প্রচার অভিযানের শিকার হবেন না!
প্রচার অভিযানের শিকার হবেন না!
“যে অবোধ, সে সকল কথায় বিশ্বাস করে।”—হিতোপদেশ ১৪:১৫.
শিক্ষা ও প্রচার অভিযানের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষা বলে যে আপনি কীভাবে চিন্তা করবেন। প্রচার অভিযান দেখায় যে আপনি কী চিন্তা করবেন। একজন ভাল শিক্ষক যুক্তি তর্ক দিয়ে আলোচনা করে বোঝান ও বিষয়বস্তুর সমস্ত দিকগুলোকে সামনে আনেন। কিন্তু যারা প্রচার অভিযান চালায় তারা চায় যে আপনি কোন প্রশ্ন না করেই তাদের কথাতে বিশ্বাস করুন। তারা সব কথাকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে আর যাতে তাদের লাভ আছে এমন কথাকে তারা রঙ চড়িয়ে বলে। শুধু তাই-ই নয় সত্যিকে মিথ্যে ও মিথ্যেকে সত্যি বলে চালাতে তারা এতটাই পটু যে ভাল ভাল লোকেরাও তাদের কাছে হার মেনে যায়। এই লোকেরা আপনার আবেগের সুযোগ নেয়।
যারা প্রচার অভিযান চালায় তারা খুব ভাল করে খেয়াল রাখে যে লোকেরা যেন তাদের কথাকে সত্যি বলে মনে করে। তারা আপনাকে বোঝায় যে আপনি বিশেষ কিছু। আর আপনি একা নন, তাই ভয় করার কিছু নেই।
তাহলে যারা প্রচার অভিযান চালায় তাদের থেকে আপনি কীভাবে বাঁচতে পারেন যাদেরকে বাইবেল “অসার বাক্যবাদী” ও ‘বুদ্ধিভ্রামক লোক’ বলে? (তীত ১:১০) যারা প্রচার অভিযান চালায় তারা যে কীভাবে চতুরতার সঙ্গে লোকেদের ভুল পথে নিয়ে যায়, আপনি যদি তা বোঝেন, তাহলে তাদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও আপনি তাদের ফাঁদে পড়বেন না। কী করে আপনি তা করবেন তা জানিয়ে এখানে কিছু বিষয় বলা হল।
ভেবেচিন্তে বাছাই করুন: যদি আমরা ভাবনাচিন্তা না করেই সবকিছু বিশ্বাস করে নিই, তাহলে আমরা আমাদের মনকে এমন এক বড় পাইপের সঙ্গে তুলনা করতে পারি যার মধ্যে দিয়ে সবকিছু চলে যায় এমনকি আবর্জনাও। কেউই চায় না যে তাদের মন খারাপ তথ্যে ভরে যাক। অনেক শতাব্দী আগে জ্ঞানী রাজা ও শিক্ষক শলোমন সতর্ক করে বলেছিলেন: “যে অবোধ, সে সকল কথায় বিশ্বাস করে, কিন্তু সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে।” (হিতোপদেশ ১৪:১৫) তাই আমাদের ভেবেচিন্তে বাছাই করা উচিত। সব বিষয়কে ভাল করে বোঝার পরে তবেই আমাদের ঠিক করা উচিত যে তা বিশ্বাস করা ঠিক বা ঠিক নয়।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা সংকীর্ণমনা হব আর যে কোন নতুন তথ্যকেই ভুল বলে মনে করব। কারণ যে তথ্যগুলো আমাদের ভালোর জন্য, যে তথ্য জেনে আমাদের উন্নতি হবে সেইরকম তথ্য আমাদের অবশ্যই জানা উচিত। তাহলে কোন্ তথ্যকে বিশ্বাস করা উচিত আর কোন্টাকে নয় তা আমরা বুঝব কীভাবে? তার জন্য আমাদের এমন এক কষ্টিপাথর চাই যাতে আমরা সবকিছু যাচাই করে দেখতে পারব। যিহোবার
সাক্ষিদের জন্য বাইবেল হচ্ছে এমনই এক কষ্টিপাথর যাতে জ্ঞানের ভাণ্ডার রয়েছে। এর সাহায্যেই একজন ঠিক করবেন যে তিনি কিসে বিশ্বাস করবেন আর কিসে নন। এর সাহায্যেই একজন তার মন খুলে রাখেন ও নতুন নতুন বিষয় শেখেন। অন্যদিকে তিনি এও ভালভাবে বুঝতে পারেন যে কোন্ তথ্যগুলো বাইবেলের নীতি বিরুদ্ধ ও আমাদের ক্ষতি হতে পারে।বিবেচক হোন: বিবেচক হওয়ার মানে হল “সবকিছুকে খুব নিখুঁতভাবে জানা।” এটা “আমাদের মস্তিষ্কের এমন ক্ষমতা যাতে সবকিছুর বিচার করা যায়।” বিবেচক লোক প্রচার অভিযানের দ্বারা ছড়ানো তথ্যকে এড়াতে পারেন আর তার থেকে বাঁচার জন্য ঠিক কাজ করতে পারেন।
বিবেচক হয়ে আমরা ‘মধুর বাক্য ও স্তুতিবাদকে’ চিনতে পারি যা “সরল লোকদের মন ভুলায়।” (রোমীয় ১৬:১৮) বিবেচক হলে আপনি ভুল ও অকারণ তথ্যকে এড়িয়ে চলতে পারবেন এবং সত্যি ও মিথ্যে জানতে পারবেন। কিন্তু আপনি কীভাবে জানবেন যে আপনাকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে?
তথ্যগুলোকে পরীক্ষা করুন: প্রথম শতাব্দীর একজন খ্রীষ্টান শিক্ষক যোহন বলেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা সকল আত্মাকে বিশ্বাস করিও না, বরং আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখ।” (১ যোহন ৪:১) আজকে কিছু লোকেরা স্পঞ্জের মতো তারা সমস্ত কিছুই শুষে নেয়। আর এটা করা খুবই সহজ।
কিন্তু যে কোন বিষয়কে মেনে নেওয়ার আগে সেটা যাচাই করে দেখা আমাদের জন্য ভাল হবে। সেইজন্য কথিত আছে যে আমরা যে খাবার খাই তাই বলে দেয় যে আমরা কেমন মানুষ। এই কথা শুধু শরীরের জন্যই নয় কিন্তু আমাদের মনের খোরাকের জন্যও খাটে। তাই আমরা যা কিছুই পড়ি, দেখি বা শুনি না কেন আমাদের যাচাই করে দেখা দরকার যে এর পিছনে প্রচার অভিযানের হাত আছে বা এটা সত্যি বিষয়।
আমাদের নিজেদের চিন্তাকে আমাদের শুধরাবার দরকার আছে যাতে আমরা ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। যখনই আমরা কোন নতুন তথ্য পাচ্ছি আমাদের তা যাচাই করে দেখা উচিত। আমাদের বোঝা উচিত যে তথ্য শুধু তথ্যই। সেগুলো কতখানি ঠিক তা আমাদের যুক্তির ওপর, আমাদের দেওয়া মূল্যের ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন করুন: আমরা যেমন আগে দেখেছি যে এমন অনেক লোকেরা আছে যারা আমাদের ‘প্ররোচক বাক্যে ভুলানোর’ জন্যে চেষ্টা করে। (কলসীয় ২:৪) তাই যখনই কোন কিছু বিশ্বাস করানোর জন্য মন ভোলানোর মতো যুক্তি দেওয়া হয় তখনই আমাদের প্রশ্ন করা উচিত।
প্রথমে দেখুন যে কেন এই তথ্য দেওয়া হচ্ছে। শুরু থেকেই কি কিছু ভেবে নেওয়া হয়েছে? যদি এতে বদনাম করার মতো শব্দ বা দুরকম মানে হয় এমন কথা থাকে, তাহলে তা কেন আছে? জানতে চেষ্টা করুন যে এই তথ্যের মধ্যে কতখানি সত্য আছে। আর যদি সম্ভব হয়, তাহলে এই ধরণের তথ্য যিনি দিচ্ছেন তার বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন। তার বিষয়ে কি লোকেরা জানে যে তিনি সবসময় সত্যি কথা বলেন? যদি কোন “উৎসের” কথা বলা হয়, তাহলে তা কে বা কী? আপনি কেন বিশ্বাস করতে পারেন যে এই ব্যক্তি, বই বা সংস্থা ঠিক আর বিশ্বাস করার মতো তথ্য দেয়? যদি আবেগ নিয়ে খেলা করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে ‘যদি ভাবুকতা ছেড়ে এই তথ্য নিয়ে চিন্তা করা যায়, তাহলে এটাকে কতখানি বিশ্বাস করা যাবে?’
জনমতে গা ভাসিয়ে দেবেন না: সবাই কোন মিথ্যে কথাকে সত্যি বলে মনে করছে বলেই যে সেটা সত্যি হয়ে যায় তা নয়। যখন আপনি তা বুঝতে শুরু করেন তখন আপনি অন্যদের থেকে আলাদাভাবে ভাবতে পারেন। যখন বেশির ভাগ লোকেরাই একইভাবে ভাবছে তখন তার মানে কি এই যে আপনাকেও তাদের মতো করেই ভাবতে হবে? প্রাচীনকাল থেকে দেখে আসা হয়েছে যে বেশির ভাগ লোকেরা যে বিষয়টাকে এক সময় সত্যি বলে মনে করত পরে তা মিথ্যে প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু তবুও সাধারণত লোকেরা জনমতে গা ভাসিয়ে দেয়। এই অবস্থায় যাত্রাপুস্তক ২৩:২ পদের কথা আমাদের খুব কাজে আসে: “তুমি দুষ্কর্ম্ম করিতে বহু লোকের পশ্চাদ্বর্ত্তী হইও না।”
সত্যি জ্ঞান ও প্রচার অভিযান
আগেই বলা হয়েছে যে বাইবেল একজনকে ঠিক করে চিন্তা করতে সাহায্য করে আর সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞান বাইবেল থেকেই পাওয়া যায়। যীশু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় যে কথা বলেছিলেন যিহোবার সাক্ষিরা সে কথায় পুরোপুরি বিশ্বাস করেন। যীশু বলেছিলেন: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) আর এর কারণ হল যে বাইবেল যিহোবা ঈশ্বর নিজে লিখেছেন আর যিহোবা “সত্যের ঈশ্বর।”—গীতসংহিতা ৩১:৫.
হ্যাঁ, আজকে জগতে আলাদা আলাদাভাবে প্রচার অভিযান চালান হয়। কিন্তু সত্য কী তা জানার জন্য আমরা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারি। এই বাক্যই আমাদের সেই লোকেদের থেকে বাঁচাবে যারা ‘কল্পিত বাক্য দ্বারা আমাদের হইতে অর্থলাভ’ করতে চায়।—২ পিতর ২:৩.
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিবেচক হলে আপনি ভুল ও অকারণ তথ্যকে এড়িয়ে চলতে পারবেন ও সত্যি ও মিথ্যে জানতে পারবেন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আমরা যা কিছুই পড়ি, দেখি বা শুনি না কেন আমাদের যাচাই করে দেখা দরকার যে তা সত্যি কিনা
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
সবাই কোন মিথ্যে কথাকে সত্যি বলে মনে করছে বলেই যে সেটা সত্যি হয়ে যায় তা নয়
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
সত্য কী তা জানার জন্য আমরা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারি