সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সমকামিতা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

সমকামিতা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

সমকামী বিবাহকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত অনেক দেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সেই দেশে সমকামী বিবাহকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। এরপর, ইন্টারনেট জগতে এই বিষয়টা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ লোকের কাছ থেকে একটা প্রশ্ন উঠে আসে, “সমকামী বিবাহ সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?”

সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে বিয়ে করা বৈধ কি না, বাইবেল সেই বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলে না। তবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, সমকামিতা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

এই বিষয়ে বাইবেল যা বলে, তা ভালোভাবে পরীক্ষা না করেই অনেকে বাইবেলের নামে ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করে থাকে। আর তাই একেক জন একেক রকম মন্তব্য করে। অনেকে বলে, বাইবেল স্পষ্টভাবে সমকামিতাকে নিন্দা করে। অন্যেরা আবার দাবি করে, “প্রতিবাসীকে . . . প্রেম করিও” বাইবেলের এই আদেশের অর্থ হল, ‘আপনি যেকোনো লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গেই যৌন সম্পর্ক করুন না কেন, বাইবেল তা সমর্থন করে।’—রোমীয় ১৩:৯.

বাইবেল কী বলে?

এই বিবৃতিগুলোর মধ্যে কোনটাকে আপনি সত্য বলে মনে করেন?

  1. বাইবেল সমকামিতাকে নিন্দা করে।

  2. বাইবেল সমকামিতাকে মেনে নেয়।

  3. বাইবেল সমকামী ব্যক্তিদের ঘৃণা করতে বলে।

উত্তর:

  1. সত্য। বাইবেল বলে: ‘যাহারা পুঙ্গামী’ অর্থাৎ যে-পুরুষেরা সমকামী, “তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) নারীদের ক্ষেত্রেও এটা সমভাবে প্রযোজ্য।—রোমীয় ১:২৬.

  2. মিথ্যা। বাইবেল শিক্ষা দেয়, একমাত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এক দম্পতি অর্থাৎ একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যেই যৌন সম্পর্ক সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।—আদিপুস্তক ১:২৭, ২৮; হিতোপদেশ ৫:১৮, ১৯.

  3. মিথ্যা। বাইবেল যদিও সমকামিতাকে নিন্দা করে কিন্তু এটি কখনোই সমকামী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার করা কিংবা হিংসাত্মক কাজ করার জন্য উৎসাহিত করে না।রোমীয় ১২:১৮. [১]

যিহোবার সাক্ষিরা কী বিশ্বাস করে?

যিহোবার সাক্ষিরা বিশ্বাস করে, একমাত্র বাইবেলের নৈতিক মান অনুযায়ী চলার মাধ্যমেই সর্বোত্তম উপায়ে জীবনযাপন করা যায় আর তাই তারা সেই মান অনুযায়ী চলা বেছে নেয়। (যিশাইয় ৪৮:১৭) [২] এর অর্থ হল যিহোবার সাক্ষিরা যেকোনো ধরনের যৌন অনৈতিকতাকে প্রত্যাখ্যান করে, যেটার মধ্যে সমকামিতাও রয়েছে। (১ করিন্থীয় ৬:১৮) [৩] যিহোবার সাক্ষিরা স্বেচ্ছায় বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা বেছে নিয়েছে আর তা করার অধিকার তাদের রয়েছে।

যিহোবার সাক্ষিরা অন্যদের কাছ থেকে যেমন ব্যবহার আশা করে, তারাও অন্যদের প্রতি একইরকম ব্যবহার করার চেষ্টা করে

একই সময় যিহোবার সাক্ষিরা “সকলের সহিত শান্তির অনুধাবন” করার জন্য চেষ্টা করে। (ইব্রীয় ১২:১৪) যদিও তারা সমকামিতাকে প্রত্যাখ্যান করে, কিন্তু তারা অন্যদের উপর নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেয় না। সাক্ষিরা সমকামী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কাজ করে না বা এই ব্যক্তিরা হিংসাত্মক কাজের শিকার হলে তারা আনন্দ করে না। যিহোবার সাক্ষিরা অন্যদের কাছ থেকে যেমন ব্যবহার আশা করে, তারাও অন্যদের প্রতি একইরকম ব্যবহার করার চেষ্টা করে।—মথি ৭:১২.

বাইবেল কি সমকামীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে বলে?

অনেকে বলে, বাইবেল সমকামী ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে প্ররোচিত করে আর যারা বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলে, তারা খুবই গোঁড়া প্রকৃতির হয়। তারা দাবি করে, ‘বাইবেল যে-সময়ে লেখা হয়েছিল, সেই সময়কার লোকেরা খুবই সংকীর্ণমনা ছিল। আজকে আমরা সমস্ত জাতি, বর্ণ আর একইসঙ্গে সেইসমস্ত লোকেদের মেনে নিই, যারা যৌন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করে।’ তাদের চোখে সমকামিতাকে প্রত্যাখ্যান করা আর অন্য বর্ণের একজন ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করা একই বিষয়। এই ধরনের তুলনাকে কি যুক্তিযুক্ত বলা যেতে পারে? কখনোই না। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি?

এর কারণ হল, সমকামী আচার-আচরণ প্রত্যাখ্যান করা এবং সমকামী ব্যক্তিদের প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বাইবেল খ্রিস্টানদের সমস্ত ধরনের ব্যক্তিদের সম্মান করতে বলে। (১ পিতর ২:১৭) [৪] কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তাদের সমস্ত ধরনের আচার-আচরণকে মেনে নিতে হবে।

এই বিষয়টা চিন্তা করুন: ধরুন, আপনি ধূমপান করাকে ক্ষতিকারক বলে মনে করেন আর কেউ ধূমপান করলে আপনি বিরক্ত হন। কিন্তু আপনার সহকর্মী যদি ধূমপান করেন, তা হলে? ধূমপান করার বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি যেহেতু আপনার সহকর্মীর চেয়ে ভিন্ন, তাই আপনাকে কি সংকীর্ণমনা বলা ঠিক হবে? আপনি যেহেতু আপনার বন্ধুর মতো ধূমপান করছেন না, তাই এর মানে কি এই যে, আপনি তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন? আপনার সহকর্মী যদি ধূমপান করার বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করার জন্য জোরাজুরি করেন, তা হলে তিনি কি একজন সংকীর্ণমনা ও গোঁড়া ব্যক্তি বলে প্রমাণিত হবেন না?

যিহোবার সাক্ষিরা বাইবেলে প্রাপ্ত নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা বেছে নেয়। বাইবেল যে-সমস্ত কাজ করাকে নিষেধ করে, তারা সেইসমস্ত কাজ করে না। তবে, যারা তাদের মতো জীবনযাপন করে না, যিহোবার সাক্ষিরা সেই ব্যক্তিদের উপহাস করে না কিংবা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে না।

সমকামিতার বিষয়ে বাইবেল যে-দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে, তা কি নিষ্ঠুর?

আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদের মধ্যে সমকামিতার প্রবণতা রয়েছে? তাদের এই প্রবণতা কি জন্মগত? যদি তা-ই হয়, তা হলে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে বারণ করা কি নিষ্ঠুরতার কাজ নয়?

কেন একজন ব্যক্তির মধ্যে সমকামিতার প্রবণতা রয়েছে, বাইবেল এই বিষয়ে কিছু বলে না, তবে এটি স্বীকার করে যে, কিছু কিছু প্রবণতা মানুষের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকে। তা সত্ত্বেও বাইবেল বলে, আমরা যদি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাই, তা হলে আমাদের নির্দিষ্ট কিছু আচরণ ত্যাগ করতে হবে, যেটার মধ্যে সমকামিতাও রয়েছে।—২ করিন্থীয় ১০:৪, ৫.

কারো কারো মতে, সমকামিতার বিষয়ে বাইবেল যা বলে, তা খুবই নিষ্ঠুর। তারা দাবি করে, আমাদের অবশ্যই নিজেদের আকাঙ্ক্ষা, বিশেষ করে যৌন আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করা উচিত কারণ এই আকাঙ্ক্ষা এতটাই প্রবল যে, এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না আর এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। কিন্তু এর বিপরীতে, বাইবেল এই বলে মানুষকে মর্যাদা প্রদান করে, তারা নিজেদের আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা জীবজন্তুর মতো নয় বরং তারা নিজেদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করবে কি না, তা বেছে নিতে পারে।—কলসীয় ৩:৫. [৫]

এই বিষয়টা চিন্তা করুন: কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, নির্দিষ্ট কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমাদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে রয়েছে, যেমন রাগ। একজন ব্যক্তির মধ্যে কেন এই ধরনের প্রবণতা রয়েছে, সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু বলে না কিন্তু এটি স্বীকার করে যে, কোনো কোনো ব্যক্তি “রাগী” স্বভাবের হয় আর তারা “সহজেই রেগে যায়।” (হিতোপদেশ ২২:২৪; ২৯:২২, ইজি-টু-রিড ভারশন) কিন্তু বাইবেল এ-ও বলে: “ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হও, কোপ ত্যাগ কর।”—গীতসংহিতা ৩৭:৮; ইফিষীয় ৪:৩১.

খুব কম লোকই আছে, যারা এই পরামর্শের সঙ্গে একমত হবে না অথবা বলবে, একজন রাগী ব্যক্তিকে তার প্রবণতা অনুযায়ী চলতে বারণ করা হল নিষ্ঠুরতার কাজ। এমনকী যে-বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করে, রাগ একজন ব্যক্তির মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে রয়েছে, তারাও এই ধরনের লোকেদের প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে থাকে।

বাইবেলের মানের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে, এমন যেকোনো আচরণের প্রতি যিহোবার সাক্ষিরা একই অবস্থান গ্রহণ করে। এর অন্তর্ভুক্ত হল, বিয়ের বাইরে বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা। এই সমস্ত ক্ষেত্রে বাইবেলে দেওয়া পরামর্শ প্রয়োগ করা যায়: “তোমাদের প্রত্যেক জন যেন, . . . কামাভিলাষে নয়, কিন্তু পবিত্রতায় ও সমাদরে নিজ নিজ পাত্র লাভ করিতে জানে।”—১ থিষলনীকীয় ৪:৪, ৫.

“তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে”

প্রথম শতাব্দীতে যারা খ্রিস্টান হতে চেয়েছিল, তারা বিভিন্ন পটভূমি থেকে এসেছিল এবং তাদের জীবনযাপনের মান ভিন্ন ছিল। এদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তিকে নিজেদের জীবনে আমূল পরিবর্তন করতে হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বাইবেল ‘ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামীদের’ বিষয়ে উল্লেখ করার পর আরও বলে: “তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে।”১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.

বাইবেল যখন বলে, “তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে,” তখন এর মানে কি এই যে, যারা আগে সমকামী ছিল, তাদের মধ্যে আর কখনো সমকামিতার আকাঙ্ক্ষা আসেনি? যদি বলা হয় আসেনি, তা হলে ভুল বলা হবে কারণ বাইবেল এ-ও বলে: “তোমরা আত্মার বশে চল, তাহা হইলে মাংসের অভিলাষ পূর্ণ করিবে না।”—গালাতীয় ৫:১৬.

লক্ষ করুন, বাইবেল এমনটা বলে না, খ্রিস্টানদের মধ্যে কখনোই অনৈতিক আকাঙ্ক্ষা আসবে না। এর পরিবর্তে বাইবেল বলে, একজন ব্যক্তি (পুরুষ অথবা নারী) এই আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করবে কি না, তা বেছে নিতে পারে। খ্রিস্টানরা এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা মনের মধ্যে পুষে রেখে সেটার কাছে নতিস্বীকার করার পরিবর্তে সেই আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।—যাকোব ১:১৪, ১৫. [৬]

তাই বাইবেল দেখায় যে, কোনো কিছু করার প্রবণতা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। (রোমীয় ৭:১৬-২৫) একজন ব্যক্তি যেভাবে রাগ, ব্যভিচার ও লোভের মতো মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেন, ঠিক একইভাবে সমকামী মনোভাবাপন্ন একজন ব্যক্তি তার চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।—১ করিন্থীয় ৯:২৭; ২ পিতর ২:১৪, ১৫.

যিহোবার সাক্ষিরা যদিও বাইবেলের নৈতিক মানকে উচ্চে তুলে ধরে, কিন্তু তারা নিজেদের মতামত জোর করে অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয় না। এ ছাড়া, যারা তাদের মতো জীবনযাপন করে না, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের বিরোধিতা করে না আর এভাবে তারা মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখায়। যিহোবার সাক্ষিরা পক্ষপাতহীনভাবে সেইসমস্ত ব্যক্তির কাছে উদ্যোগের সঙ্গে এক আশার খবর জানায়, যারা তা শুনতে চায়।—প্রেরিত ২০:২০. ◼ (g16-E No. 4)

^ ১. রোমীয় ১২:১৮: “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।”

^ ২. যিশাইয় ৪৮:১৭: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি।”

^ ৩. প্রথম করিন্থীয় ৬:১৮: “তোমরা ব্যভিচার হইতে পলায়ন কর।”

^ ৪. প্রথম পিতর ২:১৭: “সকলকে সমাদর কর।”

^ ৫. কলসীয় ৩:৫: “অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ [“অশুচি চিন্তার বশবর্তী হওয়া,” ইজি-টু-রিড ভারশন]।”

^ ৬. যাকোব ১:১৪, ১৫: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।”