প্রচ্ছদ বিষয় | কেন যিশু কষ্টভোগ করেছিলেন ও মারা গিয়েছিলেন?
এটা কি সত্যিই ঘটেছিল?
তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের বসন্ত কালে নাসরতীয় যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে দেশদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, নিষ্ঠুরভাবে মারা হয়েছিল এবং একটা দণ্ডে বিদ্ধ করা হয়েছিল। অসহ্য যন্ত্রণাভোগ করে তিনি মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে আবারও জীবিত করেছিলেন আর ৪০ দিন পর যিশু স্বর্গে ফিরে গিয়েছিলেন।
সাধারণত নূতন নিয়ম হিসেবে পরিচিত খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর চারটে সুসমাচারের বই থেকে আমরা এই অসাধারণ বিবরণ সম্বন্ধে জানতে পারি। এই ঘটনাগুলো কি সত্যিই ঘটেছিল? এটা এক উপযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ, এই ঘটনাগুলো যদি না-ই ঘটে থাকে, তা হলে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের কোনো অর্থই থাকবে না আর পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা এক স্বপ্নই থেকে যাবে। (১ করিন্থীয় ১৫:১৪) অপরদিকে, এই ঘটনাগুলো যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তা হলে সেটার অর্থ হল, মানবজাতির সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে, যেটার অংশীদার আপনিও হতে পারেন। তা হলে, সুসমাচারের বইয়ের বিবরণগুলো বাস্তব না অবাস্তব?
বিভিন্ন বিবরণ যা দেখায়
রূপকথার বিভিন্ন কাহিনির বিপরীতে, সুসমাচারের বইগুলো নির্ভুল আর সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয় বর্ণনা করে। উদাহরণ স্বরূপ, এই বিবরণগুলোতে সত্যিকারের জায়গার নাম রয়েছে আর সেই জায়গাগুলোতে এখনও যাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, এই বিবরণগুলোতে এমন ব্যক্তিদের নাম রয়েছে, যাদের উল্লেখ ইতিহাসবেত্তাদের লেখাতেও পাওয়া যায়।—লূক ৩:১, ২, ২৩.
* সুসমাচারের বইগুলোতে দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী যিশুকে যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, সেইসময় রোমীয়রা অপরাধীদের ঠিক সেভাবেই মৃত্যুদণ্ড দিত। শুধু তা-ই নয়, ঘটনাগুলোকে বাস্তবসম্মতভাবে ও সততার সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে, এমনকী যিশুর কয়েক জন শিষ্যের নেতিবাচক বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। (মথি ২৬:৫৬; লূক ২২:২৪-২৬; যোহন ১৮:১০, ১১) এই সমস্ত বিষয় স্পষ্টভাবে দেখায়, সুসমাচারের বইয়ের লেখকরা যিশুর বিষয়ে যা যা লিখেছিলেন, সেগুলো হল নির্ভরযোগ্য ও সঠিক।
প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর বিভিন্ন লেখক যিশুর বিষয়েও উল্লেখ করেছেন।যিশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে কী বলা যায়?
যিশুর জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে লোকেদের মধ্যে কোনো সন্দেহ না থাকলেও কেউ কেউ হয়তো তাঁর পুনরুত্থানের বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। এমনকী তাঁর প্রেরিতরা যখন প্রথম বার শুনেছিলেন যে, তিনি পুনরায় জীবিত হয়েছেন, তখন তারাও তা বিশ্বাস করেননি। (লূক ২৪:১১) কিন্তু, তারা ও অন্য শিষ্যরা যখন একাধিক বার পুনরুত্থিত যিশুকে দেখেছিলেন, তখন তাদের সমস্ত সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছিল। এমনকী, একবার ৫০০ জন ব্যক্তি নিজের চোখে তাঁকে দেখেছিলেন।—১ করিন্থীয় ১৫:৬.
গ্রেপ্তার হওয়ার এবং জীবন হারানোর ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শিষ্যরা সাহসের সঙ্গে সকলের কাছে যিশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে ঘোষণা করেছিলেন, এমনকী সেই ব্যক্তিদের কাছেও, যারা যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। (প্রেরিত ৪:১-৩, ১০, ১৯, ২০; ৫:২৭-৩২) এই বিপুল সংখ্যক শিষ্য যদি যিশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না-ই হতেন, তা হলে তারা কি এতটা সাহসী হতে পারতেন? আসলে, যিশু যে পুনরুত্থিত হয়েছেন, এই ঘটনার সত্যতাই খ্রিস্টধর্মকে সেইসময় ও বর্তমানে এতটা প্রভাববিস্তার করতে সাহায্য করেছে।
একটা বিবরণকে ঐতিহাসিক দিক দিয়ে নির্ভরযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করার জন্য যে-সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রয়োজন, সেগুলোর সবই যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্পর্কিত সুসমাচারের বিবরণগুলোতে রয়েছে। এগুলো মন দিয়ে পড়া আপনাকে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সাহায্য করবে যে, এই ঘটনাগুলো সত্যিই ঘটেছিল। আপনার বিশ্বাস সেইসময় আরও দৃঢ় হবে, যখন আপনি বুঝতে পারবেন, কেন এগুলো ঘটেছিল। পরের প্রবন্ধে তা ব্যাখ্যা করা হবে। (w16-E No.2)
^ অনু. 7 ট্যাসিটাস, যিনি ৫৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি লেখেন, “খ্রিস্ট, যাঁর কাছ থেকে এই [খিস্টান] নামের উৎপত্তি হয়েছিল, তিনি তিবরিয়ের রাজত্বকালে আমাদের একজন প্রাদেশিক কর্মকর্তা, পন্তীয় পীলাতের হাতে মৃত্যুদণ্ড ভোগ করেছিলেন।” এ ছাড়া, যিশুর বিষয়ে যারা উল্লেখ করেছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন সুইতোনিয়াস (প্রথম শতাব্দী); যিহুদি ইতিহাসবেত্তা জোসিফাস (প্রথম শতাব্দী) এবং বিথুনিয়ার শাসক প্লিনি দ্যা ইয়ংগার (দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে)।