সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করে কৃতজ্ঞ

আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করে কৃতজ্ঞ

“আমরা সকলে . . . অনুগ্রহের উপরে অনুগ্রহ পাইয়াছি।”—যোহন ১:১৬.

গান সংখ্যা: ১, ১৩

১, ২. (ক) দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মালিক সম্বন্ধে যিশু যে-দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন, তা বর্ণনা করুন। (খ) কীভাবে এই দৃষ্টান্ত দয়া ও অনুগ্রহ সম্বন্ধে তুলে ধরে?

একদিন সকাল বেলা, একটা দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মালিক নিজের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে মজুর নিয়োগ করার জন্য বাজারে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের কাজের বিনিময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আর লোকেরা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। কিন্তু, সেই মালিকের যেহেতু আরও মজুর দরকার ছিল, তাই তিনি সেই দিন কয়েক বার বাজারে গিয়ে আরও মজুরকে কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি সমস্ত মজুরকে বেতন হিসেবে ন্যায্য অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দিনের শেষে, সেই মালিক বেতন দেওয়ার জন্য মজুরদের একত্র করেছিলেন। যারা পুরো দিন কাজ করেছিল অথবা যারা মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করেছিল, তাদের সকলকে তিনি একই পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন। তখন যে-ব্যক্তিরা পুরো দিন কাজ করেছিল, তারা অভিযোগ করতে শুরু করেছিল আর সেই মালিক তাদের বলেছিলেন: ‘আমি যে-বেতনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তোমরা কি তাতেই কাজ করতে রাজি হওনি? আমার সমস্ত মজুরকে আমি যা দিতে চাই, তা দেওয়ার অধিকার কি আমার নেই? না কি আমি দয়া দেখাচ্ছি বলে তোমাদের ঈর্ষা হচ্ছে?’—মথি ২০:১-১৫.

যিশুর এই দৃষ্টান্ত আমাদেরকে যিহোবার “অনুগ্রহ” সম্বন্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৬:১.) কীভাবে? কেউ কেউ হয়তো এমনটা মনে করে, যে-মজুররা পুরো দিন কাজ করেছিল, তারা অন্যদের চেয়ে আরও বেশি অর্থ লাভ করার যোগ্য ছিল। কিন্তু, দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মালিক সেই মজুরদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন, যারা শুধুমাত্র অল্পসময় কাজ করেছিল। বাইবেলে “অনুগ্রহ” হিসেবে অনুবাদিত শব্দ সম্বন্ধে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি এভাবে বলেছিলেন: ‘এই শব্দের মৌলিক ধারণা হল এমন এক উপহার, যা একতরফাভাবে ও অযোগ্যতা সত্ত্বেও দেওয়া হয়; কোনো ব্যক্তিকে এমন কিছু দেওয়া, যা তিনি নিজের যোগ্যতাবলে অর্জন করতে পারেন না।’

যিহোবার উদার দান

৩, ৪. কেন এবং কীভাবে যিহোবা মানবজাতির প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়েছেন?

বাইবেল আমাদের জানায়, ঈশ্বরের অনুগ্রহ হল এক “দান” বা একতরফা উপহার। (ইফি. ৩:৭) আমরা যেহেতু নিখুঁতভাবে যিহোবার বাধ্য হতে পারি না, তাই আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো দয়া লাভের যোগ্য নই। আসলে, আমরা মৃত্যুর যোগ্য। রাজা শলোমন বলেছিলেন: “এমন ধার্ম্মিক লোক পৃথিবীতে নাই, যে সৎকর্ম্ম করে, পাপ করে না।” (উপ. ৭:২০) পরবর্তী সময়ে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরববিহীন হইয়াছে” এবং “পাপের বেতন মৃত্যু।”—রোমীয় ৩:২৩; ৬:২৩ক.

যিহোবা যেহেতু মানুষকে খুব ভালোবাসেন, তাই তিনি “আপনার একজাত পুত্রকে” আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পাঠিয়েছিলেন। এটা হল অনুগ্রহের সর্বমহৎ উদাহরণ। (যোহন ৩:১৬) পৌল বলেছিলেন, যিশু “মৃত্যুভোগ হেতু প্রতাপ ও সমাদর-মুকুটে বিভূষিত হইয়াছেন, যেন ঈশ্বরের অনুগ্রহে সকলের নিমিত্ত মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করেন।” (ইব্রীয় ২:৯) হ্যাঁ, “ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।”—রোমীয় ৬:২৩খ.

৫, ৬. আমরা কোন ফলাফল লাভ করি, যখন আমরা (ক) পাপের দ্বারা শাসিত হই? (খ) অনুগ্রহের দ্বারা শাসিত হই?

কেন আমরা পাপ করি ও মারা যাই? বাইবেল বলে, “সেই একের অপরাধে . . . মৃত্যু রাজত্ব করিল।” তাই, আদমের বংশধর হওয়ার কারণে আমরা অসিদ্ধ এবং আমরা মারা যাই। (রোমীয় ৫:১২, ১৪, ১৭) তা সত্ত্বেও, আমরা পাপের দ্বারা শাসিত বা নিয়ন্ত্রিত না হওয়া বেছে নিতে পারি। কীভাবে তা সম্ভব? আমরা যখন খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি বিশ্বাস দেখাই, তখন আমরা যিহোবার অনুগ্রহ থেকে উপকৃত হই। বাইবেল বলে: “যেখানে পাপের বাহুল্য হইল, সেখানে অনুগ্রহ আরও উপচিয়া পড়িল; যেন পাপ যেমন মৃত্যুতে রাজত্ব করিয়াছিল, তেমনি আবার অনুগ্রহ ধার্ম্মিকতা দ্বারা, অনন্ত জীবনের নিমিত্ত, . . . যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা, রাজত্ব করে।”—রোমীয় ৫:২০, ২১.

যদিও আমরা এখনও পাপী, কিন্তু পাপকে যে আমাদের উপর রাজত্ব করতে দিতে হবে, এমন নয়। তাই, আমরা যখন কোনো ভুল করি, তখন আমরা যিহোবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি বিশ্বাস দেখাই। পৌল আমাদের সাবধান করেছিলেন: “পাপ তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না; কারণ তোমরা ব্যবস্থার অধীন নহ, কিন্তু অনুগ্রহের অধীন।” (রোমীয় ৬:১৪) তা হলে, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ থেকে উপকার লাভ করতে পারি? পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বরের অনুগ্রহ . . . আমাদিগকে শাসন করিতেছে, যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি।”—তীত ২:১১, ১২.

“বহুবিধ” অনুগ্রহ

৭, ৮. যিহোবার অনুগ্রহ “বহুবিধ” উপায়ে প্রকাশ পেয়েছে, এই কথার অর্থ কী? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষের মত পরস্পর পরিচর্য্যা কর।” (১ পিতর ৪:১০) যিহোবার অনুগ্রহ “বহুবিধ” উপায়ে প্রকাশ পেয়েছে, এই কথার অর্থ কী? এর অর্থ হল, আমাদের জীবনে যেকোনো সমস্যাই থাকুক না কেন, তা সহ্য করার জন্য যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছু জুগিয়ে দেবেন। (১ পিতর ১:৬) প্রতিটা পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যা প্রয়োজন, তিনি ঠিক সেটাই সবসময় জুগিয়ে দেবেন।

প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “তাঁহার পূর্ণতা হইতে আমরা সকলে পাইয়াছি, আর অনুগ্রহের উপরে অনুগ্রহ পাইয়াছি।” (যোহন ১:১৬) যিহোবা যেহেতু বিভিন্ন উপায়ে তাঁর অনুগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন, তাই আমরা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করি। এই আশীর্বাদগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী?

৯. কীভাবে আমরা যিহোবার অনুগ্রহ থেকে উপকার লাভ করি আর কীভাবে আমরা এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি?

যিহোবা আমাদের পাপ ক্ষমা করেন। যিহোবা তাঁর অনুগ্রহের কারণে আমাদের পাপ ক্ষমা করেন। কিন্তু, তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, যখন আমরা অনুতপ্ত হই এবং আমাদের পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করি। (পড়ুন, ১ যোহন ১:৮, ৯.) যিহোবা কীভাবে পাপ ক্ষমা করেন, সেই বিষয়ে পৌল তার সময়ের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “[ঈশ্বরই] আমাদিগকে অন্ধকারের কর্ত্তৃত্ব হইতে উদ্ধার করিয়া আপন প্রেমভূমি পুত্রের রাজ্যে আনয়ন করিয়াছেন; ইহাঁতেই আমরা মুক্তি, পাপের মোচন, প্রাপ্ত হইয়াছি।” (কল. ১:১৩, ১৪) ঈশ্বরের করুণার জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আর তাই আমরা তাঁর প্রশংসা করতে চাই। আর যিহোবা যেহেতু আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, তাই আমরা অন্যান্য চমৎকার আশীর্বাদ লাভ করতে পারি।

১০. ঈশ্বরের অনুগ্রহের কারণে আমরা কী উপভোগ করি?

১০ আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি। আমরা অসিদ্ধ আর তাই জন্ম থেকেই আমরা ঈশ্বরের শত্রু। তা সত্ত্বেও, পৌল বলেছিলেন: “যখন আমরা শত্রু ছিলাম, তখন . . . ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্ত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত হইলাম।” (রোমীয় ৫:১০) মুক্তির মূল্যের কারণে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হতে পারি অর্থাৎ আমরা তাঁর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কস্থাপন করতে পারি এবং তাঁর বন্ধু হতে পারি। পৌল এই বিষয়ে এবং এটা কীভাবে যিহোবার অনুগ্রহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তা ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “বিশ্বাসহেতু ধার্ম্মিক গণিত হওয়াতে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে সন্ধি লাভ করিয়াছি; আর তাঁহারই দ্বারা আমরা বিশ্বাসে এই অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ লাভ করিয়াছি, যাহার মধ্যে দাঁড়াইয়া আছি।” (রোমীয় ৫:১, ২) যিহোবার সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করতে পেরে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ!

ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রকাশের কিছু দিক: সুসমাচার শোনার বিশেষ সুযোগ (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. কীভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ‘আরও মেষকে’ ধার্মিকতার প্রতি ফিরিয়ে আনেন?

১১ আমরা ঈশ্বরের সামনে ধার্মিক বলে গণ্য হতে পারি। ভাববাদী দানিয়েল লিখেছিলেন, শেষকালে “বুদ্ধিমান্‌” অর্থাৎ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা “অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি” ফিরিয়ে আনবে। (পড়ুন, দানিয়েল ১২:৩.) কীভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তা করেন? তারা সুসমাচার প্রচার করেন এবং লক্ষ লক্ষ ‘আরও মেষকে’ যিহোবার আইন সম্বন্ধে শিক্ষা দেন। (যোহন ১০:১৬) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদেরকে ঈশ্বরের সামনে ধার্মিক বলে বিবেচিত হতে সাহায্য করেন, যা একমাত্র যিহোবার অনুগ্রহের কারণেই সম্ভবপর হয়। পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই [ঈশ্বরেরই] অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্ম্মিক গণিত হয়।”—রোমীয় ৩:২৩, ২৪.

প্রার্থনা করার আশীর্বাদ (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. কীভাবে প্রার্থনা ঈশ্বরের অনুগ্রহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

১২ আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারি। যিহোবার অনুগ্রহের কারণে আমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে পারি। যেহেতু যিহোবা হলেন এমন একজন শাসক, যিনি অনুগ্রহ দেখান, তাই পৌল বলেন, যিহোবা এক ‘অনুগ্রহ-সিংহাসনে’ বসে আছেন এবং তিনি আমাদের “সাহসপূর্ব্বক” বা নির্দ্বিধায় এর সামনে উপস্থিত হতে আমন্ত্রণ জানান। (ইব্রীয় ৪:১৬ক) আমরা যেকোনো সময়ে যিশুর মাধ্যমে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি। এটা সত্যিই বিরাট সম্মানের এক বিষয়! পৌল বলেছিলেন: “আমরা তাঁহার উপরে বিশ্বাস দ্বারা সাহস, এবং দৃঢ় প্রত্যয়পূর্ব্বক উপস্থিত হইবার ক্ষমতা, পাইয়াছি।”—ইফি. ৩:১২.

উপযুক্ত সময়ে সাহায্য লাভ (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. কীভাবে অনুগ্রহ আমাদের ‘সময়ের উপযোগী’ বা উপযুক্ত সময়ে ‘উপকার’ লাভ করতে সাহায্য করে?

১৩ আমরা উপযুক্ত সময়ে সাহায্য লাভ করতে পারি। পৌল আমাদেরকে যখনই প্রয়োজন, তখনই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিলেন, “যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে” বা উপযুক্ত সময়ে “অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।” (ইব্রীয় ৪:১৬খ) আমাদের জীবনে যখন কোনো পরীক্ষা অথবা সমস্যা দেখা দেয়, তখন আমরা সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে বিনতি করতে পারি। আর তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন, যদিও তিনি তা করতে বাধ্য নন। তিনি প্রায় সময়ই আমাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের ভাই ও বোনদের ব্যবহার করেন। যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন আর তাই “আমরা সাহসপূর্ব্বক বলিতে পারি, ‘প্রভু আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?’”—ইব্রীয় ১৩:৬.

১৪. কীভাবে যিহোবার অনুগ্রহ আমাদের হৃদয়ের জন্য উপকারজনক?

১৪ আমরা হৃদয়ে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। আমরা যখন আবেগগত চাপের মধ্যে থাকি, তখন যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা দেন। এটা এক দারুণ আশীর্বাদ। (গীত. ৫১:১৭) থিষলনীকীর খ্রিস্টানরা যখন তাড়না ভোগ করছিল, তখন পৌল লিখেছিলেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আপনি, ও আমাদের পিতা ঈশ্বর, যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, এবং অনুগ্রহ দ্বারা অনন্তকালস্থায়ী সান্ত্বনা ও উত্তম প্রত্যাশা দিয়াছেন, তিনি তোমাদের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিউন, এবং সমস্ত উত্তম কার্য্যে ও বাক্যে সুস্থির করুন।” (২ থিষল. ২:১৬, ১৭) যিহোবা তাঁর অনুগ্রহের কারণে আমাদের ভালোবাসেন ও আমাদের জন্য চিন্তা করেন। এই বিষয়টা জানা কতই-না সান্ত্বনাদায়ক!

১৫. ঈশ্বরের অনুগ্রহের কারণে আমরা কোন আশা লাভ করেছি?

১৫ আমাদের অনন্তজীবন লাভের আশা রয়েছে। আমরা যেহেতু পাপী, তাই যিহোবার সাহায্য ছাড়া আমাদের কোনো আশা নেই। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৯:৭, ৮.) যিহোবা আমাদের এক চমৎকার আশা প্রদান করেছেন। সেটা কী? যিশু বলেছিলেন: “আমার পিতার ইচ্ছা এই, যে কেহ পুত্রকে দর্শন করে ও তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে যেন অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৬:৪০) তাই, যিহোবার অনুগ্রহের কারণে আমরা চিরকাল বেঁচে থাকার আশা লাভ করেছি। পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা সমুদয় মনুষ্যের জন্য পরিত্রাণ আনয়ন করে।”—তীত ২:১১.

ঈশ্বরের অনুগ্রহকে পাপ করার অজুহাত হিসেবে দেখবেন না

১৬. কীভাবে প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের অনুগ্রহের অপব্যবহার করেছিল?

১৬ যিহোবার অনুগ্রহের কারণে আমরা বিভিন্ন আশীর্বাদ লাভ করি। কিন্তু, তাঁর দয়াকে আমাদের অপব্যবহার করা অর্থাৎ পাপ করার অজুহাত হিসেবে দেখা উচিত নয়। প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে কেউ কেউ “ঈশ্বরের অনুগ্রহ লম্পটতায় [“অনৈতিক কাজকর্মের অজুহাতে,” ইজি-টু-রিড ভারশন] পরিণত” করার চেষ্টা করেছিল। (যিহূদা ৪) এই অবিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা সম্ভবত এইরকম মনে করেছিল, তারা পাপ করতে পারে আর যিহোবা সবসময় তাদের ক্ষমা করে দেবেন। তারা এমনকী তাদের ভাই-বোনদেরও তাদের সঙ্গে পাপ কাজে জড়িত করানোর চেষ্টা করেছিল। বর্তমানে কোনো ব্যক্তি যদি একইরকম কাজ করেন, তা হলে তিনি ‘অনুগ্রহের আত্মার অপমান করিয়া থাকেন।’—ইব্রীয় ১০:২৯.

১৭. পিতর দৃঢ়ভাবে কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

১৭ বর্তমানে, শয়তান কৌশলে কোনো কোনো খ্রিস্টানকে এইরকম চিন্তা করার জন্য প্ররোচিত করেছে, তারা পাপ করতে পারে আর যিহোবা এমনি এমনিই তাদের ক্ষমা করে দেবেন। এটা ঠিক যে, যিহোবা অনুতপ্ত পাপীদের ক্ষমা করতে ইচ্ছুক; তবে তিনি চান, যেন আমরা নিজেদের পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করি। যিহোবা পিতরকে এই কথাগুলো লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “অতএব, প্রিয়তমেরা, তোমরা এ সকল অগ্রে জানিয়া সাবধান থাক, পাছে ধর্ম্মহীনদের ভ্রান্তিতে আকর্ষিত হইয়া নিজ স্থিরতা হইতে ভ্রষ্ট হও; কিন্তু আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ ও জ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও।”—২ পিতর ৩:১৭, ১৮.

অনুগ্রহ লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বও আসে

১৮. যিহোবার অনুগ্রহের কারণে আমাদের কোন কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১৮ যিহোবার অনুগ্রহের জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাই, যিহোবা আমাদের যে-সমস্ত উপহার দিয়েছেন, সেগুলো যিহোবার গৌরব এবং অন্যদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা উচিত। আমরা তা করতে বাধ্য। কীভাবে আমরা সেই উপহারগুলো ব্যবহার করতে পারি? পৌল বলেছিলেন: “আর আমাদিগকে যে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, তদনুসারে যখন আমরা বিশেষ বিশেষ বর প্রাপ্ত হইয়াছি, . . . তাহা যদি পরিচর্য্যা হয়, তবে সেই পরিচর্য্যায় নিবিষ্ট হই; অথবা যে শিক্ষা দেয়, সে শিক্ষাদানে, কিম্বা যে উপদেশ দেয়, সে উপদেশ দানে নিবিষ্ট হউক [‘যে উৎসাহিত করবার ক্ষমতা পেয়েছে সে উৎসাহিত করুক,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]; . . . যে দয়া করে, সে হৃষ্টচিত্তে করুক।” (রোমীয় ১২:৬-৮) তাই, যিহোবার অনুগ্রহের কারণে আমাদের পরিচর্যায় কঠোর পরিশ্রম করার, অন্যদেরকে বাইবেল সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার, আমাদের ভাই-বোনদের উৎসাহিত করার এবং যারা আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তাদের ক্ষমা করার দায়িত্ব রয়েছে।

১৯. পরের প্রবন্ধে আমাদের কোন দায়িত্ব সম্বন্ধে পরীক্ষা করা হবে?

১৯ যারা যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করে আশীর্বাদ পেয়েছে, তাদের মতো আমাদেরও “ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসমাচারের পক্ষে সাক্ষ্য দিবার যে পরিচর্য্যাপদ প্রভু যীশু হইতে পাইয়াছি, তাহা সমাপ্ত করিতে” যথাসাধ্য করার জন্য অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। (প্রেরিত ২০:২৪) এই দায়িত্ব সম্বন্ধে আমরা পরের প্রবন্ধে পরীক্ষা করব।