সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমি কি আমার শরীরের যেখানে খুশি ফুটো করে গয়না পরতে পারি?

আমি কি আমার শরীরের যেখানে খুশি ফুটো করে গয়না পরতে পারি?

যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য. . .

আমি কি আমার শরীরের যেখানে খুশি ফুটো করে গয়না পরতে পারি?

‘আমি যখন প্রথমবার ছেলেমেয়েদের ঠোঁট ও শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে গয়না পড়তে দেখেছিলাম, আমার মনে হয়েছিল “আরে! দারুণ তো।”’—লিসা।

লিসার মতো ছেলেমেয়েদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে, যারা তাদের শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে গয়না পরে। তারা এমনকি তাদের ভ্রু, জিভ, ঠোঁট এবং নাভিকেও বাদ দেয় না। *

ষোল বছরের হেদার যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে চায়। সে মনে করে যে নাভিতে ফুটো করে একটা দুল লাগিয়ে নিলে তাকে “অদ্ভুত সুন্দর” দেখাবে। জো-র বয়স ১৯ বছর আর সে তার জিভে সোনার মাকড়ি লাগিয়েছে। আরেকটা মেয়ে তার ভ্রু ফুটো করে তাতে দুল ঝুলিয়েছে কারণ সে চায় যে সবাই তাকে “দেখুক আর দেখতেই থাকুক।”

গয়না পরা অবশ্য নতুন কিছু নয়। বাইবেলে বলা আছে যে ধার্মিক স্ত্রী রিবিকা নাকে নথ পরতেন। (আদিপুস্তক ২৪:২২, ৪৭) ইস্রায়েলীরা যখন মিশর থেকে বের হয়ে আসছিল তখন তাদের কানে দুল ছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩২:২) তবে আমরা জানি না যে এসব গয়না পরার জন্য তারা তাদের নাক বা কান ফুটো করত কিনা। বাইবেলে বলা আছে দাসেরা তাদের কান ফুটো করত। তবে তারা এটা তাদের মালিকের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখানোর জন্য করত। (যাত্রাপুস্তক ২১:৬) এইরকম রেওয়াজ পুরনো কিছু সংস্কৃতিতেও ছিল। যেমন আ্যজটেক ও মায়া জাতির লোকেরা ভক্তি দেখানোর জন্য তাদের জিভ ফুটো করত। এখনও আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা ঠোঁট ফুটো করে। ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার আশেপাশের কিছু দ্বীপে নাকে নথ পরার রেওয়াজ আছে।

মাত্র কয়েক বছর আগেও এই গয়না শুধু নাক আর কানেই পরা হতো আর তা শুধু মেয়েরাই পরত। কিন্তু এখন সব বয়সের ছেলে, মেয়ে সবাই শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে গয়না পরে।

কেন তারা এটা করে

অনেকে করে কারণ তারা মনে করে যে এটা একটা নতুন ফ্যাশন, সবাই করছে তাই আমিও করব। কেউ কেউ মনে করে শরীর ফুটো করে গয়না পরলে তাদের আরেকটু সুন্দর দেখাবে। অনেকে আবার নাম করা মডেল, খেলোয়াড় ও গায়ক-গায়িকাদের দেখাদেখি করে। আর কিছু কিছু ছেলেমেয়ে সবার থেকে নিজেদেরকে আলাদা দেখাতে চায় আর দেখাতে চায় যে তারা কারও ধার ধারে না বা অন্যদের চেয়ে তারা আলাদা। লেখক জন লিও বলেন: “শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে তারা বাবামাকে বিরক্ত করতে চায় ও অন্যদের চমকে দিতে চায় আর এটাই বোধ হয় এইরকম ফ্যাশন করার সবচেয়ে বড় কারণ।” এই সমাজে তারা খুশি নয়, তাই সমাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চায় না। বিদ্রোহ করে তারা অখুশি জাহির করতে চায় আর তাই শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে।

আবার অনেকে ইচ্ছে করে শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে কারণ তা করে তারা এক অদ্ভুত সুখ পায়। যেমন কিছু যুবক-যুবতীরা ভাবে যে শরীরে ফুটো করলে অন্যরা তাদের একটু আলাদা চোখে দেখবে আর এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আবার যে ছেলেমেয়েরা যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছে তারা শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে দেখাতে চায় যে নিজের শরীরের ওপর তাদের অধিকার আছে।

শরীরের জন্য বিপদজনক

শরীরে সব জায়গাতে ফুটো করার কি কোন বিপদ আছে? অনেক ডাক্তাররা বলেন যে এটা খুবই বিপদজনক। বিশেষ করে যখন কেউ নিজে নিজে তার শরীর ফুটো করে। আর যারা নামে মাত্র পেশাদার, তাদের কাছে গেলেও বিপদ থেকেই যায়। অনেকে ভাল করে না শিখেই এই কাজ করে বা কেউ কেউ তাদের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে, পত্রিকা পড়ে বা ভিডিও দেখে শেখে। তাই তারা জানে না যে কী স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বা কোথায় ফুটো করলে কী বিপদ হতে পারে। আবার অনেকে শরীরের গঠন সম্বন্ধে কিছুই জানে না। তাই কোন ভুল জায়গায় ফুটো করা হলে বা কোন শিরার ওপর ফুটো করলে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হতে পারে ও সেই জায়গা আর কখনও ভাল নাও হতে পারে।

এর আরেকটা বিপদ হল ঘা হয়ে যাওয়ার ভয়। যে যন্ত্র বা সূচ দিয়ে ফুটো করা হয় তাতে যদি জীবাণু থাকে, তাহলে জন্ডিস, এইডস, টি.বি. এবং টিটেনাসের মতো মারাত্মক রোগগুলো হতে পারে। এমনকি জীবাণুমুক্ত যন্ত্র দিয়ে করা হলেও ফুটো করার পরও সাবধান থাকা দরকার। যেমন নাভিতে ফুটো করলে সেই জায়গাটা বেশি সাবধানে রাখা দরকার কারণ কাপড়ের সঙ্গে সেই জায়গা বার বার ঘষা খায়। ফলে কখনও কখনও ঘা শুকাতে প্রায় নয় মাস লেগে যেতে পারে।

ডাক্তাররা বলেন যে কানের লতিতে ফুটো করলে যত না ভয় থাকে, নাক বা কানের ওপরের দিকে ফুটো করলে তার চেয়ে বেশি ভয় থাকে। আমেরিকার একটা প্লাস্টিক সার্জারি কোম্পানির পত্রিকা বলে: “বিশেষ করে যদি কানের ওপরের দিকে অনেকগুলো ফুটো করা হয়, তাহলে ঘা হয়ে যাওয়ার এত বেশি ঝুঁকি থাকে যে কানের ওপরের দিকটা পুরোটাই কেটে বাদ দিতে হতে পারে। নাক ফুটো করায়ও বিপদ আছে। নাকে ইনফেকশন হলে তা কাছাকাছি শিরার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এমনকি মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করতে পারে।” ওই পত্রিকা শেষে এই কথা বলে: “তাই সবচেয়ে ভাল হবে যদি শুধু কানের লতিতে [ফুটো] করা যায়।”

আবার অনেকের গয়না পরলে ঘা এবং আ্যলার্জিও হতে পারে। শরীরের নরম জায়গাগুলোতে যেমন স্তনে যদি ফুটো করা হয়, তাহলে কাপড় পরার সময় বা খোলার সময় কাপড় আটকে গিয়ে বা টান লেগে ওই জায়গার মাংস ছিঁড়ে যেতে পারে। কোন মেয়ের স্তনে যদি এইরকম কিছু হয় আর সে যদি ডাক্তার না দেখায়, তাহলে ভবিষ্যতে সে তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারবে না।

কিছুদিন আগে, আ্যমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশন বলেছে যে মুখের নানা জায়গায় ফুটো করাও খুবই বিপদজনক। মুখের ভিতরে ফুটো করে গয়না পরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, জিভের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অনেকক্ষণ ধরে রক্তক্ষরণ হতে পারে, দাঁতের ক্ষতি হতে পারে, মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে, কথা মুখে আটকে যেতে পারে, মাঢ়িতে অসুবিধা হতে পারে, কেউ হয়তো তোতলাতে পারে ও শ্বাস নিতে, খাবার চিবোতে ও গিলতে কষ্ট হতে পারে। কেন্ড্রা যখন তার জিভে ফুটো করেছিল তখন তা “বেলুনের মতো ফুলে গিয়েছিল।” অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল কারণ যে ফুটো করে দিয়েছিল সে ভুল করে ঠোঁটে পরানোর দুল জিভে পরিয়ে দিয়েছিল আর তার ফলে তার জিভ কেটে গিয়েছিল। কেন্ড্রা যে একেবারে বোবা হয়ে যায়নি তাই ভাল।

ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের ব্যবস্থা দিয়ে শিখিয়েছিলেন যে তারা যাতে তাদের শরীরের যত্ন নেয় এবং অযথা কোন অঙ্গকে নষ্ট না করে। (লেবীয় পুস্তক ১৯:২৮; ২১:৫; দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:১) যদিও আজকে খ্রীষ্টানদের মোশির ব্যবস্থা মেনে চলতে হয় না, তবু আজও তাদেরকে শরীরের যত্ন নিতে বলা হয়। (রোমীয় ১২:১) তাই, শরীরের ক্ষতি হয় এমন কিছু না করাই কি ভাল নয়? তবে শরীরের ক্ষতি ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা তোমার ভাবা দরকার।

লোকে তোমাকে কোন্‌ চোখে দেখবে?

শরীরে ফুটো করা ঠিক না ভুল সেই বিষয়ে বাইবেলে সরাসরি কিছু বলা নেই। তবে বাইবেল আমাদেরকে “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী” হয়ে থাকতে বলে। (১ তীমথিয় ২:৯) হতে পারে যে কোন দেশে হয়তো বিশেষ কোন রেওয়াজকে ভুল বলে মনে করা হয় না। কিন্তু প্রশ্ন হল যে তুমি যেখানে থাক, সেখানকার লোকেরা এটাকে কীভাবে দেখে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোন দেশে হয়তো মেয়েদের কান ফুটো করাকে সাধারণ ব্যাপার বলে মনে করা হয়। কিন্তু অন্য আরেক দেশে বা সংস্কৃতিতে কান ফুটো করাকে ভাল চোখে নাও দেখা যেতে পারে।

পাশ্চাত্য দেশগুলোতে নামকরা লোকেদের নাক কানে ফুটো করা বেশ ভাল লাগার ব্যাপার হলেও যারা এরকম করে তাদের ভাল চোখে দেখা হয় না। এর একটা কারণ হতে পারে যে আগেকার দিনে এটা সেই লোকেরা করত, যারা হয়তো অনেক দিন ধরে জেলে ছিল বা কোন গুণ্ডা দলে ছিল হয়তো বা রক গায়ক-গায়িকা ও সমকামী ছিল। অনেকে বিদ্রোহ করার জন্য শরীরে ফুটো করে। কিন্তু বেশির ভাগ লোকেরা এটাকে খারাপ চোখে দেখে। আ্যশ্‌লি নামে এক খ্রীষ্টান মেয়ে বলে: “আমাদের ক্লাসের এক ছেলে নাক ফুটো করে একটা নাকছাবি পরেছে। সে মনে করে যে তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় যে এর চেয়ে জঘন্য বুঝি আর কিছু হয় না!”

তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে আমেরিকার একটা দোকানের মালিক নিয়ম করেছেন যে কেউ যদি তার দোকানে কাজ করতে চায়, তাহলে তারা শুধু কানে একটার বেশি দুল পরতে পারবে না এবং শরীরের আর কোন জায়গায় ফুটো করতে পারবে না। কোম্পানির প্রবক্তা বলেন, “আমাদের সম্বন্ধে লোকে কী ভাবে তা কে জানে।” একইভাবে ক্যারিয়ার কাউন্সেলর, চাকরি খুঁজছে এমন কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের পরামর্শ দেন যে তারা যেন তাদের “কানে দুল বা শরীরে অন্য কোথাও ফুটো করে কোন গয়না না পরে; আর মেয়েরা যেন . . . নাকে নাকছাবি না পরে।”

এই ব্যাপারে বিশেষ করে আমাদের যুবক-যুবতী ভাইবোনদের সাবধান হওয়া দরকার আর ভাবা দরকার যে তারা যেন তাদের সম্বন্ধে লোকেদের মনে কোন খারাপ ধারণা না দেয়, বিশেষ করে প্রচার করার সময় ও অন্য যে কোন সময়। তারা ‘কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মাতে চায় না, যাতে তাদের পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত না হয়।’ (২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪) শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করার ব্যাপারে তুমি যাই মনে কর না কেন, একটা কথা মনে রেখ যে তোমার বাইরের চেহারাই লোকেদেরকে তোমার বিষয়ে অনেক কিছু বলে দিতে পারে। লোকে তোমাকে কোন্‌ চোখে দেখুক বলে তুমি চাও?

তোমাকেই এটা ঠিক করতে হবে। তাই তুমি কান বা অন্য কোথাও ফুটো করবে কী করবে না, তা তুমি ও তোমার বাবামাই বুঝবেন। কিন্তু বাইবেলের পরামর্শ হল “জগতের চালচলনের মধ্যে নিজেদের ডুবিয়ে দিয়ো না।” (রোমীয় ১২:২, প্রেমের বাণী) কারণ তুমি যা কিছু বুনবে, তাই কাটবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ আমরা এখানে সেই সমস্ত দেশের কথা বলছি না যেখানে ফুটো করে দুল পরা বা নাকে নাকছাবি পরা সাধারণ রেওয়াজ আর সেটা দোষেরও কিছু নয়। বরং আমরা এখানে আজকালকার যুগের উদ্ভট ও বিকৃত ফ্যাশনের কথা বলতে চাইছি। আজকাল ছেলেমেয়েরা খুব বেশি করে এইরকম ফ্যাশন করছে।—১৯৭৪ সালের ১৫ই মে সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৩১৮-১৯ পৃষ্ঠা দেখ।

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ছেলেমেয়েরা এখন শরীরের নানা জায়গায় ফুটো করে