত্রপদটি কোথায় রয়েছে, তা মনে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
১৫. কেন আমাদের প্রকাশিত বিষয়বস্তু সম্বন্ধে নিয়মিতভাবে জ্ঞান লাভ করা উচিত আর কীভাবে আপনি তা করতে পারেন?
১৫ নিয়মিতভাবে নতুন প্রকাশনাগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করুন। কিছু প্রকাশিত বিষয়বস্তু আমাদের সভাগুলোতে পুনরালোচনা করা হয় না কিন্তু সেগুলো আমাদের উপকারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এমনকী আমাদের পত্রিকার যে-সংখ্যাগুলো জনসাধারণ্যে বিতরণ করা হয়, সেগুলোও আমাদের কথা মনে রেখে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। এই ব্যস্ত জগতেও প্রায়ই আমাদেরকে কারো জন্য বা কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমরা যদি আমাদের সঙ্গে করে এমন একটি প্রকাশনা রাখি, যেটি আমরা পড়িনি বা আংশিক পড়েছি, তাহলে আমরা হয়তো এই সুযোগগুলোকে কিছু অংশ পড়ার জন্য ব্যবহার করতে পারি। কেউ কেউ হাঁটার সময় অথবা যানবাহনে চলাচলের সময় আমাদের প্রকাশনার অডিও শোনার দ্বারা নিয়মিতভাবে নতুন প্রকাশনাগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে। সতর্কতার সঙ্গে গবেষণাকৃত, তবে সাধারণ পাঠকদের উপভোগের জন্য লিখিত এই সমস্ত বিষয়বস্তু আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে আরও গভীর করে।—হবক্. ২:২.
১৬. আমাদের মনে যে-প্রশ্নগুলো আসে, সেগুলো লিখে রাখার এবং অনুসন্ধান করার কোন উপকার রয়েছে?
১৬ ধ্যান করুন। আপনি যখন বাইবেল বা বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলো পড়েন, তখন সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য সময় করে নিন। আপনি যখন একটা ধারণার সঙ্গে আরেকটা ধারণা যেভাবে যুক্ত রয়েছে, তা নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করেন, তখন আপনার মনে হয়তো বিভিন্ন প্রশ্ন আসতে পারে। আপনি হয়তো এই ধরনের প্রশ্নগুলো লিখে রাখতে এবং পরে সেগুলো সম্বন্ধে আরও জানতে পারেন। প্রায়ই দেখা যায় যে, যখন আমরা বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করি, তখন সেটা আমাদের মধ্যে আরও গভীরভাবে গবেষণা করার কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। আমরা যে-বোধগম্যতা লাভ করি, তা আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদের অংশ হয়ে ওঠে, যেখান থেকে আমরা প্রয়োজনের সময় কোনো কিছু নিতে পারি।—মথি ১৩:৫২.
১৭. পারিবারিক অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য আপনি কোন কার্যক্রম অনুসরণ করেন?
১৭ পারিবারিক উপাসনার জন্য সময় রাখুন। পরিচালকগোষ্ঠী আমাদের সবাইকে প্রতি সপ্তাহে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অধ্যয়নের জন্য একটা সন্ধ্যা বা অন্য কোনো সময় আলাদা করে রাখার জন্য উৎসাহিত করেছে। আমাদের সমন্বয়কৃত সভার তালিকা আমাদেরকে এই পরামর্শ কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিয়েছে। পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায় আপনি কোন বিষয় বিবেচনা করেন? কেউ কেউ বাইবেল পাঠ করে, সেই পদগুলো নিয়ে গবেষণা করে, যেগুলো তাদের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক করে এবং তাদের বাইবেলে সংক্ষেপে সেগুলোর ব্যাখ্যা লিখে রাখে। অনেক পরিবার অধ্যয়নকৃত বিষয়বস্তু পরিবারগতভাবে কাজে লাগানোর জন্য সময় করে নেয়। কিছু পরিবারের মস্তক এমন বিষয়বস্তু বাছাই করে, যেগুলো তাদের পরিবারের বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করে অথবা যেগুলো এমন বিষয়বস্তু বা প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেগুলো তাদের পরিবার বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিবেচনা করবেন। *
১৮. কেন আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের গভীর সত্যগুলো অধ্যয়ন করা থেকে বিরত হওয়া উচিত নয়?
১৮ যিশু বলেছেন যে, আত্মা এক সহায় হিসেবে কাজ করবে। তাই, আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের গভীর সত্যগুলো অধ্যয়ন করা থেকে বিরত হওয়া উচিত নয়। এই ধরনের সত্যগুলো ‘ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের’ অংশ আর আমাদের সেগুলো অনুসন্ধান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২:১-৫.) এগুলো সেই বিষয়গুলো সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে, “যাহা ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন।” আমরা যখন যিহোবার বাক্য সম্বন্ধে শেখার জন্য প্রচেষ্টা করব, তখন পবিত্র আত্মা আমাদের সাহায্য করবে কারণ “আত্মা সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন।”—১ করি. ২:৯, ১০.
[পাদটীকা]
^ এ ছাড়া, ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র ৮ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কোন দুটো উপায়ে আত্মা আমাদেরকে ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ অনুসন্ধান করতে সাহায্য করে?
• কাদের মাধ্যমে পবিত্র আত্মা প্রথম শতাব্দীতে গভীর সত্যগুলো প্রকাশ করেছিল?
• কীভাবে পবিত্র আত্মা আমাদের দিনে বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করার জন্য কাজ করে?
• আত্মার ভূমিকা থেকে উপকার লাভ করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২২ পৃষ্ঠার বাক্স]
আত্মা যেভাবে আত্মিক মন্দির সম্বন্ধীয় অর্থ প্রকাশ করেছে
প্রথম শতাব্দীতে “ঈশ্বরের” যেসমস্ত ‘গভীর বিষয় সকল’ প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলো হল আবাস এবং পরে মন্দিরগুলো, যেগুলো আরও মহান আত্মিক বাস্তবতা সম্বন্ধে পূর্বাভাস দিয়েছিল। পৌল সেই বাস্তবতাকে ‘প্রকৃত তাম্বু’ বলে অভিহিত করেছিলেন, ‘যে তাম্বু মনুষ্যকর্ত্তৃক নয়, কিন্তু প্রভু’ যিহোবা ‘কর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছে।’ (ইব্রীয় ৮:২) এটা ছিল এক মহান আত্মিক মন্দির, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার এক ব্যবস্থা, যা যিশু খ্রিস্টের বলিদান ও যাজকত্বের দ্বারা ঈশ্বর সম্ভবপর করেছেন।
‘প্রকৃত তাম্বু’ সা.কা. ২৯ সালে অস্তিত্বে এসেছে, যখন যিশু বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন আর যিহোবা তাঁকে এক নিখুঁত বলি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১০:৫-১০) তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর, যিশু আত্মিক মন্দিরের অতি পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেছিলেন এবং “ঈশ্বরের সাক্ষাতে” তাঁর বলিদানের মূল্য উপস্থাপন করেছিলেন।—ইব্রীয় ৯:১১, ১২, ২৪.
আরেক জায়গায়, প্রেরিত পৌল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে লিখেছিলেন যে, তারা ‘প্রভু’ যিহোবাতে “পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে।” (ইফি. ২:২০-২২) এই মন্দিরই কি সেই ‘প্রকৃত মন্দির’ ছিল, যে-বিষয়ে পৌল পরে ইব্রীয়দের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে বর্ণনা করেছিলেন? বহু দশক ধরে, যিহোবার দাসেরা তা-ই মনে করেছিল। এইরকমটা মনে হয় যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা পৃথিবীতে থাকাকালীন যিহোবার স্বর্গীয় রাজ্যের ‘প্রস্তর’ হয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।—১ পিতর ২:৫.
কিন্তু, ১৯৭১ সালের দিকে, দাস শ্রেণীর দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা এই বিষয়টা বুঝতে শুরু করেছিল যে, ইফিষীয় বইয়ে পৌলের কথিত মন্দির, যিহোবার মহান আত্মিক মন্দির হতে পারে না। ‘প্রকৃত মন্দির’ যদি পুনরুত্থিত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত হয়ে থাকত, তাহলে এটা তাদের পুনরুত্থানের পরে অস্তিত্বে আসার কথা, যে-পুনরুত্থান “প্রভুর আগমন” বা উপস্থিতির সময়কালে শুরু হয়েছে। (১ থিষল. ৪:১৫-১৭) কিন্তু, আবাসের বিষয়ে উল্লেখ করে পৌল লিখেছিলেন: “সেই তাম্বু এই উপস্থিত সময়ের নিমিত্ত দৃষ্টান্ত।”—ইব্রীয় ৯:৯.
এগুলো এবং অন্যান্য শাস্ত্রপদ মনোযোগপূর্বক তুলনা করার দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, আত্মিক মন্দির গঠিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় নেই এবং অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা সেই ‘প্রস্তর’ নয়, যাদেরকে পৃথিবীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে। এর পরিবর্তে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা আত্মিক মন্দিরের প্রাঙ্গণে এবং পবিত্র স্থানে সেবা করছে, প্রতিদিন ঈশ্বরের উদ্দেশে “স্তব-বলি” উৎসর্গ করছে।—ইব্রীয় ১৩:১৫.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
কীভাবে আমরা ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ বোঝার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারি?