সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কোন ছবিগুলো আপনি দেখবেন?

কোন ছবিগুলো আপনি দেখবেন?

কোন ছবিগুলো আপনি দেখবেন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চলচ্চিত্র বা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলোতে যৌনতা, দৌরাত্ম্য এবং কলুষতার আধিক্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ এক নির্দিষ্ট যৌন দৃশ্য সম্বন্ধে বলে যে, তা খুবই অশ্লীল আবার অন্যেরা তর্ক করে যে, এটা শিল্পবোধসম্পন্ন। কেউ কেউ জোর দিয়ে বলে যে, কোনো ছবিতে দৌরাত্ম্যের দৃশ্য অপ্রয়োজনীয় অথচ অন্যেরা বলে এটা প্রয়োজনীয়। কেউ কেউ দাবি করে যে, সংলাপের মধ্যে অত্যধিক নোংরা কথা বিরক্তিকর অথচ অন্যেরা দাবি করে যে এটা বাস্তবসম্মত। একজন যেটাকে অশ্লীল মনে করে, অন্যেরা সেটাকে বাক্‌স্বাধীনতা বলে থাকে। উভয় পক্ষের কথা শুনে এই সমস্তকিছুকে হয়তো ছবির বিষয়বস্তুর ওপর এক তুচ্ছ বিশ্লেষণ বলে মনে হতে পারে।

কিন্তু ছবিতে যা দেখা ও শোনা যায়, তা সাধারণ তর্কবিতর্কের বিষয় নয়। এটা এক সুযুক্তিপূর্ণ চিন্তাভাবনা, শুধুমাত্র বাবামাদের জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সেই ব্যক্তিদের জন্যও যারা নৈতিক মানগুলোকে মূল্য দিয়ে থাকে। “যখনই আমি কোনো ঝুঁকি নিই এবং আমার উত্তম বিচারবুদ্ধির বিপরীতে কাজ করি আর ঝুঁকি নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকি, আমি সেখান থেকে বের হয়ে সবসময় যেন নিজেকে এক জঘন্য ব্যক্তি বলে মনে করি,” একজন যুবতী দুঃখ করে বলেছিল। “এই বস্তাপচা ছবিটা যারা তৈরি করেছে, তাদের জন্য আমার লজ্জা হয় এবং নিজের জন্যও আমার লজ্জা হয়। এটা এমন কিছু দেখার মতো, যেটা সবেমাত্র দেখার ফলে মানুষ হিসেবে আমাকে যেন অনেক ছোট করে ফেলেছে।”

মানগুলো স্থাপন করা

চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তাভাবনা করা নতুন কিছু নয়। চলচ্চিত্রের প্রাথমিক দিনগুলোতে, রুপোলি পর্দায় প্রদর্শিত যৌনতার বিষয়বস্তু ও অপরাধমূলক বিষয় নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৩০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে একটা আইন বলবৎ করা হয়েছিল যেটা চলচ্চিত্রগুলোতে কী কী দেখানো যাবে, সেই ক্ষেত্রে চরম সীমা স্থাপন করেছিল।

দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে, চলচ্চিত্রের জন্য এই নতুন আইনটা “অত্যন্ত দমনমূলক ছিল, যা সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত প্রায় সমস্তকিছুই পর্দায় প্রদর্শন করা নিষেধ করেছিল। এই আইন ‘গভীর প্রণয়ের দৃশ্যগুলো’ প্রদর্শন করাকে নিষেধ করেছিল এবং ব্যভিচার, অবৈধ যৌনতা, প্রলোভনময় যৌনকর্ম ও ধর্ষণকে এমনকি পরোক্ষভাবেও উল্লেখ করা যেত না, একমাত্র তখনই করা যেত যখন সেগুলো কাহিনীর জন্য খুবই অপরিহার্য ছিল আর ছবির শেষে এই ধরনের ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হতো।”

দৌরাত্ম্য সম্বন্ধে বলা যায় যে, ছবিগুলোতে “কাহিনীর জন্য যতক্ষণ না অপরিহার্য ছিল, ততক্ষণ সেই সময়কালে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোকে প্রদর্শন করা বা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা, কোনো অপরাধের বিষয়কে বিস্তারিত দেখানো, অপরাধীদের হাতে আইন বলবৎকারী অফিসারদের মৃত্যু, অত্যধিক পাশবিকতা বা হত্যার ইঙ্গিত দেওয়া অথবা হত্যা কিংবা আত্মহত্যা দেখানো নিষিদ্ধ ছিল। . . . কোনো পরিস্থিতিতেই যেকোনো ধরনের অপরাধকে সঠিক বলে উপস্থাপন করা যেত না।” সংক্ষেপে বলা যায় সেই আইন উল্লেখ করেছিল যে, “এমন কোনো ছবিই প্রযোজনা করা যাবে না, যেগুলো দর্শকদের নৈতিক মানগুলোকে খর্ব করবে।”

বিধিনিষেধের বদলে রেটিং পদ্ধতি

১৯৫০ দশকের মধ্যে, হলিউডের অনেক প্রযোজক এই আইন সেকেলে হয়ে গিয়েছে ভেবে তা লঙ্ঘন করতে শুরু করেছিল। তাই, ১৯৬৮ সালে সেই আইন বাতিল হয়ে গিয়েছিল এবং এটার জায়গায় রেটিং পদ্ধতি এসেছিল। * রেটিং পদ্ধতির দরুন একটা ছবিতে দৃশ্যগুলো খোলামেলাভাবে দেখানো যেতে পারে কিন্তু এটাকে একটা চিহ্নের দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা হবে, যা সাধারণ দর্শকদের আগেই জানিয়ে দেবে যে, এটা কতদূর পর্যন্ত “প্রাপ্তবয়স্কদের” দেখার মতো ছবি। জ্যাক ভ্যালেনটি, যিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে আমেরিকার চলচ্চিত্র সংঘের সভাপতি হিসেবে কাজ করেছিলেন তার কথা অনুসারে, এর লক্ষ্য ছিল “বাবামাদের কিছু অগ্রিম সাবধানবাণী জোগানো, যাতে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, কোন ছবিগুলো তাদের বাচ্চাদের দেখা উচিত ও কোনগুলো দেখা উচিত নয়।”

রেটিং পদ্ধতি চালু হওয়ায় সেই প্রাচীরকে ভাঙা গিয়েছিল। যৌনতা, দৌরাত্ম্য এবং কলুষতা হলিউডের সাধারণ দর্শকদের চলচ্চিত্রগুলোর চিত্রনাট্যে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হয়েছিল। চলচ্চিত্র নির্মাতারা যে-নতুন স্বাধীনতা পেয়েছিল, তা এক জোয়ার এনেছিল, যেটাকে রোধ করা যায়নি। তা সত্ত্বেও, রেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণ দর্শককে আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু রেটিং পদ্ধতি কি আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয়ই জানায়?

রেটিং পদ্ধতি আপনাকে যা জানাতে পারে না

কেউ কেউ সন্দেহ করে যে, বছরের পর বছর ধরে রেটিং পদ্ধতি আসলে অনেক শিথিল হয়ে গিয়েছে। হার্ভার্ড স্কুল অভ পাবলিক হেলথ এর দ্বারা পরিচালিত একটা গবেষণা তাদের এই সন্দেহকে সমর্থন করে কারণ এটা প্রকাশ করেছিল যে, যে-ছবিগুলো অল্পবয়সি কিশোর-কিশোরীদের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়, সেগুলোতে এখন এত বেশি দৌরাত্ম্য ও যৌনতায় ভরা খোলামেলা দৃশ্য থাকে যে, মাত্র দশ বছর আগেও সেগুলো ছিল না। সেই গবেষণা উপসংহারে বলেছিল যে, “সম্ভাব্য আপত্তিকর বিষয়বস্তুর পরিমাণ ও ধরনের দিক দিয়ে একই রেটিং থাকা ছবিগুলো লক্ষণীয়ভাবে আলাদা হতে পারে” আর “শুধুমাত্র বয়সের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া রেটিংগুলো দৌরাত্ম্য, যৌনতা, কলুষতা ও অন্যান্য বিষয়বস্তু সম্বন্ধে পর্যাপ্ত তথ্য জোগায় না।” *

যে-বাবামায়েরা কোনোকিছু না ভেবেই তাদের ছেলেমেয়েদেরকে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবক ছাড়াই প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার অনুমতি দেয়, তারা হয়তো জানেই না যে, আজকে কোন ছবিগুলো দেখা উপযুক্ত বলে মনে করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে যে-ছবিটাকে কিশোর-কিশোরীদের জন্য উপযুক্ত বলে রেটিং করা হয়েছে, একজন চলচ্চিত্র সমালোচক সেই ছবির প্রধান চরিত্রকে বর্ণনা করেন। সে ছিল “১৭ বছর বয়সী এক স্বাধীনচেতা মেয়ে, যে অবলীলায় প্রতিদিন মদ খেয়ে মাতাল হয়, অবৈধ নেশাকর ওষুধ সেবন করে, উদ্দাম পার্টিতে যায় এবং এমন এক ছেলের সঙ্গে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়, যার সঙ্গে তার সবেমাত্র পরিচয় হয়েছে।” এই ধরনের বিষয়বস্তু অসাধারণ কিছু নয়। বাস্তবিকই, দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট ম্যাগাজিন মন্তব্য করে যে, চলচ্চিত্রগুলোতে মৌখিক যৌনতার উল্লেখ “স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য” বলে মনে হয়, যেগুলোকে কিশোর-কিশোরীদের জন্য উপযুক্ত বলে রেটিং করা হয়েছে। স্পষ্টতই, কোনো ছবিকে মূল্যায়ন করার জন্য রেটিং পদ্ধতিই একমাত্র ভিত্তি নয়। এর চেয়ে ভাল নির্দেশিকা কি রয়েছে?

“দুষ্টতাকে ঘৃণা কর”

রেটিং পদ্ধতি বাইবেল শিক্ষিত বিবেকের বিকল্প নয়। তাদের সমস্ত সিদ্ধান্তে—যেগুলোতে বিনোদনের সঙ্গে জড়িত সিদ্ধান্তও রয়েছে—খ্রিস্টানরা বাইবেলে গীতসংহিতা ৯৭:১০ পদে দেওয়া পরামর্শকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে, যা হল: “দুষ্টতাকে ঘৃণা কর।” যিনি দুষ্টতাকে ঘৃণা করেন, তিনি সেই বিষয়গুলোর দ্বারা আনন্দ পাওয়াকে অন্যায় বলে বিবেচনা করেন, যেগুলোকে ঈশ্বর ঘৃণা করেন।

বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের কোন ধরনের ছবিগুলো দেখতে অনুমতি দেয়, সেই বিষয়ে তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। চট করে একটা ছবির রেটিংয়ের ওপর চোখ বুলিয়ে দেখা অতিরিক্ত নির্ভরতাকে প্রকাশ করবে। খুব সম্ভবত যে-ছবিটাকে আপনার বাচ্চার বয়সসীমার জন্য উপযুক্ত বলে রেটিং করা হয়েছে, তা সেই মানগুলোকে উন্নীত করে, যেগুলো একজন বাবা অথবা মা হিসেবে আপনি অনুমোদন করেন না। এটা খ্রিস্টানদের জন্য আশ্চর্যের বিষয় নয় কারণ জগৎ এমন এক চিন্তাধারা গ্রহণ করেছে এবং এমন কাজগুলো করছে, যেগুলো ঈশ্বরীয় মানগুলোর বিপরীত। *ইফিষীয় ৪:১৭, ১৮; ১ যোহন ২:১৫-১৭.

তার মানে এই নয় যে, সব ছবিই খারাপ। তবে সাবধান হওয়া খুবই জরুরি। এই ক্ষেত্রে, ১৯৯৭ সালের ২২শে মে সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকা এই মন্তব্য করেছিল: “প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত বিষয়গুলোকে মনোযোগের সঙ্গে মূল্যায়ন করা এবং এমন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া, যেগুলো তাকে ঈশ্বর ও মানুষের সামনে এক শুদ্ধ বিবেক দান করবে।”—১ করিন্থীয় ১০:৩১-৩৩.

উপযুক্ত বিনোদন খোঁজা

তাদের পরিবার কোন ছবিগুলো দেখবে, সেই ক্ষেত্রে বাবামারা কীভাবে বাছাই করতে পারে? সারা পৃথিবীর বাবামাদের কাছ থেকে আসা মন্তব্যগুলো বিবেচনা করুন। তাদের মন্তব্যগুলো হয়তো আপনাকে আপনার পরিবারের জন্য গঠনমূলক বিনোদন জোগানোর ব্যাপারে আপনার অনুসন্ধানে সাহায্য করতে পারে।—১৪ পৃষ্ঠায় “অন্যান্য ধরনের বিনোদন” নামক বাক্সটাও দেখুন।

“আমার ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছিল, তখন তারা সিনেমায় গেলে আমার স্ত্রী বা আমি সবসময় তাদের সঙ্গে যেতাম,” স্পেনের প্রবাসী খোয়ান বলেন। “তারা কখনোই একা বা অন্য কোনো অল্পবয়সিদের সঙ্গে যায়নি। এখন কিশোর বয়সে তারা কখনো ছবিগুলোর প্রিমিয়ার শো-তে যায় না; এর পরিবর্তে, আমরা চাই যেন তারা সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সেই ছবি সম্বন্ধে সমালোচনামূলক মন্তব্যগুলো পড়ি অথবা যাদেরকে আমরা নির্ভরযোগ্য মনে করি, তাদের কাছ থেকে সেই ছবির ব্যাপারে মন্তব্য শুনে থাকি। এরপর, পারিবারিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, আমদের এই ছবিটা দেখা উচিত কি না।”

দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক, প্রেক্ষাগৃহে কোন ছবিটা চলছে সেই বিষয়ে তার কিশোরবয়সি ছেলেকে খোলাখুলি কথাবার্তা বলতে উৎসাহিত করেন। “আমার স্ত্রী ও আমি আলোচনা শুরু করি, ছবিটা সম্বন্ধে তার মতামত জিজ্ঞেস করি,” মার্ক বলেন। “এটা আমাদেরকে তার চিন্তাভাবনা জানতে ও তার সঙ্গে যুক্তি করতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ, আমরা সেই সমস্ত ছবি বাছাই করতে সমর্থ হই, যেগুলো আমরা একত্রে উপভোগ করতে পারব।”

ব্রাজিলের রোঝেরিয়ুও তার বাচ্চারা যে-ছবিগুলো দেখতে চায়, সেগুলোর বিষয়ে তাদের সঙ্গে মনোযোগ সহকারে আলোচনা করার জন্য সময় ব্যয় করেন। “সমালোচকরা কী বলেছে, তা আমি তাদের সামনে পড়ি,” তিনি বলেন। “আমি তাদের সঙ্গে ভিডিও দোকানে যাই, তাদেরকে এটা শেখাতে যে কোন ছবি অনুপযুক্ত সেটার ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য কীভাবে ভিডিওর প্রচ্ছদে তা দেখতে হয়।”

ব্রিটেনের ম্যাথিও, তার বাচ্চারা যে-ছবিগুলো দেখতে চায়, সেগুলোর বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলাকে উপকারজনক বলে মনে করেন। “একেবারে অল্পবয়স থেকে,” তিনি বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে সেই ছবিগুলোর ওপর আলোচনাগুলোতে যুক্ত করা হয়েছিল, যে-ছবিগুলো পরিবারগতভাবে আমরা পছন্দ করেছি। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিই যে, নির্দিষ্ট কোনো ছবি দেখব না, তা হলে আমার স্ত্রী ও আমি কেবলমাত্র নিষেধ করার পরিবর্তে ব্যাখ্যা করতাম যে কেন আমরা তা দেখব না।”

এ ছাড়া, কিছু বাবামা ছবিগুলো সম্বন্ধে জানার জন্য ইন্টারনেটে গবেষণা করাকে সাহায্যকারী হিসেবে দেখেছে। অসংখ্য ওয়েব সাইট রয়েছে, যা ছবিগুলোর বিষয়বস্তু সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে থাকে। একটা নির্দিষ্ট ছবি যে-মূল্যবোধগুলোকে উন্নীত করেছে, সেই বিষয়ে আরও স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভ করার জন্য এগুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশিক্ষিত বিবেকের উপকারগুলো

বাইবেল সেই লোকেদের সম্বন্ধে বলে, যাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” (ইব্রীয় ৫:১৪) তাই, বাবামাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত তাদের সন্তানদের হৃদয়ে সেই মূল্যবোধগুলো গেঁথে দেওয়া, যা তাদেরকে সেই সময়ে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করবে যখন তাদের নিজস্ব বিনোদন বাছাই করার স্বাধীনতা থাকে।

যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে অনেক তরুণ-তরুণী এই ক্ষেত্রে তাদের বাবামাদের কাছ থেকে চমৎকার প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বিল ও চেরি তাদের দুজন কিশোরবয়সি ছেলেকে নিয়ে ছবি দেখা উপভোগ করে। “হল থেকে ফিরে এসে,” বিল বলেন, “আমরা প্রায়ই ছবিটা নিয়ে পারিবারিক আলোচনায় বসে থাকি—এই ছবিটা কোন মূল্যবোধগুলো শিখিয়েছে এবং আমরা সেই মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে একমত কি না।” অবশ্য বিল ও চেরি বাছাই করতে সমর্থ হওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করে। “ছবিটা সম্বন্ধে আমরা আগে থেকেই পড়ি এবং সেই ছবিতে যদি কোনো আপত্তিকর দৃশ্য থাকে, যা আমরা হয়তো আগে বুঝতে পারিনি, তা হলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে কোনো দ্বিধা করি না,” বিল বলেন। দায়িত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের সন্তানদের যুক্ত করার দ্বারা বিল ও চেরি মনে করে যে, তাদের ছেলেরা সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে তীক্ষ্ণ বোধশক্তি গড়ে তুলতে সাহায্য পাচ্ছে। “তারা কোন ছবিগুলো দেখবে তা বাছাই করার বিষয়টা যখন আসে, তখন তারা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে,” বিল বলেন।

বিল ও চেরির মতো অনেক বাবামা বিনোদনের ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রিয়কে প্রশিক্ষিত করতে তাদের সন্তানদের সাহায্য করেছে। এটা ঠিক যে, চলচ্চিত্রশিল্পের দ্বারা নির্মিত অধিকাংশ ছবিই উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে, যখন খ্রিস্টানরা বাইবেলের নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন তারা গঠনমূলক ও সতেজতাদায়ক উত্তম বিনোদন উপভোগ করতে পারে।

[পাদটীকাগুলো]

^ বিশ্বের অনেক দেশে একই পদ্ধতি চালু হয়েছে, যার দ্বারা রেটিং চিহ্নটা নির্দিষ্ট বয়সসীমার ইঙ্গিত দেয়, যাদের জন্য ছবিটা হয়তো উপযুক্ত হবে।

^ এ ছাড়া, একটা ছবিকে রেটিং করার মান একেক দেশে একেক রকম হতে পারে। যে-ছবিটাকে একটা দেশে কিশোর-কিশোরীদের জন্য অনুপযুক্ত বলে মনে করা হয়, সেটাকে অন্য আরেকটা দেশে সঠিক বলে মনে করা হতে পারে।

^ খ্রিস্টানদের এটাও মনে রাখা উচিত যে, ছোট বাচ্চা ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য তৈরি ছবিগুলোতে ডাকিনীবিদ্যা, প্রেতচর্চা কিংবা অন্যান্য ধরনের ভৌতিক বিষয়বস্তুও থাকতে পারে।—১ করিন্থীয় ১০:২১.

[১২ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

“আমরা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি”

“আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমরা একসঙ্গে পরিবারগতভাবে সিনেমায় যেতাম। এখন যেহেতু আমি বড় হয়েছি, তাই বাবামা ছাড়া সিনেমায় যাওয়ার অনুমতি আমাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বাবামা আমাকে অনুমতি দেওয়ার আগে ছবিটার নাম ও এটার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে জানতে চায়। তারা যদি ছবিটার সম্বন্ধে না শুনে থাকে, তা হলে তারা এটার সম্বন্ধে দেওয়া সমালোচনাগুলো পড়ে অথবা টেলিভিশনে এর ট্রেইলার দেখে থাকে। এ ছাড়া, তারা ছবিটা সম্বন্ধে ইন্টারনেট থেকেও তথ্য খুঁজে থাকে। যদি তারা মনে করে যে ছবিটা উপযুক্ত নয়, তখন তারা ব্যাখ্যা করে যে কেন তা নয়। সেইসঙ্গে তারা আমাকেও আমার মতামত জানানোর সুযোগ দেয়। খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা হয় আর আমরা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।”—আ্যলোইজ, বয়স ১৯, ফ্রান্স।

[১৩ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

বিষয়টা নিয়ে কথা বলুন!

“বাবামারা যদি কিছু করতে মানা করে এবং এর পরিবর্তে কোনো গঠনমূলক আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা না করে, তা হলে ছেলেমেয়েরা হয়তো তাদের ইচ্ছাগুলোকে গোপনে পূরণ করার চেষ্টা করতে পারে। তাই, ছেলেমেয়েরা যখন প্রকাশ করে যে, তারা কোনো ধরনের ক্ষতিকর বিনোদন দেখতে চায়, তখন কিছু বাবামা সেগুলো দেখতে সঙ্গে সঙ্গে মানা করে না কিংবা অনুমতিও দেয় না। এর পরিবর্তে, তারা উভয় পক্ষকে শান্ত হওয়ার জন্য সময় দিয়ে থাকে। কয়েক দিন ধরে বিষয়টা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকার চেয়ে তারা সেটা নিয়ে আলোচনা করে, সেই তরুণ বা তরুণীকে জিজ্ঞেস করে যে কেন সে মনে করে এই ধরনের বিনোদন গ্রহণযোগ্য। বিষয়টা নিয়ে কথা বলার পর প্রায়ই তরুণ-তরুণীরা তাদের বাবামার সঙ্গে একমত হয় ও এমনকি তাদেরকে ধন্যবাদও জানায়। এরপর, বাবামাদের নেতৃত্বে তারা অন্য কোনো ধরনের বিনোদন বাছাই করে, যা তারা একসঙ্গে উপভোগ করতে পারে।”—মাসাআকি, জাপানের একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ।

[১৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

অন্যান্য ধরনের বিনোদন

◼ “অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের সহজাত আকাঙ্ক্ষা হল তাদের সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশা করা, তাই আমরা সবসময় আমাদের মেয়েকে আমাদের তত্ত্বাবধানে রেখে সৎ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশতে দিয়েছি। যেহেতু আমাদের মণ্ডলীতে অনেক উদাহরণযোগ্য অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে রয়েছে, তাই আমরা আমাদের মেয়েকে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে উৎসাহ দিয়েছি।”—এলিজা, ইতালি।

◼ “আমরা আমাদের বাচ্চাদের বিনোদনে ভাল করে অংশ নিই। আমরা তাদের জন্য গঠনমূলক বিনোদন যেমন হেঁটে বেড়াতে যাওয়ার, বারবিকিউ করার, বনভোজনের এবং সব বয়সের সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশার আয়োজন করি। এভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা বিনোদনকে এমনভাবে দেখে না যে, তারা শুধুমাত্র তাদের বন্ধুদের সঙ্গেই তা উপভোগ করবে।”—জন, ব্রিটেন।

◼ “আমরা সহখ্রিস্টানদের মধ্যে মেলামেশাকে পরিতৃপ্তিদায়ক হিসেবে দেখেছি। আমার ছেলেমেয়েরা ফুটবল খেলতে ভালবাসে, তাই আমরা মাঝে মাঝে অন্যদের সঙ্গে এইরকম খেলার আয়োজন করি।”—খোয়ান, স্পেন।

◼ “আমরা ছেলেমেয়েদেরকে বাদ্যযন্ত্র বাজানো উপভোগ করতে উৎসাহিত করি। এ ছাড়া, আমরাও একসঙ্গে নানা শখের কাজ করি, যেমন টেনিস খেলা, ভলিবল খেলা, সাইকেল চালানো, পড়া এবং বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে সময় কাটানো।”—মার্ক, ব্রিটেন।

◼ “আমরা একসঙ্গে পরিবারগতভাবে ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত বোলিংয়ে (যে-খেলায় দাঁড়-করানো পিনগুলোতে বল গড়িয়ে ফেলতে হয়) যাই। এ ছাড়া, আমরা মাসে একবার একসঙ্গে বিশেষ কিছু করার চেষ্টা করি। সমস্যাগুলো এড়ানোর চাবিকাঠি হচ্ছে বাবামাদের তাদের সন্তানদের প্রতি নজর রাখতে হবে।”—ডানিলো, ফিলিপিনস।

◼ “চেয়ারে বসে কোনো ছবি দেখার চেয়ে সরাসরি অনুষ্ঠিত কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া প্রায়ই আরও বেশি রোমাঞ্চকর। আমরা সবসময় কোনো স্থানীয় অনুষ্ঠান যেমন চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী, মোটরগাড়ির প্রদর্শনী বা গানের অনুষ্ঠান কখন হবে, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখি। এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলো চলাকালীন প্রায়ই কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া, আমরা সাবধান থাকি যেন বিনোদন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। কারণ সেক্ষেত্রে শুধু যে সময়ই নষ্ট হয় তা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অতিরিক্ত বিনোদন অনুষ্ঠানের অভিনবত্ব ও রোমাঞ্চকে নষ্ট করে দেয়।”—জুডিথ, দক্ষিণ আফ্রিকা।

◼ “অন্যান্য ছেলেমেয়েরা যা কিছু করে, তার সবই আমার বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত নয় আর আমি তাদেরকে সেটা বুঝতে সাহায্য করার চেষ্টা করি। একইসময়ে আমার স্বামী ও আমি তাদেরকে উত্তম বিনোদন প্রদান করার চেষ্টা করি। আমরা প্রচেষ্টা করি যেন তারা এই কথা না বলতে পারে যে, ‘আমরা কোথাও যাই না। আমরা কিছুই করি না।’ পরিবারগতভাবে আমরা পার্কে যাই এবং আমাদের ঘরে মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা করার আয়োজন করি।” *—মারিয়া, ব্রাজিল।

[পাদটীকা]

^ অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করার সম্বন্ধে আরও বেশি জানার জন্য আমাদের সহযোগী পত্রিকা প্রহরীদুর্গ নভেম্বর ১, ১৯৯২, পৃষ্ঠা ২৪-২৯ দেখুন।

[সৌজন্যে]

James Hall Museum of Transport, Johannesburg, South Africa

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ছবিটা সম্বন্ধে দেওয়া সমালোচনাগুলো পরীক্ষা করে দেখুন

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাবামায়েরা, আপনাদের ছেলেমেয়েদেরকে বাছাই করতে শিক্ষা দিন