ঈশ্বর ভবিষ্যতে কী করবেন?
আপনি যদি কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হন, তা হলে আপনি আশা করতে পারেন যে, আপনার একজন ভালো বন্ধু আপনার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। সেই কথা মাথায় রেখে কেউ কেউ বলে যে, ঈশ্বর তাদের বন্ধু নন কারণ তারা মনে করে, তারা যখন কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখন ঈশ্বর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন না। সত্যি বলতে কী, ঈশ্বর আমাদের উপকারের জন্য ইতিমধ্যে অনেক কিছু করেছেন আর সেইসঙ্গে বর্তমানে আমরা যে-সমস্ত সমস্যা ও দুঃখকষ্টের মুখোমুখি হই, তিনি সেগুলো দূর করার জন্য পদক্ষেপও নেবেন। ঈশ্বর কোন কোন পদক্ষেপ নেবেন?
সমস্ত দুষ্টতা শেষ করবেন
ঈশ্বর দুষ্টতার উৎসকে দূর করার মাধ্যমে সমস্ত দুষ্টতা শেষ করবেন। সেই উৎস সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের জানায়: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) এই ‘পাপাত্মা’ হল শয়তান দিয়াবল, যাকে যিশু “এ জগতের অধিপতি” বলে অভিহিত করেছেন। (যোহন ১২:৩১) শয়তানের কারণে আজ পুরো পৃথিবীতে দুঃখকষ্ট রয়েছে। দুষ্টতা শেষ করার জন্য ঈশ্বর কী করবেন?
যিহোবা ঈশ্বর শীঘ্র তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টকে ব্যবহার করে “দিয়াবলকে শক্তিহীন” করবেন। (ইব্রীয় ২:১৪; ১ যোহন ৩:৮) এমনকী বাইবেল দেখায়, দিয়াবল জানে যে, “তাহার কাল সংক্ষিপ্ত” আর খুব শীঘ্র তাকে ধ্বংস করা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২) এ ছাড়া, ঈশ্বর সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ধ্বংস করে দেবেন, যারা দুষ্ট কাজ করে চলে।—গীতসংহিতা ৩৭:৯; হিতোপদেশ ২:২২.
পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবেন
পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্টতা দূর করার পর, আমাদের সৃষ্টিকর্তা মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য তাঁর অনন্তকালীন উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য পদক্ষেপ নেবেন। সেই সময় পৃথিবীর অবস্থা কেমন হবে?
স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা থাকবে। “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
প্রচুর পরিমাণে উত্তম খাদ্য থাকবে। “দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।”—গীতসংহিতা ৭২:১৬.
আরামদায়ক বাড়ি ও পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ থাকবে। “আর লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। . . . আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে।”—যিশাইয় ৬৫:২১, ২২.
আপনি কি এই ধরনের পরিস্থিতি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন? খুব শীঘ্র সেই দিন আসবে, যখন আমরা এই সমস্ত কিছু উপভোগ করব।
অসুস্থতা ও মৃত্যু দূর করবেন
বর্তমানে সকলেই অসুস্থ হয় ও মারা যায় কিন্তু দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে চলেছে। ঈশ্বর খুব শীঘ্র যিশুর মুক্তির মূল্যের উপকারিতাকে কাজে লাগাবেন, যাতে “যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) সেটার ফলাফল কী হবে?
অসুস্থতা আর থাকবে না। “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত; তন্নিবাসী প্রজাদের অপরাধের ক্ষমা হইবে।”—যিশাইয় ৩৩:২৪.
মৃত্যু আর থাকবে না। “তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।”—যিশাইয় ২৫:৮.
লোকেরা চিরকাল বেঁচে থাকবে। “ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।”—রোমীয় ৬:২৩.
মৃত ব্যক্তিদের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে। “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) যারা মারা গিয়েছে তারা ঈশ্বরের মুক্তির মূল্যের উপহারের কারণে পুনরুত্থিত হতে পারবে।
কীভাবে ঈশ্বর এই সমস্ত কিছু সম্পাদন করবেন?
এক নিখুঁত সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন
এক স্বর্গীয় সরকারের মাধ্যমে ঈশ্বর মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করবেন আর খ্রিস্ট যিশু হলেন তাঁর মনোনীত শাসক। (গীতসংহিতা ১১০:১, ২) এটা হল সেই সরকার বা রাজ্য, যেটার জন্য যিশু এই কথা বলার মাধ্যমে তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ . . . তোমার রাজ্য আইসুক।”—মথি ৬:৯, ১০.
ঈশ্বরের রাজ্য পুরো পৃথিবীর উপর কর্তৃত্ব করবে আর সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর করবে। এই রাজ্যই হল মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভালো সরকার। সেই জন্যই, যিশু পৃথিবীতে পরিচর্যার সময় “রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করার কাজের উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন আর তাঁর শিষ্যদেরও একই কাজ করতে বলেছিলেন।—মথি ৪:২৩; ২৪:১৪.
মানবজাতির প্রতি তাঁর অসীম প্রেম থাকায় যিহোবা তাদের জন্য এই সমস্ত চমৎকার বিষয়গুলো করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। এই বিষয়টা আপনাকে কি তাঁকে জানতে ও তাঁর নিকটবর্তী হতে উৎসাহিত করে না? আপনি যদি তা করা বেছে নেন, তবে আপনি কীভাবে উপকৃত হবেন? পরের প্রবন্ধে তা ব্যাখ্যা করা হবে।
ঈশ্বর ভবিষ্যতে কী করবেন? ঈশ্বর অসুস্থতা ও মৃত্যু দূর করবেন, তাঁর রাজ্য সরকারের অধীনে মানবজাতিকে একত্রিত করবেন আর পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবেন