সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবারের জন্য সাহায্য | বিবাহ

যেভাবে আঘাত দেওয়ার মতো কথাবার্তা এড়ানো যেতে পারে

যেভাবে আঘাত দেওয়ার মতো কথাবার্তা এড়ানো যেতে পারে

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

যখনই কোনো বাদানুবাদ শুরু হয়, আপনি ও আপনার বিবাহসাথি একে অপরের প্রতি সমালোচনার স্রোত বইয়ে দেন। আপনার বিবাহে আঘাত দিয়ে কথা বলা এতটাই সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে যে, এটাই এখন আপনাদের কথাবার্তা বলার “স্বাভাবিক” ধরন হয়ে উঠেছে।

আপনার বিবাহে যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে আপনি এটাকে বন্ধ করতে পারেন। তবে, প্রথমে আপনাকে এটা বিবেচনা করে দেখতে হবে যে, এর কারণ কী আর কেন তা বন্ধ করা আপনার জন্য ভালো।

যে-কারণে এমনটা ঘটে

পারিবারিক পটভূমি। অনেক স্বামী ও স্ত্রী এমন পরিবারে বড়ো হয়ে ওঠে, যেখানে সেই সদস্যরা একে অপরকে আঘাত দিয়ে কথা বলত। তাদের বাবা-মারা যে-ধরনের ভাষা ব্যবহার করত, তা একজন অথবা উভয় সাথিই হয়তো পুনরাবৃত্তি করে থাকে।

বিনোদন জগতের প্রভাব। সিনেমা ও টেলিভিশন কমেডিগুলো কর্কশ বা রূঢ় কথাকে হাস্যকর বলে তুলে ধরে আর তাতে দর্শকদের মনে হয় যে, এটা তেমন ক্ষতিকর নয় আর এমনকী বেশ মজা লাগে।

সংস্কৃতি। কিছু সম্প্রদায় শিক্ষা দেয় যে, “প্রকৃত পুরুষ” হতে গেলে তাকে দাম্ভিক হতে হয় আর মহিলারা যে দুর্বল নয়, তা প্রমাণ করতে তাদেরকে অনেক ঝগড়াটে হতে হয়। ঝগড়ার সময়ে এইরকম মনোভাব দেখালে বিবাহসাথিরা একে অপরকে বন্ধু না মনে করে শত্রু মনে করতে পারে আর তারা এমন ভাষা ব্যবহার করে, যা উপশম না করে অন্যকে আঘাত দেয়।

কারণ যা-ই হোক না কেন, আঘাতজনক কথাবার্তা বিবাহবিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে আর সেইসঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এমনকী অনেকে বলে থাকে, মুখের কথা মারধরের চেয়েও বেশি আঘাত দেয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন স্ত্রী যাকে তার স্বামী আঘাতজনক কথা বলত আবার সেইসঙ্গে মারধরও করত, তিনি বলেন: “আমাকে যে-ভাষায় অপমান করা হতো, তা অত্যাচারের থেকেও বেশি অসহ্য ছিল। আমার মনে হতো যে, ওইরকম ভাষায় আঘাত করার চেয়ে বরং মার সহ্য করা অনেক ভালো।”

যদি আপনি ও আপনার সাথি এ-রকম আঘাতজনক কথাবার্তা বলে আপনাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্থ হতে দিয়েছেন, তাহলে এখন আপনি কী করতে পারেন?

আপনি যা করতে পারেন

অপরের অনুভূতিকে অনুভব করুন। আপনি নিজেকে আপনার সাথির জায়গায় রেখে, আপনার কথা তার কেমন লেগেছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি সম্ভব হয়, কোনো একটা বিশেষ পরিস্থিতির কথা মনে করে দেখুন, যখন আপনার সাথির মনে হয়েছে যে, আপনি তাকে আঘাত দিয়ে কথা বলেছেন। আপনি আসলেই তাকে যা বলেছিলেন তা কাটানোর চেষ্টা করবেন না; বিষয়টা হল আপনি যা বলেছেন তাতে আপনার সাথির কেমন লেগেছে। আঘাতজনক কথাবার্তার বদলে কোন কোন উপায়ে সদয় কথাবার্তা বলা যায়, তা কি আপনি চিন্তা করতে পারেন? বাইবেল বলে: “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে, কিন্তু কটুবাক্য কোপ উত্তেজিত করে।”—হিতোপদেশ ১৫:১.

এমন দম্পতিদের লক্ষ করুন, যারা একে অপরকে সম্মান করে। যদি নেতিবাচক উদাহরণগুলো আপনার কথাবার্তা বলার ধরনের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে, তবে ভালো উদাহরণগুলোর দিকে তাকান। সেইরকম বিবাহিত দম্পতিদের কথা বলার ধরন শুনুন, যাদের কথাবার্তা অনুকরণযোগ্য।—বাইবেলের নীতি: ফিলিপীয় ৩:১৭.

এক সময় আপনার যে অনুভূতি ছিল, তা পুনরুজ্জীবিত করুন। মুখ দিয়ে যে-আঘাতজনক কথা বলা হয়, প্রায়ই তার মূল বিদ্বেষ লুকিয়ে থাকে হৃদয়ে। তাই, আপনার সাথির বিষয়ে ইতিবাচক বা ভালো মনোভাব ও অনুভূতি পোষণ করার চেষ্টা করুন। এক সময় আপনারা একসাথে যে-কাজগুলো উপভোগ করতেন, তা স্মরণ করুন। পুরোনো ছবিগুলো দেখুন। কোন বিষয়ে আপনারা হাসতেন? কোন গুণগুলো দেখে আপনারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন?—বাইবেলের নীতি: লূক ৬:৪৫.

আপনার কেমন লেগেছে, তা জানান। আপনার সাথিকে বাক্যবাণে আক্রমণ না করে, তাকে জানান যে, আপনার কতটা আঘাত লেগেছে। উদাহরণস্বরূপ, “আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে কিছু করাই তোমার স্বভাব,” বলার চেয়ে “তুমি যখন আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে কিছু করো, তখন আমার মনে হয় যেন আমার কোনো মূল্যই নেই,” বলা প্রায়ই ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে!—বাইবেলের নীতি: কলসীয় ৪:৬.

কখন থামতে হয় তা জানুন। যদি মেজাজ হারিয়ে যেতে শুরু করে আর কথাবার্তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে হয়, তাহলে আলোচনা স্থগিত রাখা সবচেয়ে ভালো। সাধারণত, উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক থেকে সরে পড়ায় ভুল কিছু নেই আর পরে যখন পরিবেশ শান্ত হবে, তখন তা আলোচনা করা যেতে পারে।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১৭:১৪. ◼ (g১৩-E ০৪)

মুখ দিয়ে যে-আঘাতজনক কথা বলা হয়, প্রায়ই তার মূল বিদ্বেষ লুকিয়ে থাকে হৃদয়ে