সাক্ষাৎকার | ইয়ান-দার সু
একজন ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ তার বিশ্বাস সম্বন্ধে বলেন
ইয়ান-দার সু হলেন তাইওয়ানের ন্যাশনাল পিংটুং ইউনিভার্সিটি অভ্ সায়েন্স আ্যন্ড টেকনোলজি-র ভ্রূণ গবেষণার ডিরেক্টর। একসময় তিনি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতেন কিন্তু একজন বিজ্ঞানী হওয়ার পর তিনি নিজের চিন্তাধারা পরিবর্তন করেন। সজাগ হোন! পত্রিকাকে তিনি এর কারণ সম্বন্ধে জানান।
আপনার ছোটোবেলা সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলুন।
আমার জন্ম ১৯৬৬ সালে এবং আমি তাইওয়ানে বড়ো হয়ে উঠি। আমার বাবা-মা তাও এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। যদিও আমরা পূর্বপুরুষদের উপাসনা করতাম এবং প্রতিমার কাছে প্রার্থনা করতাম কিন্তু একজন ঈশ্বর যে সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছেন, এই বিষয়টা আমরা কখনো চিন্তাই করিনি।
কেন আপনি জীববিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?
ছোটোবেলায় পোষ্য প্রাণীদের যত্ন নিতে আমার ভালো লাগত। তাই, কীভাবে জন্তুজানোয়ার এবং মানুষ যন্ত্রণা থেকে উপশম পেতে পারে, আমি সেই বিষয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম। একসময় আমি পশুরোগ নিয়ে এবং পরে ভ্রূণবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করি। আমি মনে করতাম, ভ্রূণবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করা আমাকে জানতে সাহায্য করবে যে, জীবন কীভাবে শুরু হয়েছিল।
আগে আপনি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতেন। কেন, একটু বলবেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বিবর্তনবাদ সম্বন্ধে শিক্ষা দিতেন; তারা দাবি করতেন, এর পিছনে অনেক প্রমাণ রয়েছে। আর আমি তাদের কথায় বিশ্বাস করেছিলাম।
কেন আপনি বাইবেল পড়তে শুরু করেছিলেন?
বাইবেল পড়ার পিছনে আমার দুটো উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, আমি চিন্তা করতাম লোকেরা যে-সমস্ত দেবতার উপাসনা করে, তাদের মধ্যে এমন একজন নিশ্চয়ই রয়েছেন, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি কে? দ্বিতীয়ত, আমি জানতাম বাইবেল হল অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। তাই আমি বাইবেল অধ্যয়ন ক্লাসে যোগ দিই।
১৯৯২ সালে বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অভ্ লিউভেন-এ পড়াশোনা করার সময় একদিন আমি একটা ক্যাথলিক গির্জায় যাই। আমি একজন যাজকের কাছে বাইবেল বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য চাই কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি।
তাহলে কীভাবে আপনি আপনার উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন?
দু-বছর পেরিয়ে যায় আর আমি সেইসময় বেলজিয়ামেই গবেষণার কাজ করছিলাম। একদিন রুথ নামে একজন পোলিশ মহিলার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়, যিনি একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে চায়, তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি চাইনিজ ভাষা শিখেছিলেন। তার সঙ্গে দেখা করে আমার খুব ভালো লেগেছিল কারণ আমি এই ধরনের সাহায্যের জন্যই প্রার্থনা করেছিলাম।
রুথ আমাকে দেখিয়েছিলেন, বাইবেল বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক না হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানের সঙ্গে এটির সংগতি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাইবেল লেখক দায়ূদ প্রার্থনায় ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল, যখন সে সকলের একটীও ছিল না।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৬) যদিও দায়ূদ কাব্যিক ভাষায় এই কথাগুলো বলেছিলেন, কিন্তু তার দেওয়া এই তথ্য একেবারে সঠিক ছিল। এমনকী দেহের অঙ্গগুলো গঠিত হওয়ার অনেক আগেই সেগুলোর বৃদ্ধি সংক্রান্ত নির্দেশনা ভ্রূণের মধ্যে দেওয়া থাকে। বাইবেলের সঠিকতা আমাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছে যে, এটি হল ঈশ্বরের বাক্য। আমি এই বিষয়টাও বুঝতে পেরেছিলাম, কেবলমাত্র একজন সত্য ঈশ্বর রয়েছেন আর তিনি হলেন যিহোবা। ১
কীভাবে আপনি দৃঢ়নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, ঈশ্বরই জীবন সৃষ্টি করেছেন?
বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটা লক্ষ্য হল, পূর্বকল্পিত ধারণাগুলোকে সমর্থন করা নয় বরং সত্য উদ্ঘাটন করা। ভ্রূণের বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করার ফলে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয় আর আমি এই উপসংহারে আসি, জীবনকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। যেমন, ইঞ্জিনিয়াররা এমন মেশিন তৈরি করেছে, যেটা একটা যন্ত্রের বিভিন্ন অংশকে ক্রমানুযায়ী সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে বসিয়ে দেয়। ভ্রূণের বৃদ্ধিও কিছুটা এইরকম, তবে আরও জটিল।
একটা নিষিক্ত কোষ থেকেই তো পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাই না?
ঠিক বলেছেন। সেই আণুবীক্ষণিক কোষ বিভাজিত হয় আর এভাবে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। কিছু সময় পর্যন্ত এই কোষ প্রতি ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের কোষগুলোকে স্টেম সেল বলা হয়। ২ স্টেম সেলগুলো ২০০-র কাছাকাছি বিভিন্ন ধরনের কোষ গঠন করতে পারে, যা একটা শিশুর পূর্ণরূপে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন। এই কোষগুলোর মধ্যে রয়েছে রক্তের কোষ, অস্থি কোষ, স্নায়ু কোষ ইত্যাদি।
ভ্রূণের বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করার ফলে আমি এই উপসংহারে আসি, জীবনকে সৃষ্টি করা হয়েছিল
নির্দিষ্ট কোষগুলোকে সঠিক পর্যায়ে এবং সঠিক স্থানে গঠিত হতে হবে। প্রথমে এই কোষগুলো মিলিত হয়ে কলা গঠন করে, পরে এই কলাগুলো একত্রিত হয়ে তন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন করে। এমন কোনো ইঞ্জিনিয়ার কি আছেন, যিনি এই ধরনের জটিল প্রক্রিয়ার নির্দেশনা লেখার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন? কিন্তু ভ্রূণ বৃদ্ধির নির্দেশনা ডিএনএ-তে চমৎকারভাবে লেখা থাকে। এইসমস্ত বিষয় নিয়ে বিবেচনা করার পর আমি এই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চিত হয়েছিলাম, ঈশ্বর সুপরিকল্পিতভাবে জীবন সৃষ্টি করেছেন।
কেন আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন?
এক কথায় বললে, এর কারণ হল প্রেম। যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) এটা এক নিঃস্বার্থ প্রেম। এটা একজন ব্যক্তির জাতি, সংস্কৃতি অথবা গায়ের রঙের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। আমি যখন সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিলাম, তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ধরনের প্রেম লক্ষ করেছিলাম। ◼ (g16-E No. 2)
^ ১. যাত্রাপুস্তক ৩:১৫; ১ করিন্থীয় ৮:৫, ৬.
^ ২. খ্রিস্টীয় বিবেকের কারণে অধ্যাপক ইয়ান-দার সু মানব ভ্রূণের স্টেম সেল নিয়ে কাজ করেন না।