বিশ্ব নিরীক্ষা
বিশ্ব নিরীক্ষা
পাখাযুক্ত জীবাশ্ম—এক গুজব
চিনের লিয়াওনিং রাজ্যে একটা জীবাশ্ম পাওয়া গেছে যেটা সম্বন্ধে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকা বলেছিল, “পাখির দেহের সঙ্গে ডাইনোসরের সংযোগ থাকার বিষয়টা একেবারেই অযৌক্তিক।” এই জীবাশ্মটার নাম হল আরকিওরেপটর লিয়াওনিংএনসিস। আর শোনা যায় যে এই জীবাশ্মে ডাইনোসরের মতো লেজ আছে এবং এর বুক ও ঘাড়ের দিকটা পাখির মতো। সায়েন্স নিউজ পত্রিকা বলে যে বিজ্ঞানীরা এখন নিশ্চিত “জীবাশ্মের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদেরকে বোকা বানানো হয়েছে।” জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা ওই জীবাশ্মটাকে পরীক্ষা করে দেখেছেন, যে হাড় দিয়ে লেজকে শরীরের সঙ্গে যুক্ত করা হয় এর মধ্যে সেটা নেই এবং শিলা ফলকে কারও হাত দেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। তাই এখন তারা এই বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন। ওই রিপোর্ট বলে যে কানাডার আলবার্টার ড্রামহেলার শহরের রয়্যাল টিরেল মিউজিয়াম অফ প্যালিওনটোলজির ফিলিপ ক্যারি সন্দেহ করেন, “আরকিওরেপটরের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য কেউ একজন ডাইনোসরের লেজকে পাখির জীবাশ্মের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন।”
পোষা পশুপাখিদের থেকে সাবধান
ফ্রান্সের খবরের কাগজ লে মনডে বলে, ফ্রান্সের শতকরা ৫২টা পরিবার পশু বা পাখি পুষে থাকে। কিন্তু, ফ্রান্সের ম্যাজোঁ-আ্যলফোর্টের ইনস্টিটিউট অফ কমপ্যারেটিভ আ্যনিমেল ইমিউনোলজির কয়েকজন পশু বিশেষজ্ঞের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ফ্রান্সের ৮৪ লাখ বিড়াল ও ৭৯ লাখ কুকুরের শরীরে যে ছত্রাক ও জীবাণু রয়েছে, সেগুলোই এদের প্রভুদের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে দাদ, গোলকৃমি, বিভিন্ন খোসপাঁচড়া, লিসমানাইসিস এবং টোক্সোপ্লাজমোসিস। গর্ভবতী মহিলাদের টোক্সোপ্লাজমোসিস হলে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে বা বাচ্চা বিকলাঙ্গও হতে পারে। সেই রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, ঘরে পশুপাখি পোষার কারণে প্রায় ১,০০,০০০ জন লোক বিভিন্নরকমের এলার্জি এবং কুকুরের কামড়ের জন্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়।
বিষাক্ত ওষুধ?
ইনস্টিটিউ অফ মেডিসিন জানায় যে ভুল চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি ৪৪,০০০ থেকে ৯৮,০০০ জন রোগী মারা যায়। এই সমস্যার কারণ হিসেবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ফার্মেসিগুলোর ত্রুটিকেই দায়ী করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফার্মেসির লোকেরা যখন প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ দিতে যান তখন তারা প্রায়ই ডাক্তারদের অস্পষ্ট হাতের লেখা দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। ডাক্তার কি দশ মিলিগ্রাম লিখেছেন না দশ মাইক্রোগ্রাম লিখেছেন, তা তারা বুঝে উঠতে পারেন না। এছাড়াও আরেকটা অসুবিধা হল, অনেক ওষুধের নাম শুনতে একইরকম শোনায় যার ফলে ডাক্তার, নার্স, ফার্মেসিস্ট ও রোগীরা তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিন পাঁচ বছরের মধ্যে চিকিৎসার এই ত্রুটিগুলোকে শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার আদেশ দিয়েছে।
আরও অনেক ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছে
মেক্সিকোর খবরের কাগজ এক্সেলশিওর বলে, “পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভাষায় যে বইটাকে অনুবাদ করা হচ্ছে তা হল বাইবেল।” জার্মানির বাইবেল সোসাইটি অনুসারে, ১৯৯৯ সালে আরও ২১টা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছে আর এর ফলে এখন ২,২৩৩টা ভাষায় পুরো ও আংশিকভাবে বাইবেল পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে “পুরনো নিয়ম ও নতুন নিয়ম প্রায় ৩৭১টা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে, যা ১৯৯৮ সালের চেয়ে ৫টা বেশি।” এত এত ভাষা এল কোথা থেকে? ওই খবরের কাগজ বলে, “সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে আফ্রিকাতে। সেখানে মোট ৬২৭টা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছে। এরপর এশিয়াতে মোট
৫৫৩টা, অস্ট্রেলিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ৩৯৬টা, ল্যাটিন আমেরিকা/ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ৩৮৪টা, ইউরোপে ১৯৭টা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩টা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।” তারপরেও “পৃথিবীতে যত ভাষা আছে তার অর্ধেক ভাষাতেও বাইবেল অনুবাদ করা হয়নি।” কেন হয়নি? কারণ ওই সমস্ত ভাষায় অল্প কিছু লোকেরা কথা বলে থাকে এবং সেই ভাষাগুলোতে বাইবেল অনুবাদ করা সত্যিই খুব কঠিন। এছাড়া, অনেক লোকেরা দুটো ভাষা জানেন আর তাই তাদের ভাষায় বাইবেল না থাকলেও তাদের জানা অন্য ভাষায় তারা বাইবেল পড়তে পারেন।লন্ডনের ভাষা
লন্ডনের দ্যা টাইমস খবরের কাগজ বলে যে ইংল্যান্ডের লন্ডনে স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা কমপক্ষে ৩০৭টা ভাষায় কথা বলে। এখন লন্ডনে কয়টা ভাষায় কথা বলা হয়, তার ওপর করা প্রথম সমীক্ষার সম্পাদকদের মধ্যে একজন হলেন ড. ফিলিপ বেকার। ছেলেমেয়েরা এত এত ভাষায় কথা বলে দেখে তিনি খুবই অবাক হয়ে যান। তিনি বলেছিলেন: “এখন আমরা নিশ্চিত যে পৃথিবীতে লন্ডনেই সবচেয়ে বেশি ভাষায় কথা বলা হয় আর তা এমনকি নিউইয়র্কের চেয়েও বেশি।” শত শত আঞ্চলিক ভাষা এবং যে ভাষায় অল্পসংখ্যক লোকেরা কথা বলে সেই ভাষাগুলোকে ৩০৭টা ভাষার মধ্যে ধরা হয়নি, ধরা হলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো। শহরের ৮,৫০,০০০ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্রছাত্রী ঘরে ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। এখানকার বেশির ভাগ বিদেশি ভাষাভাষির লোকেরা এসেছে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে। আর আফ্রিকার প্রায় ১০০টা ভাষা রয়েছে। শুধু একটা স্কুলেই ছাত্রছাত্রীরা প্রায় ৫৮টা ভাষায় কথা বলে।
পিঠের ওপর ভারী বোঝা
আ্যমেরিকান একাডেমি অফ অর্থোপেডিক সার্জনরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, বাচ্চাদের পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথার একটা কারণ হল কিছু বাচ্চারা রোজ তাদের পিঠের ওপর ভারী বোঝা চাপিয়ে স্কুলে যায়। কিছু ছেলেমেয়েরা তাদের বইখাতা ছাড়াও টিফিন, জল, বাদ্যযন্ত্র ও কাপড় সহ প্রায় ১৮ কিলো জিনিস নিয়ে স্কুলে যায়। শিশু বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দেন যে প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যদি রোজ এরকম ভারী ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায়, তাহলে পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে, এমনকি মেরুদণ্ডেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেক্সিকো শহরের এক্সেলশিওর খবরের কাগজ বলে যে কিছু বিশেষজ্ঞরা স্কুলের অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের পরামর্শ দেন, ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগের ওজন তাদের শরীরের ওজনের শতকরা ২০ ভাগের বেশি হওয়া উচিত নয় অথবা তাদের ব্যাগ “গাড়িতে করে, কোমরে বেল্ট দিয়ে আটকে এবং পিঠের ওপর তুলা বা অন্য কোন নরম বস্তুর প্যাড দিয়ে নিয়ে আসা উচিত।”
দূষিত প্রতিমারা
হিন্দুরা পুজোর পরে দেবদেবীর প্রতিমাগুলোকে তাদের এলাকার আশেপাশের নদীতে বিসর্জন দেন। প্রতিমাগুলোর গায়ে যখন ফুল বা সবজি থেকে তৈরি রং দেওয়া হতো তখন তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ছিল না। কিন্তু, যারা প্রতিমা বানায় তারা এখন ভারী ধাতু ও ক্যান্সার উৎপাদক (কারসিনোজেন) বস্তু থেকে রং তৈরি করে সেই রং প্রতিমার ওপর লাগায়। আর এইজন্য ভারতের কিছু এলাকায় প্রতিমাগুলো খাল বা নদীতে বিসর্জন দেওয়ার পর সেখানকার জল দূষিত হয়ে পড়েছে। জল দূষণ রোধ করার জন্য একটা শহরের অধিবাসীরা সমস্ত প্রতিমাকে সংগ্রহ করে একটা বড় খালি জায়গায় নিয়ে সেগুলোকে ভেঙে ফেলেছে। ডাউন টু আর্থ পত্রিকা বলে, ভারতের সব জায়গায় এমনটা করা উচিত এবং যারা প্রতিমা বানায় তাদের সিনথেটিক রং ব্যবহার না করে বরং আগের রংই ব্যবহার করা উচিত। ওই পত্রিকা আরও বলে, ‘তা না হলে, হিন্দুরা যে নদীগুলোকে উপাসনা করেন সেই নদীর জল তাদের দেবদেবীর প্রতিমাগুলোর কারণেই দূষিত হয়ে পড়বে।’