সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

হিতোপদেশ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

হিতোপদেশ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

হিতোপদেশ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন “তিন সহস্র প্রবাদ বাক্য বলিতেন।” (১ রাজাবলি ৪:৩২) আমরা কি তার এই প্রজ্ঞার বাক্যগুলো ব্যবহার করতে পারি? হ্যাঁ, পারি। বাইবেলের এই হিতোপদেশ বইয়ে শলোমনের অনেক প্রবাদ লিপিবদ্ধ রয়েছে, যেটি সা.কা.পূ. প্রায় ৭১৭ সালে লেখা শেষ হয়েছিল। শুধুমাত্র শেষের দুটো অধ্যায়ের লেখক ভিন্ন—যাকির ছেলে আগূর এবং রাজা লমূয়েল। তবে কেউ কেউ মনে করে যে, লমূয়েল হচ্ছে শলোমনেরই আরেকটা নাম।

হিতোপদেশ বইয়ে সংগৃহীত অনুপ্রাণিত বাক্যগুলোর দুটো উদ্দেশ্য রয়েছে—“এতদ্দ্বারা প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়।” (হিতোপদেশ ১:২) এই বাক্যগুলো আমাদের সেই প্রজ্ঞা অর্জন করতে সাহায্য করে, যা হল বিভিন্ন বিষয়কে স্পষ্টভাবে বোঝার ক্ষমতা এবং সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য জ্ঞানকে কাজে লাগানো। এগুলোর মাধ্যমে আমরা উপদেশ বা নৈতিক প্রশিক্ষণও লাভ করি। এই প্রবাদগুলোতে মনোযোগ দেওয়া ও এগুলোর পরামর্শে অবধান করা আমাদের হৃদয়কে প্রভাবিত করতে, আমাদের সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে এবং সাফল্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—ইব্রীয় ৪:১২.

‘প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর এবং উপদেশ ধরিয়া রাখিও’

(হিতোপদেশ ১:১–৯:১৮)

“প্রজ্ঞা বাহিরে উচ্চৈঃস্বরে ডাকে,” শলোমন বলেন। (হিতোপদেশ ১:২০) আমাদের কেন এর উচ্চ ও স্পষ্ট স্বর শোনা উচিত? ২ অধ্যায় প্রজ্ঞা অর্জনের অনেক উপকারিতা সম্বন্ধে উল্লেখ করে। যিহোবার সঙ্গে কীভাবে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা যায়, তা ৩ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। এরপর শলোমন বলেন: “প্রজ্ঞাই প্রধান বিষয়, তুমি প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর; সমস্ত উপার্জ্জন দিয়া সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর। উপদেশ ধরিয়া রাখিও, ছাড়িয়া দিও না।”—হিতোপদেশ ৪:৭, ১৩.

কী আমাদেরকে জগতের অনৈতিক পথগুলো প্রতিহত করতে সাহায্য করবে? হিতোপদেশ ৫ম অধ্যায় এর উত্তর দেয়: পরিণামদর্শিতা কাজে লাগান এবং জগতের প্রলুব্ধকর পথগুলোকে শনাক্ত করুন। এ ছাড়া, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কারণে যে-চরম মূল্য দিতে হয়, সেটাও বিবেচনা করুন। পরবর্তী অধ্যায় সেই অভ্যাস ও মনোভাবগুলোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে, যেগুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলে। একজন দুশ্চরিত্র ব্যক্তি কীভাবে কাজ করে, সেই বিষয়ে ৭ম অধ্যায় বাস্তব তথ্য প্রদান করে। ৮ অধ্যায়ে প্রজ্ঞার মূল্য ও আবেদন আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ৯ম অধ্যায়, যেটি সেই পর্যন্ত আলোচিত প্রবাদগুলোর এক উদ্দীপনামূলক উপসংহার, যা কিনা এক রোমাঞ্চকর দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা আমাদেরকে প্রজ্ঞার অনুধাবন করতে প্রেরণা দেয়।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১:৭; ৯:১০—কোন অর্থে যিহোবার প্রতি ভয় “জ্ঞানের আরম্ভ” এবং “প্রজ্ঞার আরম্ভ”? যিহোবার প্রতি ভয় ছাড়া কোনো জ্ঞান থাকতে পারে না, কারণ তিনিই সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং শাস্ত্রের গ্রন্থকার। (রোমীয় ১:২০; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) তিনিই সমস্ত সত্য জ্ঞানের উৎস। তাই, যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় থেকেই জ্ঞানের আরম্ভ হয়। এ ছাড়া, ঈশ্বরীয় ভয় প্রজ্ঞারও আরম্ভ কারণ জ্ঞান ছাড়া কোনো প্রজ্ঞা থাকতে পারে না। অধিকন্তু, যিহোবার প্রতি ভয়ের অভাব রয়েছে এমন একজন ব্যক্তির যে-জ্ঞানই থাকুক না কেন, সেটা তিনি সৃষ্টিকর্তাকে সম্মান করার জন্য ব্যবহার করবেন না।

৫:৩, বাংলা জুবিলী বাইবেল—কেন একজন বেশ্যাকে ‘বিজাতীয়া স্ত্রীলোক’ বলা হয়েছে? হিতোপদেশ [প্রবচনমালা] ২:১৬, ১৭ পদে এমন একজন নারীকে “পরকীয়া [“বিজাতীয়,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] স্ত্রী” হিসেবে বর্ণনা করে ‘যে আপন ঈশ্বরের নিয়ম ভুলিয়া যায়।’ একজন বেশ্যাসহ যেকেউ মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করে তাকে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে অপরিচিত করে রাখে এমন যেকোনো ব্যক্তিকে বিজাতীয় বলা হতো।—যিরমিয় ২:২৫; ৩:১৩.

৭:১, ২—“আমার কথা সকল” এবং “আমার আজ্ঞা সকল” এর মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত? বাইবেলের শিক্ষাগুলো ছাড়াও, এই কথা ও আজ্ঞা সকলের অন্তর্ভুক্ত হল পরিবারের সদস্যদের উপকারের জন্য বাবামার দ্বারা প্রবর্তিত পরিবারের নিয়মকানুন অথবা বিধি সকল। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের এগুলোসহ তাদের বাবামার কাছ থেকে তারা যে-শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুলো পেয়ে থাকে, সেগুলো মেনে চলতে হবে।

৮:৩০, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন—‘দক্ষ কর্মী’ কে? ব্যক্তিরূপে মূর্ত প্রজ্ঞা নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী বলে। প্রজ্ঞার বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যক্তিরূপে মূর্ত এই প্রজ্ঞা, আক্ষরিক উপায়ে কাজ করা ছাড়াও রূপকভাবে ঈশ্বরের একজাত পুত্র যিশু খ্রিস্টের মানবপূর্ব অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার অনেক অনেক আগে তিনি ‘ঈশ্বরের পথের আরম্ভে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন’ বা তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (হিতোপদেশ ৮:২২) ‘দক্ষ কর্মী’ হিসেবে, সমস্তকিছু সৃষ্টির সময়ে তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিলেন।—কলসীয় ১:১৫-১৭.

৯:১৭—“অপহৃত-জল” কী আর কেন তা “মিষ্ট” লাগে? যেহেতু বাইবেল বিবাহব্যবস্থার মধ্যে যৌনসম্পর্ক উপভোগ করাকে কূপের সতেজতাদায়ক জল পান করার সঙ্গে তুলনা করে, তাই অপহৃত বা চুরি করা জল গোপন অনৈতিক যৌনসম্পর্ককে চিত্রিত করে। (হিতোপদেশ ৫:১৫-১৭) অন্যায় করেও পার পেয়ে যাওয়ার অনুভূতির কারণে এই ধরনের জলকে মিষ্ট বলে মনে হয়।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:১০-১৪. ধনসম্পদ লাভের প্রতিজ্ঞার দ্বারা প্রলোভিত হয়ে পাপীদের সঙ্গে তাদের মন্দ পথগুলোতে জড়িত হওয়ার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।

৩:৩. দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়া ও সত্যকে আমাদের উচ্চমূল্য দেওয়া এবং সেগুলোকে কণ্ঠদেশের এক অমূল্য হারের মতো দৃশ্যত প্রদর্শন করা উচিত। এ ছাড়া, এই গুণগুলোকে আমাদের হৃদয়ে গেঁথে রাখতে হবে, সেগুলোকে আমাদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলতে হবে।

৪:১৮. আধ্যাত্মিক জ্ঞান অগ্রগতিশীল। জ্যোতিতে থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই নম্রতা ও মৃদুতা প্রকাশ করে চলতে হবে।

৫:৮. সমস্ত ধরনের অনৈতিক প্রভাব, তা সেগুলো গানবাজনা, আমোদপ্রমোদ, ইন্টারনেট অথবা বইপত্র ও পত্রপত্রিকা যেটার মাধ্যমেই আসুক না কেন, আমাদের সেগুলো থেকে দূরে থাকা উচিত।

৫:২১. যিহোবাকে ভালবাসেন এমন একজন ব্যক্তি কি সত্য ঈশ্বরের সঙ্গে তার উত্তম সম্পর্ককে ক্ষণিকের আনন্দের সঙ্গে বিনিময় করবেন? অবশ্যই না! নৈতিক শুদ্ধতা বজায় রাখার সবচেয়ে জোরালো চালিকাশক্তি হল এই বিষয়ে অবগত থাকা যে, যিহোবা আমাদের পথগুলো লক্ষ করেন এবং তাঁর কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

৬:১-৫. এই পদগুলোতে ‘জামিন হইবার’ বা অন্যদের হয়ে বোকার মতো টাকাপয়সা সংক্রান্ত চুক্তি করার বিরুদ্ধে আমাদের জন্য কত চমৎকার উপদেশই না রয়েছে! সতর্কভাবে পরীক্ষা করে দেখার পর আমাদের গৃহীত পদক্ষেপকে যদি বোকামি বলে মনে হয়, তা হলে অবিলম্বে বার বার অনুরোধ করে ‘আমাদের বন্ধুর সাধ্যসাধনা’ করা এবং বিষয়গুলো সংশোধন করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করা উচিত।

৬:১৬-১৯. প্রায় সমস্ত ধরনের অন্যায়ই এখানে উল্লেখিত সাতটা মৌলিক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর প্রতি আমাদের ঘৃণা গড়ে তোলা উচিত।

৬:২০-২৪. ছেলেবেলা থেকে শাস্ত্রীয় শিক্ষা অনুযায়ী বড় হওয়া, একজন ব্যক্তিকে যৌন অনৈতিকতার ফাঁদ থেকে সুরক্ষা করতে পারে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে বাবামাদের অবহেলা করা উচিত নয়।

৭:৪. প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি আমাদের ভালবাসা গড়ে তোলা উচিত।

আমাদের নির্দেশনার জন্য ছোট ছোট প্রবাদ

(হিতোপদেশ ১০:১–২৯:২৭)

শলোমনের অবশিষ্ট প্রবাদগুলো সংক্ষিপ্ত, ছোট ছোট বাক্য। সেগুলো মূলত বৈসাদৃশ্য, সাদৃশ্য ও তুলনার আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে আর আমাদের আচরণ, কথাবার্তা ও মনোভাবের ক্ষেত্রে সেগুলো জোরালো শিক্ষা প্রদান করে।

১০ থেকে ২৪ অধ্যায় যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় থাকার মূল্যের ওপর জোর দেয়। ২৫ থেকে ২৯ অধ্যায়ের প্রবাদগুলো “যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের লোকেরা” প্রতিলিপি করেছিল। (হিতোপদেশ ২৫:১) এই প্রবাদগুলো যিহোবার ওপর নির্ভরশীলতা সম্বন্ধে এবং অন্যান্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেয়।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১০:৬—কীভাবে “দুষ্টগণের মুখ উপদ্রব ঢাকিয়া রাখে”? এটা এই অর্থে হতে পারে যে, অন্যদের ক্ষতি করার জন্য মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে দুষ্টরা তাদের বিদ্বেষপূর্ণ অভিসন্ধি ঢেকে বা গোপন রাখে। অথবা এইরকম হতে পারে যে, সাধারণত দুষ্টদের সঙ্গে যেহেতু শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করা হয়, তাই অন্যদের কাছ থেকে তারা যে-বিরোধিতা লাভ করে, তা তাদেরকে চুপ করিয়ে দেয়।

১০:১০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন—“যে লোক চোখ টিপে ইশারা করে সে” কীভাবে দুঃখ দেয়? “যে ব্যক্তি পাষণ্ড” সে শুধুমাত্র ‘মুখের কুটিলতার’ আশ্রয় নেয় না কিন্তু সেইসঙ্গে তার হাবভাব যেমন ‘চোখ টিপে ইশারা করার’ দ্বারা তার উদ্দেশ্যগুলো লুকোতে চেষ্টা করে। (হিতোপদেশ ৬:১২, ১৩) এই ধরনের প্রতারণা, সেই প্রতারণার শিকার ব্যক্তির জন্য প্রচণ্ড মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

১০:২৯—“সদাপ্রভুর পথ” কী? এটা যিহোবা যেভাবে মানবজাতির সঙ্গে আচরণ করেন সেই পথকে নির্দেশ করে, আমাদের যে-জীবনধারা অনুসরণ করা উচিত সেটাকে নয়। মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের তাৎপর্য হল, সিদ্ধ বা নির্দোষ ব্যক্তিদের জন্য নিরাপত্তা কিন্তু দুষ্টদের পক্ষে সর্বনাশ।

১১:৩১—দুর্জনের চেয়ে কম পরিমাণে হলেও, ধার্মিক ব্যক্তিকে কেন প্রতিফল দেওয়া হবে? এখানে প্রতিফল বলতে প্রত্যেক ব্যক্তি যে-শাস্তি লাভ করে এবং তা কতটা পরিমাণে লাভ করে, সেটাকে বোঝানো হয়েছে। দুর্জন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে এবং ভাল কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করে। তাই সে চরম শাস্তি লাভ করার যোগ্য আর তা পেয়েও থাকে। কিন্তু, একজন ধার্মিক ব্যক্তি যখন ভুল করেন, তখন তিনি তার ভুলগুলোর জন্য শাসন লাভ করবেন আর এটাই হল তার প্রতিফল।

১২:২৩—কীভাবে একজন ব্যক্তি “জ্ঞান আচ্ছাদন করে”? জ্ঞান আচ্ছাদন করার অর্থ এই নয় যে, একজন ব্যক্তি তা একেবারেই প্রদর্শন করেন না। এর অর্থ হল একজন ব্যক্তি বড়াই করার মাধ্যমে জ্ঞান জাহির করেন না, বরং বিচক্ষণতার সঙ্গে জ্ঞান প্রদর্শন করেন।

১৮:১৯—কীভাবে ‘একজন বিরক্ত ভ্রাতা দৃঢ় নগর অপেক্ষা [দুর্জ্জয়]’? অবরুদ্ধ এক দৃঢ় নগরের মতো এই ধরনের একজন ব্যক্তি হয়তো একগুঁয়েভাবে ভুল ক্ষমা করতে প্রত্যাখ্যান করেন। তার এবং যিনি তাকে বিরক্ত করেছেন সেই ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ সহজেই “দুর্গের অর্গলস্বরূপ” দুর্জয় হয়ে উঠতে পারে।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১০:১১-১৪. আমাদের কথাবার্তাকে গঠনমূলক করার জন্য আমাদের মনকে সঠিক জ্ঞান দিয়ে পূর্ণ করা, আমাদের হৃদয় প্রেমের দ্বারা প্রণোদিত হওয়া এবং আমরা যা বলি, তা প্রজ্ঞার দ্বারা নির্ণয় করা উচিত।

১০:১৯; ১২:১৮; ১৩:৩; ১৫:২৮; ১৭:২৮. আমরা যেন অতিরিক্ত কথাবার্তা না বলি আর আমাদের কথাবার্তা যেন বিবেচনাপূর্ণ হয়।

১১:১; ১৬:১১; ২০:১০, ২৩. যিহোবা চান আমরা যেন ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে সৎ হই।

১১:৪. ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন, সভায় উপস্থিতি, প্রার্থনা ও ক্ষেত্রের পরিচর্যাকে উপেক্ষা করে বস্তুগত ধনসম্পদের পিছনে ছোটা বোকামি।

১৩:৪. মণ্ডলীতে দায়িত্ব অথবা নতুন জগতে জীবন লাভের জন্য শুধুমাত্র “লালসা” করাই যথেষ্ট নয়। চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য আমাদের অবশ্যই পরিশ্রমী হতে ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে প্রচেষ্টাও করতে হবে।

১৩:২৪; ২৯:১৫, ২১. একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা তার সন্তানকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেন না অথবা তার ভুলগুলোকে উপেক্ষা করেন না। এর পরিবর্তে, এই ধরনের ভুল গভীরভাবে বদ্ধমূল হওয়ার আগেই একজন বাবা অথবা মা তা উপড়ে ফেলার জন্য সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

১৪:১০. যেহেতু আমাদের মনের গভীরতম অনুভূতি সবসময় সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় না অথবা অন্যেরা সবসময়ই সেটা বুঝতে পারে না, তাই তারা যে-সান্ত্বনা দেয় তা সীমিত হতে পারে। একমাত্র যিহোবার ওপর নির্ভর করার মাধ্যমেই আমাদের হয়তো কিছু সমস্যা সহ্য করতে হবে।

১৫:৭. আমরা যা জানি, তার সবই কাউকে একবারেই জানিয়ে দেওয়া উচিত নয়, ঠিক যেমন একজন কৃষক একটা জায়গাতেই তার সমস্ত বীজ বপন করেন না। জ্ঞানবান বা বিজ্ঞ ব্যক্তি প্রয়োজন অনুযায়ী ধীরে ধীরে অল্প অল্প জ্ঞান ছড়িয়ে দেন।

১৫:১৫; ১৮:১৪. আশাবাদী মনোভাব বজায় রাখা আমাদের এমনকি সংকটময় পরিস্থিতিতেও আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

১৭:২৪. যার চোখ ও মন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি কেন্দ্রীভূত না হয়ে বিপথগামী হয় এমন একজন “হীনবুদ্ধি” ব্যক্তির বিপরীতে, আমাদের বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত, যেন আমরা বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতে পারি।

২৩:৬-৮. আমাদের কপট আতিথেয়তা দেখানোর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা উচিত।

২৭:২১. প্রশংসা প্রকাশ করতে পারে যে, আমরা কেমন ব্যক্তি। নম্রতা প্রকাশ পায়, যদি প্রশংসা আমাদেরকে আমরা যে যিহোবার কাছে ঋণী তা স্বীকার করতে পরিচালিত করে ও তাঁকে সেবা করা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। কিন্তু, প্রশংসা যখন শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে, তখন নম্রতার অভাব প্রকাশ পায়।

২৭:২৩-২৭. মেষপালন সংক্রান্ত একটা পরিবেশ ব্যবহার করে, এই প্রবাদগুলো অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করে সাধাসিধে জীবনযাপনের মধ্যে পরিতৃপ্তি খোঁজার মূল্যের ওপর জোর দেয়। এগুলো বিশেষভাবে আমাদের ওপর ছাপ ফেলা উচিত, যেন আমরা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। *

২৮:৫. আমরা যদি প্রার্থনা ও তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে ‘সদাপ্রভুর অন্বেষণ’ করি, তা হলে তাঁকে গ্রহণযোগ্যভাবে উপাসনা করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ‘সকলই বুঝিতে পারিব।’

“ভারবাণী”

(হিতোপদেশ ৩০:১–৩১:৩১)

বাইবেলের হিতোপদেশ বইটি দুটো “ভারবাণী” দিয়ে শেষ হয়েছে। (হিতোপদেশ ৩০:১; ৩১:১) ভাবিয়ে তোলার মতো তুলনাগুলো ব্যবহার করে আগূরের বার্তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে, লোভ হল অতৃপ্ত এবং তা দেখায় যে, একজন যুবতীকে প্রতারণা করার জন্য একজন পুরুষ যে-উপায়গুলো ব্যবহার করেন, সেগুলো শনাক্ত করা কতটা কঠিন। * এ ছাড়া, তা আত্মপ্রশংসা ও উত্তেজিত হয়ে কথাবার্তা বলার বিরুদ্ধে সতর্ক করে।

লমূয়েল তার মায়ের কাছ থেকে যে-ভারবাণী লাভ করেন, তাতে দ্রাক্ষারস ও মদ্যজাতীয় পানীয়ের ব্যবহার এবং সেইসঙ্গে ধার্মিকতায় বিচার সম্পাদন করার বিষয়ে উপকারজনক পরামর্শ রয়েছে। গুণবতী স্ত্রীর বর্ণনা এই বিবৃতি দিয়ে শেষ হয়: “তোমরা তাঁহার হস্তের ফল তাঁহাকে দেও, . . . তাঁহার ক্রিয়া তাঁহার প্রশংসা করুক।”—হিতোপদেশ ৩১:৩১.

প্রজ্ঞা অর্জন করুন, উপদেশ গ্রহণ করুন, ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তুলুন, যিহোবার ওপর নির্ভর করুন। অনুপ্রাণিত প্রবাদগুলো কত মূল্যবান শিক্ষাই না প্রদান করে! আসুন আমরা সর্বাত্মকভাবে এই উপদেশগুলো কাজে লাগাই আর এভাবে সেই সুখ উপভোগ করি, যা এমন একজন ব্যক্তি উপভোগ করে, “যে সদাপ্রভুকে ভয় করে।”—গীতসংহিতা ১১২:১, NW.

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৯১ সালের ১লা আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ১৯৯২ সালের ১লা অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩২ পৃষ্ঠা দেখুন।

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা হলেন সমস্ত সত্য জ্ঞানের উৎস

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘জ্ঞান ছড়াইয়া দিবার’ অর্থ কী?