সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার বিয়ের দিনের আনন্দ ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করুন

আপনার বিয়ের দিনের আনন্দ ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করুন

আপনার বিয়ের দিনের আনন্দ ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করুন

 “আমার বিয়ের দিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে অর্থপূর্ণ ও আনন্দময় দিন,” গর্ডন নামে একজন ব্যক্তি বলেন, যিনি প্রায় ৬০ বছর ধরে বিবাহিত। সত্য খ্রিস্টানদের জন্য কোন বিষয়টা বিয়ের দিনকে এতটা অর্থপূর্ণ করে তোলে? এটা হল এমন একটা দিন, যেদিন তারা যাদেরকে অত্যন্ত ভালবাসে, তাদের কাছে—তাদের সাথি ও যিহোবা ঈশ্বরের কাছে—একটা পবিত্র প্রতিজ্ঞা করে। (মথি ২২:৩৭; ইফিষীয় ৫:২২-২৯) হ্যাঁ, যে-যুগলরা বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে, তারা তাদের বিয়ের দিনকে উপভোগ করতে চায় কিন্তু সেইসঙ্গে তারা বিয়ের উদ্যোক্তাকেও সম্মান করতে চায়।—আদিপুস্তক ২:১৮-২৪; মথি ১৯:৫, ৬.

কীভাবে একজন বর এই আনন্দঘন মুহূর্তের মর্যাদাকে বাড়াতে পারেন? একজন কনে তার স্বামী ও যিহোবার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য কী করতে পারেন? আর অন্য যারা বিয়েতে যোগ দেয়, তারা কীভাবে বিয়ের দিনের আনন্দকে বাড়াতে পারে? বাইবেলের কিছু নীতি বিবেচনা করা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করবে এবং এই নীতিগুলো কাজে লাগানো সম্ভাব্য সেই সমস্যাগুলো হ্রাস করবে, যেগুলো এই বিশেষ উপলক্ষকে খর্ব করতে পারে।

কার দায়িত্ব?

অনেক দেশে যিহোবার সাক্ষিদের একজন পরিচারক বৈধভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পাদন করতে পারে। এমনকি যেসমস্ত জায়গায় একজন সরকারি প্রতিনিধির মাধ্যমে বৈধ পদক্ষেপ নিতে হয়, সেখানেও কোনো দম্পতি হয়তো বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়া হোক বলে চাইতে পারে। এই বক্তৃতায়, বরকে সাধারণত পরিবারের মস্তকের ঈশ্বরদত্ত ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়। (১ করিন্থীয় ১১:৩) তাই, বিয়েতে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা দেখার প্রধান দায়িত্ব হল বরের। অবশ্য, বিয়ের অনুষ্ঠান এবং এরপরে যেকোনো মেলামেশার ব্যবস্থা সাধারণত আগেই করা হয়ে থাকে। কেন তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসতে পারে?

একটা কারণ হল, বর বা কনের আত্মীয়স্বজন হয়তো বিয়ের পরিকল্পনার মধ্যে কর্তৃত্ব খাটানোর চেষ্টা করে থাকে। রোডল্ফো, যিনি অনেক বিয়ে সম্পাদন করেছেন, তিনি বলেন: “মাঝে মাঝে বরকে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে হয়, বিশেষ করে তারা যদি বিয়ের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের জন্য খরচপাতি দিয়ে সাহায্য করে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠান ও অভ্যর্থনার সময় কী করা উচিত, সেই সম্বন্ধে তাদের হয়তো জোরালো অভিমত থাকে। এটা উপলক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে বরের শাস্ত্রীয় ভূমিকাকে দুর্বল করে দিতে পারে।”

ম্যাক্স, যিনি ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পাদন করছেন, তিনি বলেন: “আমি কনের মধ্যে বিয়ের ও অভ্যর্থনার সময় কী করা হবে, সেই সম্বন্ধে সিন্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করেছি, যেখানে বরের অভিমত প্রকাশ করার খুব কমই সুযোগ থাকে।” ডেভিড, যিনি নিজেও অনেক বিয়ে সম্পাদন করেছেন, তিনি মন্তব্য করেন: “বর হয়তো নেতৃত্ব নেওয়ায় অভ্যস্ত নন আর সাধারণত বিয়ের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট জড়িত থাকেন না।” কীভাবে একজন বর কার্যকারীভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন?

ভাববিনিময় আনন্দ বৃদ্ধি করে

বিয়ের প্রস্তুতির ব্যাপারে তার দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে হলে বরকে অবশ্যই কার্যকারীভাবে ভাববিনিময় করতে হবে। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে: “মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়।” (হিতোপদেশ ১৫:২২) কিন্তু, বিয়ের প্রস্তুতির ব্যাপারে বর যদি প্রথমে কনের, পরিবারের সদস্যদের এবং উপযুক্ত বাইবেলভিত্তিক পরামর্শ দিতে পারে এমন অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করেন, তা হলে ব্যর্থতা বা নিরাশা অনেকটা এড়ানো যেতে পারে।

হ্যাঁ, বাগ্‌দান করেছে এমন এক যুগলের জন্য, পরিকল্পনা ও সম্ভাবনাগুলো নিয়ে প্রথমে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেন? উদাহরণস্বরূপ, আইভান ও তার স্ত্রী ডেলউইনের কাছ থেকে কিছু মন্তব্য শুনুন, যারা অনেক বছর ধরে সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করছে অথচ তারা ভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে এসেছে। তাদের বিয়ের পরিকল্পনা সম্বন্ধে স্মরণ করে আইভান বলেন: “আমার বিয়েতে আমি কী করব সেই সম্বন্ধে আমার নির্দিষ্ট ধারণা ছিল, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল আমার সমস্ত বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান, বিয়ের কেক ও আমার স্ত্রী সাদা বিয়ের পোশাক পরবে। অন্যদিকে, ডেলউইন ছোটখাটো, সাধারণ বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিল, যেখানে কোনো বিয়ের কেক থাকবে না। সে এমনকি বিয়ের গাউন না পরে অন্যকিছু পরার কথা চিন্তা করেছিল।”

কীভাবে এই দম্পতি এই বৈসাদৃশ্যগুলোর সমাধান করেছিল? সদয় ও অকপট ভাববিনিময়ের মাধ্যমে। (হিতোপদেশ ১২:১৮) আইভান আরও বলেন: “আমরা বিয়ের ওপর বাইবেলভিত্তিক প্রবন্ধগুলো, যেমন ১৯৮৪ সালের ১৫ই এপ্রিল প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো পড়েছিলাম। * এই বিষয়বস্তু আমাদেরকে সেই উপলক্ষ সম্বন্ধে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। আমাদের ভিন্ন পটভূমির কারণে আমাদেরকে ব্যক্তিগত পছন্দের বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রে আপোশ করতে হয়েছিল। আমরা একটা মাঝামাঝি অবস্থানে এসেছিলাম।”

আরেট এবং পেনিও একই বিষয় করেছিল। তাদের বিয়ের দিন সম্বন্ধে আরেট বলেন: “পেনি এবং আমি আমাদের বিয়ের দিন সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম আর আমরা একমতে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছিলাম। আমরা সেই দিনের ওপর যিহোবার আশীর্বাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলাম। এ ছাড়া, আমি আমার বাবামার ও মণ্ডলীর অন্যান্য পরিপক্ব বিবাহিত দম্পতির কাছ থেকে উপদেশ চেয়েছিলাম। তাদের পরামর্শ অনেক সাহায্যকারী ছিল। এর ফলে আমাদের বিয়ে চমৎকার হয়েছিল।”

পোশাকআশাক ও সাজগোজের ব্যাপারে মর্যাদা বজায় রাখা

এটা বোধগম্য যে, বর ও কনে উভয়েই তাদের বিয়ের দিনে সুন্দর পোশাক পরতে চাইবে। (গীতসংহিতা ৪৫:৮-১৫) উপযুক্ত পোশাকআশাকের জন্য তারা হয়তো সময়, প্রচেষ্টা ও টাকাপয়সা খরচ করে থাকে। বাইবেলের কোন নীতিগুলো তাদেরকে এমন পোশাক বাছাই করতে সাহায্য করতে পারে, যা একইসঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ও আকর্ষণীয়?

কনে এই উপলক্ষের জন্য যা পরে থাকেন, তা একটু বিবেচনা করুন। যদিও ব্যক্তি বিশেষে ও দেশ ভেদে রুচি আলাদা হতে পারে কিন্তু বাইবেলের উপদেশ সমস্ত জায়গার জন্য প্রযোজ্য। নারীরা “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক।” এটা সব সময়ের নারীদের জন্য প্রযোজ্য আর নিশ্চিতভাবেই এটা বিয়ের দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রকৃত বিষয়টা হল যে, এক আনন্দপূর্ণ বিয়ের জন্য “বহুমূল্য পরিচ্ছদ” আবশ্যকীয় নয়। (১ তীমথিয় ২:৯; ১ পিতর ৩:৩, ৪) এই উপদেশ যখন কাজে লাগানো হয়, তখন তা কতই না পরিতৃপ্তিদায়ক হয়!

পূর্বে উল্লেখিত ডেভিড মন্তব্য করেন: “বেশির ভাগ দম্পতিই বাইবেলের নীতিগুলো অনুসরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে আর তারা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু, কোনো কোনো সময় দেখা গিয়েছে যে, কনে ও কনের সহচরীর গাউন অমার্জিত, গলার ও পিঠের দিকটা অনেকটা নীচু পর্যন্ত কাটা ও পাতলা ছিল।” বিয়ের আগে বর ও কনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান প্রাচীন তাদেরকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করেন। কীভাবে? তারা যে-পোশাকআশাক পরবে বলে ঠিক করেছে, তা খ্রিস্টীয় সভায় পরার জন্য যথেষ্ট মার্জিত কি না, তা জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে। এটা ঠিক যে, পোশাকের ধরন হয়তো সাধারণ সভার পোশাকের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে আর বিয়ের জন্য যে-পোশাক পরা হয়, তা হয়তো স্থানীয় প্রথাকে প্রতিফলিত করে কিন্তু মার্জিত থাকার মান মর্যাদাপূর্ণ খ্রিস্টীয় মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকা উচিত। এমনকি জগতের কেউ কেউ যদিও হয়তো বাইবেলের নৈতিক মানগুলোকে কড়াকড়ি বলে মনে করে কিন্তু সত্য খ্রিস্টানরা জগৎ তাদেরকে এর মতো করে গড়ার জন্য যে-জোর প্রচেষ্টাগুলো করে থাকে, সেগুলোকে প্রতিরোধ করে পরিতৃপ্ত।—রোমীয় ১২:২; ১ পিতর ৪:৪.

“পোশাকআশাক অথবা অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখার পরিবর্তে,” পেনি বলেন, “আরেট ও আমি অনুষ্ঠানের প্রতি, সেই উপলক্ষের আধ্যাত্মিক দিকটার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলাম। সেটাই ছিল সেই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যে-বিশেষ বিষয়গুলো আমার স্মরণে আছে, সেগুলো আমি কী পরেছিলাম বা খেয়েছিলাম তা নয় বরং কাদের সঙ্গে আমি সেই দিন কাটিয়েছিলাম ও যে-ব্যক্তিকে আমি ভালবেসেছি তাকে বিয়ে করার ফলে যে-আনন্দ বোধ করেছিলাম।” কোনো খ্রিস্টান যুগলের তাদের বিয়ের পরিকল্পনা করার সময় এই ধরনের বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত।

কিংডম হল—মর্যাদাপূর্ণ এক স্থান

অনেক খ্রিস্টান দম্পতি কিংডম হলে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করার আকাঙ্ক্ষা করে থাকে, যদি তা সম্ভব হয়। কেন তারা তা করা বেছে নেয়? এক দম্পতি তাদের যুক্তি ব্যাখ্যা করেছিল: “আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে, বিয়ে হল যিহোবার পবিত্র ব্যবস্থা। আমাদের উপাসনাস্থল কিংডম হলে বিয়ে করা আমাদের ওপর শুরু থেকেই এই প্রভাব ফেলতে সাহায্য করেছিল যে, যিহোবাকে আমাদের বিয়ের অংশ করা প্রয়োজন। অন্য কোনো জায়গায় না করে কিংডম হলে বিয়ের অনুষ্ঠান করার আরেকটা উপকার ছিল যে, এটা আমাদের বিয়েতে যোগদানকারী অবিশ্বাসী আত্মীয়স্বজনকে দেখিয়েছিল যে, যিহোবার উপাসনা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

মণ্ডলীর যে-প্রাচীনরা কিংডম হলের দায়িত্বে রয়েছে, তারা যদি সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়, তা হলে দম্পতি যে-প্রস্তুতির কথা বিবেচনা করছে, তা আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া উচিত। একটা যে-উপায়ে বর ও কনে বিয়েতে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান দেখাতে পারে, সেটা হল বিয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানোর ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ হয়ে। আর নিঃসন্দেহেই তারা নিশ্চিত হতে চাইবে যে, সমস্তকিছুই যেন মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে সম্পাদিত হয়। * (১ করিন্থীয় ১৪:৪০) এভাবে তারা অসংগতি প্রদর্শন করা এড়িয়ে চলবে, যা জগতের অনেক বিয়ের বৈশিষ্ট্য।—১ যোহন ২:১৫, ১৬.

যারা বিয়েতে যোগ দেয়, তারাও দেখাতে পারে যে, বিয়ের প্রতি তাদের যিহোবার মতো দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা এমনটা আশা করবে না যে, একটা বিয়ে অন্য খ্রিস্টানদের বিয়েকে ছাড়িয়ে যাবে, যেন কার বিয়ে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ ছিল সেই বিষয়ে কোনো প্রতিযোগিতা রয়েছে। পরিপক্ব খ্রিস্টানরা এও উপলব্ধি করে যে বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতার জন্য কিংডম হলে উপস্থিত থাকা, বিবাহভোজে অথবা এর পরে হয়তো যে-মেলামেশা হয়, সেখানে উপস্থিত থাকার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী। যদি সময় ও পরিস্থিতির কারণে একজন খ্রিস্টানের পক্ষে দুটোর মধ্যে কেবল একটাতে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়, তা হলে কিংডম হলে উপস্থিত থাকার বিষয়টা নিশ্চিতভাবেই প্রথম স্থানে থাকবে। উইলিয়াম নামে একজন প্রাচীন বলেন: “অতিথিরা যদি অযথা কিংডম হলে অনুপস্থিত থাকে কিন্তু পরে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিত হয়, তা হলে সেটা সেই উপলক্ষের পবিত্রতার প্রতি উপলব্ধির অভাবকে প্রকাশ করে। এমনকি আমরা যদি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত না-ও থাকি, তবুও কিংডম হলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমরা বর ও কনের প্রতি আমাদের সমর্থন দেখাতে পারি এবং অবিশ্বাসী আত্মীয়স্বজনের কাছে এক চমৎকার সাক্ষ্য দিতে পারি।”

যে-আনন্দ বিয়ের দিনের পরেও স্থায়ী থাকে

বাণিজ্যিক জগৎ বিয়ের উদ্‌যাপনকে এক বিরাট ব্যবসায় পরিণত করেছে। একটা সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গড় বিয়ের “ব্যয় ২২,০০০ মার্কিন ডলার” অথবা আমেরিকার একটা পরিবারের [বার্ষিক] গড় আয়ের অর্ধেক। বাণিজ্যিক প্রচারণার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, নববিবাহিত অনেক ব্যক্তি অথবা তাদের পরিবার সেই একদিনের জন্য এমন দুর্বহ ঋণের বোঝা গ্রহণ করে, যে-বোঝা তাদের কয়েক বছর ধরে বহন করতে হয়। কারো বিবাহিত জীবন শুরু করার জন্য এই ধরনের কাজ কি বিজ্ঞতার পথ? যারা বাইবেলের নীতিগুলো সম্বন্ধে জানে না বা সেগুলোকে পাত্তা দেয় না, তারা হয়তো এই ধরনের অপচয় বেছে নেয় কিন্তু সত্য খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে তা কতই না আলাদা!

যুক্তিযুক্তভাবে ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিয়ের আকার সীমাবদ্ধ করার ও সেই উপলক্ষের শাস্ত্রীয় দিকগুলোর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে, অনেক খ্রিস্টান দম্পতি তাদের সময় ও সম্পদকে ঈশ্বরের প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণের সঙ্গে মিল রেখে ব্যবহার করতে সমর্থ হয়েছে। (মথি ৬:৩৩) লয়িড ও আলিগজেন্ড্রার উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা তাদের বিয়ের পর থেকে ১৭ বছর ধরে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করছে। লয়িড মন্তব্য করেন: “কেউ কেউ আমাদের বিয়েকে এক সাধারণ ঘটনা হিসেবে দেখেছিল কিন্তু আলিগজেন্ড্রা ও আমি অনেক আনন্দিত ছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম যে আমাদের বিয়ের দিন যেন কাটিয়ে উঠতে হবে এমন টাকাপয়সা সংক্রান্ত এক বোঝা না হয়ে বরং দুজন ব্যক্তির জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যিহোবার ব্যবস্থার এক উদ্‌যাপন হবে।”

আলিগজেন্ড্রা যোগ করেন: “আমরা বিয়ে করার আগে আমি অগ্রগামীর পরিচর্যা করতাম আর কেবল অপচয়মূলক এক বিয়ে করার জন্য আমি সেই বিশেষ সুযোগকে ছেড়ে দিতে চাইনি। আমাদের বিয়ের দিন খুবই বিশেষ এক দিন ছিল। কিন্তু, এটা ছিল আমাদের একসঙ্গে বাকি জীবনযাপন করার কেবলমাত্র প্রথম দিন। আমরা বিয়ে করার অনুষ্ঠানের প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া এড়িয়ে চলার উপদেশ কাজে লাগিয়েছিলাম এবং বিবাহিত হওয়ায় আমাদের জীবনে যিহোবার নির্দেশনা খুঁজেছিলাম। নিশ্চিতভাবে তা আমাদের জন্য যিহোবার আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল।” *

হ্যাঁ, আপনার বিয়ের দিন হল এক বিশেষ উপলক্ষ। সেই দিনে যে-মনোভাব ও কাজগুলো দেখা যায়, তা আপনার ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবনের জন্য এক আদর্শ স্থাপন করতে পারে। তাই, নির্দেশনার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করুন। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) সেই দিনের শাস্ত্রীয় তাৎপর্যকে সর্বাগ্রে মনে রাখুন। আপনাদের ঈশ্বরদত্ত ভূমিকার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সমর্থন করুন। এভাবে আপনি আপনার বিয়ের জন্য এক দৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন এবং যিহোবার আশীর্বাদে আপনার সেই আনন্দ থাকবে, যা আপনার বিয়ের দিনের পরেও স্থায়ী হবে।—হিতোপদেশ ১৮:২২.

[পাদটীকাগুলো]

^ আরও বিষয়বস্তু যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার মধ্যে পাওয়া যায়।

^ দম্পতি যদি কাউকে দিয়ে কিংডম হলে অনুষ্ঠানের ছবি তোলার অথবা ভিডিও করার পরিকল্পনা করে থাকে, তা হলে আগে থেকেই তাদের নিশ্চিত করা উচিত যে, যা কিছু করা হবে তার কোনোকিছুই বিয়ের মর্যাদাকে খর্ব করবে না।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত পারিবারিক সুখের রহস্য (ইংরেজি) বইয়ের ২৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

দম্পতিদের তাদের বিয়ের পরিকল্পনা করার সময় খোলাখুলিভাবে কিন্তু সম্মানের সঙ্গে ভাববিনিময় করা উচিত

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার বিয়ের দিনের আধ্যাত্মিক তাৎপর্যকে সর্বাগ্রে মনে রাখুন