সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৮

গান ১২৩ আমরা যিহোবার ও তাঁর সংগঠনের বশীভূত থাকি

আপনি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন!

আপনি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন!

‘দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকো। সত্যের কটিবন্ধনী দিয়ে তোমার কোমর বাঁধো।’ইফি. ৬:১৪.

আমরা কী শিখব?

যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া সত্য এবং শয়তান ও আমাদের বিরোধীদের বলা মিথ্যা কথাগুলোর মধ্যে কীভাবে আমরা পার্থক্য করতে পারি?

১. বাইবেলে দেওয়া সত্যের বিষয়ে আপনি কেমন অনুভব করেন?

 ঈশ্বরের বাক্য থেকে পাওয়া সত্যকে আমরা খুবই ভালোবাসি। এটাই হল আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি। (রোমীয় ১০:১৭) আমরা নিশ্চিত যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী হল “সত্যের স্তম্ভ ও ভিত্তি” আর যিহোবাই এটার ব্যবস্থা করেছেন। (১ তীম. ৩:১৫) যে-ভাইয়েরা আমাদের মধ্যে “নেতৃত্ব” নেয়, তারা বাইবেল থেকে সত্য শেখায় এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে নির্দেশনা দেয়। তাই, আমরা আনন্দের সঙ্গে তাদের বাধ্য হই।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

২. যাকোব ৫:১৯ পদ অনুযায়ী সত্য শেখার পরও আমাদের কী হতে পারে?

আমরা সত্যকে গ্রহণ করেছি এবং আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত, বর্তমানে যিহোবার সংগঠন আমাদের একেবারে সঠিক নির্দেশনা দিচ্ছে। তারপরও, আমরা সত্যের পথ থেকে সরে যেতে পারি। (পড়ুন, যাকোব ৫:১৯.) আসলে শয়তান এটাই চায় আমরা যেন বাইবেলের কথাগুলোর এবং ঈশ্বরের সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলোর উপর সন্দেহ করতে শুরু করি আর সেগুলোর উপর থেকে আমাদের আস্থা উঠে যায়।—ইফি. ৪:১৪.

৩. কেন আমাদের সত্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা উচিত? (ইফিষীয় ৬:১৩, ১৪)

ইফিষীয় ৬:১৩, ১৪ পদ পড়ুন। খুব শীঘ্রই শয়তান সমস্ত জাতিকে ভ্রান্ত করার জন্য এমন মিথ্যা কথাগুলো ছড়াতে শুরু করবে, যেটার কারণে তারা যিহোবা এবং তাঁর লোকদের বিরোধিতা করবে। (প্রকা. ১৬:১৩, ১৪) শুধু তা-ই নয়, শয়তান যিহোবার লোকদেরও ভ্রান্ত করার জন্য তার পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব, তা করবে। (প্রকা. ১২:৯) তাই, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখা এবং সত্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (রোমীয় ৬:১৭; ১ পিতর ১:২২) তা করলে আমরা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাব!

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা এমন দুটো গুণ নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারব এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে পারব। এর পাশাপাশি, আমরা তিনটে পরামর্শ নিয়েও আলোচনা করব, যেগুলো মেনে চললে আমরা সত্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারব।

সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ গুণ

৫. যিহোবার প্রতি ভয় থাকলে আমরা কী করব?

যিহোবাকে ভয় করুন। যিহোবাকে ভয় করার মানে হল তাঁকে ভালোবাসা এবং তাঁকে দুঃখ দেওয়ার মতো কোনো কাজ না করা। আমাদের জানতে হবে, যিহোবার দৃষ্টিতে কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, কোনটা সত্য ও কোনটা মিথ্যা। এরপর আমাদের সেটাই করতে হবে, যেটা তাঁকে খুশি করবে। (হিতো. ২:৩-৬; ইব্রীয় ৫:১৪) তাই, মানুষকে এতটাও ভয় পাওয়া উচিত নয়, যেটার কারণে যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা কমে যাবে। আসলে, মানুষকে খুশি করতে চাইলে আমরা যিহোবাকে দুঃখ দিয়ে ফেলব।

৬. সেই ১০ জন গুপ্তচর মানুষের ভয়ে কীভাবে সত্যকে বিকৃত করে তুলে ধরেছিল?

আমরা যদি যিহোবার চেয়ে মানুষকে বেশি ভয় পাই, তা হলে আমরা সত্যের পথ থেকে সরে যেতে পারি। ইজরায়েলের সেই ১২ জন গুপ্তচরের কথা চিন্তা করুন, যাদের প্রতিজ্ঞাত দেশ দেখার জন্য পাঠানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন গুপ্তচর কনানীয়দের দেখে এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, যিহোবার প্রতি তাদের ভালোবাসা কমে গিয়েছিল। তারা অন্যান্য ইজরায়েলীয়দের এই কথা বলেছিল, “আমরা সেই লোকদের বিরুদ্ধে যাইতে সমর্থ নহি, কেননা আমাদের অপেক্ষা তাহারা বলবান্‌।” (গণনা. ১৩:২৭-৩১) যদিও কনানীয়েরা ইজরায়েলীয়দের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ছিল, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ইজরায়েলীয়েরা তাদের হারাতে পারত না। সেই ১০ জন গুপ্তচর ভুলে গিয়েছিল, যিহোবা ইজরায়েলীয়দের সঙ্গে রয়েছেন। সেই গুপ্তচরদের চিন্তা করা উচিত ছিল, যিহোবা তাদের কাছ থেকে কী চান। তাদের এও চিন্তা করা উচিত ছিল, যিহোবা কিছুসময় আগেই ইজরায়েলীয়দের জন্য কী কী করেছিলেন। তারা যদি এগুলো নিয়ে চিন্তা করত, তা হলে বুঝতে পারত, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সামনে কনানীয়েরা কিছুই নয়। তবে, সেই ১০ জন গুপ্তচরের চেয়ে যিহোশূয় ও কালেব একেবারে আলাদা ছিলেন। তারা যিহোবাকে ভয় করতেন এবং তাঁকেই খুশি করতে চেয়েছিলেন। তাই তারা ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন: “সদাপ্রভু যদি আমাদিগেতে প্রীত হন, তবে তিনি আমাদিগকে সেই দেশে প্রবেশ করাইবেন, ও সেই . . . দেশ আমাদিগকে দিবেন।”—গণনা. ১৪:৬-৯.

৭. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি ভয় বাড়াতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

আমরা যদি যিহোবাকে ভয় করি, তা হলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা চিন্তা করব, এতে যিহোবা খুশি হবেন কি না। (গীত. ১৬:৮) যিহোবার প্রতি ভয় বাড়ানোর জন্য আমরা কী করতে পারি? বাইবেলের কোনো ঘটনা পড়ার সময়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি যদি সেই পরিস্থিতিতে থাকতাম, তা হলে কী করতাম?’ কল্পনা করুন, সেই ১০ জন গুপ্তচর এসে মিথ্যা খবর জানাচ্ছে আর আপনি সেখানে রয়েছেন। তারা বলছে যে, আমরা কখনো কনানীয়দের হারাতে পারব না। এখন আপনি কী করবেন? আপনি কি তাদের কথায় বিশ্বাস করবেন এবং মানুষকে ভয় পাবেন? না কি আপনি যিহোবাকে ভয় করবেন এবং তাঁকেই খুশি করতে চাইবেন? দুঃখের বিষয় হল, ইজরায়েলের একটা পুরো প্রজন্মই সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনি। তারা যিহোশূয় ও কালেবের সত্যি কথায় বিশ্বাস করেনি। তাই, তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছিল।—গণনা. ১৪:১০, ২২, ২৩.

আপনি কাদের কথায় বিশ্বাস করতেন? (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৮. আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন গুণ বাড়াতে হবে এবং কেন?

নম্র হোন। যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের কাছে সত্য প্রকাশ করেন। (মথি ১১:২৫) আমরা নম্র ছিলাম, তাই সত্য শেখার সময়ে আমরা অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলাম। (প্রেরিত ৮:৩০, ৩১) কিন্তু, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন সবসময় নম্র থাকি এবং কখনো গর্বিত হয়ে না পড়ি। গর্বিত ব্যক্তিরা এটা মেনে নেয় যে, বাইবেলের নীতি ও সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা সঠিক, কিন্তু এর পাশাপাশি তারা এটা মনে করে যে, তারা যেটা চিন্তা করে, সেটাও ততটাই সঠিক।

৯. কীভাবে আমরা সবসময় নম্র থাকতে পারি?

আমরা যদি মনে রাখি, যিহোবা কতটা মহান এবং তাঁর সামনে আমরা কতটা নগণ্য, তা হলে আমরা সবসময় নম্র থাকতে পারব। (গীত. ৮:৩, ৪) আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যাতে আমরা সবসময় নম্র থাকতে এবং শেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি। এর ফলে, আমরা নিজেদের চিন্তাভাবনার চেয়ে যিহোবার চিন্তাভাবনাকে প্রথমে রাখতে পারব। আর সেইসঙ্গে তিনি যখন তাঁর বাক্য ও সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা দেবেন, তখন আমরা সেটা মেনে চলতে পারব। বাইবেল পড়ার সময়ে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে যে, কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছেন, তিনি নম্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন এবং গর্বিত ও উদ্ধত ব্যক্তিদের ঘৃণা করেন। বিশেষ করে, আমাদের যখন কোনো বড়ো দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং আমরা ভাই-বোনদের চোখে পড়ি, তখন আমাদের আরও বেশি করে নম্র থাকতে হবে।

কীভাবে আমরা দৃঢ়ভাবে সত্যকে ধরে রাখতে পারি?

১০. কাদের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকদের নির্দেশনা দিয়ে আসছেন?

১০ যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার উপর আস্থা রাখুন। প্রাচীন কালে, মোশি ও যিহোশূয়ের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। (যিহো. ১:১৬, ১৭) ইজরায়েলীয়েরা জানত যে, যিহোবা এই ব্যক্তিদের নিযুক্ত করেছেন এবং তিনি তাদের মাধ্যমে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ইজরায়েলীয়েরা যখন সেই নির্দেশনাগুলো পালন করেছিল, তখন তারা অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছিল। এর অনেক বছর পর যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল, তখন ১২ জন প্রেরিতের মাধ্যমে যিহোবা খ্রিস্টানদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৮:১৪, ১৫) পরবর্তী সময়ে জেরুসালেমে প্রেরিতদের সঙ্গে কিছু প্রাচীনও যুক্ত হয়েছিল। ভাই-বোনেরা যখন তাদের নির্দেশনা পালন করেছিল, তখন তারা “বিশ্বাসে দৃঢ়” হয়েছিল এবং “দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি” পেয়েছিল। (প্রেরিত ১৬:৪, ৫) বর্তমানে আমরা যখন যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলি, তখন আমরাও অনেক আশীর্বাদ লাভ করি। চিন্তা করুন, বর্তমানে যিহোবা যাদের নিযুক্ত করেছেন, আমরা যদি তাদের কথা না শুনি, তা হলে তাঁর কেমন লাগবে? এটা জানার জন্য লক্ষ করুন, প্রতিজ্ঞাত দেশে যাওয়ার আগে ইজরায়েলীয়দের প্রতি কী ঘটেছিল।

১১. ইজরায়েলীয়েরা যখন মোশির উপর প্রশ্ন তুলেছিল, যাকে যিহোবা নিযুক্ত করেছিলেন, তখন কী ঘটেছিল? (ছবিও দেখুন।)

১১ ইজরায়েলীয়দের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য যিহোবা মোশিকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু, ইজরায়েলের কিছু বিশেষ ও গণ্যমান্য ব্যক্তি মোশির উপর প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল। তারা বলেছিল, শুধু মোশি নয় কিন্তু “সমস্ত মণ্ডলীর প্রত্যেক জনই পবিত্র, এবং সদাপ্রভু তাহাদের মধ্যবর্ত্তী।” (গণনা. ১৬:১-৩) এটা ঠিক যে, মণ্ডলীর প্রত্যেকেই যিহোবার কাছে পবিত্র ছিল, কিন্তু যিহোবা মোশিকে তাদের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। (গণনা. ১৬:২৮) তাই, ইজরায়েলীয়েরা যখন মোশির উপর আঙুল তুলছিল, তখন তারা আসলে যিহোবার উপর আঙুল তুলছিল। সেই বিদ্রোহীরা ক্ষমতা ও পদ পাওয়ার জন্য এতটাই উঠে-পড়ে লেগেছিল যে, তারা চিন্তা করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যিহোবা কী চান। তারা শুধুমাত্র নিজেদের কথাই চিন্তা করছিল। এই কারণে সেই বিদ্রোহীদের ও সেইসঙ্গে যে-হাজার হাজার ইজরায়েলীয় তাদের সমর্থন করেছিল, তাদের সবাইকে যিহোবা মেরে ফেলেছিলেন। (গণনা. ১৬:৩০-৩৫, ৪১, ৪৯) বর্তমানেও কেউ যদি যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে না চলে, তা হলে যিহোবা তার উপর খুশি হবেন না।

আপনি কাদের সমর্থন করতেন? (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১২. কেন আমরা যিহোবার সংগঠনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি?

১২ আমরা যিহোবার সংগঠনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। কেন? কারণ নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইয়েরা যখন মনে করে, কোনো শিক্ষার বিষয়ে আমাদের বোধগম্যতায় রদবদল করার প্রয়োজন রয়েছে কিংবা যেভাবে রাজ্যের প্রচার কাজ করা হচ্ছে, তাতে কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে, তখন তারা তা করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায় না। (হিতো. ৪:১৮) তারা যিহোবাকে খুশি করতে চায় আর এটাই তাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছাড়া, তারা খেয়াল রাখে যেন তাদের প্রতিটা সিদ্ধান্ত বাইবেলের উপর অর্থাৎ সেই উপকারজনক বাক্যের উপর ভিত্তি করে হয়, যেটা ঈশ্বরের প্রত্যেক উপাসক মেনে চলে।

১৩. “উপকারজনক বাক্যের আদর্শ” বলতে কী বোঝায় এবং আমাদের কী করতে হবে?

১৩ “উপকারজনক বাক্যের আদর্শ ধরে” রাখুন। (২ তীম. ১:১৩) “উপকারজনক বাক্যের আদর্শ,” এর মানে হল, যিশুর দেওয়া শিক্ষা এবং বাইবেলে দেওয়া সমস্ত শিক্ষা। (যোহন ১৭:১৭) আমাদের বিশ্বাস এই শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যিহোবার সংগঠন আমাদের শেখায় যেন আমরা এই শিক্ষা ধরে রাখি। এমনটা করলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের প্রচুর আশীর্বাদ করবেন।

১৪. কেন কিছু খ্রিস্টান “উপকারজনক বাক্যের আদর্শ” ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল?

১৪ আমরা যদি “উপকারজনক বাক্যের আদর্শ” ধরে না রাখি, তা হলে কী হতে পারে? আসুন দেখি, প্রথম শতাব্দীতে কী হয়েছিল। কিছু খ্রিস্টান এই গুজব ছড়াতে শুরু করেছিল যে, যিহোবার দিন এসে গিয়েছে। এমনটা মনে করা হয়, তারা একটা চিঠি পেয়েছিল, যেটাতে তা লেখা ছিল। তারা ধরে নিয়েছিল যে, পৌলই সেই চিঠিটা লিখেছেন। তারা সত্যটা জানার চেষ্টাও করেনি। কিছু খ্রিস্টান এই গুজবে বিশ্বাস করেছিল এবং এটা অন্যদের কাছে ছড়াতে শুরু করেছিল। তারা যদি মনে রাখত, পৌল তাদের সঙ্গে থাকার সময়ে কী শিখিয়েছিলেন, তা হলে তারা ভ্রান্ত হত না। (২ থিষল. ২:১-৫) তাই, পৌল তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা প্রতিটা কথায় চোখ-কান বুজে বিশ্বাস না করে। তিনি তাদের এও বলেছিলেন যে, কীভাবে তারা বুঝতে পারবে, কোনো চিঠি তার কাছ থেকে এসেছে কি না। তিনি তার চিঠির শেষে লিখেছিলেন: “আমি পৌল, নিজ হাতে লিখে আমার শুভেচ্ছা তোমাদের জানাচ্ছি। এটাই আমার প্রতিটা চিঠির চিহ্ন; আমি এভাবেই লিখে থাকি।”—২ থিষল. ৩:১৭.

১৫. আমরা কী করতে পারি, যাতে আমরা মিথ্যা খবরগুলোর কারণে ভ্রান্ত হয়ে না পড়ি? একটা উদাহরণ দিন। (ছবিগুলোও দেখুন।)

১৫ পৌল থিষলনীকীয়দের যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যখন অদ্ভুত বা অবাক করার মতো কোনো খবর শুনি, যেটা বাইবেলের শিক্ষার সঙ্গে মেলে না, তখন আমাদের অনেক ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হবে। লক্ষ করুন, সোভিয়েত ইউনিয়নে আমাদের ভাইদের প্রতি কী ঘটেছিল। একবার সরকারি আধিকারিকেরা আমাদের ভাইদের একটা চিঠি দিয়েছিল, যেটা দেখে মনে হয়েছিল, সেটা বিশ্বপ্রধান কার্যালয় থেকে এসেছে। সেই চিঠিতে ভাইদের বলা হয়েছিল, তারা যেন আরেকটা সংগঠন তৈরি করে। যদিও সেই চিঠিটা দেখে মনে হয়েছিল যে, সেটা সত্যিই বিশ্বপ্রধান কার্যালয় থেকে এসেছে, কিন্তু আমাদের বিশ্বস্ত ভাইয়েরা সেটা দেখে ভ্রান্ত হয়নি। তারা বুঝতে পেরেছিল, সেই চিঠিতে লেখা কথাগুলোর সঙ্গে বাইবেলের শিক্ষার কোনো মিল নেই। বর্তমানে আমাদের শত্রুরা আমাদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তারা ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে থাকে এবং আমাদের একতা নষ্ট করার চেষ্টা করে। তাই, কখনো “বিভ্রান্ত” হবেন না। যখনই আপনি কিছু পড়েন বা শোনেন, তখন জানার চেষ্টা করুন, সেটা বাইবেলের শিক্ষার সঙ্গে মেলে কি না। তা করলে আপনি ভ্রান্ত হবেন না।—২ থিষল. ২:২; ১ যোহন ৪:১.

সেই বিষয়গুলোর মাধ্যমে ভ্রান্ত হবেন না, যেগুলো দেখে বা শুনে সত্য বলে মনে হয় (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) a


১৬. কিছু লোক যখন সত্যকে ধরে রাখে না, তখন আমাদের কী করা উচিত? (রোমীয় ১৬:১৭, ১৮)

১৬ যিহোবার বিশ্বস্ত লোকদের সঙ্গে মিলে তাঁর উপাসনা করুন। যিহোবা চান আমরা যেন একতাবদ্ধভাবে তাঁর উপাসনা করি। যতদিন আমরা সত্যকে আঁকড়ে ধরে রাখব, ততদিন আমাদের মধ্যে একতাও বজায় থাকবে। কিন্তু, যারা সত্যকে ধরে রাখে না এবং মিথ্যা কথাগুলো ছড়িয়ে থাকে, তারা মণ্ডলীর একতা নষ্ট করে। যিহোবা চান, আমরা যেন তাদের “এড়িয়ে” চলি। তা নাহলে, আমরাও সত্যের পথ থেকে সরে পড়তে পারি।—পড়ুন, রোমীয় ১৬:১৭, ১৮.

১৭. আমরা যদি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখি এবং সত্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখি, তা হলে আমরা কোন কোন উপকার লাভ করব?

১৭ আমরা যখন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখব এবং সত্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখব, তখন আমরা যিহোবার আরও ঘনিষ্ঠ হব এবং আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে। (ইফি. ৪:১৫, ১৬) এভাবে আমরা শয়তানের ছড়ানো মিথ্যা শিক্ষা এবং কথাগুলোর কারণে ভ্রান্ত হব না আর মহাক্লেশ চলাকালীন যিহোবা আমাদের সুরক্ষিত রাখবেন। তাই, সত্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখুন, “এতে শান্তির ঈশ্বর [আপনার] সঙ্গে থাকবেন।”—ফিলি. ৪:৮, ৯.

গান ১২৯ শেষ পর্যন্ত থাকব স্থির

a ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: এখানে দেখানো হয়েছে যে, কয়েক বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নে কী ঘটেছিল। আমাদের ভাইয়েরা একটা চিঠি পেয়েছিল, যেটা দেখে মনে হচ্ছিল, সেটা বিশ্বপ্রধান কার্যালয় থেকে এসেছে। কিন্তু, এটা আসলে আমাদের শত্রুরা পাঠিয়েছিল। বর্তমানে আমাদের শত্রুরা আমাদের ভ্রান্ত করার জন্য ইন্টারনেট অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যিহোবার সংগঠনের নামে মিথ্যা কথা ছড়াতে পারে।