সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রচ্ছদ বিষয়

যেভাবে একজন ভালো বাবা হওয়া যায়

যেভাবে একজন ভালো বাবা হওয়া যায়

“আমার কোথায় ভুল হয়েছিল?” এই প্রশ্নটা মাইকেলকে a যেন তাড়া করে বেড়াত, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করেন। ভালো বাবা হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্বেও প্রতি মুহূর্তে তিনি যখন তার ১৯ বছর বয়সি বিদ্রোহী ছেলের বিষয়ে চিন্তা করতেন, তখন তিনি ভাবতেন যে, তিনি ভালো বাবা হওয়ার জন্য হয়তো আরও কিছু করতে পারতেন।

অপর দিকে, স্পেনে বসবাসরত টেরিকে বাবা হিসেবে বেশি সফল বলে মনে হয়। তার ছেলে আ্যন্ড্রু বলেন: “ছেলেবেলার কথা আমার যতটা মনে পড়ে, বাবা আমার সাথে বই পড়তেন, খেলা করতেন আর আমাকে ঘুরতেও নিয়ে যেতেন, যাতে তিনি আমার সাথে একান্তে সময় কাটাতে পারেন। তিনি আমাকে যা কিছু শেখাতেন, তা আমি বেশ মজা করে শিখতাম।”

সত্যি বলতে কি, ভালো বাবা হওয়া মুখের কথা নয়। তবে কিছু মৌলিক নীতি রয়েছে, যেগুলো সাহায্য করতে পারে। অনেক বাবা লক্ষ করেছে যে, যখন তারা এবং তাদের পরিবার বাইবেলের প্রজ্ঞা মেনে চলে, তখন তারা উপকার পায়। আসুন আমরা বাইবেলের কয়েকটা ব্যবহারিক পরামর্শ বিবেচনা করি, যেগুলো বাবাদের সাহায্য করতে পারে।

১. আপনার পরিবারের জন্য সময় বার করে নিন

একজন বাবা হিসেবে কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন যে, আপনার সন্তানেরা আপনার কাছে খুবই মূল্যবান? এটা ঠিক যে, আপনি আপনার সন্তানদের জন্য অনেক কিছু করেন, যেমন তাদের খাবার জোগানোর ও স্বচ্ছন্দে রাখার জন্য অনেক ত্যাগস্বীকার করেন। আপনার সন্তানরা যদি আপনার কাছে ততটা মূল্যবান না হতো, তাহলে আপনি তাদের জন্য এত কিছু করতেন না। তা সত্ত্বেও, আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে যথেষ্ট সময় না দেন, তাহলে তারা হয়তো মনে করতে পারে, আপনি তাদের চেয়ে অন্য বিষয়গুলোকে যেমন, আপনার কাজ, আপনার বন্ধুবান্ধব কিংবা আপনার শখের বিষয়গুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।

কখন থেকে একজন বাবা তার সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো শুরু করতে পারেন? সন্তান গর্ভে থাকার সময় থেকেই একজন মা তার শিশুর সঙ্গে এক বন্ধন গড়ে তুলতে শুরু করেন। গর্ভধারণের প্রায় ১৬ সপ্তাহ পর থেকেই গর্ভের ভিতরে থাকা শিশু হয়তো শুনতে শুরু করে। এই সময় তার বাবাও তার সঙ্গে এক অনন্য সম্পর্ক গড়ে তোলা শুরু করতে পারেন। তিনি শিশুর হৃদস্পন্দন শুনতে পারেন, নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন, তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন আর এমনকী গানও গাইতে পারেন।

বাইবেলের নীতি: বাইবেলের সময়ে, পুরুষরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দিত। বাবাদের নিয়মিতভাবে তাদের সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর জন্য উৎসাহ দেওয়া হতো, যা দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭ পদে উল্লেখিত বাইবেলের এই উক্তি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। এটি বলে, “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”

২. ভালো বাবা হওয়ার জন্য ভালো শ্রোতা হোন

দ্রুত বিচার না করে শান্তভাবে শুনুন

আপনার সন্তানদের সাথে খোলাখুলিভাবে কথা বলার জন্য, আপনাকে অবশ্যই তাদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে প্রথমে তারা কী বলতে চায়, তা শোনার চেষ্টা করুন।

যদি আপনার সন্তানরা মনে করে যে, আপনি একটুতেই রেগে যাবেন আর বিচার করতে আরম্ভ করবেন, তবে তারা আপনার কাছে তাদের মনের কথা খুলে বলতে ইতস্তত করবে। কিন্তু আপনি যদি তাদের কথা মন দিয়ে শোনেন, তাহলে আপনি দেখাতে পারবেন যে, তাদের প্রতি আপনার প্রকৃতই আগ্রহ রয়েছে। অন্যদিকে, তারাও হয়তো আপনাকে তাদের মূল্যবান চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো জানাবে।

বাইবেলের নীতি: বাইবেলে যে-ব্যবহারিক প্রজ্ঞা পাওয়া যায়, তা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকার নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল বলে: “প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হউক।” (যাকোব ১:১৯) যে-বাবারা বাইবেলের এই নীতি কাজে লাগায়, তারা তাদের সন্তানদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে কথা বলতে পারে।

৩. প্রেমের সঙ্গে শাসন করুন ও প্রশংসা করুন

এমনকী আপনি যখন হতাশ হন অথবা রেগে যান, তখনও আপনার এমনভাবে শাসন করা উচিত যা দেখাবে যে, আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের মঙ্গলের জন্য আপনার প্রেমময় চিন্তা আছে। এর অন্তর্ভুক্ত হল, পরামর্শ দেওয়া, সংশোধন করা, শিক্ষা দেওয়া এবং প্রয়োজনে শাস্তি দেওয়া।

এ ছাড়াও, একজন বাবা যখন নিয়মিতভাবে তার সন্তানদের প্রশংসা করেন, তখন শাসন করা অনেক বেশি কার্যকারী হয়। একটা প্রাচীন প্রবাদ বলে: “উপযুক্ত সময়ে কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের তুল্য।” (হিতোপদেশ ২৫:১১) প্রশংসা সন্তানদেরকে ভালো গুণগুলো গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সন্তানদের যখন গুরুত্ব দেওয়া হয় ও তাদের কাজগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখানো হয়, তখন তা তাদের বিকশিত হতে সাহায্য করে। একজন বাবা যখন প্রশংসা করার সুযোগগুলো খোঁজেন, তখন তা তার সন্তানদের মধ্যে আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং যা সঠিক তা করার ব্যাপারে হাল ছেড়ে না দিতে অনুপ্রাণিত করে।

বাইবেলের নীতি: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।”—কলসীয় ৩:২১.

৪. আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসুন ও সম্মান করুন

একজন বাবা তার স্ত্রীর সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, তা নিশ্চিতভাবেই সন্তানদের ওপর প্রভাব ফেলে। সন্তানদের বড়ো করে তোলা সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞদের একটা দল এভাবে ব্যাখ্যা করে: “একজন বাবা তার সন্তানদের জন্য সবচেয়ে ভালো যে-কাজটা করতে পারেন, তা হল তাদের মাকে সম্মান করা। . . . যখন সন্তানরা বুঝতে পারে যে, তাদের বাবা ও মা একে অন্যকে সম্মান করে, তখন তারা নিজেদের সুরক্ষিত বলে মনে করে।”—সন্তানদের স্বাস্থ্যকর বিকাশে বাবার ভূমিকা। b

বাইবেলের নীতি: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, . . . তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর।”ইফিষীয় ৫:২৫, ৩৩.

৫. ঈশ্বরের ব্যবহারিক প্রজ্ঞা কাজে লাগান

যে-বাবারা ঈশ্বরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে, তারা তাদের সন্তানদেরকে এক মূল্যবান উত্তরাধিকার দিতে পারে যা হল, তাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

আ্যন্টোনিও নামে একজন যিহোবার সাক্ষি, তার ছয় সন্তানকে বড়ো করে তোলার জন্য বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি তার এক মেয়ের কাছ থেকে নীচের এই নোটটা পেয়েছিলেন: “প্রিয় বাবা, তুমি যে আমায় যিহোবা ঈশ্বরকে, আমার প্রতিবেশীদেরকে ও নিজেকে ভালোবাসতে শিখিয়ে এক সুবিবেচক ব্যক্তি হিসেবে বড়ো করে তুলেছ, সেইজন্য আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তুমি দেখিয়েছ যে, তুমি যিহোবাকে ভালোবাস আর ব্যক্তিগতভাবে আমার যত্ন নাও। তোমার জীবনে যিহোবাকে প্রথম স্থান দেওয়ার এবং আমাদেরকে ঈশ্বরের দান হিসেবে দেখার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ!”

বাইবেলের নীতি: “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে। আর এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক।”দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫, ৬.

এটা ঠিক যে, বাবা হওয়ার সঙ্গে এই পাঁচটা বিষয় ছাড়া আরও বেশি কিছু জড়িত। আসলে, ভালো বাবা হওয়ার জন্য আপনি যতই আপ্রাণ চেষ্টা করুন না কেন, আপনি কখনোই নিখুঁত হতে পারবেন না। কিন্তু আপনি যখন প্রেমের সঙ্গে ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে যতটা সম্ভব এই নীতিগুলো প্রয়োগ করবেন, আপনিও একজন ভালো বাবা হয়ে উঠতে পারবেন। c (g১৩-E ০৩)

a এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

b এমনকী সন্তানদের মায়ের সাথে তাদের বাবার যদি বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েও থাকে, তবুও তিনি যদি তার সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদা দেখিয়ে আচরণ করেন, তাহলে তা সন্তানদের সঙ্গে তাদের মায়ের সম্পর্ক ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

c পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে আরও নির্দেশনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত পারিবারিক সুখের রহস্য বইটি দেখুন অথবা www.isa4310.com ওয়েব সাইটের “For the Family” নামক অংশটা দেখুন।