দুষ্টেরা আর কতদিন থাকবে?
দুষ্টেরা আর কতদিন থাকবে?
“তুমি [যিহোবা] . . . দুর্জ্জন আপনার অপেক্ষা ধার্ম্মিক লোককে গ্রাস করিলে কেন নীরব থাক?”—হবক্কূক ১:১৩.
১. কখন পৃথিবী যিহোবার মহিমা বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হবে?
ঈশ্বর কি দুষ্টদের কখনও ধ্বংস করবেন? যদি করেন, তাহলে আমাদেরকে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? পৃথিবী জুড়ে লোকেরা এই প্রশ্নগুলোই করে থাকেন। এর উত্তর আমরা কোথায় পাব? নিরূপিত সময়ের জন্য ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যগুলোতে আমরা উত্তর পেতে পারি। এই বাক্যগুলো আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে জানায় যে যিহোবা খুব তাড়াতাড়িই সমস্ত দুষ্টদের ওপর তাঁর বিচার নিয়ে আসবেন। কেবল তারপরই “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি . . . সদাপ্রভুর মহিমা বিষয়ক জ্ঞানে পৃথিবী পরিপূর্ণ হইবে।” এটাই হল ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সেই প্রতিজ্ঞা যা ঈশ্বরের পবিত্র বাক্যে হবক্কূক ২:১৪ পদে দেখতে পাওয়া যায়।
২. হবক্কূকের বইয়ে ঈশ্বরের কোন্ তিনটে দণ্ডাজ্ঞামূলক বিচার সম্বন্ধে লেখা রয়েছে?
২ প্রায় সা.কা.পূ. ৬২৮ সালে লেখা হবক্কূকের বইয়ে যিহোবা ঈশ্বরের তিনটে দণ্ডাজ্ঞামূলক বিচার সম্বন্ধে লেখা রয়েছে। এর মধ্যে দুটো বিচার ইতিমধ্যেই নিষ্পন্ন হয়ে গেছে। প্রথম বিচার ছিল প্রাচীন যিহূদার বিপথগামী জাতির বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়টার বিষয়ে কী বলা যায়? এটা ছিল অত্যাচারী বাবিলনের ওপর আনা ঈশ্বরের বিচার। অতএব, এখন আর কোন সন্দেহই থাকতে পারে না যে ঈশ্বরের তৃতীয় বিচার অবশ্যই আসবে। বস্তুতপক্ষে, আমরা এটা খুব শীঘ্রিই ঘটবে বলে আশা করতে পারি। এই শেষকালে ধার্মিক লোকেদের জন্য ঈশ্বর সমস্ত দুষ্টদের ওপর ধ্বংস আনবেন। শেষেরটা অর্থাৎ দ্রুতবেগে এগিয়ে আসা ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধ’ তাদেরকে একেবারে শেষ করে দেবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬.
৩. আমাদের দিনের দুষ্টদের ওপর কী আসবেই আসবে?
৩ ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধ খুবই কাছে এগিয়ে আসছে। আর আমাদের দিনের দুষ্টদের ওপর ঈশ্বরের বিচার দণ্ডাজ্ঞা আসবেই আসবে, ঠিক যেমন যিহূদা ও বাবিলনের ওপর যিহোবার বিচার এসেছিল। কিন্তু এখন, একটু কল্পনা করুন না কেন যে আমরা হবক্কূকের দিনে যিহূদায় আছি? সেখানে কী হচ্ছে?
দৌরাত্ম্যে ভরা এক দেশ
৪. হবক্কূক কোন্ খারাপ খবর শুনতে পান?
৪ মনে করুন যিহোবার ভাববাদী হবক্কূক সন্ধ্যেবেলা তার বাড়ির ছাদের ওপর বসে আছেন। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। তার পাশে একটা বাদ্যযন্ত্র রাখা আছে। (হবক্কূক ১:১; ৩:১৯, শেষাংশ) কিন্তু হবক্কূক একটা খারাপ খবর শুনতে পান। যিহূদার রাজা যিহোয়াকীম ঊরিয়কে হত্যা করে তার মৃত দেহ সাধারণ লোকেদের কবর-স্থানে ফেলে দিয়েছেন। (যিরমিয় ২৬:২৩) এটা ঠিক যে ঊরিয় যিহোবার ওপর আস্থা বজায় রাখেননি, ভয়ে তিনি মিশরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হবক্কূক জানেন যে যিহোবার সম্মান আনার জন্য যিহোয়াকীম এই অন্যায় কাজ করেননি। আর রাজা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে অসম্মান করে যে কথাগুলো বলেছিলেন এবং ভাববাদী যিরমিয় ও যিহোবার অন্যান্য উপাসকদের প্রতি যে ঘৃণা দেখিয়েছিলেন তা থেকেই এটা পরিষ্কার বোঝা যায়।
৫. যিহূদার আধ্যাত্মিক অবস্থা কেমন আর তার জন্য হবক্কূকের মনের অবস্থা কেমন হয়?
৫ হবক্কূক দেখতে পান যে আশেপাশের বাড়িগুলোর ছাদ থেকে ধূপের ধোঁয়া উঠছে। যিহোবার উপাসনা করার জন্য যে লোকেরা এই ধূপ জ্বালাচ্ছেন তা নয়। যিহূদার দুষ্ট রাজা যিহোয়াকিমের পরিচালনায় এই লোকেরা মিথ্যা ধর্ম পালন করছে। কতই না লজ্জার বিষয়! হবক্কূকের চোখে জল এসে যায় আর তিনি এই কথাগুলো বলে বিনতি করেন: “হে সদাপ্রভু, কত কাল আমি আর্ত্তনাদ করিব, আর তুমি শুনিবে না? আমি দৌরাত্ম্যের বিষয়ে তোমার কাছে কাঁদিতেছি, আর তুমি নিস্তার করিতেছ না। তুমি কেন আমাকে অধর্ম্ম দেখাইতেছ, কেন দুষ্কার্য্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছ? লুটপাট ও দৌরাত্ম্য আমার সম্মুখে হইতেছে, বিরোধ উপস্থিত, বিসংবাদ বাড়িয়া উঠিতেছে। তাই ব্যবস্থা নিস্তেজ হইতেছে, বিচার কোন মতে নিষ্পন্ন হইতেছে না; কারণ দুর্জ্জনেরা ধার্ম্মিককে ঘেরিয়া থাকে, তজ্জন্য বিচার বিপরীত হইয়া পড়ে।”—হবক্কূক ১:২-৪.
৬. যিহূদায় ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচারের কী হয়েছে?
৬ হ্যাঁ, লুটপাট ও দৌরাত্ম্যে দেশ ছেয়ে গেছে। হবক্কূক যে দিকেই তাকান, তিনি দেখেন বিক্ষোভ, বিবাদ, শত্রুতা। ‘ব্যবস্থা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে,’ অকেজো হয়ে পড়েছে। আর ন্যায়বিচার? তা, “কোন মতে নিষ্পন্ন হইতেছে না!” তা একেবারেই নেই। নিরীহ লোকেদেরকে রক্ষা করার জন্য আইন তৈরি হলেও, ‘দুর্জ্জনেরা ধার্ম্মিককে ঘেরিয়া আছে।’ সত্যিই, ‘বিচার বিপরীত হইয়া পড়িতেছে।’ তা বিকৃত হয়ে গেছে। কী এক খারাপ অবস্থা!
৭. হবক্কূক কী করার জন্য দৃঢ় ও অটল?
৭ হবক্কূক কিছুক্ষণের জন্য থামেন ও অবস্থাটা নিয়ে চিন্তা করেন। তিনি কি হাল ছেড়ে দেবেন? কখনোই না! ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের ওপর যে নির্যাতন এসেছিল সেগুলোর বিষয়ে আরেকবার চিন্তা করে, এই নিষ্ঠাবান ব্যক্তি যিহোবার ভাববাদী হিসেবে দৃঢ়, অটল থাকার জন্য শক্তি ফিরে পান। হবক্কূক ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা করে চলবেন, এমনকি এর জন্য যদি তাকে মরতেও হয়।
যিহোবা এক অবিশ্বাস্য “কর্ম্ম” করেন
৮, ৯. কোন্ অবিশ্বাস্য “কর্ম্ম” যিহোবা করছেন?
৮ দর্শনে তিনি সেই মিথ্যা ধর্মে বিশ্বাসীদের দেখেন, যারা ঈশ্বরকে অসম্মান করে। যিহোবা তাদেরকে কী বলছেন তা শুনুন: “তোমরা জাতিগণের মধ্যে দৃষ্টিপাত কর, নিরীক্ষণ কর, এবং চমৎকার জ্ঞান করিয়া হতবুদ্ধি হও।” হবক্কূক হয়তো ভাবছেন যে ঈশ্বর কেন এই দুষ্ট লোকেদের এরকম কথা বলছেন। কিন্তু এরপর তিনি শোনেন যে যিহোবা তাদেরকে বলছেন: “হতবুদ্ধি হও; যেহেতু আমি তোমাদের সময়ে এক কর্ম্ম করিব, তাহার বৃত্তান্ত কেহ তোমাদিগকে জ্ঞাত করিলে তোমরা বিশ্বাস করিবে না।” (হবক্কূক ১:৫) আসলে, যিহোবা নিজে ‘এই কর্ম্ম করছেন, যা তারা বিশ্বাস করতে পারবে না।’ কিন্তু এই কাজটা কী?
৯ ঈশ্বর এরপর আরও যা বলেন তা হবক্কূক খুব মন দিয়ে শোনেন, যা আমরা হবক্কূক ১:৬-১১ পদে দেখতে পাই। এটা যিহোবার বার্তা, তাই কোন মিথ্যা দেবতা অথবা প্রাণহীন প্রতিমা এর পরিপূর্ণতায় বাধা দিতে পারবে না: “দেখ, আমি কল্দীয়দিগকে উঠাইব; তাহারা সেই নিষ্ঠুর ও ত্বরান্বিত জাতি, যে পরের নিবাস সকল অধিকার করণার্থে পৃথিবীর বিস্তারের সর্ব্বত্র বিহার করে। তাহারা ত্রাসজনক ও ভয়ঙ্কর, তাহাদের শাসন ও উন্নতি তাহাদেরই হইতে উৎপন্ন। তাহাদের অশ্বগণ চিতাব্যাঘ্র হইতেও দ্রুতগামী ও সায়ংকালীন কেন্দুয়া হইতেও উগ্র; তাহাদের অশ্বারোহিগণ বেগবান্; তাহাদের অশ্বারোহিগণ দূর হইতে আগত; ঈগল পক্ষী যেমন ভক্ষণার্থে দ্রুতবেগে চলে, তেমনি তাহারা উড়ে। তাহারা সকলে দৌরাত্ম্য করিতে আইসে, তাহারা অগ্রসর হইতে উন্মুখ; এবং তাহারা বন্দিদিগকে বালুকার ন্যায় একত্র করে। সেই জাতি রাজগণকে বিদ্রূপ করে, এবং অধ্যক্ষগণ তাহার উপহাসের পাত্র; সে দৃঢ় দুর্গ সমস্তকে উপহাস করে, ও ধূলি রাশীকৃত করিয়া তাহা হস্তগত করে। এইরূপে সে প্রচণ্ড বায়ুবৎ হঠাৎ বহিবে, অগ্রসর হইবে, আর দোষী হইবে; নিজ শক্তিই তাহার দেবতা।”
১০. যিহোবা কাদের উঠাবেন?
১০ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছ থেকে কী এক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সতর্কবার্তা! যিহোবা বাবিলনের বর্বর জাতি কলদীয়দের উঠাবেন। “পৃথিবীর বিস্তারের সর্ব্বত্র বিহার” করার সময় তারা সমস্ত দেশ জয় করবে। কতই না ভয়ংকর! যাযাবর কলদীয়রা “ত্রাসজনক ও ভয়ঙ্কর,” দুর্দান্ত ও বিপদজনক। তারা নিজেরাই তাদের কঠোর নিয়ম তৈরি করে। ‘তাহাদের শাসন তাহাদেরই হইতে উৎপন্ন।’
১১. যিহূদার বিরুদ্ধে ছুটে আসা বাবিলনীয় বাহিনীকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
১১ বাবিলনের অশ্বেরা চিতাবাঘের থেকেও দ্রুতগামী। এর অশ্বারোহীরা, রাতের ক্ষুধার্ত শিকারী কেন্দুয়াদের থেকেও ভয়ানক। ‘তাহাদের অশ্বারোহিগণ বেগে’ ছোটার জন্য অধৈর্য হয়ে রয়েছে। সুদূর বাবিলন থেকে তারা যিহূদার দিকে ছুটে আসছে। ঈগল পাখি যেমন তার শিকারের দিকে তীব্র বেগে ছুটে আসে তেমনই কলদীয়রা খুব শীঘ্রিই তাদের শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটাকে কি কেবল অল্প কিছু সৈন্যের, হঠাৎ করে হানা দেওয়া বা আক্রমণ করা বলা যাবে? না! “তাহারা সকলে দৌরাত্ম্য করিতে আইসে,” যেন দানবীয় কোন দল বিধ্বংসীভাবে ছুটে আসছে। তাদের মুখ উৎসাহে উজ্জ্বল, তারা পশ্চিমদিকে যিহূদা এবং যিরূশালেমের দিকে ছুটে আসছে আর তারা পূর্বীয় বায়ুর মতো প্রচণ্ড বেগে ছুটে আসছে। বাবিলনীয় বাহিনী এত বেশি লোকেদের বন্দি করে নিয়ে যায় যে তারা ‘বন্দিদিগকে বালুকার ন্যায় একত্র করে।’
১২. বাবিলনীয়দের মনোভাব কেমন আর এই ভয়ংকর শত্রু আসলে কীসের দোষে “দোষী হইবে?”
১২ কলদীয় সৈন্য রাজাদের বিদ্রূপ করে ও রাজকর্মচারীদের উপহাস করে, যাদের কেউই এই বেপরোয়া ভাবকে থামাতে পারে না। তারা “দৃঢ় দুর্গ সমস্তকে উপহাস করে” কারণ বাবিলনীয়রা যখন আক্রমণ করার জন্য ঢিবি তৈরি করতে ‘ধূলি রাশিকৃত করে’ তখন যিহূদার সমস্ত দুর্গ ভেঙে পড়ে। যিহোবার নিরূপিত সময়ে, ভয়ংকর এই শত্রু “প্রচণ্ড বায়ূবৎ হঠাৎ বহিবে।” যিহূদা ও যিরূশালেম আক্রমণ করে ঈশ্বরের লোকেদের আঘাত করায় বাবিলন প্রকৃতপক্ষে “দোষী হইবে।” চাঞ্চল্যকর জয়ের পর, কলদীয় সেনাপতি গর্ব করে বলবে: ‘এই শক্তি আমাদের দেবতার।’ কিন্তু সত্যিই সে কত অল্পই জানে!
আশার সুদৃঢ় ভিত্তি
১৩. কেন হবক্কূকের আশা ও আস্থা রয়েছে?
১৩ যিহোবার উদ্দেশ্যকে বোঝার সঙ্গে সঙ্গে হবক্কূকের হৃদয়ে আশা বেড়ে যায়। পুরোপুরি আস্থা নিয়ে তিনি শ্রদ্ধাভরে যিহোবার সম্বন্ধে কথা বলেন। হবক্কূক ১:১২ পদে যেমন বলা রয়েছে, ভাববাদী বলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রতম, তুমি কি অনাদিকাল হইতে নহ? আমরা মারা পড়িব না।” সত্যিই, যিহোবা হলেন “অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল” অর্থাৎ চিরকালীন ঈশ্বর।—গীতসংহিতা ৯০:১, ২.
১৪. যিহূদার বিপথগামী লোকেরা কোন্ পথে ছুটে চলে?
১৪ ঈশ্বরের দেওয়া দর্শনের কথা চিন্তা করে এবং যে অন্তর্দৃষ্টি তিনি সেই দর্শন থেকে পেয়েছিলেন তাতে আনন্দিত হয়ে ভাববাদী আরও বলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি বিচারার্থেই উহাকে নিরূপণ করিয়াছ; হে শৈল, তুমি শাসনার্থেই উহাকে স্থাপন করিয়াছ।” ঈশ্বর বিপথগামী যিহূদার ওপর নিদারুণ বিচার এনেছেন আর যিহোবা তাদেরকে ভর্ৎসনা করেন ও তীব্রভাবে শাসন করেন। যিহোবাকে শৈল, একমাত্র দৃঢ় দুর্গ, আশ্রয়স্থল এবং পরিত্রাণের উৎস মনে করে তাদের যিহোবার ওপর নির্ভর করা দরকার ছিল। (গীতসংহিতা ৬২:৭; ৯৪:২২; ৯৫:১) কিন্তু, যিহূদার ভ্রষ্ট নেতারা ঈশ্বরের কাছে আসেনি। তারা যিহোবার নিরীহ উপাসকদের তাড়না করেই চলে।
১৫. কোন্ অর্থে যিহোবা ‘এমন নির্ম্মলচক্ষু যে মন্দ দেখিতে পারেন না’?
১৫ এই অবস্থা যিহোবার ভাববাদীকে ভীষণভাবে কষ্ট দেয়। তাই তিনি বলেন: “তুমি এমন নির্ম্মলচক্ষু যে মন্দ দেখিতে পার না, এবং দুষ্কার্য্যের প্রতি তুমি দৃষ্টিপাত করিতে পার না।” (হবক্কূক ১:১৩) হ্যাঁ, যিহোবা ‘এমন নির্ম্মলচক্ষু যে মন্দ দেখিতে পারেন না,’ অর্থাৎ তিনি মন্দ কাজকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না।
১৬. হবক্কূক ১:১৩-১৭ পদের কথাগুলোর মূল বিষয় আপনি অল্প কথায় কীভাবে বলবেন?
১৬ তাই হবক্কূকের মনে ভাবিয়ে তোলার মতো কিছু প্রশ্ন আসে। তিনি জিজ্ঞেস করেন: “তবে বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি কেন দৃষ্টিপাত করিতেছ? আর দুর্জ্জন আপনার অপেক্ষা ধার্ম্মিক লোককে গ্রাস করিলে কেন নীরব থাক? মনুষ্যদিগকে সমুদ্রের মৎস্য তুল্য কিম্বা অস্বামিক কীট তুল্য কেন কর? সে সকলকে বড়শীতে তুলে, তাহাদিগকে নিজ জালে ধরে, খালুইতে একত্র করে; এই জন্য সে আনন্দিত ও উল্লাসিত হয়। এই জন্য সে আপন জালের উদ্দেশে বলিদান করে, ও আপন খালুইয়ের উদ্দেশে ধূপ জ্বালায়; কেননা তদ্দ্বারা তাহার অংশ পুষ্ট ও তাহার খাদ্য মেদোযুক্ত হয়। এই জন্য সে কি আপন জালের মধ্য হইতে মৎস্য বাহির করিতে থাকিবে? ও মমতা না করিয়া নিরন্তর জাতিগণকে বধ করিবে?”—হবক্কূক ১:১৩-১৭.
১৭. (ক) যিহূদা ও যিরূশালেমকে ধ্বংস করার সময় বাবিলনীয়রা কীভাবে যিহোবার উদ্দেশ্যকে পালন করে? (খ) যিহোবা হবক্কূককে কী জানাবেন?
১৭ যিহূদা ও তার রাজধানী যিরূশালেমকে ধ্বংস করার সময় বাবিলনীয়রা তাদের ইচ্ছে মতো কাজ করবে। তারা মনে রাখবে না যে অবিশ্বাসী লোকেদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের ন্যায্য বিচার সম্পাদন করার জন্য ঈশ্বরই তাদের ব্যবহার করছেন। এটা সহজেই বোঝা যায় যে কেন হবক্কূকের পক্ষে এটা বোঝা কঠিন ছিল যে ঈশ্বর তাঁর বিচার সম্পাদন করার জন্য দুষ্ট বাবিলনীয়দের ব্যবহার করবেন। এই নির্মম কলদীয়রা যিহোবার উপাসক নয়। তারা মানুষকে ‘মৎস্য এবং অস্বামিক কীট’ মনে করে যাদের ধরে বশে রাখা যায়। কিন্তু এই বিভ্রান্তিকে কাটিয়ে উঠতে হবক্কূকের বেশি দিন সময় লাগেনি। শীঘ্রিই যিহোবা তাঁর ভাববাদীকে জানাবেন যে বাবিলনীয়দেরকে তাদের লোভী লুটতরাজ ও অবাধ রক্তপাতের কারণে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।—হবক্কূক ২:৮.
যিহোবার পরবর্তী কথাগুলো শোনার জন্য তৈরি
১৮. হবক্কূক ২:১ পদে যেমন দেখা যায়, হবক্কূকের মনোভাব থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৮ কিন্তু এখন, যিহোবার পরবর্তী কথাগুলো শোনার জন্য হবক্কূক অপেক্ষা করে থাকেন। ভাববাদী সাহসের সঙ্গে জানান: “আমি আপন প্রহরী-কার্য্যের স্থানে দাঁড়াইব, দুর্গের উপরে অবস্থিত থাকিব; আমার আবেদনের বিষয়ে তিনি আমাকে কি বলিবেন, এবং আমি কি উত্তর দিব, তাহা দেখিয়া বুঝিব।” (হবক্কূক ২:১) হবক্কূক ঈশ্বরের একজন ভাববাদী হওয়ায় ঈশ্বর তার মাধ্যমে আরও কী বলবেন তা জানার জন্য তিনি এখন অত্যন্ত আগ্রহী। যিহোবা যিনি মন্দকে সহ্য করেন না এমন একজন ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রেখে তিনি অবাক হয়ে ভাবেন যে তাহলে কেন দুষ্টতা বেড়ে চলছে কিন্তু তিনি তার চিন্তাধারাকে পাল্টাতে ইচ্ছুক। তাহলে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যখন আমাদের মনে এই চিন্তা আসে যে কেন এইধরনের মন্দ জিনিসগুলোকে সহ্য করা হচ্ছে, তখন যিহোবা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় আমাদের বিশ্বাস ও ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং তাঁর অপেক্ষায় থাকতে সাহায্য করবে।—গীতসংহিতা ৪২:৫, ১১.
১৯. হবক্কূককে ঈশ্বর যা বলেছিলেন তা বিপথগামী যিহুদিদের প্রতি কীভাবে ফলে যায়?
১৯ হবক্কূক ঈশ্বরের বাক্যকে সত্যি হতে দেখেন, কারণ যিহূদাকে ধ্বংস করতে বাবিলনীয়দেরকে ব্যবহার করে যিহোবা বিপথগামী যিহুদি জাতির ওপর বিচার নিয়ে এসেছিলেন। সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে তারা যিরূশালেম ও মন্দির ধ্বংস করেছিল, যুবক বৃদ্ধ সকলকে হত্যা করেছিল এবং অনেককে বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল। (২ বংশাবলি ৩৬:১৭-২০) দীর্ঘ দিন বাবিলনে নির্বাসনে থাকার পর, বিশ্বস্ত যিহুদিদের এক অবশিষ্টাংশ তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিল ও মন্দির পুনর্নিমাণ করেছিল। কিন্তু পরে আবার যিহুদিরা যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ে—বিশেষ করে যখন তারা যীশুকে মশীহরূপে মেনে নিতে অস্বীকার করে।
২০. যীশুকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থ কী তা পৌল কীভাবে হবক্কূক ১:৫ পদ থেকে দেখিয়েছিলেন?
২০ প্রেরিত ১৩:৩৮-৪১ পদে, প্রেরিত পৌল আন্তিয়খিয়ার যিহুদিদের দেখিয়েছিলেন যে যীশুকে প্রত্যাখ্যান করা আর এইভাবে তাঁর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানকে অবজ্ঞা করার অর্থ কী। গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণ থেকে হবক্কূক ১:৫ পদ উদ্ধৃত করে পৌল সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “দেখিও, ভাববাদিগণের গ্রন্থে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা যেন তোমাদের প্রতি না ঘটে, ‘হে অবজ্ঞাকারিগণ, দৃষ্টিপাত কর, আর চমকিয়া উঠ এবং অন্তর্হিত হও; যেহেতুক তোমাদের সময়ে আমি এক কর্ম্ম করিব, সেই কর্ম্মের কথা যদি কেহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করে, তোমরা কোন মতে বিশ্বাস করিবে না।’” পৌলের এই উদ্ধৃতির সঙ্গে মিল রেখে হবক্কূক ১:৫ পদের দ্বিতীয় পরিপূর্ণতা ঘটেছিল যখন রোমীয় সেনাবাহিনী সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেম ও তার মন্দিরকে ধ্বংস করেছিল।
২১. হবক্কূকের দিনের যিহুদিরা বাবিলনীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংসের ব্যাপারে ঈশ্বরের ‘কার্য্য’ সম্বন্ধে কী ভেবেছিল?
২১ হবক্কূকের দিনের যিহুদিদের কাছে বাবিলনীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংসের ব্যাপারে ঈশ্বরের ‘কার্য্য’ কল্পনাতীত ছিল কারণ এই শহর ছিল যিহোবার উপাসনা কেন্দ্র এবং সেখানে তাঁর অভিষিক্ত রাজা রাজত্ব করছিলেন। (গীতসংহিতা ১৩২:১১-১৮) এছাড়াও যিরূশালেম এর আগে কখনও এভাবে ধ্বংস হয়নি। এর মন্দিরকে আগে কখনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়নি। দায়ূদের রাজগৃহকে এর আগে কখনও পদদলিত করা হয়নি। তাই এটা অবিশ্বাস্য ছিল যে যিহোবা এই বিষয়গুলোকে ঘটতে দেবেন। কিন্তু হবক্কূকের মাধ্যমে ঈশ্বর স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে এইরকম শোচনীয় ঘটনাগুলো ঘটবে। আর ইতিহাস প্রমাণ দিয়েছিল যে আগে থেকে ভাববাণী করা এই ঘটনাগুলো যেমন বলা হয়েছিল ঠিক সেইভাবে ঘটেছিল।
আমাদের দিনে ঈশ্বরের অবিশ্বাস্য ‘কার্য্য’
২২. আমাদের দিনে যিহোবা কোন্ অবিশ্বাস্য ‘কার্য্য’ করবেন?
২২ আমাদের দিনে ঈশ্বর অবিশ্বাস্য কিছু করবেন তা ভাবার কোন কারণ কি আছে? নিশ্চিত থাকুন যে তিনি তা করবেনই, এমনকি যদিও সন্দেহবাদী লোকেদের কাছে তা অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। এই সময়ে, যিহোবার ‘অবিশ্বাস্য কাজটা’ হবে খ্রীষ্টীয়জগৎকে ধ্বংস করা। প্রাচীন যিহূদার মতো, এরাও ঈশ্বরের উপাসনা করে বলে দাবি করে কিন্তু এরা পুরোপুরি কলুষিত। যিহোবা দেখবেন যে খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মীয় ব্যবস্থার সমস্তকিছুকে যেন শীঘ্রিই একেবারে মুছে ফেলা হয়, যেমন মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য ‘মহতী বাবিলের’ সমস্তকিছু একেবারে মুছে ফেলা হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:১-২৪.
২৩. এরপর ঈশ্বরের আত্মা হবক্কূককে কী করতে অনুপ্রাণিত করে?
২৩ সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংস করার আগে হবক্কূককে দেওয়ার জন্য যিহোবার আরও অনেক কাজ ছিল। তাঁর ভাববাদীকে এখনও ঈশ্বরের কী বলার আছে? দেখুন হবক্কূক এমন কিছু শুনতে পান যার কারণে তিনি তার বাদ্য যন্ত্র তুলে নেন এবং প্রার্থনাপূর্ণ স্তোত্রের মাধ্যমে যিহোবার উদ্দেশে গান গাওয়ার জন্য তৈরি হন। কিন্তু প্রথমে, ঈশ্বরের আত্মা ভাববাদীকে নাটকীয় বিপর্যয়ের বিষয় ঘোষণা করতে অনুপ্রাণিত করে। নিশ্চিতভাবে, নিরূপিত সময়ের জন্য এই ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যের অর্থ সম্বন্ধে আরও গভীরভাবে জানায় আমরা কৃতজ্ঞ। তাই আসুন আমরা হবক্কূকের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি আরও মন দিই।
আপনার কি মনে আছে?
• হবক্কূকের দিনে যিহূদাতে কোন্ অবস্থা ছিল?
• হবক্কূকের সময়ে যিহোবা কোন্ অবিশ্বাস্য ‘কার্য্য’ করেছিলেন?
• আশার কোন্ কারণ হবক্কূকের ছিল?
• ঈশ্বর আমাদের দিনে কোন্ অবিশ্বাস্য ‘কার্য্য’ করবেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
হবক্কূক অবাক হয়ে ভেবেছিলেন যে কেন যিহোবা দুষ্টতা বেড়ে চলতে দিয়েছিলেন? আপনিও কি তাই ভাবেন?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাবিলনীয়রা যে যিহূদাকে ধ্বংস করবে এই বিষয়ে হবক্কূক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিরূশালেমের ধ্বংসাবশেষ, যে শহর সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ধ্বংস হয়েছিল