যে-বিয়েগুলো ঈশ্বর ও মানুষের দৃষ্টিতে সম্মানীয়
যে-বিয়েগুলো ঈশ্বর ও মানুষের দৃষ্টিতে সম্মানীয়
“কান্না নগরে এক বিবাহ হইল, . . . সেই বিবাহে যীশুর ও তাঁহার শিষ্যগণেরও নিমন্ত্রণ হইয়াছিল।” —যোহন ২:১, ২.
১. কান্না নগরে যিশুর বিবরণ কোন বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করায়?
এক সম্মানীয় বিয়ে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে যে-আনন্দ নিয়ে আসতে পারে, সেই সম্বন্ধে যিশু, তাঁর মা ও তাঁর কিছু শিষ্য জানত। যিশু এমনকি একটা বিয়েতে তাঁর লিপিবদ্ধ প্রথম অলৌকিক কাজ সম্পাদন করার মাধ্যমে সেটাকে উল্লেখযোগ্য করে তুলেছিলেন, যা সেই উপলক্ষের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। (যোহন ২:১-১১) আপনি হয়তো এমন খ্রিস্টানদের বিয়েতে গিয়েছেন ও তা উপভোগ করেছেন, যারা সুখী বিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে যিহোবার সেবা করতে চায়। অথবা আপনি নিজেই হয়তো এইরকম বিয়ের জন্য বা আপনার কোনো বন্ধুর বিয়েকে সফল করতে তাকে সাহায্য করার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। কিন্তু, সফল করার ক্ষেত্রে কী অবদান রাখতে পারে?
২. বিয়ে সম্বন্ধে বাইবেলে কোন তথ্য রয়েছে?
২ খ্রিস্টানরা দেখেছে যে, একজন নারী ও পুরুষ যখন বিয়ে করার পরিকল্পনা করে, তখন ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যে পাওয়া উপদেশ অনেক সাহায্যকারী হয়। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) এটা ঠিক যে, একটা খ্রিস্টীয় বিয়ের বিস্তারিত পদ্ধতি সম্বন্ধে বাইবেলে উল্লেখ করা নেই। তবে তা বোধগম্য কারণ স্থান ও কাল ভেদে রীতিনীতি আর এমনকি বৈধ চাহিদাগুলো বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীন ইস্রায়েলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হতো না। বিয়ের দিন বর তার কনেকে নিজের বাড়িতে অথবা তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসতেন। (আদিপুস্তক ২৪:৬৭; যিশাইয় ৬১:১০; মথি ১:২৪, NW) জনসমক্ষে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হতো, যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো অনুষ্ঠান হতো না, যা আজকে অনেক বিয়েতে খুবই সাধারণ বিষয়।
৩. কান্না নগরের কোন উপলক্ষে যিশু অবদান রেখেছিলেন?
৩ ইস্রায়েলীয়রা সেই পদক্ষেপকে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে মেনে নিত। এরপর, তারা হয়তো তা উদ্যাপন করার জন্য ভোজে অংশ নিত, যে-ধরনের ভোজ সম্বন্ধে যোহন ২:১ পদে উল্লেখ করা হয়েছে। (মথি ২২:২-১০; ২৫:১০; লূক ১৪:৮) এই বিবরণ স্পষ্ট করে যে, যিশু একটা যিহুদি বিবাহভোজে উপস্থিত ছিলেন এবং তাতে অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু মূল বিষয়টা হল যে, সেই সময়ে একটা বিয়ে ও বিবাহভোজের সঙ্গে যে-বিষয়গুলো যুক্ত ছিল, সেগুলো আজকে যা দেখা যায় তার থেকে ভিন্ন ছিল।
৪. কিছু খ্রিস্টান কোন ধরনের বিয়ে বেছে নেয় এবং কেন?
৪ আজকে অনেক দেশে যে-খ্রিস্টানরা বিয়ে করতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই কিছু বৈধ চাহিদা পূরণ করতে হয়। একবার সেগুলো পূরণ করার পর, তারা হয়তো বৈধভাবে গ্রহণযোগ্য যেকোনো উপায়ে বিয়ে করতে পারে। এটা হতে পারে এক ছোট্ট, সাধারণ অনুষ্ঠান, যেখানে একজন বিচারক, মেয়র অথবা রাষ্ট্রের দ্বারা অনুমোদিত কোনো পরিচারক তা পরিচালনা করে থাকেন। কেউ কেউ এমনভাবে বিয়ে করা বেছে নেয়, যেখানে সম্ভবত কয়েক জন আত্মীয়স্বজন অথবা খ্রিস্টান বন্ধুবান্ধবকে বৈধ সাক্ষি হিসেবে উপস্থিত থাকার অথবা কেবল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ের যে-আনন্দ, তার অংশীদার হওয়ার জন্য বলা হয়ে থাকে। (যিরমিয় ৩৩:১১; যোহন ৩:২৯) একইভাবে, অন্যেরা হয়তো বড় আকারের বিবাহভোজ বা অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান না করা বেছে নেয়, যা করার জন্য যথেষ্ট পরিকল্পনা ও খরচের প্রয়োজন হয়। এর পরিবর্তে, তারা হয়তো ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সাধারণ খাবারদাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। এই বিষয়ে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ যা-ই হোক না কেন, আমাদের বুঝতে হবে যে অন্য পরিপক্ব খ্রিস্টানদের হয়তো আমাদের থেকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে।—রোমীয় ১৪:৩, ৪.
৫. কেন অনেক খ্রিস্টান তাদের বিয়ের সময় বিয়ের বক্তৃতা দেওয়া হোক বলে চায় আর এতে কী তুলে ধরা হয়?
৫ অধিকাংশ খ্রিস্টান দম্পতি তাদের বিয়েতে বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়ার বিষয়টা বেছে নেয়। * তারা স্বীকার করে যে, যিহোবা বিবাহের উৎপত্তি করেছেন এবং কীভাবে বিয়ে সফল হতে পারে ও আনন্দ নিয়ে আসতে পারে, সেই সম্বন্ধে তিনি তাঁর বাক্যে বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছেন। (আদিপুস্তক ২:২২-২৪; মার্ক ১০:৬-৯; ইফিষীয় ৫:২২-৩৩) আর অধিকাংশ দম্পতিই চায় যেন খ্রিস্টান বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন এই আনন্দময় সময়ের অংশীদার হয়। কিন্তু বৈধ চাহিদা, বিভিন্ন পদ্ধতি ও এমনকি প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় প্রথাগুলোর মধ্যে ব্যাপক বৈচিত্র্যকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত? এই প্রবন্ধে বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি বিবেচনা করা হবে। কিছু কিছু বিষয় হয়তো আপনি যা জানেন অথবা আপনার এলাকায় যা করা হয়, সেটা থেকে যথেষ্ট ভিন্ন হতে পারে। তা সত্ত্বেও, আপনি কিছু সাধারণ নীতি ও দিক লক্ষ করতে পারেন, যেগুলো ঈশ্বরের দাসদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
সম্মানীয় বিয়ে—বৈধ বিয়ে
৬, ৭. কেন আমাদের বিয়ে করার বৈধ দিকগুলোর প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত আর কীভাবে আমরা তা প্রদর্শন করতে পারি?
৬ যদিও যিহোবা বিয়ের উৎপত্তি করেছেন কিন্তু যারা বিয়ে করে তাদের পদক্ষেপগুলোর ওপর মনুষ্য সরকারের কিছু নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তা থাকা উপযুক্ত। যিশু বলেছিলেন: “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” (মার্ক ১২:১৭) একইভাবে, প্রেরিত পৌল নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক; কেননা ঈশ্বরের নিরূপণ ব্যতিরেকে কর্ত্তৃত্ব হয় না; এবং যে সকল কর্ত্তৃপক্ষ আছেন, তাঁহারা ঈশ্বরনিযুক্ত।”—রোমীয় ১৩:১; তীত ৩:১.
৭ অধিকাংশ দেশে কৈসর অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে যে, কে বিয়ে করার যোগ্য। তাই, শাস্ত্রীয়ভাবে স্বাধীন দুজন খ্রিস্টান যখন বিয়ে করা বেছে নেয়, তখন তারা জেনেশুনেই স্থানীয় আইন মেনে চলে। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে একটা লাইসেন্স লাভ করা, রাষ্ট্র অনুমোদিত বিবাহ প্রতিনিধি ব্যবহার করা এবং সম্ভবত সম্পাদিত বিয়ে রেজিস্ট্রী করা। আগস্ত কৈসর যখন ‘নাম লেখানোর’ বা রেজিস্ট্রী করার আদেশ জারি করেছিলেন, তখন মরিয়ম ও যোষেফ সেইমতো কাজ করেছিলেন, “নাম লিখিয়া দিবার জন্য” বৈৎলেহমে গিয়েছিলেন।—লূক ২:১-৫.
৮. যিহোবার সাক্ষিরা কোন অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলে এবং কেন?
৮ দুজন খ্রিস্টান যখন বৈধ ও স্বীকৃত উপায়ে বিয়ে করে, তখন ঈশ্বরের চোখে তারা পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে ওঠে। তাই, যিহোবার সাক্ষিরা বহুবার বৈধ অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে তাদের বিয়ের পুনরাবৃত্তি করে না অথবা কোনো দম্পতি তাদের ২৫তম বা ৫০তম বিবাহবার্ষিকীতে নতুন করে বিয়ের অঙ্গীকারও করে না। (মথি ৫:৩৭) (কিছু গির্জা বৈধভাবে অনুমোদিত সরকারিভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানকে এই দাবি করে বাতিল করে দেয় যে, কোনো যাজক বা পাদরি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অনুযায়ী বিয়ে না করালে অথবা নারী ও পুরুষকে দম্পতি হিসেবে ঘোষণা না দিলে, তা আসলে যথার্থ বিয়ে নয়।) অনেক দেশে, প্রচলিত আচার অনুযায়ী বিয়ে সম্পাদন করার জন্য সরকার যিহোবার সাক্ষিদের একজন পরিচারককে অনুমোদন করে থাকে। যদি সেটা সম্ভবপর হয়, তা হলে তিনি হয়তো কিংডম হলে বিয়ের বক্তৃতাসহ তা করতে চাইবেন। এটা হল সত্য উপাসনার স্থানীয় জায়গা এবং সেই ব্যবস্থা সম্বন্ধে বক্তৃতা দেওয়ার এক উপযুক্ত স্থান, যা যিহোবা ঈশ্বর প্রবর্তন করেছেন।
৯. (ক) সরকারিভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে, এক খ্রিস্টান দম্পতি কী করা বেছে নিতে পারে? (খ) কীভাবে প্রাচীনরা বিয়ের পরিকল্পনার মধ্যে জড়িত থাকতে পারে?
৯ অন্যান্য দেশে, আইন অনুযায়ী কোনো দম্পতিকে সরকারি অফিসে, যেমন নগরভবনে অথবা নিযুক্ত সরকারি প্রতিনিধির সামনে বিয়ে করতে হয়। খ্রিস্টানরা প্রায়ই এই বৈধ পদক্ষেপের পর, সেই একই দিনে বা পরের দিন কিংডম হলে বিয়ের বক্তৃতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা বেছে নেয়। (তারা সরকারিভাবে করা এই বিয়ে ও বাইবেল বক্তৃতার মাঝখানে ব্যবধান অনেক দিন থাকুক বলে চাইবে না কারণ তারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীসহ ঈশ্বর ও মানুষের সামনে বিবাহিত।) যে-দম্পতি সরকারিভাবে বিয়ে করবে, তারা যদি নির্দিষ্ট কোনো কিংডম হলে বক্তৃতা দেওয়া হোক বলে চায়, তা হলে আগে থেকেই তাদের সেই প্রাচীনদের কাছে অনুমতি চাইতে হবে, যাদের নিয়ে মণ্ডলীর পরিচর্যা কমিটি গঠিত। সেই দম্পতির সুনাম আছে কি না, তা নিশ্চিত করা ছাড়াও এই অধ্যক্ষরা নিশ্চিত করবে যে, বিয়ের সময়টা যাতে হলের নিয়মিত সভা এবং নির্ধারিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে। (১ করিন্থীয় ১৪:৩৩, ৪০) এ ছাড়া, তারা হয়তো হলের জন্য এমন যেকোনো প্রস্তুতি সম্বন্ধে পর্যালোচনা করবে, যে-সম্বন্ধে দম্পতি হয়তো অনুরোধ জানিয়েছে আর এর ব্যবহার সম্বন্ধে ঘোষণা দেওয়া হবে কি না, সেই সম্বন্ধেও তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
১০. যদি সরকারিভাবে বিয়ের প্রয়োজন হয়, তা হলে সেটা কীভাবে বিয়ের বক্তৃতায় প্রভাব ফেলবে?
১০ যে-প্রাচীন বিয়ের বক্তৃতা দেবেন, তিনি আলোচনাকে উষ্ণ, আধ্যাত্মিকভাবে গঠনমূলক ও মর্যাদাপূর্ণ করে তোলার প্রচেষ্টা করবেন। এই দম্পতি যদি সরকারিভাবে প্রথমে বিয়ে করে থাকে, তা হলে তিনি স্পষ্ট করে দেবেন যে, তারা কৈসরের আইন অনুযায়ী বিবাহিত। সরকারিভাবে বিয়ের সময় যদি বিয়ের অঙ্গীকার করা না হয়ে থাকে, তা হলে দম্পতি হয়তো বক্তৃতার সময়ে তা করতে চাইবে। * কিন্তু সরকারিভাবে বিয়ের সময় অঙ্গীকার করা হলেও, নববিবাহিত দম্পতি যদি যিহোবা ও মণ্ডলীর সামনে তা করতে চায়, তা হলে তারা সেটা অতীত কাল দিয়ে তা করবে, যা দেখাবে যে তারা ইতিমধ্যেই “যোগ” হয়েছে।—মথি ১৯:৬; ২২:২১.
১১. কিছু কিছু জায়গায় কীভাবে এক দম্পতি বিয়ে করে আর তা বিয়ের বক্তৃতার ওপর কোন প্রভাব ফেলে?
১১ কিছু জায়গায়, আইন অনুযায়ী হয়তো কোনো দম্পতিকে আনুষ্ঠানিকতা করে, এমনকি কোনো সরকারি প্রতিনিধির সামনে বিয়ে করতে হয় না। তারা যখন কোনো কর্মকর্তার কাছে স্বাক্ষরিত বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম জমা দেন, তখনই বিয়ে সম্পাদিত হয়। এরপর বিয়ের সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রী করা হয়। এভাবে সেই দম্পতিকে স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে দেখা হয় আর সার্টিফিকেটের তারিখটাই তাদের বিয়ের তারিখ হয়ে থাকে। ওপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যে-দম্পতিরা এভাবে বিয়ে করে, তারা হয়তো সেই রেজিস্ট্রেশনের পর পরই কিংডম হলে একটা বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়া হোক বলে চাইতে পারে। আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব যে-ভাইকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়, তিনি উপস্থিত সকলকে জানিয়ে দেবেন যে, সবেমাত্র রেজিস্ট্রেশন হওয়ার কারণে এই দম্পতি বিবাহিত। অঙ্গীকার নেওয়ার বিষয়টা অনুচ্ছেদ ১০ ও এর পাদটীকায় যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটার সঙ্গে মিল রেখে নেওয়া হবে। কিংডম হলে উপস্থিত ব্যক্তিরা দম্পতির সঙ্গে আনন্দিত হবে এবং ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া পরামর্শ থেকে উপকার লাভ করবে।—পরমগীত ৩:১১.
রীতিগত এবং সরকারিভাবে বিয়ে
১২. রীতিগত বিয়ে কী আর এই ধরনের বিয়ের পর কী করা যুক্তিযুক্ত?
১২ কোনো কোনো দেশে দম্পতিরা এমনভাবে বিয়ে করে থাকে, যেটাকে রীতিগতভাবে (অথবা উপজাতিগতভাবে) বিয়ে বলা হয়ে থাকে। তবে এটা বলতে দুজন ব্যক্তির কেবল একসঙ্গে বসবাস করাকে বোঝায় না অথবা অলিখিত আইন অনুযায়ী বিয়েকেও নির্দেশ করে না, যেটাকে হয়তো কোনো কোনো এলাকায় কিছুটা গুরুত্ব দেওয়া হয় তবে তা পুরোপুরি বৈধ বিয়ে নয়। * আমরা এমন ধরনের বিয়ের কথা বলছি, যা উপজাতিগতভাবে বা এলাকার জনসাধারণ্যে স্বীকৃত প্রথা অনুযায়ী করা হয়। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে সম্পূর্ণ কনেপণ দেওয়া ও গ্রহণ করা, যার মাধ্যমে দম্পতি বৈধ ও শাস্ত্রীয়ভাবে বিবাহিত হয়ে থাকে। সরকার এই ধরনের রীতিগত বিয়েকে আইনসম্মত, বৈধ এবং বাধ্যতামূলক হিসেবে দেখে থাকে। এরপর, রীতিগতভাবে যে-বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে, তা সাধারণত নথিভুক্ত বা রেজিস্ট্রী করা সম্ভব আর তা করার মাধ্যমে দম্পতিরা হয়তো অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে সার্টিফিকেট লাভ করতে পারে। রেজিট্রেশন দম্পতিদের জন্য অথবা স্ত্রী যদি বিধবা হয়ে যান, তা হলে তার জন্য অথবা যেকোনো ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য বৈধ সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। মণ্ডলী এই ধরনের রীতিগত বিয়ে করেছে এমন যেকাউকে যত শীঘ্রই সম্ভব তা রেজিস্ট্রী করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেবে। আগ্রহের বিষয় হল যে, মোশির ব্যবস্থায় বিয়ে ও জন্মকে অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের দ্বারা নথিভুক্ত করা হতো বলে মনে করা হয়।—মথি ১:১-১৬.
১৩. রীতিগত বিয়ের পর, বিয়ের বক্তৃতার ক্ষেত্রে কী উপযুক্ত?
১৩ যে-দম্পতিরা এই ধরনের রীতিগত পদ্ধতির মাধ্যমে বৈধভাবে একতাবদ্ধ হয়, তারা সেই বিয়ে সম্পাদন হওয়ার পর স্বামী ও স্ত্রী হয়ে ওঠে। ওপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যে-খ্রিস্টানরা এই ধরনের বৈধ বিয়ে করে থাকে, তারা হয়তো কিংডম হলে বিয়ের অঙ্গীকারসহ বিয়ের বক্তৃতা দেওয়া হোক বলে চাইতে পারে। যদি তা দেওয়া হয়, তা হলে বক্তা স্বীকার করবেন যে, সেই দম্পতি কৈসরের আইন অনুযায়ী ইতিমধ্যে বিবাহিত। কেবল এই ধরনের একটা বক্তৃতাই দেওয়া হবে। শুধু একটাই বিয়ে, এই ক্ষেত্রে তা হল বৈধভাবে উপযুক্ত রীতিগত (উপজাতিগত) বিয়ে এবং একটাই শাস্ত্রীয় বক্তৃতা। যতটা সম্ভব কম সময়ের মধ্যে, সম্ভব হলে একই দিনে এই দুটো বিষয় সম্পন্ন করা সমাজে খ্রিস্টীয় বিয়েকে সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
১৪. যদি রীতিগত ও সরকারি উভয়ভাবেই বিয়ে করা সম্ভবপর হয়, তা হলে একজন খ্রিস্টান হয়তো কী করতে পারেন?
১৪ কিছু দেশে, যেখানে রীতিগত বিয়ে বৈধ হিসেবে স্বীকৃত, সেখানে সরকারি (অথবা সংবিধিবদ্ধভাবে) বিয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। সরকারিভাবে বিয়ে সাধারণত কোনো সরকারি প্রতিনিধির সামনে করা হয় আর এতে বিয়ের অঙ্গীকার করা ও সেইসঙ্গে রেজিস্ট্রী বইয়ে স্বাক্ষর করাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। কিছু খ্রিস্টান দম্পতি রীতিগত বিয়ের চেয়ে সরকারিভাবে বিয়ে করা পছন্দ করে থাকে। দুটোই করতে হবে এমন কোনো বৈধ চাহিদা নেই; প্রতিটা পদ্ধতিই বৈধভাবে উপযুক্ত। ৯ ও ১০ অনুচ্ছেদে বিয়ের বক্তৃতা ও অঙ্গীকার সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে, তা এই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রধান বিষয়টা হল সেই দম্পতি এমনভাবে বিয়ে করেছে, যা ঈশ্বর ও মানুষের চোখে সম্মানীয়।—লূক ২০:২৫; ১ পিতর ২:১৩, ১৪.
বিয়েতে সম্মান বজায় রাখুন
১৫, ১৬. কীভাবে একটা বিয়েতে সম্মান জড়িত থাকা উচিত?
১৫ এক পারস্য রাজের বিয়েতে যখন সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তখন মমূখন নামে প্রধান উপদেষ্টা এমন উপদেশ দিয়েছিলেন, যা এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত আর সেই উপদেশ হল ‘সমস্ত স্ত্রীলোক আপন আপন স্বামীকে মর্য্যাদা করিবে।’ (ইষ্টের ১:২০) খ্রিস্টীয় বিয়েতে কোনো মনুষ্য রাজার উপদেশ জারি করার প্রয়োজন নেই; স্ত্রীরাই তাদের স্বামীদের সম্মান করতে চায়। একইভাবে, খ্রিস্টান স্বামীরা তাদের সাথিকে সমাদর করে এবং তাদের প্রশংসা করে থাকে। (হিতোপদেশ ৩১:১১, ৩০; ১ পিতর ৩:৭) আমাদের বিয়ের মধ্যে সম্মান যুক্ত থাকার বিষয়টা কেবল অনেক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরে আসা উচিত নয়। এটা একেবারে শুরু থেকেই, হ্যাঁ, বিয়ের দিন থেকেই প্রর্দশন করা উচিত।
১৬ নারী ও পুরুষই—স্বামী ও স্ত্রী-ই—একমাত্র ব্যক্তি নয়, যাদের বিয়ের দিনে সম্মান দেখানো উচিত। কোনো খ্রিস্টান প্রাচীন যদি বিয়ের বক্তৃতা দেন, তা হলে সেটাও সম্মানের সঙ্গে দেওয়া উচিত। সেই বক্তৃতা দম্পতিদের উদ্দেশে হওয়া উচিত। তাদের প্রতি সম্মানের একটা অংশ হিসেবে বক্তা কৌতুক বা লোককথা তুলে ধরবেন না। তার অতিরিক্ত ব্যক্তিগত মন্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়, যা হয়তো দম্পতি এবং শ্রোতাদেরকে বিব্রত করতে পারে। এর পরিবর্তে, তিনি উষ্ণ ও গঠনমূলকভাবে বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, বিয়ের উদ্যোক্তা ও তাঁর উল্লেখযোগ্য উপদেশ সম্বন্ধে তুলে ধরবেন। হ্যাঁ, প্রাচীনের মর্যাদাপূর্ণ বিয়ের বক্তৃতা এমন একটা বিয়েতে অবদান রাখবে, যা যিহোবা ঈশ্বরের জন্য সম্মান নিয়ে আসে।
১৭. খ্রিস্টীয় বিয়েগুলোর কেন বৈধ দিক রয়েছে?
১৭ এই প্রবন্ধে আপনি হয়তো বিয়ের বৈধতা সম্বন্ধে অনেক বিষয় লক্ষ করেছেন। কিছু বিষয় হয়তো সরাসরি আপনার এলাকার জন্য প্রযোজ্য নয়। তা সত্ত্বেও, যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে বিয়ের বিভিন্ন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে স্থানীয় আইন, কৈসরের চাহিদাগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই সম্বন্ধে আমাদের সকলেরই সতেচন থাকা উচিত। (লূক ২০:২৫) পৌল আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাহার যাহা প্রাপ্য, তাহাকে তাহা দেও। যাঁহাকে কর দিতে হয়, কর দেও; যাঁহাকে শুল্ক দিতে হয়, শুল্ক দেও; . . . যাঁহাকে সমাদর করিতে হয়, সমাদর কর।” (রোমীয় ১৩:৭) হ্যাঁ, এটা উপযুক্ত যে, খ্রিস্টানরা যেন ঠিক বিয়ের দিন থেকেই সেই ব্যবস্থাকে সম্মান করে, যা ঈশ্বর বর্তমানের জন্য স্থাপন করেছেন।
১৮. বিয়ের কোন ঐচ্ছিক দিকের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উপযুক্ত এবং এই বিষয়ে আমরা কোথায় তথ্য পেতে পারি?
১৮ অনেক খ্রিস্টীয় বিয়ের পর সামাজিক মেলামেশার—কোনো বিবাহভোজ, খাবারদাবার অথবা কোনো অভ্যর্থনার—ব্যবস্থা করা হয়। মনে করে দেখুন যে, যিশু এই ধরনের এক ভোজে উপস্থিত ছিলেন। যদি এই ধরনের মেলামেশার ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে বাইবেলের পরামর্শ কীভাবে আমাদের এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে যে, সেটাও ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে আনবে এবং নববিবাহিত ব্যক্তিদের ও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ওপর তা উপযুক্ত প্রভাব ফেলবে? পরের প্রবন্ধে সেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা হবে। *
[পাদটীকাগুলো]
^ যিহোবার সাক্ষিরা “ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সম্মানজনক বিবাহ” নামক ৩০ মিনিটের একটা বিয়ের বক্তৃতার আউটলাইন ব্যবহার করে থাকে। এটা যিহোবার সাক্ষিদের পারিবারিক সুখের রহস্য (ইংরেজি) বই ও অন্যান্য প্রকাশনার মধ্যে প্রাপ্ত উত্তম শাস্ত্রীয় উপদেশের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করায়। এই আলোচনা যে-দম্পতিরা বিয়ে করে ও যারা বিয়েতে যোগ দেয়, তাদের সকলের জন্য উপকারী।
^ আইন অনুযায়ী অন্য কোনোভাবে করার বাধ্যবাধকতা না থাকলে, এই অঙ্গীকারটা ব্যবহার করা হয়, যা ঈশ্বরকে সম্মান করে। বর বলবেন: “আমি [বরের নাম] তোমাকে [কনের নাম] আমার বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলাম, যতদিন পর্যন্ত আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, ঈশ্বরের বিবাহ ব্যবস্থা অনুসারে খ্রিস্টান স্বামীদের জন্য পবিত্র শাস্ত্রে যেমন বর্ণনা করা আছে, ঐশিক বিধান অনুযায়ী তোমাকে ভালবাসব ও তোমার যত্ন নেব।” কনে বলবেন: “আমি [কনের নাম] তোমাকে [বরের নাম] আমার বিবাহিত স্বামী হিসেবে গ্রহণ করলাম, যতদিন পর্যন্ত আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, ঈশ্বরের বিবাহ ব্যবস্থা অনুসারে খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য পবিত্র শাস্ত্রে যেমন বর্ণনা করা আছে, ঐশিক বিধান অনুযায়ী তোমাকে ভালবাসব ও তোমার যত্ন নেব এবং তোমাকে গভীরভাবে সম্মান করব।”
^ ১৯৬২ সালের ১লা মে প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৮৭ পৃষ্ঠায় অলিখিত আইন অনুযায়ী বিয়ে সম্বন্ধে মন্তব্য রয়েছে।
^ এ ছাড়া, ২৮ পৃষ্ঠায় “আপনার বিয়ের দিনের আনন্দ ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করুন” নামক প্রবন্ধটা দেখুন।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কেন আমাদের বিয়ের বৈধ ও আধ্যাত্মিক উভয় দিকের প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত?
• দুজন খ্রিস্টান যদি সরকারিভাবে বিয়ে করে থাকে, তা হলে এর পর পরই তারা হয়তো কী করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
• কেন বিয়ের বক্তৃতা কিংডম হলে দেওয়া হয়?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনকালের ইস্রায়েলীয় বিয়েতে, বর কনেকে তার নিজের বাড়িতে অথবা তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসতেন
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
রীতিগতভাবে বিয়ের পর, খ্রিস্টানরা হয়তো কিংডম হলে বক্তৃতা দেওয়া হোক বলে চাইতে পারে