পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
যিশু পুরো দেশজুড়ে প্রচার কাজ করেছিলেন। তাহলে কীভাবে প্রেরিত পিতর বলতে পেরেছিলেন যে, যিহুদি লোকেরা এবং তাদের অধ্যক্ষেরা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘অজ্ঞানতা বশতঃ কার্য্য করিয়াছিল’?—প্রেরিত ৩:১৭.
মশীহের মৃত্যুর বিষয়ে তাদের ভূমিকা সম্বন্ধে একদল যিহুদির সঙ্গে কথা বলার সময় প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “আমি জানি, তোমরা অজ্ঞানতা বশতঃ সেই কার্য্য করিয়াছ, যেমন তোমাদের অধ্যক্ষেরাও করিয়াছিলেন।” (প্রেরিত ৩:১৪-১৭) কিছু যিহুদি হয়তো যিশুই যে মশীহ ছিলেন তা এবং তাঁর শিক্ষাগুলোকে বুঝতে পারেনি। অন্যদের ক্ষেত্রে, তাদের আধ্যাত্মিক অজ্ঞানতার পিছনে কারণগুলো ছিল ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষার অভাব, ভেদাভেদ, হিংসা এবং তীব্র ঘৃণা।
যিহোবাকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষার অভাব, কীভাবে যিশুর শিক্ষা সম্বন্ধে অনেকের যে-দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটাকে প্রভাবিত করেছিল, তা বিবেচনা করুন। যিশু প্রায়ই বিভিন্ন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দিতেন, যেগুলো তিনি সেইসমস্ত লোকের কাছে ব্যাখ্যা করতেন, যারা আরও বেশি শিখতে আকাঙ্ক্ষী ছিল। তবুও, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বোঝার জন্য সামান্যই চেষ্টা করেছিল আর তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। একবার, এমনকী কিছু শিষ্যও অসন্তুষ্ট হয়েছিল, যখন যিশু এক বাক্যালঙ্কার ব্যবহার করেছিলেন। (যোহন ৬:৫২-৬৬) এই ধরনের ব্যক্তিরা এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, যিশুর দৃষ্টান্তগুলো তাদের চিন্তাভাবনা এবং কাজকর্মকে পরিবর্তন করার জন্য তাদের ইচ্ছুক মনোভাবকে পরীক্ষা করেছিল। (যিশা. ৬:৯, ১০; ৪৪:১৮; মথি ১৩:১০-১৫) এ ছাড়া, মশীহ যে তাঁর শিক্ষায় বিভিন্ন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করবেন, সেই সম্বন্ধীয় একটি ভবিষ্যদ্বাণীকেও তারা উপেক্ষা করেছিল।—গীত. ৭৮:২.
অন্যেরা ভেদাভেদের কারণে যিশুর শিক্ষাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যিশু যখন তাঁর নিজ নগর নাসরতের সমাজগৃহে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তখন লোকেরা “চমৎকৃত” হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, যিশুকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করার পরিবর্তে, তারা তাঁর পটভূমি নিয়ে এই প্রশ্নগুলো তুলেছিল: “ইহার এ সকল কোথা হইতে হইয়াছে? . . . এ কি সেই সূত্রধর, মরিয়মের সেই পুত্ত্র এবং যাকোব, যোষি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই নয়? এবং ইহার ভগিনীরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নাই?” (মার্ক ৬:১-৩) যিশুর অতি সাধারণভাবে বড়ো হয়ে ওঠা, নাসরতের লোকেদের কাছে তাঁর শিক্ষাকে মূল্যহীন করে তুলেছিল।
ধর্মীয় নেতাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদের মধ্যে অনেকেই এই একই কারণগুলোর জন্য যিশুর প্রতি সামান্যই মনোযোগ দিয়েছিল। (যোহন ৭:৪৭-৫২) এ ছাড়া, তারা তাঁর শিক্ষাকেও প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ তারা যিশুকে হিংসা করেছিল, যিনি লোকেদের মনোযোগ লাভ করেছিলেন। (মার্ক ১৫:১০) আর নিশ্চিতভাবেই অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, যখন তিনি তাদের কপটতা এবং প্রতারণার জন্য জনসমক্ষে তাদের নিন্দা করেছিলেন। (মথি ২৩:১৩-৩৬) যিশু উপযুক্তভাবেই তাদের স্বেচ্ছাকৃত অজ্ঞানতাকে এই বলে তিরস্কার করেছিলেন: “হাঁ ব্যবস্থাবেত্তারা, ধিক্ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা জ্ঞানের চাবি হরণ করিয়া লইয়াছ; আপনারা [রাজ্যে] প্রবেশ করিলে না, এবং যাহারা প্রবেশ করিতেছিল, তাহাদিগকে বাধা দিলে।”—লূক ১১:৩৭-৫২.
যিশু সাড়ে তিন বছর ধরে দেশের মধ্যে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি আরও অনেককেও সেই কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। (লূক ৯:১, ২; ১০:১, ১৬, ১৭) যিশু ও তাঁর শিষ্যরা এতটাই কার্যকারী ছিল যে, ফরীশীরা অভিযোগ করেছিল: “দেখ, জগৎসংসার উহার পশ্চাদ্গামী হইয়াছে।” (যোহন ১২:১৯) তাই, বিষয়টা এইরকম নয় যে, অধিকাংশ যিহুদি একেবারে কিছুই জানত না। তা সত্ত্বেও, তাদের মূলত মশীহ যিশু সম্বন্ধে “অজ্ঞানতা” ছিল। তারা মশীহ সম্বন্ধে তাদের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করতে ও তাঁর প্রতি তাদের প্রেমকে আরও গভীর করতে পারত কিন্তু তারা তা করেনি। কেউ কেউ যিশুর মৃত্যুকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সহযোগী হয়েছিল। তাই, প্রেরিত পিতর তাদের মধ্যে অনেককে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা মন ফিরাও, ও ফির, যেন তোমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয়, যেন এইরূপে প্রভুর [“যিহোবার,” NW] সম্মুখ হইতে তাপশান্তির সময় উপস্থিত হয়, এবং তোমাদের নিমিত্ত পূর্ব্বনিরূপিত খ্রীষ্টকে, যীশুকে, তিনি যেন প্রেরণ করেন।” (প্রেরিত ৩:১৯, ২০) উল্লেখযোগ্য বিষয়টা হল, হাজার হাজার যিহুদি মনোযোগ দিতে শুরু করেছিল আর তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল “যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক।” তারা আর অজ্ঞানতাবশত কাজ করেনি। এর পরিবর্তে, তারা অনুতপ্ত হয়েছিল এবং যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করেছিল।—প্রেরিত ২:৪১; ৪:৪; ৫:১৪; ৬:৭.