ইষ্রা বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
যিহোবার বাক্য জীবন্ত
ইষ্রা বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
বাইবেলে দ্বিতীয় রাজাবলি বইটির বিবরণ যেখানে শেষ হয়েছে, ইষ্রা বইটির বিবরণ সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। এটির লেখক যাজক ইষ্রা, পারস্যরাজ কোরসের দ্বারা জারিকৃত একটা আদেশের মাধ্যমে বিবরণ শুরু করেন, যে-আদেশে বাবিলে বন্দি যিহুদি অবশিষ্টাংশকে তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এই ধারাবাহিক বর্ণনা সেখানে গিয়ে শেষ হয়, যখন ইষ্রা সেই লোকেদের শুচি করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যারা দেশ-নিবাসী জাতিগণের বা পরজাতীয়দের সঙ্গে নিজেদের কলুষিত করেছিল। বইটিতে সর্বমোট ৭০ বছরের—সা.কা.পূ. ৫৩৭ থেকে ৪৬৭ সালের—বিবরণ রয়েছে।
বইটি লেখার পিছনে ইষ্রার মনে এক সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে: যিহোবা তাঁর লোকেদের বাবিলের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করার এবং যিরূশালেমে সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপিত করার প্রতিজ্ঞা কীভাবে পূর্ণ করেছিলেন, তা দেখানো। তাই, ইষ্রা কেবল এই উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনাগুলোর ওপরই জোর দেন। মন্দির কীভাবে পুনর্নিমাণ করা হয়েছিল এবং বিরোধিতা ও ঈশ্বরের লোকদের দোষত্রুটি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে যিহোবার উপাসনা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ইষ্রা বইটি হল সেটার এক বিবরণ। বিবরণটি আমাদের জন্যও খুবই আগ্রহজনক কারণ আমরাও পুনর্স্থাপনের এক সময়ে বাস করছি। অনেকে ‘সদাপ্রভুর পর্ব্বতের’ দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হচ্ছে এবং সমগ্র পৃথিবী “সদাপ্রভুর মহিমাবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ” হতে যাচ্ছে।—যিশাইয় ২:২, ৩; হবক্কূক ২:১৪.
মন্দির পুনর্নিমিত হয়
কোরসের জারিকৃত মুক্তির আদেশের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রায় ৫০,০০০ নির্বাসিত যিহুদি, দেশাধ্যক্ষ সরুব্বাবিল অথবা শেশ্বসরের নেতৃত্বে যিরূশালেমে ফিরে এসেছে। ফিরে আসা ব্যক্তিরা অবিলম্বে এই জায়গায় বেদি তৈরি করে এবং যিহোবার কাছে বলি উৎসর্গ করতে শুরু করে।
পরের বছর ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার গৃহের ভিত্তি স্থাপন করে। শত্রুরা পুনর্নিমাণের কাজে বাধা দিতে থাকে এবং সেই কাজ থামানোর জন্য শেষ পর্যন্ত একটা রাজকীয় আদেশ লাভ করতে সফল হয়। ভাববাদী হগয় এবং সখরিয় লোকেদের উদ্বুদ্ধ করে, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মন্দির নির্মাণের কাজ পুনরায় শুরু করে। মূলত কোরসের দ্বারা অনুমোদিত পারস্যের এক অপরিবর্তনীয় আদেশের বিরোধিতা করার ভয়, তাদের শত্রুদেরকে কাছে আসতে বাধা দেয়। এক সরকারি তদন্ত কার্যক্রম “ঈশ্বরের গৃহের বিষয়ে” কোরসের দেওয়া আদেশ খুঁজে পায়। (ইষ্রা ৬:৩) কাজ ভালভাবে এগিয়ে যায় এবং একসময় সমাপ্ত হয়।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১:৩-৬—যে-ইস্রায়েলীরা স্বেচ্ছায় তাদের নিজেদের দেশে ফিরে আসেনি তারা কি বিশ্বাসে দুর্বল ছিল? বস্তুবাদী হওয়ায় অথবা সত্য উপাসনার জন্য উপলব্ধিবোধের অভাবে কেউ কেউ হয়তো যিরূশালেমে ফিরে আসেনি কিন্তু প্রতিটা ক্ষেত্রে এটা সত্য ছিল না। প্রথমত, ১,৬০০ কিলোমিটার পথ পার হয়ে যিরূশালেমে যেতে চার বা পাঁচ মাস সময় লাগত। অধিকন্তু, ৭০ বছর ধরে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকা একটা জায়গায় স্থায়ী হওয়ার এবং সেখানে পুনর্নিমাণের কাজ করার জন্য যথেষ্ট দৈহিক শক্তির প্রয়োজন ছিল। তাই, কোনো সন্দেহ নেই যে, দৈহিক অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং পারিবারিক বাধ্যবাধকতার মতো বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি কিছু ব্যক্তিকে যিরূশালেমে ফিরে আসতে বাধা দিয়েছিল।
২:৪৩—নথীনীয়বর্গ কারা ছিল? এই লোকেরা ছিল ন-ইস্রায়েলীয় বংশোদ্ভূত, যারা মন্দিরে দাস বা পরিচারক হিসেবে সেবা করত। তাদের মধ্যে ছিল, যিহোশূয়ের দিনের গিবিয়োনীয়দের বংশধরেরা এবং সেই ব্যক্তিরা ‘যাহাদিগকে দায়ূদ ও অধ্যক্ষেরা লেবীয়দের সেবাকর্ম্মের জন্য দিয়াছিলেন।’—ইষ্রা ৮:২০.
২:৫৫—শলোমনের দাসদের সন্তানবর্গ কারা ছিল? তারা ছিল ন-ইস্রায়েলীয় ব্যক্তি, যাদেরকে যিহোবার সেবায় বিশেষ সুযোগ প্রদান করা হয়েছিল। তারা সম্ভবত মন্দিরের লেখক বা প্রতিলিপিকারী হিসেবে কাজ করত অথবা কিছু প্রশাসনিক পদে সেবা করত।
২:৬১-৬৩—ফিরে আসা বন্দিদের কাছে কি ঊরীম ও তুম্মীম ছিল, যেটা যিহোবার কাছ থেকে কোনো উত্তরের দরকার হলে ব্যবহার করা হতো? যাজকীয় বংশের যেসব দাবিদার তাদের বংশাবলিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হতো, তারা ঊরীম ও তুম্মীম ব্যবহার করার মাধ্যমে তাদের সেই দাবি প্রমাণ করতে পারত। ইষ্রা এটাকে কেবল একটা সম্ভাবনা বলে উল্লেখ করেন। শাস্ত্রে সেই সময়ে বা তারপর ঊরীম ও তুম্মীমের ব্যবহার সম্বন্ধে কোনো নথি পাওয়া যায় না। যিহুদি বিশ্বাস অনুসারে, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে মন্দির ধ্বংসের সময়ে ঊরীম ও তুম্মীম হারিয়ে গিয়েছিল।
৩:১২—“যে বৃদ্ধগণ পূর্ব্বকার গৃহ দেখিয়াছিলেন,” তারা কেন রোদন করেছিল? এই লোকেরা শলোমনের নির্মিত মন্দির কতটা জাঁকজমকপূর্ণ ছিল, তা স্মরণ করতে পেরেছিল। তাদের সামনে নতুন মন্দিরের যে-ভিত্তি ছিল সেটা, পূর্বের মন্দিরের তুলনায় “[তাহাদের] দৃষ্টিতে অবস্তুবৎ” ছিল। (হগয় ২:২, ৩) তারা চেষ্টা করে কি আগের মন্দিরের সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবে? তারা নিশ্চয়ই অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিল আর সেই কারণেই তারা রোদন করেছিল।
৩:৮-১০; ৪:২৩, ২৪; ৬:১৫, ১৬—মন্দির পুনর্নিমাণ করতে কত বছর লেগেছিল? মন্দিরের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল সা.কা.পূ. ৫৩৬ সালে—‘তাহারা আসিলে পর দ্বিতীয় বৎসরে।’ সা.কা.পূ. ৫২২ সালে রাজা অর্তক্ষস্তের সময়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা সা.কা.পূ. ৫২০ সাল, রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। তার রাজত্বের ষষ্ঠ বৎসরে বা সা.কা.পূ. ৫১৫ সালে মন্দির নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছিল। (“সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৭ থেকে ৪৬৭ সাল পর্যন্ত পারস্যরাজারা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন) অর্থাৎ মন্দির নির্মাণ করতে প্রায় ২০ বছর লেগেছিল।
৪:৮–৬:১৮—ইষ্রা বইয়ের এই অংশটুকু অরামীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল। কেন? এই অংশের বেশির ভাগই ছিল রাজার কাছে পাঠানো সরকারি কর্মকর্তাদের চিঠি এবং সেগুলোর উত্তরের প্রতিলিপি। ইষ্রা সেগুলো অরামীয় ভাষায় লেখা সরকারি দলিল থেকে প্রতিলিপি করেছিলেন, যা সেই সময়ে বাণিজ্যিক লেনদেনের এবং সরকারি ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল। বাইবেলের অন্য যে-অংশগুলো এই প্রাচীন গোত্রীয় ভাষায় লেখা হয়েছে, সেগুলো হল ইষ্রা ৭:১২-২৬, যিরমিয় ১০:১১ এবং দানিয়েল ২:৪খ–৭:২৮.
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১:২. প্রায় ২০০ বছর আগে যিশাইয় যে-ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিলেন, তা সত্য হয়েছিল। (যিশাইয় ৪৪:২৮) যিহোবার বাক্যে করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কখনো ব্যর্থ হয় না।
১:৩-৬. বাবিলে থেকে যাওয়া কিছু ইস্রায়েলীয়ের মতো যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে অনেকে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা গ্রহণ করতে পারে না বা যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করতে পারে না। তা সত্ত্বেও, তারা এমন ব্যক্তিদের সমর্থন ও উৎসাহিত করে যারা সেই কাজ গ্রহণ করতে পারে এবং রাজ্যের প্রচার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ও শিষ্য তৈরির কাজের জন্য স্বেচ্ছায় দান করে থাকে।
৩:১-৬. সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালের সপ্তম মাসে (তিসরি মাসে যা সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে পড়ে) ফিরে আসা বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা তাদের প্রথম বলি উৎসর্গ করেছিল। রাজা নবূখদ্নিৎসর সা.কা.পূ. ৬০৭ সালের পঞ্চম মাসে (আব মাসে যা জুলাই/আগস্ট মাসে পড়ে) যিরূশালেমে প্রবেশ করেছিলেন এবং দুমাস পরে শহরটাকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছিল। (২ রাজাবলি ২৫:৮-১৭, ২২-২৬) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, যিরূশালেমের ৭০ বছরের জনশূন্য অবস্থা একেবারে সঠিক সময়ে শেষ হয়েছিল। (যিরমিয় ২৫:১১; ২৯:১০) যিহোবার বাক্যে বলা যেকোনো ভবিষ্যদ্বাণীই সবসময় সত্য হয়।
৪:১-৩. বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশরা এমন এক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল, যা গ্রহণ করার অর্থ হতো মিথ্যা উপাসকদের সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। (যাত্রাপুস্তক ২০:৫; ৩৪:১২) একইভাবে, বর্তমানেও যিহোবার উপাসকরা বিভিন্ন ধর্মের সঙ্গে জড়িত আন্দোলনে অংশ নেয় না।
৫:১-৭; ৬:১-১২. তাঁর লোকেরা যাতে সফল হয়, সেইজন্য যিহোবা বিষয়গুলোকে কৌশলে পরিচালিত করতে পারেন।
৬:১৪, ২২. উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার কাজে অংশগ্রহণ করা তাঁর সমর্থন এবং আশীর্বাদ নিয়ে আসে।
৬:২১. যিহোবার কাজের অগ্রগতি দেখা, সেই সময়ে যিহুদিদের দেশে বসবাসরত কিছু শমরীয় ব্যক্তিকে এবং আগে পৌত্তলিক প্রভাবগুলোর বশীভূত ছিল এমন ফিরে আসা ব্যক্তিদের জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে পরিচালিত করেছিল। আমাদের কি রাজ্য ঘোষণাসহ ঈশ্বরদত্ত কাজে উদ্যমের সঙ্গে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়?
ইষ্রা যিরূশালেমে আসেন
যিহোবার পুনর্নিমিত গৃহ উদ্বোধন করার পর পঞ্চাশ বছর কেটে গিয়েছে। সময়টা হল সা.কা.পূ. ৪৬৮ সাল। ইষ্রা তার সঙ্গে ঈশ্বরের লোকেদের এক অবশিষ্টাংশকে এবং দানকৃত অর্থ নিয়ে বাবিল থেকে যিরূশালেমে যান। সেখানে গিয়ে তিনি কী দেখতে পান?
অধ্যক্ষগণ ইষ্রাকে বলে: ‘ইস্রায়েল লোকেরা, যাজকেরা ও লেবীয়েরা নানা দেশ-নিবাসী জাতিগণের ঘৃণার্হ ক্রিয়া হইতে আপনাদিগকে পৃথক করে নাই।’ অধিকন্তু, “অধ্যক্ষগণ ও শাসনকর্ত্তারাই প্রথমে এই সত্যলঙ্ঘনে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন।” (ইষ্রা ৯:১-৩) ইষ্রা এতে প্রচণ্ড আঘাত পান। তাকে “সাহসপূর্ব্বক কার্য্য” করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। (ইষ্রা ১০:৪) ইষ্রা সংশোধনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং লোকেরা অনুকূলভাবে সাড়া দেয়।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৭:১, ৭, ১১—এই পদগুলো কি সেই অর্তক্ষস্তকে নির্দেশ করে, যিনি নির্মাণ কাজে বাধা দিয়েছিলেন? না। অর্তক্ষস্ত হচ্ছে একটা নাম বা উপাধি, যেটা দুজন পারস্যরাজের প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। একজন ছিলেন ব্যারডিয়া বা গওমাটা , যিনি সা.কা.পূ. ৫২২ সালে মন্দিরের কাজ বন্ধ করার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। ইষ্রা যে-সময়ে যিরূশালেমে আসেন সেই সময়ের অর্তক্ষস্ত ছিলেন অর্তক্ষস্ত লঙ্গিম্যানাস।
৭:২৮–৮:২০—কেন বাবিলের অনেক যিহুদি ইষ্রার সঙ্গে যিরূশালেমে যেতে অনিচ্ছুক ছিল? যদিও যিহুদিদের প্রথম দল তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার পর ৬০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছিল কিন্তু তখনও পর্যন্ত যিরূশালেমে ঘনবসতি গড়ে ওঠেনি। যিরূশালেমে ফিরে আসার অর্থ ছিল, কঠিন এবং বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে এক নতুন জীবন শুরু করা। যে-যিহুদিরা হয়তো বাবিলে উন্নতি করছিল তাদের কাছে সেই সময়ের যিরূশালেম, কোনো আকর্ষণীয় বস্তুগত সমৃদ্ধির সম্ভাবনা তুলে ধরেনি। এ ছাড়া, বিপদজনক যাত্রার বিষয়টাকেও উপেক্ষা করা যেত না। ফিরে আসা ব্যক্তিদের যিহোবার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, সত্য উপাসনার জন্য উদ্যোগ এবং যাত্রা করার জন্য সাহসের দরকার ছিল। এমনকি ইষ্রাও তার ওপরে যিহোবার হস্তের বা সাহায্যের মাধ্যমে নিজেকে সবল করেছিলেন। ইষ্রার উৎসাহে ১,৫০০ পরিবার—সম্ভবত ৬,০০০ জন লোক—সাড়া দিয়েছিল। ইষ্রা আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পর, ৩৮ জন লেবীয় এবং ২২০ জন নথীনীয় সাড়া দিয়েছিল।
৯:১, ২—দেশ-নিবাসী জাতিগণের বা পরজাতীয়দের সঙ্গে বিয়ে করার বিপদ কতটা গুরুতর ছিল? পুনর্স্থাপিত জাতিকে মশীহ না আসা পর্যন্ত যিহোবার উপাসনা অক্ষুন্ন রাখতে হতো। অন্য জাতির অধিবাসীদের সঙ্গে বিয়ে করা সত্য উপাসনার জন্য প্রকৃতই এক হুমকিস্বরূপ ছিল। কেউ কেউ প্রতিমাপূজকদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে পুরো জাতিই হয়তো ধীরে ধীরে পৌত্তলিক জাতিগুলোর অংশ হয়ে যেত। বিশুদ্ধ উপাসনা পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারত। তা হলে, মশীহ কার বংশে আসতেন? তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, যা ঘটেছিল তা দেখে ইষ্রা বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন!
১০:৩, ৪৩, ৪৪—কেন স্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদেরও ত্যাগ করা হয়েছিল? যদি সন্তানরা থেকে যেত, তা হলে তাদের কারণে পরিত্যক্ত স্ত্রীদের ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকত। অধিকন্তু, ছোট সন্তানদের জন্য সাধারণত তাদের মায়েদের যত্ন প্রয়োজন।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৭:১০. ঈশ্বরের বাক্যের একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র এবং দক্ষ শিক্ষক হিসেবে, ইষ্রা আমাদের জন্য এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি যিহোবার ব্যবস্থা অনুশীলন বা পরীক্ষা করে দেখার জন্য প্রার্থনাপূর্বক তার অন্তঃকরণ সুস্থির বা তৈরি করেছিলেন। এটি পরীক্ষা করে দেখার সময়ে ইষ্রা যিহোবার কথার ওপর পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি যা শিখেছিলেন, তা কাজে লাগিয়েছিলেন এবং অন্যদের শিক্ষা দেওয়ায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
৭:১৩. যিহোবা ইচ্ছুক দাসদের চান।
৭:২৭, ২৮; ৮:২১-২৩. ইষ্রা যিহোবাকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন, যিরূশালেমের উদ্দেশে এক দীর্ঘ ও বিপদজনক যাত্রা শুরু করার আগে তাঁর কাছে আন্তরিক অনুরোধ করেছিলেন এবং ঈশ্বরের গৌরবের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে ইচ্ছুক ছিলেন। এভাবে তিনি আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
৯:২. আমাদের অবশ্যই “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।—১ করিন্থীয় ৭:৩৯.
৯:১৪, ১৫. কুসংসর্গ যিহোবার অনুমোদন হারানোর দিকে পরিচালিত করতে পারে।
১০:২-১২, ৪৪. যে-লোকেরা বিদেশি স্ত্রী গ্রহণ করেছিল, তারা নম্রভাবে অনুতপ্ত হয়েছিল এবং তাদের ভুল পথগুলোকে সংশোধন করেছিল। তাদের মনোভাব এবং কাজ উদাহরণযোগ্য ছিল।
যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো রক্ষা করেন
ইষ্রা বইটি আমাদের জন্য কতই না মূল্যবান! যিহোবা তাঁর লোকেদের বাবিলের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করার এবং যিরূশালেমে সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপন করার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা একেবারে সঠিক সময়ে পূর্ণ করেছিলেন। এটা কি যিহোবার এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে না?
ইষ্রা বইটিতে যে-উদাহরণগুলো রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে চিন্তা করুন। ইষ্রা এবং যে-অবশিষ্টাংশরা যিরূশালেমে ফিরে এসে সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপিত করায় অংশ নিয়েছিল, তারা ঈশ্বরের প্রতি উদাহরণযোগ্য ভক্তি দেখিয়েছিল। এ ছাড়াও, এই বইটি ঈশ্বর ভয়শীল বিদেশিদের বিশ্বাস এবং অনুতপ্ত অন্যায়কারীদের নম্র মনোভাব সম্বন্ধে তুলে ধরে। বস্তুতপক্ষে, ইষ্রার অনুপ্রাণিত বাক্যগুলো স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করে যে, “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।”—ইব্রীয় ৪:১২.
[১৮ পৃষ্ঠার তালিকা/চিত্রগুলো]
সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৭ থেকে ৪৬৭ সাল পর্যন্ত পারস্যরাজগণ
মহান কোরস (ইষ্রা ১:১) সা.কা.পূ. ৫৩০ সালে মারা গিয়েছিলেন
ক্যামবাইসিজ বা অহশ্বেরশ (ইষ্রা ৪:৬) সা.কা.পূ. ৫৩০-২২ সাল
অর্তক্ষস্ত—ব্যারডিয়া (ইষ্রা ৪:৭) সা.কা.পূ. ৫২২ সাল (মাত্র সাত মাস রাজত্ব করার পর
বা গওমাটা আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন)
দারিয়াবস ১ম (ইষ্রা ৪:২৪) সা.কা.পূ. ৫২২-৪৮৬ সাল
জার্কসিজ বা সা.কা.পূ. ৪৮৬-৭৫ সাল (সা.কা.পূ. ৪৯৬-৮৬ সাল পর্যন্ত
অহশ্বেরশ * দারিয়াবস ১ম এর সহশাসক হিসেবে রাজত্ব করেছিলেন)
অর্তক্ষস্ত লঙ্গিম্যানাস (ইষ্রা ৭:১) সা.কা.পূ ৪৭৫-২৪ সাল
[পাদটীকা]
^ ইষ্রা বইয়ে জার্কসিজ সম্বন্ধে উল্লেখ করা নেই। বাইবেলের ইষ্টের বইয়ে তাকে অহশ্বেরশ হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে।
[চিত্র]
অহশ্বেরশ
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোরস
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোরস সিলিন্ডার, বন্দিদের তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল
[সৌজন্যে]
সিলিন্ডার: Photograph taken by courtesy of the British Museum
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি জানেন কোন বিষয়টা ইষ্রাকে একজন দক্ষ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলেছিল?