“বচসা” করবেন না
“বচসা” করবেন না
‘তোমরা বচসা বিনা সমস্ত কার্য্য কর।’—ফিলিপীয় ২:১৪.
১, ২. ফিলিপী ও করিন্থের খ্রিস্টানদেরকে পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং কেন?
প্রেরিত পৌল প্রথম শতাব্দীতে ফিলিপীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রতি তার ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত লেখা চিঠিতে অনেক প্রশংসা করেছিলেন। তিনি সেই নগরের সহবিশ্বাসীদের উদার ও উদ্যোগী মনোভাবের জন্য প্রশংসা এবং তাদের উত্তম উত্তম কাজের জন্য আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, পৌল তাদেরকে ‘বচসা বিনা সমস্ত কার্য্য করিবার’ বিষয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। (ফিলিপীয় ২:১৪) কেন প্রেরিত এই উপদেশ দিয়েছিলেন?
২ পৌল জানতেন যে, বচসা করা কোন দিকে পরিচালিত করতে পারে। কয়েক বছর আগে, করিন্থের মণ্ডলীকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, বচসা করা বিপদজনক হতে পারে। পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, প্রান্তরে থাকাকালীন ইস্রায়েলীয়রা বার বার যিহোবার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিল। কীভাবে? মন্দ বিষয়ের আকাঙ্ক্ষা, প্রতিমাপূজা ও ব্যভিচার, যিহোবাকে পরীক্ষা এবং বচসা করার মাধ্যমে। পৌল করিন্থীয়দেরকে এই উদাহরণগুলো থেকে শিখতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “যেমন তাঁহাদের মধ্যে কতক লোক বচসা করিয়াছিল, এবং সংহারকের দ্বারা বিনষ্ট হইয়াছিল, তোমরা তেমনি বচসা করিও না।”—১ করিন্থীয় ১০:৬-১১.
৩. কেন বচসা করার বিষয়টা আজকে মনোযোগ দেওয়ার মতো এক বিষয়?
৩ যিহোবার বর্তমান দিনের দাস হিসেবে আমরাও সেই ফিলিপীর মণ্ডলীর মতো একই মনোভাব প্রকাশ করে থাকি। আমরাও সৎক্রিয়ার জন্য উদ্যোগী আর নিজেদের মধ্যে আমাদের প্রেম রয়েছে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) কিন্তু, অতীতে বচসা করা ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে যে-ক্ষতি নিয়ে এসেছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার উত্তম কারণ রয়েছে: ‘তোমরা বচসা বিনা সমস্ত কার্য্য কর।’ প্রথমে, আসুন আমরা বচসা করা সম্বন্ধে শাস্ত্রে উল্লেখিত উদাহরণগুলো বিবেচনা করি। এরপর, আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আজকে ক্ষতি করে এমন বচসাকে রোধ করার জন্য আমরা করতে পারি।
এক দুষ্ট মণ্ডলী যিহোবার বিরুদ্ধে বচসা করে
৪. কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা প্রান্তরে বচসা করেছিল?
৪ যে-ইব্রীয় শব্দটির অর্থ ‘বচসা, অসন্তোষ প্রকাশ অথবা অভিযোগ করা,’ সেটি বাইবেলে ইস্রায়েলের ৪০ বছর প্রান্তরে থাকাকালীন ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। একবার, ইস্রায়েলীয়রা তাদের পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিল আর বচসা করার মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার পাওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর, “ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলী মোশির ও হারোণের বিরুদ্ধে . . . বচসা করিল।” ইস্রায়েলীয়রা এই কথা বলে খাবার সম্বন্ধে অভিযোগ করেছিল: “হায়, হায়, আমরা মিসর দেশে সদাপ্রভুর হস্তে কেন মরি নাই? তখন মাংসের হাঁড়ীর কাছে বসিতাম, তৃপ্তি পর্য্যন্ত রুটী ভোজন করিতাম; তোমরা ত এই সমস্ত সমাজকে ক্ষুধায় মারিয়া ফেলিতে আমাদিগকে বাহির করিয়া এই প্রান্তরে আনিয়াছ।”—যাত্রাপুস্তক ১৬:১-৩.
৫. ইস্রায়েলীয়রা কখন অভিযোগ করেছিল আর তারা আসলে কার বিরুদ্ধে বচসা করেছিল?
৫ আসলে, প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়দের যা কিছু প্রয়োজন ছিল, সেগুলো যিহোবা জুগিয়েছিলেন এবং প্রেমের সঙ্গে তাদের জন্য খাবার ও জল সরবরাহ করেছিলেন। ইস্রায়েলের লোকেদের প্রান্তরে দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়ার মতো কোনো ঝুঁকি কখনোই ছিল না। তা সত্ত্বেও, অসন্তুষ্ট মনোভাব দেখিয়ে তারা তাদের দুর্দশাকে অতিরঞ্জিত করে বচসা করতে শুরু করেছিল। যদিও তারা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল কিন্তু যিহোবা তাদের বিবৃতিকে তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ হিসেবেই দেখেছিলেন। মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তোমরা যে বচসা করিতেছ, তাহা তিনি শুনিতেছেন; আমরা কে? তোমরা যে বচসা করিতেছ, উহা আমাদের বিরুদ্ধে নয়, সদাপ্রভুরই বিরুদ্ধে করা হইতেছে।”—যাত্রাপুস্তক ১৬:৪-৮.
৬, ৭. গণণাপুস্তক ১৪:১-৩ পদে যেমন দেখানো হয়েছে, কীভাবে ইস্রায়েলীয়দের মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল?
৬ এর অল্প কিছুদিন পরেই, ইস্রায়েলীয়রা আবারও বচসা করেছিল। মোশি বারো জন ব্যক্তিকে প্রতিজ্ঞাত দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দশজন খারাপ তথ্য নিয়ে ফিরে এসেছিল। ফল কী হয়েছিল? “ইস্রায়েল-সন্তানগণ সকলে মোশির বিপরীতে ও হারোণের বিপরীতে বচসা করিল, ও সমস্ত মণ্ডলী তাঁহাদিগকে কহিল, হায় হায়, আমরা কেন মিসর দেশে মরি নাই; এই প্রান্তরেই বা কেন মরি নাই? সদাপ্রভু আমাদিগকে খড়গ-ধারে নিপাত করাইতে এ দেশে [কনানে] কেন আনিলেন? আমাদের স্ত্রী ও বালকগণ ত লুটিত হইবে। মিসরে ফিরিয়া যাওয়া কি আমাদের ভাল নয়?”—গণনাপুস্তক ১৪:১-৪.
৭ ইস্রায়েলের মনোভাব কতই না পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল! মিশর থেকে মুক্তি এবং লোহিত সাগরের মধ্যে দিয়ে উদ্ধারের কারণে প্রথমে তাদের যে-কৃতজ্ঞতা ছিল, তা তাদেরকে যিহোবার প্রতি প্রশংসা গান করতে পরিচালিত করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৫:১-২১) কিন্তু, প্রান্তরে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে এবং কনানীয়দের ভয়ে, ঈশ্বরের লোকেদের কৃতজ্ঞতা অসন্তুষ্ট মনোভাবে পরিণত হয়েছিল। তাদের স্বাধীনতার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়ার পরিবর্তে তারা ভুলভাবে এই চিন্তা করে তাঁকে দোষ দিয়েছিল যে, তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই, বচসা করা হল যিহোবার ব্যবস্থাগুলোর প্রতি সঠিক উপলব্ধিবোধের অভাবের এক প্রকাশ। অতএব, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, তিনি বলেছিলেন: “আমার প্রতিকূলে বচসাকারী এই দুষ্ট মণ্ডলীর ভার আমি কত কাল সহ্য করিব?”—গণনাপুস্তক ১৪:২৭; ২১:৫.
প্রথম শতাব্দীতে বচসা করা
৮, ৯. খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে বচসা সম্বন্ধে যে-উদাহরণগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো উল্লেখ করুন।
৮ পূর্বোল্লিখিত বচসার উদাহরণগুলোতে যে-লোকেরা অন্তর্ভুক্ত, তারা স্পষ্টতই জনসমক্ষে তাদের অসন্তুষ্ট মনোভাব প্রকাশ করে। কিন্তু, সা.কা. ৩২ সালে কুটিরোৎসবের জন্য যিশু খ্রিস্ট যখন যিরূশালেমে ছিলেন, তখন “সমাগত লোকেরা তাঁহার বিষয়ে ফুস্ ফুস্ করিয়া অনেক কথা কহিতে লাগিল।” (যোহন ৭:১২, ১৩, ৩২) তারা তাঁর সম্বন্ধে ফিসফিস করে কথা বলছিল, কেউ কেউ বলছিল যে তিনি ভাল ব্যক্তি আবার অন্যেরা বলছিল যে, তিনি তা নন।
৯ আরেকবার যিশু ও তাঁর শিষ্যরা করগ্রাহী লেবি বা মথির বাড়িতে অতিথি হিসেবে গিয়েছিল। “ফরীশীরা ও তাহাদের অধ্যাপকেরা তাঁহার শিষ্যদের বিরুদ্ধে বচসা করিয়া কহিতে লাগিল, তোমরা কি কারণ করগ্রাহী ও পাপীদের সঙ্গে ভোজন পান করিতেছ?” (লূক ৫:২৭-৩০) কিছুদিন পর গালীলে, “যিহূদীরা [যিশুর] বিষয়ে বচসা করিতে লাগিল, কেননা তিনি বলিয়াছিলেন, আমিই সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে।” যিশু যা বলেছিলেন, তা শুনে এমনকি তাঁর কিছু অনুসারীও অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিল এবং বচসা করতে শুরু করেছিল।—যোহন ৬:৪১, ৬০, ৬১.
১০, ১১. কেন গ্রিকভাষী যিহুদিরা বচসা করেছিল আর সেই অভিযোগকে যেভাবে মীমাংসা করা হয়েছিল, তা থেকে খ্রিস্টান প্রাচীনরা কীভাবে উপকার পেতে পারে?
১০ সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমী দিনের অল্প কিছুদিন পরে বচসার এক ঘটনার ফলাফল ছিল ইতিবাচক। সেই সময় ইস্রায়েলের বাইরে থেকে আসা ধর্মান্তরিত অনেক নতুন শিষ্য যিহূদার সহবিশ্বাসীদের আতিথেয়তা উপভোগ করছিল, কিন্তু তাদের কাছে যে-বিষয়গুলো ছিল, সেগুলো বন্টন করা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিবরণ বলে: “গ্রীক ভাষাবাদী যিহূদীরা ইব্রীয়দের বিপক্ষে বচসা করিতে লাগিল, কেননা দৈনিক পরিচর্য্যায় তাহাদের বিধবারা উপেক্ষিত হইতেছিল।”—প্রেরিত ৬:১.
১১ এই বচসাকারীরা প্রান্তরের ইস্রায়েলীয়দের মতো ছিল না। গ্রিকভাষী যিহুদিরা স্বার্থপরের মতো তাদের জীবনের পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট মনোভাব প্রকাশ করেনি। তারা কিছু বিধবার চাহিদা পূরণ করার ব্যর্থতার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিল। অধিকন্তু, বচসাকারীরা গোলযোগ সৃষ্টিকারী হিসেবে কাজ করেনি এবং জনসমক্ষে যিহোবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। তারা প্রেরিতদের কাছে তাদের অভিযোগ জানিয়েছিল, যারা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল কারণ সেই অভিযোগ যুক্তিযুক্ত ছিল। আজকে খ্রিস্টান প্রাচীনদের জন্য এই প্রেরিতরা কত উত্তম উদাহরণই না স্থাপন করেছে! এই আধ্যাত্মিক পালকরা “দরিদ্রের ক্রন্দনে কর্ণ রোধ” না করার বিষয়ে সতর্ক থাকে।—হিতোপদেশ ২১:১৩; প্রেরিত ৬:২-৬.
বচসা করার ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে সাবধান থাকুন
১২, ১৩. (ক) বচসা করার প্রভাবগুলো উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন। (খ) কোন বিষয়টা একজন ব্যক্তিকে বচসা করতে প্ররোচিত করতে পারে?
১২ আমরা যে-শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো বিবেচনা করেছি, সেগুলোর অধিকাংশই দেখায় যে, বচসা করা অতীতে ঈশ্বরের লোকেদের জন্য অনেক ক্ষতি নিয়ে এসেছিল। তাই, আজকে এটা যে-ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, সেই সম্বন্ধে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এই ক্ষেত্রে একটা উদাহরণ আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। অনেক ধাতুর স্বাভাবিক প্রবণতাই হল মরিচা পড়া। মরিচা পড়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে যদি উপেক্ষা করা হয়, তা হলে সেই ধাতুর মধ্যে এমনভাবে মরিচা পড়তে পারে যে, সেটাকে আর কোনো কাজেই লাগানো যাবে না। অসংখ্য মোটরগাড়ি অকেজো হয়ে পড়ে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নয় বরং কারণটা হল, ধাতুর মধ্যে এতটাই মরিচা পড়ে যে সেই বাহন আর নিরাপদ থাকে না। কীভাবে আমরা এই উদাহরণ বচসা করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারি?
১৩ ঠিক যেমন কিছু ধাতুর প্রবণতা হল মরিচা পড়া, তেমনই অসিদ্ধ মানুষের প্রবণতা হল অভিযোগ করা। এর যেকোনো লক্ষণ শনাক্ত করার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। আর্দ্রতা ও লবণাক্ত বায়ুর কারণে যেমন দ্রুত মরিচা পড়ে, তেমনই দুর্দশা আমাদেরকে আরও বেশি করে বচসা করতে পরিচালিত করে। চাপের কারণে ছোটখাটো বিরক্তি বড় বড় দুঃখে পরিণত হতে পারে। এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে পরিস্থিতি যতই খারাপ হচ্ছে, অভিযোগ করার সম্ভাব্য কারণগুলো ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে হয়। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) তাই, যিহোবার একজন দাস হয়তো আরেকজন দাসের বিরুদ্ধে বচসা করা শুরু করতে পারে। কারণ হতে পারে ছোটখাটো কোনো বিষয় যেমন, কারও দুর্বলতা, ক্ষমতা অথবা সেবা করার বিশেষ সুযোগ নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়া।
১৪, ১৫. কেন অভিযোগ করার প্রবণতাকে আমাদের রোধ করা উচিত?
১৪ আমাদের বিরক্তির কারণ যা-ই হোক না কেন, আমরা যদি অভিযোগ করার প্রবণতাকে রোধ না করি, তা হলে সেটা আমাদের মধ্যে অসন্তুষ্ট মনোভাব বৃদ্ধি করতে এবং বচসা করাকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করতে পারে। হ্যাঁ, বচসা করার যে-আধ্যাত্মিকভাবে ধ্বংসাত্মক প্রভাব রয়েছে, সেটা আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে কলুষিত করে দিতে পারে। প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়রা যখন তাদের জীবন নিয়ে বচসা করেছিল, তখন তারা এতটাই সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল যে, যিহোবাকে দোষারোপ করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৬:৮) আমাদের বেলায় যেন কখনো এমনটা না ঘটে!
১৫ ধাতুর মধ্যে মরিচারোধক রঙের প্রলেপ দেওয়ার ও শীঘ্রই ক্ষয়প্রাপ্ত প্রতিটা জায়গার যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে মরিচা পড়ার প্রবণতা কমানো যেতে পারে। একইভাবে, আমরা যদি আমাদের মধ্যে অভিযোগ করার প্রবণতা লক্ষ করি, তা হলে সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যেতে পারে, যদি বিষয়টার ওপর অবিলম্বে ও প্রার্থনাপূর্বক মনোযোগ দিই। কীভাবে?
বিষয়গুলো যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন
১৬. কীভাবে অভিযোগ করার প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে?
১৬ বচসা করা নিজেদের প্রতি ও আমাদের সমস্যাগুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে আর যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা যে-আশীর্বাদগুলো উপভোগ করি, সেগুলো উপেক্ষা করে। অভিযোগ করার প্রবণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য এই আশীর্বাদগুলোকে আমাদের মনের অগ্রভাগে রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার ব্যক্তিগত নাম বহন করার চমৎকার সুযোগ আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে। (যিশাইয় ৪৩:১০; যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) আমরা তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি এবং যেকোনো সময়ে ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ সঙ্গে কথা বলতে পারি। (গীতসংহিতা ৬৫:২; যাকোব ৪:৮) আমাদের জীবনের প্রকৃত অর্থ রয়েছে কারণ আমরা সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়টা বুঝতে পারি এবং মনে রাখি যে, ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা আমাদের জন্য বিশেষ সুযোগ। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আমরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে নিয়মিতভাবে অংশ নিতে পারি। (মথি ২৪:১৪) যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি বিশ্বাস আমাদেরকে এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে সমর্থ করে। (যোহন ৩:১৬) আমাদের যা কিছুই সহ্য করতে হোক না কেন, এই আশীর্বাদগুলো আমরা উপভোগ করে থাকি।
১৭. এমনকি আমাদের যদি অভিযোগ করার উপযুক্ত কারণও থাকে, তবুও কেন বিভিন্ন বিষয়কে আমাদের যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করা উচিত?
১৭ আসুন, বিষয়গুলো আমরা নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করি। গীতরচক গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও।” (গীতসংহিতা ২৫:৪) অভিযোগ করার উপযুক্ত কারণ যদি আমাদের থাকে, তা হলে সেটা যিহোবার অলক্ষে থাকে না। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টা সংশোধন করতে পারেন। তা হলে, কেন তিনি মাঝে মাঝে দুর্দশা চলতে দেন? এর কারণ হতে পারে, তিনি আমাদেরকে ধৈর্য, সহ্যশক্তি, বিশ্বাস এবং দীর্ঘসহিষ্ণুতার মতো উত্তম গুণাবলি গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য করছেন।—যাকোব ১:২-৪.
১৮, ১৯. অভিযোগ না করে অসুবিধাগুলো সহ্য করার সম্ভাব্য প্রভাবগুলো উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
১৮ অভিযোগ না করে আমাদের অসুবিধাগুলো সহ্য করা কেবল আমাদের ব্যক্তিত্বকে উন্নতি করতেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যারা আমাদের আচরণ দেখে, তাদেরকে প্রভাবিত করতেও সাহায্য করে। ২০০৩ সালে একদল যিহোবার সাক্ষি হাঙ্গারির একটা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য জার্মানি থেকে বাসে করে যাত্রা করেছিল। বাসচালক একজন সাক্ষি ছিলেন না আর দশ দিন ধরে সাক্ষিদের সঙ্গে থাকার ব্যাপারে তার আপত্তি ছিল। কিন্তু, ভ্রমণের শেষে তিনি তার মন সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন। কেন?
১৯ ভ্রমণের সময় বেশ কয়েকটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু, সাক্ষিরা কখনো অভিযোগ করেনি। সেই চালক বলেছিলেন যে, তার জীবনে যত যাত্রী পেয়েছিলেন এটা ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দল! বস্তুতপক্ষে, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পরের বার সাক্ষিরা যখন তার বাড়িতে সাক্ষাৎ করতে আসবে, তখন তিনি তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনবেন। যাত্রীরা ‘বচসা বিনা সমস্ত কার্য্য করিবার’ মাধ্যমে কত উত্তম ছাপই না ফেলেছিল!
ক্ষমা করা একতা বৃদ্ধি করে
২০. কেন আমাদের পরস্পরকে ক্ষমা করা উচিত?
২০ কোনো সহবিশ্বাসীর প্রতি আমাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তা হলে? বিষয়টা যদি গুরুতর হয়, তা হলে মথি ১৮:১৫-১৭ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর বলা কথাগুলোতে পাওয়া নীতিগুলো প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু, সবসময় তা করার দরকার হবে না যেহেতু বেশির ভাগ অভিযোগই ছোটখাটো হয়ে থাকে। পরিস্থিতিটাকে ক্ষমা করার অভ্যাসের একটা সুযোগ হিসেবে দেখুন না কেন? পৌল লিখেছিলেন: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কলসীয় ৩:১৩, ১৪) আমরা কি ক্ষমা করতে ইচ্ছুক? আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণ কি যিহোবার নেই? তা সত্ত্বেও, তিনি বার বার সমবেদনা দেখান ও ক্ষমা করেন।
২১. যারা বচসা করতে শোনে তারা কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে?
২১ আমাদের অভিযোগ যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, বচসা করা বিষয়গুলোর সমাধান করবে না। যে-ইব্রীয় শব্দের অর্থ “বচসা করা,” সেটার অর্থ “ক্রুদ্ধভাবে অভিযোগ করাও” হতে পারে। সম্ভবত, যারা ক্রমাগত বচসা করে তাদের আশেপাশে থাকলে আমরা অস্বস্তি বোধ করি ও তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই। আমরা যদি বচসা করি বা ক্রুধভাবে অভিযোগ করি, তা হলে যারা তা শোনে তারাও হয়তো একইরকম বোধ করে। বস্তুতপক্ষে, তারা হয়তো এতটাই অস্বস্তি বোধ করতে পারে যে, তারা আমাদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে চায়! ক্রুদ্ধভাবে অভিযোগ করা অন্যের মনোযোগ কাড়তে পারে ঠিকই কিন্তু সেটা কারো মন জয় করবে না।
২২. যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে একটা মেয়ে কী বলেছিল?
২২ ক্ষমা করার মনোভাব একতা বৃদ্ধি করে, যেটাকে যিহোবার লোকেরা মূল্যবান বলে গণ্য করে। (গীতসংহিতা ১৩৩:১-৩) ইউরোপের একটা দেশে ১৭ বছর বয়সি এক ক্যাথলিক মেয়ে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে তাদের সম্বন্ধে প্রশংসা করে একটা চিঠি লিখেছিল। সে বলেছিল: “কেবল এই একটা সংগঠনকেই আমি জানি, যেখানকার সদস্যরা ঘৃণা, লোভ, অসহিষ্ণুতা, স্বার্থপরতা ও অনৈক্যের কারণে বিভক্ত নয়।”
২৩. পরের প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?
২৩ সত্য ঈশ্বর যিহোবার উপাসক হিসেবে আমরা যেসমস্ত আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ লাভ করি, সেগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা আমাদেরকে একতা বৃদ্ধি করতে ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে বচসা করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। পরের প্রবন্ধ দেখাবে যে, কীভাবে ঈশ্বরীয় গুণাবলি আমাদেরকে আরও বিপদজনক ধরনের বচসা—অর্থাৎ যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশের বিরুদ্ধে বচসা—করায় রত হওয়া থেকে নিবৃত্ত করবে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• বচসা করার সঙ্গে কী জড়িত?
• বচসা করার প্রভাবগুলোকে কীভাবে উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?
• কী আমাদেরকে বচসা করার প্রবণতাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে?
• কীভাবে ক্ষমা করার ইচ্ছুক মনোভাব আমাদের বচসা করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করতে পারে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইস্রায়েলীয়রা আসলে যিহোবার বিরুদ্ধে বচসা করেছিল!
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি যিহোবার মতো করে বিষয়গুলোকে দেখার চেষ্টা করেন?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ক্ষমা করা খ্রিস্টীয় একতা বৃদ্ধি করে