সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কথার মারপ্যাঁচ

কথার মারপ্যাঁচ

কথার মারপ্যাঁচ

“প্রচার অভিযানের জোরে স্বর্গকে নরক ও নরককে স্বর্গ বানানো যায়।”—এডল্ফ হিটলার, মাইন ক্যাম্ফ।

আজকে রেডিও, টিভি, খবরের কাগজ, ফোন আর ইন্টারনেটের দৌলতে সারা পৃথিবীতে খবরের কোন অভাব নেই। আর এগুলো লোকেদের এমন অনেক খবর দেয় যা তাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। এই উপায়গুলো কাজে লাগিয়ে এত বেশি খবরাখবর, এত বেশি সলাপরামর্শ দেওয়া হয় যে লোকেদের সেগুলোকে পরখ করে দেখার সময় হয়ে ওঠে না যে সেগুলো ঠিক না ভুল। আর এর ফল হয় এই যে সবকিছুকেই সত্যি বলে মনে করা হয়।

যারা এই প্রচার অভিযান চালায় তারা অবশ্যই চায় যে লোকেরা তাদের কথা না ভেবেচিন্তেই মেনে নিক। তারা লোকেদের আবেগকে জাগিয়ে তুলে, তাদেরকে ভুলিয়ে, খুব চালাকি করে কথা বলে লোকেদের ফাঁদে ফেলতে চায়। আর ইতিহাস দেখিয়েছে যে তাদের এই কৌশল খুবই কাজের।

ইতিহাস

প্রাচীন কাল থেকেই লোকেরা তাদের কীর্তি, যশ, নাম ছড়ানোর জন্য বা তার শক্তি দেখানোর জন্য নানারকম চেষ্টা করে এসেছে বা প্রচার অভিযান চালিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে মিশরের ফরৌণ তার নাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বড় বড় পিরামিড তৈরি করেছিলেন। আর তা দিয়ে তিনি তার শক্তি ও স্থায়িত্ব দেখাতে চেয়েছিলেন। একইভাবে রোমও তাদের শক্তি দেখানোর জন্য রাজ্যে অনেক বড় বড় অট্টালিকা বানিয়েছিল। নিজেদের কীর্তি জাহির করার জন্য এই সাম্রাজ্যগুলো প্রচার অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রচার অভিযান নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে যখন সরকারগুলো তাদের নিজেদের স্বার্থে প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এডল্ফ হিটলার ও যোষেফ গ্যাবল্স প্রচার অভিযান চালিয়ে লোকেদের তাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার ব্যাপারে খুবই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে রাজনীতিতে প্রচার অভিযান বড় জায়গা করে নিতে থাকে। পশ্চিম ও পূর্বের দেশগুলো প্রচার অভিযান চালিয়ে পৃথিবীর অন্যদেশগুলোকে তাদের নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করেছিল। জীবনের প্রায় সমস্ত স্তরেই প্রচার অভিযানকে কাজে লাগাতে শুরু করা হয়। আর আজ তা যে কত চতুরতার সঙ্গে করা হয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় ভোটের আগে করা প্রচার অভিযান থেকে। যেমন দূরদর্শন থেকে প্রচার করা, শোভাযাত্রা করা, চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও খেলোয়াড় বা চিত্রতারকাদের দিয়ে প্রচার করানো যারা জনমত গড়তে সাহায্য করে।

মিথ্যে, শুধুই মিথ্যে!

প্রচার অভিযান যারা করে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল মিথ্যে বলা। যেমন ১৫৪৩ সালে মার্টিন লুথার যিহুদিদের নামে এই মিথ্যে কথা লিখেছিলেন যে: “তারা কুয়োর জলে বিষ মিশিয়েছিল, লোকেদের হত্যা করেছিল, শিশুদের অপহরণ করেছিল . . . তারা ছিল ভয়ানক, জঘন্য, প্রতিহিংসাপরায়ণ, সাপের মতো ধূর্ত, দিয়াবলের সন্তান যারা অন্যের ক্ষতি করে।” তাই প্রটেস্টান্টদের তিনি কী পরামর্শ দিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “তাদের গির্জা ও স্কুল জ্বালিয়ে দিতে, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দিতে।”

রাজনীতি ও সমাজ বিজ্ঞানের এক প্রফেসার বলেন: “যিহুদিরা যে সত্যিকরেই এই সমস্ত কাজ করেছিল বলে তাদের ঘৃণা করা হতো তা নয় বা যিহুদিদের যারা ঘৃণা করত তারা তাদের বিষয়ে সবকিছু ঠিক ঠিক জানতও না।” তিনি আরও বলেছিলেন “আর এই মিথ্যে প্রচার অভিযানের কারণে যে কোন সমাজবিরোধী কাজের দোষই যিহুদিদের ওপর চাপানো হতো।”

মিথ্যে ধারণার জন্ম দেওয়া

যারা প্রচার অভিযান চালায় তাদের দ্বিতীয় অস্ত্রটা হচ্ছে মিথ্যে ধারণার জন্ম দেওয়া আর প্রায়ই সত্যকে লুকিয়ে কোন জাতি বা ধর্মের লোকেদের ছোট করার জন্য তাদের নামে মিথ্যে কথা বলা। উদারহরণ হিসেবে বলা যায় যে ইউরোপের কিছু দেশে বলা হয়, “সব উদ্বাস্তুরা [অন্য দেশ থেকে আসা লোকেরা] চোর।” কিন্তু একথা কি সত্যি?

সম্পাদক রিকার্ডো সোমেরিটিস বলেন যে এই প্রচার অভিযানের ফলে অন্য দেশ থেকে আসা লোকেদের জন্য ইউরোপের একটা দেশে “লোকেদের মনে ভয় ঢুকে যায়।” অন্য দেশ থেকে আসা লোকেদের তারা শত্রু বলে মনে করতে শুরু করে। কিন্তু দেখা গেছে যে সেই দেশে যত অপরাধ হয় তাতে বিদেশিদের যতখানি হাত থাকে সেই দেশের অধিবাসিরাও ততখানিই দায়ী। উদাহরণ হিসেবে সোমেরিটিস বলেন যে সমীক্ষা দেখিয়েছিল, গ্রিসে “১০০টার মধ্যে ৯৬টা অপরাধই [গ্রিসের] লোকেরা নিজেরা করেছিল।” তিনি আরও বলেন যে “কোন ‘জাতিকে’ ঘৃণার কারণে এই অপরাধ করা হয়নি কিন্তু এর পিছনে সামাজিক ও আর্থিক কারণ ছিল।” সোমেরেটিস খবরের কাগজ, রেডিও ও টিভির মতো প্রচার মাধ্যমকে দোষ দিয়েছিলেন কারণ সেগুলো জেনে শুনে “সংগঠিত ভাবে” এমন করে প্রচার করেছিল যাতে “বিদেশিদের জন্য লোকেদের মনে ভয় জন্মায় ও জাতীয়তাবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে।”

নাম ডাকা

যারা প্রচার অভিযান চালান তারা তাদের বিরোধীদের নামে কলঙ্ক রটিয়ে তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আর তার ফলে লোকেদের মন সত্য থেকে সরে যায়। কোন বিশেষ জাতি বা দলের লোকেদের বা কোন মতামতকে এমন নাম দেওয়া হয় যা শুনলেই লোকেদের মনে ঘৃণা জন্মায়। আর এই ধরনের চাল বেশির ভাগ সময়ই সফল হয় কারণ এই নাম লোকেদের মনে এমনভাবে জায়গা করে নেয় যে তারা সত্যকে আর জানতে চায় না।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে কিছুদিন আগেই ইউরোপ ও অন্য বেশ কিছু দেশেই সম্প্রদায় বিরোধী মনোভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সাধারণ লোকেদের মনে এ কথা ঢুকে গিয়েছিল যে যারাই কোন “সম্প্রদায়ের” লোক তারাই খুব বিপদজনক। কোন জাতি, দল বা ছোটখাট ধর্মের নামে নিন্দা করার জন্য সেটাকে খুব সহজেই “সম্প্রদায়” বলা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে ওঠে। জার্মানির প্রফেসার মার্টিন ক্রিল ১৯৯৩ সালে লেখেন, “সম্প্রদায় শব্দ শুনে মনে আরেক রকমের ধারণা আসে, ‘নিজের ধর্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা।’ জার্মানিতে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করতো তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। আজ হয়তো এমন করা হয় না . . . কিন্তু এমন লোকেদের শাস্তি দেওয়া হয়, তাদের মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয় আর তারা যেন কোথাও গিয়ে শান্তিতে বাস করতে না পারে তার চেষ্টা করা হয়।”

এক সংস্থা বলে যে, “বদনাম শুধু যে পৃথিবীর ইতিহাসকেই বদলে দেয় তা নয় বরং এটা আমাদের জীবনেও খুব বেশি ছাপ ফেলে। বদনামের কারণে অনেকেই তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে . . . অনেককে জেলে যেতে হয়েছে আর বদনাম লোকেদের এতটাই উন্মাদ করে তুলেছে যে তারা অন্যদের হত্যা করার জন্য যুদ্ধ করেছে।”

আবেগ নিয়ে খেলা

আমরা জানি যে যুক্তি তর্কের কাছে আবেগের কোন দাম নেই। কিন্তু যখন কাউকে কোন কিছু বিশ্বাস করানোর দরকার হয় তখন আবেগকে কাজে লাগান হয়। আর যারা প্রচার অভিযান চালায় তারা এতটাই পাকা খেলোয়াড় হয় যে তারা খুব সহজেই লোকেদের আবেগ নিয়ে খেলতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ভয় এমন এক আবেগ যাতে বুদ্ধি লোপ পায় আর মানুষ ঠিক করে চিন্তা করতে পারে না। যেমন আমরা দেখেছি যে লোকেদের হিংসা বা ঘৃণার সুযোগ নিয়ে তাদের দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে নেওয়া যায়, ভয়ের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। ১৯৯৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির কানাডার খবরের কাগজ দ্যা গ্লোব এন্ড মেল মস্কো থেকে রিপোর্ট করে, “গত সপ্তায় যখন মস্কোতে তিনজন মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল তখন সঙ্গে সঙ্গে এ কথা রটে গিয়েছিল যে এই মেয়েরা যিহোবার সাক্ষি সম্প্রদায়ের ছিল।” লক্ষ্য করুন যে যিহোবার সাক্ষিদের জন্য “সম্প্রদায়” কথাটা ব্যবহার করা হয়েছিল। অবশ্যই এই কথা শুনে লোকেরা মনে করবে যে এই ধর্ম অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের এমনভাবে ভুল পথে নিয়ে যায় যে তারা এমনকি আত্মহত্যা করতেও পিছপা হয় না কিন্তু সত্যিই কি সেই মেয়েদের সঙ্গে যিহোবার সাক্ষিদের কোন সম্পর্ক ছিল?

দ্যা গ্লোব আরও বলে যে: “পরে পুলিস বলেছিল, [যিহোবার সাক্ষিদের] সঙ্গে এই মেয়েদের কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু ইতিমধ্যেই মস্কোর এক টিভি চ্যানেলে যিহোবার সাক্ষিদের নামে প্রচার করতে শুরু করে দেওয়া হয়েছিল যে তারা নাৎসি জার্মানিতে এডল্ফ হিটলারের সহযোগি। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে হিটলার নাৎসি শিবিরে এই লোকেদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছিল কারণ তারা তার দলে যোগ দেয়নি।” কিন্তু এই মিথ্যে রটনার কারণে লোকেদের মনে এই ভয় ঢুকে যায় যে যিহোবার সাক্ষিরা আত্মহত্যাকারী সম্প্রদায় নয়তো বা নাৎসিদের সহযোগি।

যারা প্রচার অভিযান চালায় তারা ঘৃণাকে একটা সুযোগ হিসেবে নেয়। কোন বিশেষ জাতি, ভাষা বা ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণা জন্মানোর জন্য তারা এমন জঘন্য শব্দ ব্যবহার করে যা লোকেদের মনে ঘৃণার আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

কিছুজন আবার অহঙ্কারকেও কাজে লাগায় আর তা এই কথা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়: “যে কোন বুদ্ধিমান লোকই জানে যে . . . ” বা, “আপনার মতো শিক্ষিত লোকের খুব সহজেই বুঝে ফেলা উচিত যে . . .।” অন্যদিকে লোকেরাও চায় না যে অন্যেরা তাদের বোকা ভাবুক তাই নিজেদের সম্মান রক্ষার জন্য তারা তাদের কথা মেনে নেয়। লোকেদের বশে আনাই যাদের কাজ তারা লোকেদের এই দুর্বলতা খুব ভাল করেই জানে।

স্লোগান আর প্রতীক

যারা প্রচার অভিযান চালায় তারা স্লোগানও ব্যবহার করে। এইসব স্লোগানেতে অস্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করা হয়। যেহেতু এইগুলো অস্পষ্ট সেইজন্য সহজেই লোকেরা এগুলোকে মেনে নেয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে দেশে যখন কোন জরুরি অবস্থা বা যুদ্ধ চলে তখন দেশের মন্ত্রী এইধরনের স্লোগান ব্যবহার করেন, যেমন “আমার দেশ মহান”, “সবার প্রিয় আমার জন্মভূমি”, “স্বাধীনতা অথবা মৃত্যু।” কিন্তু বেশির ভাগ লোকেরাই কী কখনও ভেবে দেখে যে কেন দেশে জরুরি অবস্থা আসে, যুদ্ধ কী কারণে হয়? বা তাদের যা বলা হয় লোকেরা সেটাকেই সত্যি বলে মেনে নেয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিষয়ে লিখতে গিয়ে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি উইনস্টন চর্চিল বলেছিলেন: “শুধু একটু ইশারাই অনেক, তাতেই লক্ষ লক্ষ হালচাষীরা তাদের হাল ছেড়ে বন্দুক হাতে নেবে আর মারকাট শুরু করে দেবে।” তিনি আরও বলেছিলেন যে জনগণকে কিছু করতে বলা হলে তারা তা অন্ধভাবে মেনে নেয়।

যারা প্রচার অভিযান চালায় তারা নানারকম প্রতীক ব্যবহার করেও নিজেদেরকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে যেমন সম্মান দেখানোর জন্য কামান থেকে গোলাবর্ষণ, সৈন্য অভিবাদন, পতাকা। এইজন্য ‘মাতৃভূমি’, ‘পূর্বপুরুষের ধর্ম’ এই সব শব্দ ব্যবহার করে তারা লোকেদের মন জয় করার চেষ্টা করে। আর তাই বাবামার প্রতি তাদের ভালবাসাকেও তারা ত্যাগ করে।

এর থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে মিথ্যে প্রচার অভিযান লোকেদের চিন্তাশক্তিকে নষ্ট করে দেয়। তারা ভেবেচিন্তে কোন কাজ করতে পারে না আর সেইজন্য তারাও অন্যদের মতো খারাপ কাজে লেগে পড়ে। কিন্তু আপনি কীভাবে নিজেকে এই প্রচার অভিযান থেকে বাঁচাতে পারেন?

[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

চতুরতার সঙ্গে করা প্রচার অভিযান লোকেদের চিন্তাশক্তি নষ্ট করে দেয় আর তারা ভেবেচিন্তে কোন কাজ করতে পারে না

[৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

যিহোবার সাক্ষিরা কি মিথ্যে প্রচার অভিযান চালান?

কিছু লোকেরা যিহোবার সাক্ষিদের নামে দোষ দিয়ে বলে যে তারা যিহুদি ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিষয়ে প্রচার করে। কিছু লোকেরা বলে যে তারা সাম্যবাদ প্রচার করে। কিছুজন বলে যে যিহোবার সাক্ষিরা “আমেরিকার দূত।” আর কিছু লোকেরা আবার বলে যে যিহোবার সাক্ষিদের কাজই হচ্ছে গোলোযোগ ও সন্ত্রাস করা। তারা সমাজ, ব্যাবসা, রাজনীতি ও আইনকানুনকে পালটানোর জন্য কোন না কোনভাবে প্রচার অভিযান করতেই থাকে। কিন্তু তাদের নামে চাপানো এই দোষগুলো সত্যি হতেই পারে না।

সত্যি ব্যাপারটা হল যে যিহোবার সাক্ষিদের ওপর চাপানো সমস্ত দোষই মিথ্যে আর এর কোন ভিত্তি নেই। যিহোবার সাক্ষিরা যখন প্রচার করেন তখন তারা যীশুর এই আজ্ঞা মেনে তা করেন যা তিনি তাঁর শিষ্যদের দিয়েছিলেন: “তোমরা . . . পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) তারা শুধু ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য সম্বন্ধে সুসমাচার লোকেদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই প্রচার করেন। কারণ এই রাজ্যের দ্বারাই যিহোবা ঈশ্বর সারা পৃথিবীতে সুখ শান্তি নিয়ে আসবেন।—মথি ৬:১০; ২৪:১৪.

যারা যিহেবার সাক্ষিদের ভাল করে জানেন তারা জানেন যে কখনই, কোন দেশে সাক্ষিদের জন্য শান্তিভঙ্গ হয়নি।

অনেক সাংবাদিক, বিচারক ও অন্য লোকেরা যিহোবার সাক্ষিদের প্রশংসা করে বলেন যে তারা সমাজের উন্নতির জন্য অনেক ভাল কাজ করেন। কিছু উদাহরণের দিকে নজর দিন। সাক্ষিদের এক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর দক্ষিণ ইউরোপের এক রিপোর্টার বলেছিলেন: “যিহোবার সাক্ষিদের পারিবারিক সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। তাদের শেখান হয় যে কী করে একে অন্যকে ভালবাসতে হয়। তারা তাদের শুদ্ধ বিবেকের কথা শোনেন আর সেইজন্য তারা কারও কোন ক্ষতি করেন না।”

একজন সাংবাদিকের প্রথমে যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে ভাল ধারণা ছিল না কিন্তু এখন তিনি বলেন: “তারা এক আদর্শ জীবন যাপন করেন। তাদের চালচলন খুবই উন্নত আর তারা সত্যবাদী।” একজন রাজনীতিবিদও যিহোবার সাক্ষিদের বিষয়ে বলেন: “তারা সবার সঙ্গে প্রেম দেখিয়ে, নম্র হয়ে ভাল ব্যবহার করেন।”

যিহোবার সাক্ষিরা এও শেখান যে যাদের অধিকার দেওয়া হয়েছে তাদের অধীনে থাকা উচিত। তারা ভাল নাগরিক আর দেশের সব আইন মেনে চলেন। বাইবেলের শিক্ষা মেনে চলায় তারা সৎ ও সত্যবাদী। তারা খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও। তারা পারিবারিক জীবনে উচ্চ নীতি মেনে চলেন ও অন্যদেরও তা মেনে চলতে শেখান। তারা সবার সঙ্গে শান্তিতে বাস করেন ও কোনরকম আন্দোলন বা বিপ্লব করেন না। তারা যেখানেই থাকুন না কেন সরকারি নিয়ম কানুন মেনে চলেন। কিন্তু তারা এমন এক সরকারের অপেক্ষা করেন যার অধিকারী ও শাসক হবেন যিহোবা ঈশ্বর আর তিনি সারা পৃথিবীতে শান্তি নিয়ে আসবেন।

যিহোবার সাক্ষিরা প্রচারের মাধ্যমে লোকেদের শিক্ষা দেন। তারা লোকেদের বাইবেল শেখান যাতে লোকেরা বাইবেলের নিয়মগুলোকে বোঝে ও তা মেনে চলে। তারা এমন নীতিগুলোকে শেখান যাতে পরিবারগুলো সুখী হয় ও যুবক-যুবতীরা তাদের সমস্যা সমাধান করতে পারে। তারা লোকেদের খারাপ অভ্যেসগুলোকে ছাড়তে ও অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। এই ধরনের কাজকে কখনই মিথ্যে “প্রচার অভিযান” বলা যেতে পারে না। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে যে যেখানে খোলাখুলি মতামত প্রকাশ করা যায় সেখানে “লোকেরা প্রচার অভিযান ও শিক্ষার পার্থক্য বোঝে।”

[চিত্রগুলো]

যিহোবার সাক্ষিদের বইপত্র পরিবারে একতা নিয়ে আসে আর উচ্চ আদর্শ শেখায়

[৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যুদ্ধ ও সিগারেট নিয়ে প্রচার অভিযানের ফলে অনেক লোকেরা তাদের জীবন হারিয়েছে