সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অকৃত্রিম নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

অকৃত্রিম নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

অকৃত্রিম নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

“তুমি দুঃখীদিগকে [“নম্র লোকেদের,” NW] নিস্তার করিবে।”—২ শমূয়েল ২২:২৮.

১, ২. জগতের অনেক শাসকের মধ্যে কোন বিষয়ে মিল ছিল?

 মিশরের পিরামিডগুলো সেই ব্যক্তিদের সাক্ষ্য বহন করে, যারা একসময় সেই দেশে শাসন করেছিল। অন্য যে-ব্যক্তিরা ইতিহাসে তাদের চিহ্ন রেখে গিয়েছে, তারা ছিল অশূরের সন্‌হেরীব, গ্রিসের মহান আলেকজান্ডার এবং রোমের জুলিয়াস সিজার। এই সমস্ত শাসকের মধ্যে একটা বিষয়ে মিল ছিল। তারা অকৃত্রিমভাবে নম্র হওয়ার নথি রেখে যায়নি।—মথি ২০:২৫, ২৬.

ওপরে উল্লিখিত শাসকদের মধ্যে কারো কি এইরকম অভ্যাস ছিল বলে আপনি কল্পনা করতে পারেন যে, তারা তাদের রাজ্যে সান্ত্বনার প্রয়োজন আছে এমন অবনত প্রজাদের খুঁজেছিল? অবশ্যই না! কিংবা আপনি এও কল্পনা করতে পারবেন না যে, তারা উৎপীড়িত নাগরিকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাদের সামান্য বাসস্থানগুলোতে যাবে। অবনত মানুষের প্রতি তাদের মনোভাব নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ শাসক, যিহোবা ঈশ্বরের চেয়ে কতই না আলাদা!

নম্রতার সর্বমহান উদাহরণ

৩. সর্বোচ্চ শাসক তাঁর মানব প্রজাদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করেন?

যিহোবা অননুসন্ধেয়ভাবে মহান এবং উচ্চ কিন্তু “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশাবলি ১৬:৯) আর যিহোবা যখন সেইসমস্ত অবনত উপাসককে খুঁজে পান, যাদের হৃদয় বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে ভেঙে গিয়েছে, তখন তিনি কী করেন? এক অর্থে, তিনি তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে এই ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে “বাস” করেন ‘যেন নম্রদিগের আত্মাকে সঞ্জীবিত করেন ও চূর্ণ লোকদের হৃদয়কে সঞ্জীবিত করেন।’ (যিশাইয় ৫৭:১৫) এভাবে, তার সঞ্জীবিত উপাসকরা আনন্দের সঙ্গে পুনরায় তাঁর সেবা করার জন্য সুসজ্জিভূত হয়। ঈশ্বরের ক্ষেত্রে তা কতই না নম্রতার বিষয়!

৪, ৫. (ক) ঈশ্বরের শাসন করার উপায় সম্বন্ধে গীতরচক কেমন বোধ করেছিলেন? (খ) “দীনহীনকে” সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের “অবনত” হওয়ার মানে কী?

নিখিলবিশ্বের অন্য আর কেউই পাপী মানুষকে সাহায্য করার জন্য নিজেকে সার্বভৌম প্রভুর মতো নম্র করেনি। গীতরচক লিখতে পেরেছিলেন: “সদাপ্রভু সর্ব্বজাতির উপরে উন্নত, তাঁহার গৌরব আকাশমণ্ডলের উপরে উন্নত। কে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর তুল্য? তিনি উদ্ধের্ব সমাসীন; তিনি অবনত হইয়া দৃষ্টিপাত করেন আকাশে ও পৃথিবীতে। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন, সারের ঢিবী হইতে দরিদ্রকে উঠান।”—গীতসংহিতা ১১৩:৪-৭.

“অবনত” শব্দটি লক্ষ করুন। যখন মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তখন এই শব্দটির এক নেতিবাচক অর্থ থাকতে পারে, ‘নিম্নতর অথবা দুর্ভাগা কারো প্রতি শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাব পোষণ করা।’ এই ধরনের এক অহংকারী মনোভাব দিয়ে কখনো যিহোবা ঈশ্বরকে বর্ণনা করা যায় না, যিনি বিশুদ্ধ এবং পবিত্র আর তাই “অভিমান” বা অহংকার থেকে মুক্ত। (মার্ক ৭:২২, ২৩) কিন্তু, “অবনত” শব্দটি এই অর্থও বহন করে যে, সামাজিক দিক দিয়ে নিম্নস্তরের এক ব্যক্তির পর্যায়ে নেমে আসা অথবা নিম্নতর কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে একজনের উচ্চ অবস্থান বা মর্যাদা থেকে নেমে আসা। তাই, কিছু বাইবেল গীতসংহিতা ১১৩:৬ পদকে এভাবে অনুবাদ করে যে, ঈশ্বর নিজেকে নম্র করেন। সেটা আমাদের কোমল বা নম্র ঈশ্বরের ভাবমূর্তিকে কত উপযুক্তভাবেই না প্রকাশ করে, যিনি তাঁর অসিদ্ধ মানব উপাসকদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি প্রেমময় মনোযোগ দেন!—২ শমূয়েল ২২:৩৬.

যেকারণে যিশু নম্র ছিলেন

৬. যিহোবার নম্রতার সর্বমহান কাজ কী ছিল?

ঈশ্বরের নম্রতার এবং প্রেমের সর্বমহান কাজটা ছিল, তাঁর প্রথমজাত প্রিয় পুত্রকে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার এবং মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য মানুষ হিসেবে প্রতিপালিত হওয়ার জন্য পাঠানো। (যোহন ৩:১৬) যিশু আমাদেরকে তাঁর স্বর্গীয় পিতা সম্বন্ধে সত্য শিক্ষা দিয়েছেন এবং এরপর “জগতের পাপভার” নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর সিদ্ধ মানব জীবন দান করেছেন। (যোহন ১:২৯; ১৮:৩৭) যিহোবার নম্রতাসহ তাঁর পিতাকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করে যিশু তা-ই করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যা ঈশ্বর তাঁর কাছ থেকে চেয়েছিলেন। সেটা ছিল ঈশ্বরের একজন সৃষ্ট প্রাণীর দ্বারা স্থাপিত নম্রতা এবং প্রেমের সর্বকালের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। যিশুর নম্রতাকে সকলেই উপলব্ধি করেনি, তাঁর শত্রুরা তাঁকে এমনকি ‘মনুষ্যদের মধ্যে অতি নীচ ব্যক্তি’ বলে বিবেচনা করেছে। (দানিয়েল ৪:১৭) তা সত্ত্বেও, প্রেরিত পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার সহবিশ্বাসীদের যিশুকে অনুকরণ করা উচিত এবং এভাবে পরস্পরের সঙ্গে আচরণ করার সময় তাদের নম্র হওয়া উচিত।—১ করি. ১০:৩৪; ফিলিপীয় ২:৩, ৪.

৭, ৮. (ক) কীভাবে যিশু নম্র হতে শিখেছিলেন? (খ) সম্ভাব্য শিষ্যদের প্রতি যিশু কোন আবেদন করেছিলেন?

পৌল যিশুর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন, এই কথা লেখার দ্বারা: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক। ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।”—ফিলিপীয় ২:৫-৮.

কেউ কেউ ভাবতে পারে ‘কীভাবে যিশু অবনত’ বা নম্র ‘হইতে শিখিয়াছিলেন?’ এটা ছিল তাঁর পিতার সঙ্গে অগণিত সময় ধরে ঘনিষ্ঠ সাহচর্যের ফলে এক অপূর্ব উপকারিতা, যে-সময়ে তিনি সমস্তকিছু সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের ‘দক্ষ কর্মী’ হিসেবে সেবা করেছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:৩০, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) এদনে বিদ্রোহের পরে ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র পাপী মানুষের সঙ্গে তাঁর পিতার নম্র আচরণ দেখতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাই, পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু তাঁর পিতার নম্রতাকে প্রতিফলিত করেছিলেন এবং এই আবেদন করেছিলেন: “আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।”—মথি ১১:২৯; যোহন ১৪:৯.

৯. (ক) যিশু ছেলেমেয়েদের মধ্যে হৃদয়গ্রাহী কী পেয়েছিলেন? (খ) একটা শিশুকে ব্যবহার করে, যিশু কোন শিক্ষা দিয়েছিলেন?

যিশু অকৃত্রিমভাবে নম্র ছিলেন বলে, ছোট ছেলেমেয়েরা তাঁকে ভয় পেত না। এর পরিবর্তে, তারা তাঁর কাছে আসতে চাইত। তিনি ছেলেমেয়েদের প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছিলেন এবং তাদের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। (মার্ক ১০:১৩-১৬) যিশু ছেলেমেয়েদের মধ্যে হৃদয়গ্রাহী এমন কী পেয়েছিলেন? নিশ্চিতভাবে, তাদের মধ্যে সেই কাঙ্ক্ষিত গুণাবলি ছিল, যেগুলো তাঁর কিছু প্রাপ্তবয়স্ক শিষ্য সবসময় দেখায়নি। এটা খুবই সাধারণ একটা বিষয় যে, ছোট ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখে থাকে। তারা যে অনেক প্রশ্ন করে, সেটার মাধ্যমে আপনি তা দেখতে পারেন। হ্যাঁ, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির তুলনায় ছেলেমেয়েরা আরও বেশি শিখতে আগ্রহী এবং তারা গর্বিতপ্রবণ নয়। একবার যিশু একটা ছোট শিশুকে নিয়ে তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি না ফির ও শিশুদের ন্যায় না হইয়া উঠ, তবে কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না।” তিনি বলে চলেছিলেন: “যে কেহ আপনাকে এই শিশুর মত নত করে, সেই স্বর্গ-রাজ্যে শ্রেষ্ঠ।” (মথি ১৮:৩, ৪) যিশু এই নিয়ম সম্বন্ধে বলেছিলেন: “কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে, আর যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।”—লূক ১৪:১১; লূক ১৮:১৪; মথি ২৩:১২.

১০. আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

১০ সেই সত্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো উত্থাপিত করে। অনন্তজীবন পাওয়ার বিষয়ে আমাদের আশা, অকৃত্রিম নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টার ওপর কিছুটা নির্ভর করে কিন্তু কেন খ্রিস্টানদের জন্য নম্র হওয়া মাঝেমধ্যে কঠিন হয়ে থাকে? আমাদের জন্য কেন ব্যক্তিগত গর্ব দমন করা এবং পরীক্ষার সময় নম্রতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানো কঠিন হয়? আর অকৃত্রিম নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার সময় কী আমাদের সফল হতে সাহায্য করবে?—যাকোব ৪:৬, ১০.

যে-কারণে নম্র হওয়া কঠিন

১১. কেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমরা নম্র হওয়ার জন্য সংগ্রাম করি?

১১ আপনি যদি নম্র হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে থাকেন, তা হলে আপনি একা নন। ১৯২০ সালে এই পত্রিকা নম্রতার প্রয়োজনের বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মন্তব্য করেছিল: “আমরা যেহেতু দেখতে পাই যে, নম্রতাকে প্রভু কতখানি মূল্যবান বলে গণ্য করেন, তাই এই বিষয়ের দ্বারা সমস্ত প্রকৃত শিষ্যের প্রতিদিন এই গুণটা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার জন্য উৎসাহিত হওয়া উচিত।” এরপর এই খোলাখুলি স্বীকারোক্তি করা হয়েছিল: “শাস্ত্রের এই সমস্ত পরামর্শ সত্ত্বেও, মানবপ্রকৃতির বিকৃত অবস্থা এমনই বলে মনে হয় যে, যারা প্রভুর লোক হয়ে ওঠে এবং যারা এই পথ অনুযায়ী চলার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা অন্য যেকোনো গুণের চেয়ে এই ক্ষেত্রে আরও কঠিন বোধ করে এবং তাদের আরও বেশি সংগ্রাম করতে হয় বলে মনে হয়।” এই বিষয়টা একটা কারণকে তুলে ধরে যে, কেন সত্য খ্রিস্টানদের নম্র হওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হবে আর সেটা হল পাপপূর্ণ মানবপ্রকৃতি অনুপযুক্ত গৌরব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। আর এর কারণ হল, আমরা পাপী দম্পতি আদম ও হবার বংশধর, যারা স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোর বশীভূত হয়েছিল।—রোমীয় ৫:১২.

১২, ১৩. (ক) কীভাবে এই জগৎ খ্রিস্টীয় নম্রতার পথে একটা বাধাস্বরূপ? (খ) নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ক্ষেত্রে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টাকে কে আরও বেশি কঠিন করে তোলে?

১২ আরেকটা যে-কারণে আমাদের জন্য নম্রতা দেখানো কঠিন বলে মনে হতে পারে সেটা হল, আমরা এমন এক জগতের দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা লোকেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতে উৎসাহিত করে। এই জগতের সাধারণ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে “[পাপপূর্ণ] মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প” পরিতৃপ্ত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। (১ যোহন ২:১৬) এই জাগতিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পরিবর্তে যিশুর শিষ্যদের তাদের চোখকে সরল রাখা এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত।—মথি ৬:২২-২৪, ৩১-৩৩; ১ যোহন ২:১৭.

১৩ তৃতীয় যে-কারণে নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা এবং তা দেখানো কঠিন সেটা হল, অহংকারের উৎস শয়তান দিয়াবল এই জগৎকে শাসন করে। (২ করিন্থীয় ৪:৪; ১ তীমথিয় ৩:৬) শয়তান তার দুষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সে ‘জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপের’ বিনিময়ে যিশুর কাছ থেকে উপাসনা পেতে চেয়েছিল। চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী নম্র হয়ে যিশু দৃঢ়ভাবে শয়তানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (মথি ৪:৮, ১০) একইভাবে, শয়তান খ্রিস্টানদেরকে নিজেদের জন্য গৌরব পেতে প্রলুব্ধ করে। এর পরিবর্তে, নম্র খ্রিস্টানরা যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করে, ঈশ্বরকে প্রশংসা এবং সম্মান প্রদান করে।—মার্ক ১০:১৭, ১৮.

অকৃত্রিম নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা এবং তা দেখানো

১৪. “বিনম্রতার ভান” কী?

১৪ কলসীয়দের প্রতি চিঠিতে, প্রেরিত পৌল লোকেদের প্রভাবিত করার জন্য নম্রতার ভান করার বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন। পৌল এটাকে “নম্রতা [“বিনম্রতার ভান,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যে-লোকেরা কেবল নম্র হওয়ার ভান করে তারা আধ্যাত্মিকমনা নয়। এর পরিবর্তে, তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করে যে তারা আসলে গর্বে “গর্ব্বিত।” (কলসীয় ২:১৮, ২৩) যিশু এইরকম মিথ্যা নম্রতার উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন। তিনি ফরীশীদের লোক-দেখানো প্রার্থনা এবং লোকেদের দেখানোর জন্য তারা যেভাবে মলিন এবং বিষণ্ণ মুখে উপবাস রাখত, সেজন্য নিন্দা করেছিলেন। এর বিপরীতে, আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনার যাতে ঈশ্বরের কাছে মূল্য থাকে সেজন্য সেগুলো নম্রভাবে করা উচিত।—মথি ৬:৫, ৬, ১৬.

১৫. (ক) নম্রতা বজায় রাখার জন্য আমরা কী করতে পারি? (খ) নম্রতার কিছু উত্তম উদাহরণ কী?

১৫ নম্রতার সর্বোত্তম উদাহরণ যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্টের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে অকৃত্রিম নম্রতা বজায় রাখার জন্য খ্রিস্টানদের সাহায্য করা হয়। তা করার সঙ্গে নিয়মিত বাইবেল এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা জোগানো বাইবেল অধ্যয়ন সহায়কগুলো অধ্যয়ন করা জড়িত। (মথি ২৪:৪৫) খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের জন্য এই ধরনের অধ্যয়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ “যেন আপন ভ্রাতাদের উপরে [তাহাদের] চিত্ত উদ্ধত না হয়।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৯, ২০; ১ পিতর ৫:১-৩) সেইসমস্ত ব্যক্তির অসংখ্য উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা তাদের নম্র আচরণের জন্য আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছেন যেমন রূৎ, হান্না, ইলীশাবেৎ এবং আরও অনেকে। (রূতের বিবরণ ১:১৬, ১৭; ১ শমূয়েল ১:১১, ২০; লূক ১:৪১-৪৩) এ ছাড়া, সেইসমস্ত বিখ্যাত ব্যক্তির অনেক উত্তম উদাহরণও বিবেচনা করুন, যারা যিহোবার সেবায় নম্র ছিলেন, যেমন দায়ূদ, যোশিয়, যোহন বাপ্তাইজক এবং প্রেরিত পৌল। (২ বংশাবলি ৩৪:১, ২, ১৯, ২৬-২৮; গীতসংহিতা ১৩১:১; যোহন ১:২৬, ২৭; ৩:২৬-৩০; প্রেরিত ২১:২০-২৬; ১ করিন্থীয় ১৫:৯) আর আধুনিক দিনের নম্রতার উদাহরণের বিষয়ে কী বলা যায়, যা আমরা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে পাই? এই উদাহরণগুলো নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা সত্য খ্রিস্টানরা ‘এক জন অন্যের সেবার্থে নম্রতা’ গড়ে তুলতে সাহায্য পাবে।—১ পিতর ৫:৫.

১৬. কীভাবে খ্রিস্টীয় পরিচর্যা আমাদের নম্র হতে সাহায্য করে?

১৬ খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করাও আমাদের নম্র হতে সাহায্য করতে পারে। আমরা যখন ঘরে ঘরে অথবা অন্যান্য জায়গায় অপরিচিতদের কাছে যাই, তখন নম্রতা আমাদের কার্যকারী করে তুলতে পারে। এটা বিশেষ করে সেই সময়ে সত্য, যখন গৃহকর্তারা প্রথমবার রাজ্যের বার্তার প্রতি উদাসীনভাবে অথবা রূঢ়ভাবে সাড়া দেয়। আমাদের বিশ্বাস নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তোলা হয় আর নম্রতা খ্রিস্টানদের “বিনয় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে” উত্তর দিয়ে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে। (১ পিতর ৩:১৬, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) ঈশ্বরের নম্র দাসেরা নতুন এলাকায় গিয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও স্তরের লোকেদের সাহায্য করেছে। এই ধরনের পরিচারকদের নতুন ভাষা শেখার কঠিন কাজকে নম্রভাবে গ্রহণ করতে হতে পারে, যাতে তারা যাদেরকে সত্য জানাতে চায়, তাদেরকে আরও ভালভাবে সাহায্য করতে পারে। কত প্রশংসনীয়!—মথি ২৮:১৯, ২০.

১৭. কোন খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলোর জন্য নম্রতার প্রয়োজন?

১৭ নম্রতা সহকারে, অনেকে নিজেদের চেয়ে অন্যদের বিষয়গুলোকে আগে রেখে তাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্ব পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন খ্রিস্টান বাবাকে তার সন্তানদের সঙ্গে কার্যকারী বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য তৈরি হতে এবং পরিচালনা করতে নিজের কাজকর্ম থেকে সময় আলাদা করে রাখার জন্য নম্রতার প্রয়োজন। এ ছাড়া, নম্রতা ছেলেমেয়েদের তাদের অসিদ্ধ বাবামাকে সম্মান করতে এবং তাদের বাধ্য হতে সাহায্য করে। (ইফিষীয় ৬:১-৪) যে-স্ত্রীদের অবিশ্বাসী স্বামী রয়েছে, তারা যখন তাদের সাথিদের “সভয় [“সম্মানজনক,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার” দ্বারা লাভ করার চেষ্টা করে, তখন প্রায়ই তাদেরকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যেখানে নম্রতার প্রয়োজন। (১ পিতর ৩:১, ২) সেইসঙ্গে যখন আমরা প্রেমের সঙ্গে অসুস্থ এবং বয়স্ক বাবামার প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিই, তখন নম্রতা এবং আত্মত্যাগমূলক প্রেম মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকে।—১ তীমথিয় ৫:৪.

নম্রতা সমস্যার সমাধান করে

১৮. কীভাবে নম্রতা আমাদের সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে?

১৮ ঈশ্বরের সমস্ত দাস অসিদ্ধ। (যাকোব ৩:২) মাঝে মাঝে দুজন খ্রিস্টানের মধ্যে মতবিরোধ এবং ভুলবোঝাবুঝি হতে পারে। একজনের হয়তো অন্য আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে। সাধারণত, এইরকম পরিস্থিতিকে এই পরামর্শ কাজে লাগানোর দ্বারা সমাধান করা যেতে পারে: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [“যিহোবা,” NW] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর।” (কলসীয় ৩:১৩) এটা ঠিক যে, এই পরামর্শ মেনে চলা সহজ নয় কিন্তু, নম্রতা একজন ব্যক্তিকে তা প্রয়োগ করতে সাহায্য করবে।

১৯. যে-ব্যক্তি আমাদের দুঃখ দিয়েছে, তার সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের কী মনে রাখতে হবে?

১৯ কখনো কখনো একজন খ্রিস্টান হয়তো মনে করতে পারে যে, অভিযোগ করার উপযুক্ত কারণ এতটাই গুরুতর যে, তা উপেক্ষা করা যায় না। সেই সময়, নম্রতা তাকে শান্তি পুনর্স্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অভিযোগকৃত দোষী ব্যক্তির কাছে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। (মথি ১৮:১৫) খ্রিস্টানদের মধ্যে একটা যে-কারণে সমস্যা মাঝেমধ্যে রয়ে যায় সেটা হল যে, হয়তো একজন অথবা উভয় পক্ষই এতটাই গর্বিত হয় যে, কেউ-ই তাদের দোষ স্বীকার করতে চায় না। অথবা যিনি এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথমে পদক্ষেপ নেন, তিনি হয়তো আত্মধার্মিক, ভুল ধরার মনোভাব নিয়ে তা করে থাকেন। এর বিপরীতে, অকৃত্রিম নম্র মনোভাব অনেক মতবিরোধ সমাধান করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকারী হবে।

২০, ২১. নম্র হওয়ার সর্বমহান সাহায্যগুলোর মধ্যে একটা কী?

২০ নম্রতা গড়ে তোলার মূল পদক্ষেপ হল, ঈশ্বরের সাহায্য এবং আত্মার জন্য প্রার্থনা করা। কিন্তু, মনে রাখবেন “ঈশ্বর . . . নম্রদিগকে অনুগ্রহ [যার অন্তর্ভুক্ত তাঁর পবিত্র আত্মা] প্রদান করেন।” (যাকোব ৪:৬) তাই, কোনো সহবিশ্বাসীর সঙ্গে যদি আপনার মতবিরোধ থেকে থাকে, তা হলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন যাতে তিনি আপনাকে নম্রভাবে আপনার ছোট বা বড় যেকোনো দোষ স্বীকার করতে সাহায্য করেন। আপনি যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন এবং দোষী ব্যক্তি আপনাকে আন্তরিকভাবে বলে, “আমি দুঃখিত,” তা হলে নম্রভাবে ক্ষমা করে দিন। যদি তা করা কঠিন হয়, তা হলে, আপনার হৃদয়কে দীর্ঘস্থায়ী কোনো অহংকার থেকে মুক্ত করার জন্য প্রার্থনায় যিহোবার সাহায্য চান।

২১ নম্রতা যে-অনেক উপকার নিয়ে আসে, সেই বিষয়ে বোধগম্যতার দ্বারা আমাদের এই মূল্যবান গুণ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে এবং নম্রতা বজায় রাখতে পরিচালিত হওয়া উচিত। এই ক্ষেত্রে, যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্টের কত অপূর্ব উদাহরণ আমাদের কাছে রয়েছে! কখনো এই ঐশিক আশ্বাস ভুলে যাবেন না: “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, সম্মান ও জীবন।”—হিতোপদেশ ২২:৪.

ধ্যানের জন্য বিষয়গুলো

• নম্রতার সর্বোত্তম উদাহরণ কারা?

• কেন নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা কঠিন?

• কী আমাদের নম্র হতে সাহায্য করতে পারে?

• নম্র থাকা কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু অকৃত্রিমভাবে নম্র ছিলেন

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

জগৎ লোকেদের অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতে উৎসাহিত করে

[সৌজন্যে]

WHO photo by L. Almasi/K. Hemzǒ

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

নম্রতা আমাদের পরিচর্যায় অপরিচিতদের কাছে যেতে সাহায্য করে

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কোনো মতবিরোধের বিষয় প্রেমের সঙ্গে নম্রভাবে আচ্ছাদন করার মাধ্যমে প্রায়ই সমাধান করা যায়

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অনেক উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে খ্রিস্টানরা নম্রতা দেখায়