“আত্মা বলে কি এমন কিছু রয়েছে যা একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরও বেঁচে থাকে?”
বাইবেলের উত্তর
ইব্রীয় শব্দ রুয়াখ্ এবং গ্রিক শব্দ প্নেভ্মা প্রায়ই “আত্মা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে যার অনেক অর্থ রয়েছে। এগুলো সবই এমন কিছুকে বোঝায় যা মানুষের চোখে অদৃশ্য এবং গতিশীল কোনো শক্তি। ইব্রীয় এবং গ্রিক শব্দগুলো এই অর্থেও ব্যবহার করা হয়েছে যেমন, (১) বাতাস, (২) মানুষ ও পশুদের জীবনী শক্তি, (৩) রূপক হৃদয়ের অনুপ্রেরণাদায়ক কোনো শক্তি, যা আমাদের নির্দিষ্ট কোনো উপায়ে কিছু বলতে বা করতে পরিচালিত করে, (৪) অদৃশ্য কোনো উৎস থেকে আসা অনুপ্রাণিত বার্তা, (৫) অদৃশ্য কোনো ব্যক্তি আর (৬) ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি অর্থাৎ পবিত্র শক্তি।—যাত্রাপুস্তক ৩৫:২১; গীতসংহিতা ১০৪:২৯; মথি ১২:৪৩; লূক ১১:১৩.
গীতসংহিতা ১০৪:২৯ পদ বলে: “তুমি [সদাপ্রভু] তাহাদের নিঃশ্বাস [রুয়াখ্] হরণ করিলে তাহারা মরিয়া যায়, তাহাদের ধূলিতে প্রতিগমন করে।” আর যাকোব ২:২৬ পদ উল্লেখ করে যে, “আত্মাবিহীন [প্নেভ্মাবিহীন] দেহ মৃত।” তাহলে, এই পদগুলোতে রুয়াখ্ বা প্নেভ্মা [বাংলা বাইবেলে এই পদগুলোতে নিঃশ্বাস এবং আত্মা হিসেবে অনুবাদিত হয়েছে] সেই বিষয়কে নির্দেশ করে, যা একটা দেহকে জীবনদান করে। রুয়াখ্ বা প্নেভ্মা ছাড়া, দেহ মৃত। তাই, বাইবেলে রুয়াখ্ শব্দটাকে কেবলমাত্র আত্মা হিসেবে নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে “প্রাণবায়ু” বা জীবনীশক্তি হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, নোহের দিনে জলপ্লাবন সম্বন্ধে আদিপুস্তক ৬:১৭ পদ বলে: “আকাশের নীচে প্রাণবায়ুবিশিষ্ট [রুয়াখ্বিশিষ্ট] যত জীবজন্তু আছে, সকলকে বিনষ্ট করণার্থে আমি পৃথিবীর উপরে জলপ্লাবন আনিব।” (আদিপুস্তক ৭:১৫, ২২) অতএব, রুয়াখ্ বলতে এক অদৃশ্য শক্তিকে (জীবনের স্ফুলিঙ্গকে) বোঝায়, যা সমস্ত জীবিত প্রাণীকে সজীব রাখে।
একটা উদাহরণ লক্ষ করুন
দেহের জন্য রুয়াখ্ বা প্নেভ্মার প্রয়োজন রয়েছে, অনেকটা যেমন একটা রেডিও চালু করার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে। এটা উদাহরণের সাহায্যে আরেকটু বোঝার জন্য সহজে বহনযোগ্য একটা রেডিওর কথা চিন্তা করুন। আপনি যখন এমন একটা রেডিওতে ব্যাটারি লাগিয়ে তা চালান, তখন ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎ, বলতে গেলে রেডিওকে জীবন্ত করে তোলে। কিন্তু, ব্যাটারি ছাড়া রেডিওটা মৃত। অন্য ধরনের রেডিওর বেলায়ও একই বিষয় ঘটে থাকে, যখন এটাকে একটা বৈদ্যুতিক সকেট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। অনুরূপভাবে, রুয়াখ্ বা প্নেভ্মা হল সেই শক্তি, যা আমাদের দেহকে জীবন্ত করে তোলে। এ ছাড়া, বিদ্যুতের মতো রুয়াখেরও কোনো অনুভূতি নেই এবং এটা চিন্তা করতে পারে না। এটা এক নৈর্ব্যক্তিক শক্তি। কিন্তু, এই রুয়াখ্ বা প্নেভ্মা—জীবনীশক্তি—ছাড়া, আমাদের দেহ “মরিয়া যায়, তাহাদের ধূলিতে প্রতিগমন করে,” যেমন গীতরচক বলেছিলেন।
মানুষের মৃত্যু সম্বন্ধে বলতে গিয়ে উপদেশক ১২:৭ পদ বলে: “[তাহার দেহের] ধূলি পূর্ব্ববৎ মৃত্তিকাতে প্রতিগমন করিবে; এবং রুয়াখ্ [বাংলা বাইবেলে আত্মা হিসেবে অনুবাদিত] যাঁহার দান, সেই ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করিবে।” যখন রুয়াখ্ বা প্নেভ্মা—জীবনীশক্তি—দেহ ত্যাগ করে, তখন দেহের মৃত্যু হয় এবং সেই দেহ যেখান থেকে এসেছে সেখানে—সেই মাটিতে—ফিরে যায়। অনুরূপভাবে, জীবনীশক্তিও সেখানে ফিরে যায়, যেখান থেকে এটা এসেছে—সেই ঈশ্বরের কাছে। (ইয়োব ৩৪:১৪, ১৫; গীতসংহিতা ৩৬:৯) তার মানে এই নয় যে, জীবনীশক্তি সত্যি সত্যি স্বর্গে চলে যায়। বরং, এটা বোঝায় যে, মারা গিয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির ভবিষ্যৎ জীবনের যেকোনো আশা তখন যিহোবা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে। বলতে গেলে, তার জীবন ঈশ্বরের হাতে রয়েছে। একমাত্র ঈশ্বরের শক্তিতেই রুয়াখ্ বা প্নেভ্মা—জীবনীশক্তি—ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে, যাতে সেই ব্যক্তি আবার বেঁচে থাকতে পারে।
আত্মা বলে এমন কিছু রয়েছে যা মারা যাওয়ার পরও বেঁচে থাকে, এই শিক্ষা কোথা থেকে এসেছে?
মারা যাওয়ার পরও আমাদের মধ্যে কিছু বেঁচে থাকে, এই শিক্ষা বাইবেলের নয়। তবে এটা অন্যান্য শিক্ষার উৎস থেকে এসেছে যেমন, গ্রিক দর্শনবিদ্যা। ঈশ্বর কখনোই তার শিক্ষার সঙ্গে মানুষের দর্শনকে মিশে যেতে দেবেন না। এর পরিবর্তে বাইবেল আমাদের সাবধান করে বলে: “তোমরা সাবধান থেকো, যেন দর্শনবিদ্যা এবং মিথ্যা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে কেউ তোমাদের বন্দি করে নিয়ে না যায়।”—কলসীয় ২:৮.