“প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে”
“প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে”
“আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।”—রোমীয় ১৪:১২.
১. তিন ইব্রীয় বিশ্বস্ততার সঙ্গে কোন দায়িত্ব পালন করেছিল?
বাবিলে বসবাসরত তিন ইব্রীয় যুবক এক জীবনমরণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়। দেশের আইন অনুযায়ী তারা কি এক প্রকাণ্ড প্রতিমাকে প্রণাম করবে? নাকি এটাকে উপাসনা করা প্রত্যাখ্যান করে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হবে? কারো সঙ্গে আলোচনা করার মতো সময় শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্নগোর হাতে নেই; অথবা তা করার কোনো প্রয়োজনও তাদের নেই। কোনোরকম দ্বিধা না করে তারা ঘোষণা করে: “হে রাজন্ আপনি জানিবেন, আমরা আপনার দেবগণের সেবা করিব না, এবং আপনার স্থাপিত স্বর্ণ-প্রতিমাকে প্রণাম করিব না।” (দানিয়েল ৩:১-১৮) তিন ইব্রীয় তাদের নিজ নিজ দায়িত্বভার বহন করে।
২. যিশু খ্রিস্টের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মূলত কারা পীলাতকে প্রভাবিত করেছিল আর এই বিষয়টা কি রোমীয় দেশাধ্যক্ষকে তার দায়িত্ব থেকে রেহাই দিয়েছিল?
২ এই ঘটনার প্রায় ছয়শো বছর পর, দেশাধ্যক্ষ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছেন। বিচারের বিষয়টা যাচাই করার পর তিনি নিশ্চিত হন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ। কিন্তু, জনতা তাঁর মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। সেই দাবি রোধ করার জন্য কিছুটা চেষ্টা করার পর, দেশাধ্যক্ষ তার দায়িত্বভার বহন করার ব্যাপারে শিথিলতা প্রকাশ করেন এবং চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন। তার হাত ধুয়ে তিনি বলেন: “এই ধার্ম্মিক ব্যক্তির রক্তপাতের সম্বন্ধে আমি নির্দ্দোষ।” এরপর তিনি সেই ব্যক্তিকে বিদ্ধ করার জন্য সমর্পণ করেন। হ্যাঁ, যিশু খ্রিস্টের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব পালন করার পরিবর্তে, পন্তীয় পীলাত অন্যদেরকে তার হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেন। পীলাত যতই হাত ধোন না কেন, যিশুকে অন্যায্য দণ্ডাদেশ দেওয়ার জন্য তিনিই দায়ী।—মথি ২৭:১১-২৬; লূক ২৩:১৩-২৫.
৩. কেন অন্যদেরকে আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া উচিত নয়?
৩ আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনাকে যখন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন আপনি কি সেই তিন ইব্রীয়ের মতো করে থাকেন, নাকি অন্যদেরকে আপনার হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন? সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। সঠিক বাছাইগুলোর জন্য পরিপক্বতার প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের জন্য বাবামাদের উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অবশ্য, পরিস্থিতি যখন জটিল হয় এবং বিভিন্ন বিষয় যাচাই করে দেখতে হয়, তখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে থাকে। কিন্তু, সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার দায়িত্ব এতটা ভারী নয় যে, সেগুলোকে এমন “ভার” বা কঠিন বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেগুলো হয়তো “যাদের আধ্যাত্মিক যোগ্যতা রয়েছে” তাদেরকে আমাদের হয়ে বহন করতে হতে পারে। (গালাতীয় ৬:১, NW, ২) এর বিপরীতে এটা হল সেই ভার, যার জন্য “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।” (রোমীয় ১৪:১২) “প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে,” বাইবেল বলে। (গালাতীয় ৬:৫) তা হলে, কীভাবে আমরা জীবনে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারি? প্রথমত, আমাদের অবশ্যই মানুষের সীমাবদ্ধতাগুলো স্বীকার করতে হবে এবং সেগুলো পূরণ করার জন্য কীসের প্রয়োজন তা শিখতে হবে।
এক অপরিহার্য চাহিদা
৪. প্রথম মানব দম্পতির অবাধ্যতা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোন শিক্ষা আমাদের লাভ করা উচিত?
৪ মানব ইতিহাসের শুরুতে, প্রথম দম্পতি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা চরম পরিণতি নিয়ে এসেছিল। তারা সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল খাওয়া বেছে নিয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তি কী ছিল? বাইবেল বলে, “নারী যখন দেখিলেন, ঐ বৃক্ষ সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞানদায়ক বলিয়া বাঞ্ছনীয়, তখন তিনি তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন; পরে আপনার মত নিজ স্বামীকে দিলেন, আর তিনিও ভোজন করিলেন।” (আদিপুস্তক ৩:৬) হবার বাছাই স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে ছিল। তার কাজ আদমকেও তার সঙ্গে যোগ দিতে পরিচালিত করেছিল। এর ফলে, পাপ ও মৃত্যু “সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল।” (রোমীয় ৫:১২) আদম ও হবার অবাধ্যতা থেকে মানুষের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে আমাদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা লাভ করা উচিত: ঐশিক নির্দেশনা মেনে না চললে মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা থাকে।
৫. যিহোবা আমাদের জন্য কোন নির্দেশনা জুগিয়েছেন আর এটি থেকে উপকার পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
৫ যিহোবা ঈশ্বর যে আমাদের পরিচালনা দিয়েছেন সেইজন্য আমরা কতই না আনন্দিত হতে পারি! শাস্ত্র আমাদের বলে: “দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার সময়ে তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশাইয় ৩০:২১) যিহোবা তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমাদের শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে এবং সেটি থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সঠিক বাছাইগুলো করার জন্য আমাদের “কঠিন খাদ্য [যা] সিদ্ধবয়স্কদেরই” বা পরিপক্বদের জন্য, তা গ্রহণ করা উচিত। এ ছাড়া, “[আমাদের] জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” (ইব্রীয় ৫:১৪) ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা যা শিখি, তা কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল পটু বা প্রশিক্ষিত করতে পারি।
৬. আমাদের বিবেককে সঠিকভাবে কাজ করতে হলে কীসের প্রয়োজন?
৬ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যে-বিষয়টা অপরিহার্য, সেটা হল উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আমাদের বিবেকের ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বিচার করতে সক্ষম আর এর দ্বারা আমরা হয় ‘দোষী হইতে’ পারি, “না হয়” এটা আমাদের ‘পক্ষ সমর্থন করিতে’ পারে। (রোমীয় ২:১৪-১৬) কিন্তু, আমাদের বিবেককে সঠিকভাবে কাজ করতে হলে এটাকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞানের দ্বারা প্রশিক্ষিত হতে হবে এবং সেই বাক্যকে কাজে লাগিয়ে এটাকে সংবেদনশীল করতে হবে। অপ্রশিক্ষিত বিবেক বিভিন্ন স্থানীয় প্রথা ও অভ্যাসের দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হতে পারে। এ ছাড়া, আমাদের চারপাশের পরিবেশ এবং অন্য লোকেদের ধারণাও আমাদের বিপথে চালিত করতে পারে। আমাদের বিবেকের কথা যখন বার বার উপেক্ষা করা হয় এবং ঐশিক মানগুলোকে লঙ্ঘন করা হয়, তখন আমাদের বিবেকের অবস্থা কী হয়? এটা একসময় “তপ্ত লৌহের দাগের মত” দাগযুক্ত হয়ে পড়তে পারে আর তা ক্ষত চিহ্নবিশিষ্ট মাংসের মতো—অসংবেদনশীল এবং অপ্রতিক্রিয়াশীল—হয়ে ওঠে। (১ তীমথিয় ৪:২) অন্যদিকে, ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা প্রশিক্ষিত বিবেক হল এক নির্ভরযোগ্য নির্দেশক।
৭. বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার এক অপরিহার্য চাহিদা কী?
৭ তা হলে, বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার দায়িত্ব পালন করার জন্য এক অপরিহার্য চাহিদা হল, শাস্ত্র সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান এবং এটি কাজে লাগানোর ক্ষমতা। বিভিন্ন বাছাইয়ের মুখোমুখি হলে দ্রুত উপসংহারে না পৌঁছে বরং আমাদের ঈশ্বরীয় নীতিগুলো খোঁজার জন্য সময় করে নেওয়া এবং সেগুলো কাজে লাগানোর জন্য আমাদের চিন্তাভাবনাকে ব্যবহার করা উচিত। এমনকি—শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্নগোর মতো—যখন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখনও আমরা সুসজ্জিত থাকি, যদি আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞান থাকে এবং আমাদের বিবেক এটির দ্বারা প্রশিক্ষিত হয়ে থাকে। পরিপক্বতার চেষ্টায় অগ্রসর হওয়া কীভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে উন্নত করতে পারে, তা বোঝার জন্য আসুন আমরা জীবনের দুটো ক্ষেত্র বিবেচনা করি।
কাদের সঙ্গে আমাদের মেলামেশা করা উচিত?
৮, ৯. (ক) কোন নীতিগুলো কুসংসর্গ এড়িয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে দেখায়? (খ) কুসংসর্গ কি কেবল নীতিহীন ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি মেলামেশা করাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করুন।
৮ “ভ্রান্ত হইও না,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা ত জগতের নহ।” (যোহন ১৫:১৯) এই নীতিগুলো শেখার মাধ্যমে আমরা সহজেই ব্যভিচারী, পারদারিক, চোর, মাতাল এবং এইরকম লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা এড়িয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারি। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) তাই, বাইবেলের সত্যের জ্ঞানে যতই আমরা উন্নতি করতে থাকি, ততই আমরা বুঝতে পারি যে, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অথবা কম্পিউটারের মধ্যে এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে দেখার অথবা তাদের সম্বন্ধে বইয়ে পড়ার জন্য সময় ব্যয় করা কেবল ক্ষতিই নিয়ে আসে। ইন্টারনেট চ্যাট রুমে সেই ব্যক্তিদের সাহচর্যের বিষয়েও একই কথা বলা যেতে পারে, ‘যাহারা ছদ্মবেশী।’—গীতসংহিতা ২৬:৪.
৯ সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা করার বিষয়ে কী বলা যেতে পারে, যারা হয়তো নৈতিক দিক দিকে শুচি কিন্তু যাদের সত্য ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের অভাব রয়েছে? শাস্ত্র আমাদের বলে যে, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) আমরা বুঝতে পারি যে, কুসংসর্গ কেবল প্রশ্রয়ী অথবা নৈতিক দিক দিয়ে অধঃপতিত লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাই, একমাত্র সেইসমস্ত ব্যক্তির সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে আমরা বিজ্ঞতার কাজ করি, যারা যিহোবাকে ভালবাসে।
১০. কী আমাদেরকে জগতের সংস্পর্শে আসার ব্যাপারে পরিপক্ব সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করে?
১০ জগতের লোকেদের সংস্পর্শে আসা পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয় বা তা আবশ্যকও নয়। (যোহন ১৭:১৫) খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করা, স্কুলে উপস্থিত থাকা, কাজে যাওয়া এই সমস্তকিছুর সঙ্গে জগতের সংস্পর্শে আশা অন্তর্ভুক্ত। অবিশ্বাসী ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহিত একজন খ্রিস্টানকে হয়তো জগতের লোকের সঙ্গে অন্যদের চেয়ে একটু বেশি মেলামেশা করতে হয়। কিন্তু, আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, জগতের সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী সীমিত সংস্পর্শে আসা এক কথা আর এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। (যাকোব ৪:৪) এভাবে, আমরা স্কুলে পড়াশোনার বাইরে অতিরিক্ত কার্যকলাপ যেমন, খেলাধূলা এবং নাচে অংশগ্রহণ করব কি না এবং সহকর্মচারীদের জন্য আয়োজিত পার্টি ও ভোজে যোগদান করব কি না, সেই বিষয়ে পরিপক্ব সিদ্ধান্তগুলো নিতে সক্ষম হই।
চাকরি বাছাই করার সময়
১১. চাকরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রথম বিবেচ্য বিষয়টা কী?
১১ পরিপক্ব উপায়ে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানো আমাদের এই সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে যে, কীভাবে আমরা ‘আমাদের নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা করিবার’ ব্যাপারে আমাদের বাধ্যবাধকতা পালন করব। (১ তীমথিয় ৫:৮) প্রথম বিবেচ্য বিষয়টা হল, আমরা যে-কাজটা করব সেটার ধরন অর্থাৎ এর জন্য আমাদের কী করতে হবে। বাইবেলে সরাসরি নিন্দা করা হয়েছে এমন ধরনের কোনো কাজ বাছাই করা নিশ্চিতভাবেই ভুল। তাই, সত্য খ্রিস্টানরা এমন কাজগুলো গ্রহণ করে না, যেগুলোর মধ্যে হয়তো প্রতিমাপূজা, চুরি করা, রক্তের অপব্যবহার অথবা অন্যান্য অশাস্ত্রীয় অভ্যাসগুলো জড়িত রয়েছে। এ ছাড়া, আমরা মিথ্যা কথা বলব না অথবা ঠকাব না, এমনকি একজন নিয়োগকর্তা যদি আমাদেরকে তা করতেও বলেন।—প্রেরিত ১৫:২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.
১২, ১৩. কাজের ধরনের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় কী, যেগুলো চাকরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ?
১২ কিন্তু, কাজের ধরন যদি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ঐশিক চাহিদা লঙ্ঘন না করে, তা হলে? সত্যের জ্ঞানে বৃদ্ধি পাওয়ার এবং আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অন্যান্য বিষয়ও বুঝতে পারি, যেগুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। কী হবে যদি কোনো কাজ আমাদেরকে অশাস্ত্রীয় কোনো অভ্যাসে জড়িত করে, যেমন জুয়াখেলার কোনো প্রতিষ্ঠানে টেলিফোন রিসিভ করার কাজ? বেতনের উৎস এবং কর্মস্থল সম্বন্ধেও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন খ্রিস্টান যিনি স্বনিয়োজিত একজন কনট্রাক্টার, তিনি কি খ্রিস্টীয়জগতের একটা গির্জা রং করা জড়িত রয়েছে এমন কোনো কাজ পাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং এভাবে মিথ্যা ধর্মকে সমর্থন করায় অংশ নেবেন?—২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৬.
১৩ কী হবে যদি আমাদের নিয়োগকর্তা কোনো এক সময়ে মিথ্যা উপাসনার এক স্থানকে রং করার কনট্র্যাক্ট গ্রহণ করে থাকেন? এই ক্ষেত্রে, আমাদের এই ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে যেমন যা করা হচ্ছে, সেখানে আমাদের কতটুকু কর্তৃত্ব রয়েছে এবং এর সঙ্গে আমরা কতটা জড়িত। আর ন্যায়সংগত কাজ করা সম্বন্ধেই বা কী বলা যায় যেমন, এমন এক এলাকার সব জায়গায় চিঠিপত্র বিলি করা, যার অন্তর্ভুক্ত এমন স্থানগুলো যেখানে ভুল অভ্যাসগুলোকে সমর্থন করা হয়? এই ক্ষেত্রে মথি ৫:৪৫ পদে বলা নীতি কি আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলবে না? তবে, দিনের পর দিন সেই কাজ করা আমাদের বিবেককে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে, সেই বিষয়টা উপেক্ষা করা উচিত নয়। (ইব্রীয় ১৩:১৮) বস্তুতপক্ষে, চাকরির ক্ষেত্রে পরিপক্ব সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার দায়িত্বভার বহন করার সময় আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকলকে আরও উন্নত করা এবং আমাদের ঈশ্বরদত্ত বিবেকের ক্ষমতাকে প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন।
“তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর”
১৪. সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, কোন বিষয়টা আমাদের সবসময় বিবেচনা করা উচিত?
১৪ অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে কী বলা যায়, যেমন জাগতিক পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া এবং নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা গ্রহণ অথবা প্রত্যাখ্যান করা? আমরা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখোমুখি হই, তখন এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাইবেলের নীতিগুলো সম্বন্ধে আমাদের নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে এবং এরপর সেগুলো কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে হবে। “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না,” প্রাচীন ইস্রায়েলের জ্ঞানী রাজা শলোমন বলেছিলেন। “তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.
১৫. সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছ থেকে আমরা কী শিখি?
১৫ প্রায়ই, আমরা যে-বাছাইগুলো করে থাকি, সেগুলো অন্যদের প্রভাবিত করে আর আমাদের সেটা বিবেচনা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা আর মোশির ব্যবস্থার খাদ্য সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধের অধীন ছিল না। তারা এমন কিছু খাবার খেতে পারত, যেগুলোকে মোশির ব্যবস্থায় অশুচি বলে গণ্য করা হতো এবং অন্যান্য দিক দিয়ে আপত্তিকর ছিল না। কিন্তু, প্রতিমার মন্দিরের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সংযোগ রয়েছে, এমন পশুপাখির মাংস সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “খাদ্য দ্রব্য যদি আমার ভ্রাতার বিঘ্ন জন্মায়, তবে আমি কখনও মাংস ভোজন করিব না, পাছে আমার ভ্রাতার বিঘ্ন জন্মাই।” (১ করিন্থীয় ৮:১১-১৩) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, তারা যেন অন্যদের বিবেকের কথা চিন্তা করে যাতে তাদের বিঘ্ন না জন্মায়। আমাদের সিদ্ধান্তগুলোর দ্বারা ‘বিঘ্ন জন্মানো’ উচিত নয়।—১ করিন্থীয় ১০:২৯, ৩২.
ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করুন
১৬. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে প্রার্থনা আমাদের জন্য এক সাহায্য?
১৬ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এক অমূল্য সহায়ক হল, প্রার্থনা। “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়,” শিষ্য যাকোব বলেন, “তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না; তাহাকে দত্ত হইবে।” (যাকোব ১:৫) আস্থা সহকারে আমরা প্রার্থনায় যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি এবং সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা চাইতে পারি। আমরা যখন সত্য ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের উদ্বিগ্নতা নিয়ে কথা বলি এবং তাঁর নির্দেশনা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি, তখন পবিত্র আত্মা আমাদের সেই শাস্ত্রপদগুলো বুঝতে আরও বেশি সাহায্য করতে পারে, যেগুলো আমরা বিবেচনা করছি এবং সেই পদগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে পারে, যেগুলো আমরা হয়তো উপেক্ষা করেছি।
১৭. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে অন্যেরা আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৭ অন্যেরা কি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে? হ্যাঁ, যিহোবা মণ্ডলীতে পরিপক্ব ব্যক্তিদের জুগিয়েছেন। (ইফিষীয় ৪:১১, ১২) তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে সেটা যদি কোনো বড় সিদ্ধান্ত হয়। যে-ব্যক্তিদের গভীর আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে এবং জীবন সম্বন্ধে অভিজ্ঞ, তারা আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাইবেলের এমন আরও নীতির কথা মনে করিয়ে দিতে পারে ও সেইসঙ্গে “যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে” সাহায্য করতে পারে। (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) কিন্তু, এই সতর্কবাণী উপযুক্ত: অন্যদেরকে আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না দেওয়ার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের দায়িত্বভার আমাদেরই বহন করতে হবে।
ফলাফল—সবসময়ই কি উত্তম?
১৮. এক উত্তম সিদ্ধান্তের ফলাফল সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?
১৮ বাইবেলের নীতিগুলোর ওপর দৃঢ়ভাবে স্থাপিত এবং ভাল করে যাচাই করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কি সবসময়ই উত্তম ফলাফল নিয়ে আসে? হ্যাঁ, পরিশেষে উত্তম ফলাফলই নিয়ে আসে। তবে, মাঝে মাঝে ক্ষণস্থায়ী প্রভাব হয়তো দুর্দশাজনক হতে পারে। শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্নগো জানত যে, প্রকাণ্ড প্রতিমাকে উপাসনা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফল হতে পারে মৃত্যু। (দানিয়েল ৩:১৬-১৯) একইভাবে, প্রেরিতরা যখন যিহুদি মহাসভায় বলেছিল যে, তাদেরকে মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আদেশ পালন করতে হবে, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার আগে মারধর করা হয়েছিল। (প্রেরিত ৫:২৭-২৯, ৪০) অধিকন্তু, যেকোনো সিদ্ধান্তের ফলাফলের ওপর “কাল ও দৈব” হয়তো মন্দ প্রভাব ফেলতে পারে। (উপদেশক ৯:১১) কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্ত্বেও আমরা যদি কোনোভাবে কষ্টভোগ করি, তা হলেও আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবেন এবং ভবিষ্যতে আশীর্বাদ করবেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭.
১৯. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা নির্ভীকভাবে আমাদের দায়িত্বভার বহন করতে পারি?
১৯ তাই, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের শাস্ত্রীয় নীতিগুলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে হবে। যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা এবং মণ্ডলীতে পরিপক্ব খ্রিস্টানদের মাধ্যমে সাহায্য জুগিয়েছেন বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! এই ধরনের নির্দেশনা এবং বিভিন্ন সহায়কের মাধ্যমে আসুন আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্ভীকভাবে আমাদের দায়িত্বভার বহন করি।
আপনি কী শিখেছেন?
• উত্তম সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার এক অপরিহার্য চাহিদা কী?
• পরিপক্বতার দিকে উন্নতি করা কীভাবে আমরা যাদের সঙ্গে মেলামেশা করি, তাদেরকে বাছাই করার ওপর প্রভাব ফেলে?
• কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী, যেগুলো চাকরির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের বিবেচনা করতে হবে?
• সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন সাহায্য রয়েছে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
আদম ও হবার অবাধ্যতা আমাদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা প্রদান করে
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঈশ্বরীয় নীতিগুলো খোঁজার চেষ্টা করুন