“তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর”
“তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর”
“তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর। বৎস, তুমি পরকীয়া স্ত্রীতে কেন মোহিত হইবে?” —হিতোপদেশ ৫:১৮, ২০.
১, ২. কেন বলা যেতে পারে যে, একজন স্বামী ও তার স্ত্রীর মধ্যে রোমান্টিক প্রেম ধন্য?
বাইবেল যৌনসম্পর্কের বিষয়ে খোলাখুলিভাবে বলে। হিতোপদেশ ৫:১৮, ১৯ পদে আমরা পড়ি: “তোমার উনুই ধন্য হউক, তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর। সে প্রেমিকা হরিণী ও কমনীয়া বাতপ্রমীবৎ; তাহারই কুচযুগ দ্বারা তুমি সর্ব্বদা আপ্যায়িত হও, তাহার প্রেমে তুমি সতত মোহিত থাক।”
২ এখানে “উনুই” শব্দটি যৌন পরিতৃপ্তির উৎসকে নির্দেশ করে। এটা এই অর্থে ধন্য যে, বিবাহিত সাথিরা নিজেদের মধ্যে যে-রোমান্টিক প্রেম ও মোহিত অবস্থা বা পরমানন্দের অনুভূতি উপভোগ করে, তা ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা উপহার। তবে, এই অন্তরঙ্গতা শুধুমাত্র বৈবাহিক ব্যবস্থার মধ্যেই উপভোগ করতে হবে। তাই, প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা ও হিতোপদেশ বইয়ের একজন লেখক শলোমন উত্তর চাওয়া হয়নি, এমনভাবে জিজ্ঞেস করেন: “বৎস, তুমি পরকীয়া স্ত্রীতে কেন মোহিত হইবে? বিজাতীয়ার বক্ষ কেন আলিঙ্গন করিবে?”—হিতোপদেশ ৫:২০.
৩. (ক) অনেক বিয়ের দুঃখজনক বাস্তবতা কী? (খ) পারদারিকতাকে ঈশ্বর কীভাবে দেখেন?
৩ বিয়ের দিনে একজন পুরুষ ও নারী পরস্পরকে ভালবাসার এবং বিশ্বস্ত থাকার এক গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা করে। তা সত্ত্বেও, অনেক বিয়ে পারদারিকতার কারণে ভেঙে যায়। বস্তুতপক্ষে, ২৫টা গবেষণা বিশ্লেষণ করার পর, একজন মহিলা গবেষক এই উপসংহারে এসেছিলেন যে, “২৫ শতাংশ স্ত্রী ও ৪৪ শতাংশ স্বামী বিয়ের বাইরে যৌনসম্পর্ক করেছে।” প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “ভ্রান্ত হইও না; যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী . . . তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পারদারিকতা ঈশ্বরের চোখে গুরুতর পাপ আর সত্য উপাসকদের অবশ্যই বৈবাহিক অবিশ্বস্ততার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। কী আমাদেরকে ‘বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল রাখিতে’ সাহায্য করবে?—ইব্রীয় ১৩:৪.
প্রবঞ্চক হৃদয় সম্বন্ধে সাবধান থাকুন
৪. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে একজন বিবাহিত খ্রিস্টান অনিচ্ছাকৃতভাবে বিয়ের বাইরে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন?
৪ আজকের অধঃপতিত নৈতিক পরিবেশে অনেক লোকের “চক্ষু ব্যভিচারে পরিপূর্ণ এবং পাপ হইতে নিরস্ত হইতে পারে না।” (২ পিতর ২:১৪) তারা স্বেচ্ছায় বিয়ের বাইরে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কিছু দেশে বিরাট সংখ্যক মহিলা কর্মক্ষেত্রে ঢুকেছে এবং সেখানে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করার ফলে কর্মক্ষেত্রে অনুপযুক্ত রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও, ইন্টারনেট চ্যাট রুমের কারণে এমনকি সবচেয়ে লাজুক ব্যক্তির পক্ষেও অনলাইনে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব শুরু করা সহজ হয়ে উঠেছে। অনেক বিবাহিত ব্যক্তি তাদের প্রতি কী ঘটছে, তা বোঝার আগেই এই ধরনের ফাঁদে পড়ে যায়।
৫, ৬. কীভাবে একজন খ্রিস্টান মহিলা এক বিপদজনক পরিস্থিতির ফাঁদে পড়েছিলেন আর তা থেকে আমরা কী শিখি?
৫ এখানে আমরা মেরি বলে উল্লেখ করছি এমন একজন খ্রিস্টানের কথা বিবেচনা করুন যে, কীভাবে তিনি এমন একটা পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন, যা তাকে প্রায় যৌন অনৈতিকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তার স্বামী, যিনি একজন যিহোবার সাক্ষি নন, তিনি বলতে গেলে তার পরিবারের প্রতি কোনো ভালবাসাই দেখাতেন না। মেরি কয়েক বছর আগের কথা মনে করেন, যখন তার স্বামীর এক সহকর্মীর সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। সেই ব্যক্তি বেশ নম্রভদ্র ছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি এমনকি মেরির ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। “তিনি অত্যন্ত চমৎকার ব্যক্তি ছিলেন আর আমার স্বামীর থেকে অনেক ভিন্ন ছিলেন,” তিনি বলেন। শীঘ্রই মেরি ও তার স্বামীর সহকর্মী রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। “আমি পারদারিকতা করছি না,” তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, “আর সেই ব্যক্তি বাইবেলের প্রতি আগ্রহী। আমি হয়তো তাকে সাহায্য করতে পারব।”
৬ তার রোমান্টিক আসক্তি পারদারিকতার দিকে পরিচালিত করার আগেই মেরি চেতনা ফিরে পেয়েছিলেন। (গালাতীয় ৫:১৯-২১; ইফিষীয় ৪:১৯) তার বিবেক কাজ করতে শুরু করে এবং তিনি বিষয়গুলোকে সংশোধন করেন। মেরির অভিজ্ঞতা দেখায় যে, “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য।” (যিরমিয় ১৭:৯) বাইবেল আমাদের উপদেশ দেয়: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
‘সতর্ক লোক আপনাকে লুকায়’
৭. বৈবাহিক সমস্যা রয়েছে এমন কাউকে সাহায্য করার সময় কোন শাস্ত্রীয় উপদেশ অনুসরণ করা সুরক্ষাজনক হবে?
৭ “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (১ করিন্থীয় ১০:১২) আর হিতোপদেশ ২২:৩ পদ বলে: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়।” ‘আমার প্রতি কিছু ঘটবে না,’ অতিরিক্ত আস্থা সহকারে এই চিন্তা করার পরিবর্তে সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে এমন পরিস্থিতি সম্বন্ধে আগে থেকেই বোঝা বিজ্ঞতার কাজ। উদাহরণস্বরূপ, এমন কোনো বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু হওয়া এড়িয়ে চলুন, যিনি বিয়েতে জটিল সমস্যাগুলো ভোগ করছেন। (হিতোপদেশ ১১:১৪) সেই ব্যক্তিকে বলুন যে, বৈবাহিক সমস্যাগুলো নিয়ে তার বিবাহসাথি বা তার বিয়ে সফল হোক বলে চান সমলিঙ্গের এমন কোনো পরিপক্ব খ্রিস্টান অথবা প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলা সবচেয়ে উত্তম। (তীত ২:৩, ৪) যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীর প্রাচীনরা এই ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে। একজন প্রাচীনের যখন কোনো খ্রিস্টান বোনের সঙ্গে একান্তে কথা বলার প্রয়োজন হয়, তখন তিনি তা জনসমক্ষে—যেমন কিংডম হলে—বলে থাকেন।
৮. কর্মক্ষেত্রে কোন সতর্কতা অপরিহার্য?
৮ কর্মক্ষেত্রে এবং অন্যান্য জায়গায় এমন পরিস্থিতি সম্বন্ধে সাবধান থাকুন, যা অন্তরঙ্গতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নির্ধারিত সময়ের পর বাড়তি সময় বিপরীত লিঙ্গের কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা প্রলোভনের দিকে পরিচালিত করতে পারে। বিবাহিত পুরুষ অথবা নারী হিসেবে আপনার কথাবার্তা ও আচারআচরণের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত যে, আপনার বিবাহসাথি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে আপনি আগ্রহী নন। ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুধাবনকারী একজন ব্যক্তি হিসেবে নিশ্চিতভাবেই আপনি প্রেমের ভান করার অথবা আপনার পোশাক-আশাক ও সাজগোজের মাধ্যমে অসংগত মনোযোগ আকর্ষণ করাতে চাইবেন না। (১ তীমথিয় ৪:৮; ৬:১১; ১ পিতর ৩:৩, ৪) কর্মক্ষেত্রে আপনার বিবাহসাথির ও সন্তানদের ছবি রাখা আপনার ও অন্যদের জন্য এই প্রত্যক্ষ অনুস্মারক হিসেবে কাজ করবে যে, আপনার কাছে আপনার পরিবারের গুরুত্ব রয়েছে। অন্যদের প্রলুব্ধকর প্রস্তাবগুলোকে কখনো উৎসাহিত না করার—এমনকি প্রশ্রয় না দেওয়ার—বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন।—ইয়োব ৩১:১.
“তুমি আপন প্রিয়া ভার্য্যার সহিত সুখে জীবন যাপন কর”
৯. কোন ধারাবাহিক ঘটনাগুলো নতুন রোমান্টিক সম্পর্ককে মুগ্ধকর করে তুলতে পারে?
৯ হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন। বিয়ের বাইরে কারো প্রতি রোমান্টিক আকর্ষণ এই বিষয়ের এক ইঙ্গিত হতে পারে যে, একজন স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পরের চাহিদার প্রতি মনোযোগী নন। হতে পারে যে, একজন স্ত্রীকে ক্রমাগত উপেক্ষা করা হচ্ছে অথবা একজন স্বামীকে সবসময় সমালোচনা করা হচ্ছে। হঠাৎ করে আরেকজন ব্যক্তির—কর্মক্ষেত্রে অথবা এমনকি মণ্ডলীতে, যেখানেই হোক না কেন—ঠিক সেই গুণাবলি রয়েছে বলে মনে হতে পারে, যেগুলোর ঘাটতি নিজের সাথির মধ্যে রয়েছে। শীঘ্রই আসক্তি গড়ে ওঠে এবং নতুন সম্পর্ক এতটাই মুগ্ধকর হয়ে ওঠে যে, সেটাকে আর প্রতিহত করা যায় না। এই সূক্ষ্ম ধারাবাহিক ঘটনাগুলো বাইবেলের এই উক্তির সত্যতাকে নিশ্চিত করে: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়।”—যাকোব ১:১৪.
১০. কীভাবে স্বামী ও স্ত্রীরা তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করতে পারে?
১০ তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে—তা ভালবাসা, বন্ধুত্ব অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক চরম পরীক্ষার সময় সাহায্য করা যা-ই হোক না কেন—পরিতৃপ্ত করার জন্য বিয়ের বাইরে দৃষ্টি দেওয়ার পরিবর্তে, স্বামী ও স্ত্রীর তাদের সাথির সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্ককে দৃঢ় করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। তা হলে, যেকোনোভাবেই হোক একসঙ্গে সময় কাটান এবং পরস্পরের আরও নিকটবর্তী হোন। যে-বিষয়টা আপনাকে প্রেমে পড়তে পরিচালিত করেছিল, তা নিয়ে চিন্তা করুন। যিনি আপনার স্বামী বা স্ত্রী হয়েছেন, তার প্রতি আপনার যে-উষ্ণ অনুভূতি ছিল, তা পুনরায় অর্জন করার চেষ্টা করুন। আপনারা দুজন একত্রে যে-উপভোগ্য সময় কাটিয়েছিলেন, তা কল্পনা করুন। বিষয়টা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন। গীতরচক দায়ূদ যিহোবার কাছে অনুনয় করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও।” (গীতসংহিতা ৫১:১০) ‘সূর্য্যের নীচে ঈশ্বর আপনাকে জীবনের যত দিন দিয়াছেন, আপনার সেই সমস্ত দিন থাকিতে আপনি আপন প্রিয়া ভার্য্যার সহিত সুখে জীবন যাপন করিবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন।—উপদেশক ৯:৯.
১১. বিবাহবন্ধনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা কোন ভূমিকা পালন করে?
১১ বিবাহবন্ধনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং বুদ্ধি বা বিচক্ষণতার মূল্যকে উপেক্ষা করা যায় না। হিতোপদেশ ২৪:৩, ৪ পদ বলে: “প্রজ্ঞা দ্বারা গৃহ নির্ম্মিত হয়, আর বুদ্ধি দ্বারা তাহা স্থিরীকৃত হয়; জ্ঞান দ্বারা কুঠরী সকল পরিপূর্ণ হয়, বহুমূল্য ও মনোরম্য সমস্ত দ্রব্যে।” যে-মূল্যবান বিষয়গুলো এক সুখী পরিবারকে পূর্ণ করে, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল প্রেম, আনুগত্য, ঈশ্বরীয় ভয় এবং বিশ্বাসের মতো গুণাবলি। এগুলো অর্জন করার জন্য ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন। তাই, বিবাহিত দম্পতিদের বাইবেলের আন্তরিক ছাত্র হওয়া উচিত। আর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? রোজকার সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রজ্ঞার প্রয়োজন, যেটি হল শাস্ত্রীয় জ্ঞানকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা। আর একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি তার সাথির চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো বুঝতে সক্ষম। (হিতোপদেশ ২০:৫) “বৎস, আমার প্রজ্ঞায় অবধান কর,” শলোমনের মাধ্যমে যিহোবা বলেন। “আমার বুদ্ধির প্রতি কর্ণপাত কর।”—হিতোপদেশ ৫:১.
যখন “ক্লেশ” দেখা দেয়
১২. বিবাহিত দম্পতিরা যে বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই কেন?
১২ কোনো বিয়েই নিখুঁত নয়। বাইবেল এমনকি বলে যে, স্বামী ও স্ত্রীদের “দৈহিক ক্লেশ” ঘটবে। (১ করিন্থীয় ৭:২৮) উদ্বিগ্নতা, অসুস্থতা, তাড়না এবং অন্যান্য বিষয় বিয়েতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখন আপনাদের এমন অনুগত বিবাহসাথি হিসেবে একত্রে সমাধান খুঁজতে হবে, যারা যিহোবাকে খুশি করার চেষ্টা করে।
১৩. একজন স্বামী ও স্ত্রী কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেদেরকে বিশ্লেষণ করতে পারে?
১৩ সাথিরা পরস্পরের প্রতি যেভাবে আচরণ করে, সেই কারণে যদি বিয়ে চাপের মধ্যে থাকে, তা হলে কী? সমাধান খোঁজার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, হতে পারে যে নির্দয় কথাবার্তার ধরন ধীরে ধীরে তাদের বিয়েতে সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে আর এখন তা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। (হিতোপদেশ ১২:১৮) আগের প্রবন্ধে যেমন আলোচনা করা হয়েছে যে, এটা ধ্বংসাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে। বাইবেলের একটা প্রবাদ বলে: “বরং নির্জ্জন ভূমিতে বাস করা ভাল, তবু বিবাদিনী ও কোপনা স্ত্রীর সঙ্গে বাস করা ভাল নয়।” (হিতোপদেশ ২১:১৯) আপনি যদি এই ধরনের এক বিয়ের একজন স্ত্রী হয়ে থাকেন, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার স্বভাবের কারণে কি আমার স্বামীর পক্ষে আমার সঙ্গে সময় কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে?’ বাইবেল স্বামীদের বলে: “তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর, তাহাদের প্রতি কটুব্যবহার করিও না।” (কলসীয় ৩:১৯) আপনি যদি একজন স্বামী হয়ে থাকেন, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার আচারআচরণ কি আবেগহীন, যা আমার স্ত্রীকে অন্য কোথাও সান্ত্বনা খুঁজতে প্রলুব্ধ করে?’ অবশ্যই, যৌন অনৈতিকতার ক্ষেত্রে কোনো অজুহাতই খাটে না। কিন্তু, এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে পারে বলে সমস্যা নিয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করার উত্তম কারণ রয়েছে।
১৪, ১৫. বিয়ের বাইরে দৃষ্টি দেওয়া কেন বৈবাহিক সমস্যাগুলোর সমাধান নয়?
১৪ বিয়ের বাইরে রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে সান্ত্বনা খোঁজা বৈবাহিক সমস্যার সমাধান নয়। এই ধরনের সম্পর্ক কোন দিকে পরিচালিত করে? এক নতুন ও আরও উত্তম বিবাহের দিকে? কেউ কেউ হয়তো তা-ই মনে করতে পারে। ‘শত হলেও’ তারা যুক্তি দেখায়, ‘এই ব্যক্তির মধ্যে সেই গুণাবলি রয়েছে, যেগুলো একজন সাথির মধ্যে থাকুক বলে আমি চাই।’ কিন্তু, এই ধরনের যুক্তি হল মিথ্যা কারণ যে-ব্যক্তি তার সাথিকে ত্যাগ করে—অথবা আপনাকে আপনার সাথিকে ত্যাগ করতে উৎসাহিত করে—বিয়ের পবিত্রতার প্রতি তার মারাত্মক অসম্মান রয়েছে। তাই এটা আশা করা অযৌক্তিক যে, সেই নতুন সম্পর্ক আরও উত্তম এক বিয়ের দিকে পরিচালিত করবে।
১৫ পূর্বে উল্লেখিত মেরি তার কাজের পরিণতি এবং সেইসঙ্গে তার ও অন্য কারো পক্ষে ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারানোর সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করেছিলেন। (গালাতীয় ৬:৭) “আমি যখন আমার স্বামীর সহকর্মীর প্রতি আমার অনুভূতি নিয়ে পরীক্ষা করতে শুরু করেছিলাম,” তিনি বলেন, “তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই ব্যক্তির যদি কখনো সত্যের জ্ঞান জানার সুযোগ থাকে, তা হলে আমি সেটার বিরুদ্ধে কাজ করছি। অন্যায় করা, এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে এবং তা অন্যদের বিঘ্ন জন্মাবে!”—২ করিন্থীয় ৬:৩.
সবচেয়ে জোরালো উদ্দীপক
১৬. নৈতিক অশুদ্ধতার কিছু পরিণাম কী?
১৬ বাইবেল সাবধান করে: “পরকীয়া স্ত্রীর ওষ্ঠ হইতে মধু ক্ষরে, তাহার তালু তৈল অপেক্ষাও স্নিগ্ধ; কিন্তু তাহার শেষ ফল নাগদানার ন্যায় তিক্ত, দ্বিধার খড়্গের ন্যায় তীক্ষ্ণ।” (হিতোপদেশ ৫:৩, ৪) নৈতিক অশুদ্ধতার শেষফল বা পরিণাম অনেক বেদনাদায়ক এবং মারাত্মক হতে পারে। এর অন্তর্ভুক্ত হল দংশনকারী বিবেক, যৌনবাহিত রোগব্যাধি এবং অবিশ্বস্ত ব্যক্তির সাথির আবেগগত ক্ষতি। নিশ্চিতভাবেই, বৈবাহিক অবিশ্বস্ততার দিকে পরিচালিত করতে পারে, এমন এক পথে পা না বাড়ানোর এটাই হল কারণ।
১৭. বৈবাহিক বিশ্বস্ততা বজায় রাখার সবচেয়ে জোরালো কারণ কী?
১৭ যে-মূল কারণে বৈবাহিক অবিশ্বস্ততা অন্যায়, সেটা হল যে বিয়ের উদ্যোক্তা এবং যৌন ক্ষমতার দাতা যিহোবা এটাকে নিন্দা করেন। ভাববাদী মালাখির মাধ্যমে তিনি বলেন: ‘আমি বিচার করিতে তোমাদের নিকটে আসিব; এবং পারদারিকের বিরুদ্ধে আমি সত্বর সাক্ষী হইব।’ (মালাখি ৩:৫) যিহোবা যা দেখেন সেই সম্বন্ধে হিতোপদেশ ৫:২১ পদ বলে: “মনুষ্যের পথ ত সদাপ্রভুর দৃষ্টিগোচর; তিনি তাহার সকল পথ সমান [“যাচাই,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করেন।” হ্যাঁ, “তাঁহার চক্ষুর্গোচরে সকলই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে, যাঁহার কাছে আমাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে।” (ইব্রীয় ৪:১৩) তা হলে, বৈবাহিক বিশ্বস্ততা বজায় রাখার সবচেয়ে জোরালো উদ্দীপক হল এই বিষয়টা উপলব্ধি করা যে, অবিশ্বস্ততা যত গোপনীয়ই অথবা শারীরিক ও সামাজিক পরিণতি যত ছোট বলেই মনে হোক না কেন, যৌন অশুদ্ধতার যেকোনো কাজই যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়।
১৮, ১৯. পোটীফরের স্ত্রীর সঙ্গে যোষেফের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখি?
১৮ কুলপতি যাকোবের ছেলে যোষেফের উদাহরণ দেখায় যে, ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তিতে থাকার আকাঙ্ক্ষা হল এক শক্তিশালী উদ্দীপক। ফরৌণের কর্মচারী পোটীফরের দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাওয়ায় যোষেফ পোটীফরের ঘরে বিশেষ অবস্থান লাভ করেছিলেন। এ ছাড়া, যোষেফ “রূপবান্ ও সুন্দর ছিলেন,” যা পোটীফরের স্ত্রীর নজর এড়ায়নি। প্রতিদিন তিনি যোষেফকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করতেন কিন্তু তার প্রচেষ্টার কোনো ফল হয়নি। কোন বিষয়টা যোষেফকে পোটীফরের স্ত্রীর সমস্ত প্রস্তাব প্রতিরোধ করতে পরিচালিত করেছিল? বাইবেল আমাদের বলে: “তিনি অস্বীকার করতঃ আপন প্রভুর স্ত্রীকে কহিলেন, দেখুন, . . . আমার প্রভু . . . সমুদয়ের মধ্যে কেবল আপনাকেই আমার অধীনা করেন নাই, কারণ আপনি তাঁহার ভার্য্যা। অতএব আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?”—আদিপুস্তক ৩৯:১-১২.
১৯ অবিবাহিত যোষেফ আরেকজন ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করা প্রত্যাখ্যান করে নৈতিক শুদ্ধতা বজায় রেখেছিলেন। “তুমি নিজ জলাশয়ের জল পান কর,” হিতোপদেশ ৫:১৫ পদ বিবাহিত ব্যক্তিদের বলে, “নিজ কূপের স্রোতোজল পান কর।” বিয়ের বাইরে এমনকি অনিচ্ছাকৃতভাবে রোমান্টিক আসক্তি গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন। আপনার নিজের বিয়েতে প্রেমের বন্ধনকে শক্তিশালী করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন এবং আপনি যে-বৈবাহিক সমস্যার মুখোমুখিই হোন না কেন, তা সমাধান করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। যেকোনোভাবেই হোক, ‘আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ করুন।’—হিতোপদেশ ৫:১৮.
আপনি কী শিখেছেন?
• কীভাবে একজন খ্রিস্টান হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে রোমান্টিক সম্পর্কের ফাঁদে পড়তে পারেন?
• কোন পূর্বসতর্কতা একজন ব্যক্তিকে বিয়ের বাইরে রোমান্টিক আসক্তি গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সাহায্য করতে পারে?
• সমস্যা ভোগ করলে কোনো বিবাহিত দম্পতির কী করা উচিত?
• বৈবাহিক বিশ্বস্ততা বজায় রাখার সবচেয়ে জোরালো উদ্দীপক কী?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
দুঃখজনক যে, কর্মক্ষেত্র অনুপযুক্ত রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার এক ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘জ্ঞান দ্বারা কুঠরী সকল মনোরম্য সমস্ত দ্রব্যে পরিপূর্ণ হয়’